১। আনিকা বাংলা ২য় পত্র একদম পড়তে চায়না। সেদিন জোর করে একটা রচনা মুখস্ত করতে দিয়েছি।টাইম দিয়েছি ১৫ মিনিট। এরপর এসে দেখি বইয়ের পৃষ্ঠাই নাই।আমি তো পুরাই টাস্কি, একটু আগেও পৃষ্ঠা ছিল,কই গেলো।চিল্লাপাল্লা করছি এমন সময় আমার আরেক ভাগ্নী বহ্নি ওভেন থেকে চাবানো এক দলা কাগজ এনে বলল- “এই যে আপুর রচনার পৃষ্ঠা” আমি দেখি কৃষিকাজে বিজ্ঞানের তখন দফারফা অবস্থা।আনিকাকে রেগে মেগে বললাম-এমন করেছ কেন?সে নির্বিকারভাবে উত্তর দিল-মুখস্ত হচ্ছিলনা,তাই চাবিয়ে গেলার চেষ্টা করছিলাম।
২।গত কয়েকদিনের জ্বরে আমি বেশ কাবু হয়ে গিয়েছিলাম।এরমাঝে আমার মহা মহা যত্ন করেছে বহ্নি।গ্লুকোজ,মেডিসিন সব কিছু খাইয়ে দিয়েছে।মাথায় পট্টি-পাট্টা দিয়ে দিয়েছে।একটু সুস্থ হবার পরে বলে আমাকে ২০টাকা দাও...আমার নার্সিং করার ফি।আমি ব্যাপক অবাকিত হয়ে বল্লাম-মানে কি? সে বলল-জ্বরের ঘরে আমি তোমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়ে নিয়েছিলাম যে তুমি সুস্থ হলেই আমাকে ২০টাকা দিবা।হে হে হে।বহ্নি তার কোকড়া চুল নাচিয়ে শয়তানের মত হেসে উঠে।
৩।আমাদের বাসার সব খাবারের মাঝে কিঞ্চিত সমস্যা থাকে।যেমন-বিস্কুটের টিনের অর্ধেক বিস্কুট একটু একটু খাওয়া,কেকের চারপাশে পোড়া সাইডটা নাই,সসের বোতলে মেওনিজ মিক্স করা।এক রাতের মধ্যে কোকের স্বাদ পানশে হয়ে যায়,সাথে থাকে লবন,সিরকা ও লেবুর গন্ধ(কোক খেয়ে সেটার পরিমানটা ঠিক রাখার জন্যে আনিকার কোক বানানোর রেসিপী), কফি মিক্সের মিনিপ্যাক গুলোতে শুধু চিনি (কারন কফিও আনিকা খালি খালি খায়),ম্যাগি নুডুলসের রাশি রাশি প্যাক আছে কিন্তু নুডুলস নাই,রান্না করা মাত্রই মুরগীর রান নাই,সসেজ ১০টা ভাজা হলেও টেবিলে দেবার সময় ৮টা থাকবে...ইত্যাদি ইত্যাদি।এবং এই সব একা আনিকাই সাবার করে।বহ্নির কাজ হল আনিকা কে হাতে নাতে ধরিয়ে দেওয়া।
৪।-তোমার কি মন খারাপ!!!
আমি চমকে তাকাই।বহ্নি কখন যে এসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে টের পাইনি।আমি একগাল হেসে বলি না তো আন্টি মন খারাপ না।
-তুমি তো মন খারাপের গান শুনছ।তুমি চাইলে আমি তোমার মন ভাল করে দিতে পারি...করি?আমি একটু অবাক হয়ে বললাম কিভাবে?
