শ্রাবণ মাস শেষ হয়ে ভাদ্র মাসও চলে এলো। কিন্তু মেঘের গুড়ু গুড়ু থামল কই? বৃষ্টি ঝরাও থেমে নেই। তাই সব কিছুর পরেও এই মন বৃষ্টিভেজা মন। আশে পাশের সব মানুষকেই যদি প্রশ্ন করা হয়- ঝুম বৃষ্টির মাঝে কোন ৩টি বাংলা গান শুনতে ভীষন ইচ্ছে করবে...বেশির ভাগ মানুষের বলা সেই ৩টি গানের মাঝে একটা গান হবে-
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাকেই কাছে ডেকে, মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম।
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে, চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম।
——————-
শ্রীকান্ত আচার্য
শ্রীকান্তের গান শুনেনি এমন মানুষ কিন্তু আজকাল খুঁজে পাওয়া ভার। অথচ কোন সাঙ্গীতিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠেননি ভারতে বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। তিনি বলছিলেন তাঁদের পরিবারে গানবাজনা বা সংস্কৃতির কোনরকম চর্চ্চাই ছিল না। তবে গান ভীষণ ভালবাসতেন, মিউজিক আর গান নিয়ে একটা পাগলামো ছোটকাল থেকেই ছিল। এমনকি তিনি তবলা বাজানোও শিখেছিলেন উস্তাদ আলী আহম্মদ খানের কাছে থেকে। গানের প্রতি অসম্ভব টান ছিল তার সব সময়ই কিন্তু সেটা কখনই তিনি লাগামহীনহাবে বাড়তে দেন নি,কারণ তিনি জানতেন আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙালী পরিবারের মত লেখাপড়া শিখে চাকরিবাকরির জীবনই তাঁকে বেছে নিতে হবে। কিন্তু চাকরি করতে করতে একটা সময়ে হঠাৎই উপলব্ধি করেন গানবাজনা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন,একটা ভয় পেয়ে বসে ভাললাগার এই জায়গায় আবার কখনও কী ফিরতে পারবেন? এই ভাবনা থেকেই চাকরি ছেড়ে দেন হঠাৎ করে। জীবনে সুযোগও আসে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায়।
কলকাতার সাগরিকা রেকর্ড কোম্পানি দুটো অ্যালবাম প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। একটি রবীন্দ্রসংগীতের এবং অন্যটি পুরোন গানের রিমেক,যা সেসময় একটা জনপ্রিয় ধারা হয়ে উঠেছিল। দুটো অ্যালবামই হিট করল ১৯৯৬ সালে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি শ্রীকান্ত আচার্যকে।
শ্রীকান্তের গান শুনি আমি সেই স্কুল জীবন থেকে। সেই সময় বাসায় সিডি প্লেয়ার ছিলনা আমাদের। ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনতাম। কেনাকাটা করতে শপিং মলে গেলে আশে পাশের দোকানে বাজতে থাকা গান শুনে মনে হত, ইসস কবে যে আমার নিজের একটা দোকান থাকবে। যার একপাশে থাকবে সব গল্পের বই, আর অন্যপাশে সব গানের সিডি। সেইখানে আমি সারাদিন বসে বসে গান শুনবো, বই পড়বো আর মানুষজনকেও বই পাড়ার জন্যে আর গান শোনার জন্যে উৎসাহ দিবো। আমার মনে হত এমন কোথাও যদি আমাকে বন্দি করে রাখা হয় যেখানে অনেক অনেক গল্পের বই আছে আর গান আছে তাহলে আমার কিচ্ছু লাগবে না।