-কখনও কারো মন খারাপ হলে একটা কাজ করতে হয়।প্রথমে যে কারনে মন খারাপ সে কারণ টা ভাবতে হয়।তারপর হঠাৎ করে ঘোৎ বলতে হয়।বেশি মন খারাপ হলে বেশিবার ঘোৎ বলতে হয়।এই যেমন তুমি একা বসে গান শুনছ,কিছুক্ষণ পর পর বলবে ঘোৎ…ঘোৎ….ঘোৎ…দেখবে যে মন অনেক ভাল হয়ে যাবে।আমি চোখ গোল গোল করে ওর কথা শুনছিলাম।ওর কথা মত ঘোৎ বারকয়েক বলে দেখব কিনা ভাবছি,এমন সময় দেখি সে একা একাই ঘোৎ ঘোৎ করছে আর দাঁত বের করে হাসছে।তার নাকি মন বেশ ভাল হয়ে গেছে।আজকাল আমি মহা যন্ত্রনায় আছি,আমার মুখটা একটু গম্ভীর দেখামাত্রই বহ্নি আমার কানের কাছে এসে ঘোৎ ঘোৎ শুরু করে।দাঁত বের করে থাকতে থাকতে মুখ ব্যথা করে।শাস্তি হিসেবে ওকে ১০ মিনিটের জন্যে বাথরুমে এটকে রেখেছিলাম,কিন্তু বেশি লাভ হয় নাই,সে এত্ত সহজে থামার পাত্রি না।
৫।বাসায় কেউ থাকবে না বলে চার তলার বৌদির বাসায় গেছি চাবিটা রাখতে দিয়ে বের হয়ে যাব।দরজায় নক করে দেখি কেউ আসছে না কিন্তু দরজাটা খোলা। সাতপাঁচ ভেবে ঘরে চলে যাই।পাশের ঘর থেকে বৌদির একমাত্র মেয়ে আর আনিকা প্রিয় বান্ধুবীর পৃথিলার গলা শুনে একটু উঁকি দিয়ে আমার চক্ষু লম্বাগাছ+চওড়াগাছ। এই পিচ্চি ফ্রকের উপর লাল একটা ওড়না পেঁচিয়ে শাড়ির মত করে পরে আয়নার সামনে গিয়ে সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছে ও অভিনয় করছে।আমি অতি সাবধানে কান পাতি-“এক চুটকি সিন্দুর কি কিমাত,তুমি কেয়ে জানো অভয় (হিন্দি সিরিয়েলের ভ্যাম্পায়ার নায়কের নাম)।তুম স্রিফ মেরি হোওওওওওওওওওওওওওওও...মেরি মেরি মেরি...আমার তখন অজ্ঞান হবার অবস্থা। মাথায় এইসব নিইয়ে এই পিচ্চি আবার পড়ালেখায় এত্ত ভাল করে কেমনে কে জানে।আজকাল এই পিচ্চির চেহারা দেখলেই আমি উৎপাত বোধ করি।
৬।আমার বড় বোন আজকাল পাখি,মাছ,গাছ এনে বারান্দা ভরিয়ে ফেলছে।গাছ বাসায় আগেও অনেক ছিল সাথে এখন যোগ হয়েছে পাখি ও মাছ।এই সব বেত্তমিজ পাখিদের চিক্কুরে প্রায় ভোরেই আমি ভয় খেয়ে যাই।দুলাভাই গত পরশু আমার ও আমার ভাগ্নীদের জন্যে দোকান থেকে চকোচকো আনতে গিয়েছিল।তারপর সে নাম ভুলে গেছে বলে চকোচকো আর বলতে পারেনা।অবশেষে অনেক চিন্তা করে তিনি বলছেন-“আচ্ছা ভাই কচোকচো আছে নাকি?”দোকানদার একটূ চিন্তিত মুখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলেছে-ভাইজান, কচোকচো নাই কিন্তু চকোচকো আছে।
জীবনটা কে তেজপাতা হওয়া মনে হয় এইটাকেই বলে।মাঝে মাঝে মনে হয় আমি নিজেও বুঝি একটা চিড়িয়া হয়ে গেছি।থাক,আমার বিচ্ছুকাহিনী নাহয় অন্যদিন বলব।আজকে আর কাউকে উৎপাত না করি।
***“হুমায়ূনি উৎপাত” নামটা অবশ্য আমার দেয়া না।এক উর্বর মস্তিকের গনক এই নামটি দিয়ে আমার “সার্চ দ্য নেম” মিশনের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১১ রাত ১:২২