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম,বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে, যেও না দক্ষিন দারে, জানলা খোলা...ইত্যাদি গানগুলো মিশে আছে আমার নানা রঙের স্মৃতির পাতায়। এমনকি কিছুদিন আগের শ্রীকান্তের গাওয়া “মেঘ হলে মন” গানটা আমি টানা কয়েক দিন শুনে গিয়েছি। আর খোমাবইতে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম যে- “এই গান শুনে আমার শ্রীকান্ত কে ১০১টা সাদা গোলাপ দিতে ইচ্ছে করেছে...♥ আসলে কি, কিছু কিছু মানুষের গান শুনতে কখনো খারাপ তো লাগেই না উলটো বরং কানের আরাম বৃদ্ধি পায়। এর আগে গানপাগলা পোষ্টে লতা মুঙ্গেশকরের অনেক গুলো গানের লিঙ্ক দিয়েছিলাম। এবার শ্রীকান্তের গানের লিঙ্ক দিব।
শ্রীকান্তের গাওয়া আমার পছন্দের অনেক গুলো গানের এম.পি.থ্রি লিঙ্ক দিলাম। সেই সাথে কিছু গানের কথাও জুড়ে দিলাম-
শাওন মেঘের দেয়া বৃষ্টি যেখানে পড়ে
ভেজা সেই মাঠে গান গাওয়া…
টুকরো সূখের দেয়া একটু আদর ছুঁয়ে
অভিমান জলে ভেসে যাওয়া।
বলতে না পারা কথা বলে গেলো সেই সুর…
ভাসলো আকাশ অজানায় বহুদূর।
(জানলা খোলা)
ভাবে মাধবী সুরভী তার বিলায়ে
যাবে মধুরের সুরে সুরে মিলায়ে
তোমারি ধ্যায়ানে ক্ষণে ক্ষণে
কত কথা জাগে মোর মনে ।।
চোখে মোর ফাগুনের ছবিটি আঁক
কেন দূরে থাক, শুধু আড়াল রাখ
কে তুমি কে তুমি আমায় ডাক ।।
(কেন দূরে থাক)
বঁধূয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় , বিনা কারণে
নীলাকাশ থেকে একি বাজ হেনেছে হায়, বিনা কারণে
দিনে দিনে মুল্য বিনে, সে যে আমায় নিল কিনে
এ মনে যতন করে বিফল প্রেমের বীজ বুনেছে হায়
(বধুঁয়া আমার চোখে জল এনেছে)
মেঘ হলে মন বিকেল বেলায়
একলা যেতাম মেঘের বাড়ী।
মেঘ হতো কাশ ফুলের দু-চোখ
দৃষ্টি কিন্তু খুব আনাড়ী আনাড়ী ...
কিন্তু মনে মেঘ থাকেনা
মেঘ ছাড়া আকাশ খালি
বোতাম খোলা জানালা বুকে
বইছে হাওয়া শুধু শুন্যতারি
মেঘ হলে মন বিকেল বেলায় ...
একলা যেতাম মেঘের বাড়ী।।
(মেঘ হলে মন)
শ্রীকান্তের ৩৬টি গানঃ-
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
অচেনাকে ভয় কি আমার মনে
আগুনের পরশমণি
আজি হৃদয় আমার
আজি যত তারা তব আকাশে
আামার যাবার বেলায়
আমার যে দিন
আমার শেষ পারানের কড়ি
আমারো পরানো যাহা চায়
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে
অন্ধকারে একটু মৃদু আলো
আসা যাওয়ার পথে
চোরকাঁটা গলি
দ্বীপ নিভে গেছে মম
এবার অবগুণ্ঠন খোল
এই উদাসী হাওয়া
এইটুকু ছোঁয়া লাগে
এমনি করেই যায় যদি দিন
খাতার ওপর আকাশ ঢেলে দেই
মেঘ হলে মন বিকেল বেলায়
মেয়েটা ছিল সুপ্ত খাতা
আমায় প্রশ্ন করে
আমি এত যে তোমায়
আমি যামিনী তুমি শশী
আমি তো বুঝিনা
বঁধুয়া আমার চোখে
বন্ধু তোমার পথের সাথীকে
এত সুর আর এত গান
যে আঁখিতে এত হাসি
কেন দূরে থাকো
মনের জানালা ধরে
তিন দানা তিন দানা
তোমার জন্যে
উদাসী এই
জানলা খোলা
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
গান হল আমার আত্মার খোরাক। গানের মাঝেই আমি সব সময় নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি। মন খারাপ বা ভালো থাকা, আকাশের বদলে যাওয়া রূপ, মনের নানান অনুভূতি, কাছের মানুষের জন্যে উপহার সব কিছুর বেলাতেই আমার গানের সংগ চাই। গানের মাঝেই আমি নানান রঙ খুঁজে পাই। আমি গানপাগলা মানুষ... আমি গান ভালোবাসি আর ভালোবেসেই যাব।
Music washes away from the soul the dust of everyday life.
~Berthold Auerbach
আলোচিত ব্লগ
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন