somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্গারিটা মামুন ও "আমাদের লজ্জা"

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মার্গারিটা মামুনের অলেম্পিকে সোনা জয় নিয়ে যারা আজ অর্ধেক গর্বে গর্বিত হচ্ছেন, আমার মনে হয় সেখানে একটু কারেকশান দরকার। আসলে ব্যাপার হবে "খুব লজ্জার"।

কিন্তু কেন ব্যাপারটা লজ্জার হবে? আমার বিশ্লেষণটা বলি।


ছবি-১ঃ মার্গারিটা মামুন (ছবিসূত্রঃ Click This Link)


২।
ধরেন একটা অলস ও নিস্কর্মা লোকের একটা ছেলে সন্তান হল। যেহে্তু তিনি অলস, সেহেতু নিজের ছেলের ভরণ-পোষণে তিনি অপরাগ। তাই তিনি নিজের ছেলেকে পাশের গ্রামের জমিদার বাড়ির দরজায় রেখে আসলেন। তারপরে দূর থেকে দেখতে লাগলেন, সেই ছেলেকে কেউ নেয় কিনা? যখন দেখলেন, স্বয়ং জমিদার নিজ থেকে সেই ছেলেকে গ্রহণ করলেন, তখন সেই অলস লোকটা খুব একটা আত্মতৃপ্তি পেলেন এই ভেবে যে তিনি নিজের ছেলেকে জমিদার বাড়িতে রেখে বড় করাচ্ছেন। সেই অলস লোকটা কোনদিনও তার সন্তানের কাছে বাবার দাবী নিয়ে আসে নাই, কারণ পাছে যদি কিছু দিতে হয়, কিছুটা খরচ যদি হয়ে যায়।

ওদিকে জমিদার নিজের সবকিছুর বিনিময়ে সেই ছেলেকে মানুষ করলেন। একদিন সেই ছেলেটা জমিদারের পরিচর্চা আর নিজ গুণে তার পালক পিতাকেও ছাড়িয়ে গেল। ছোট জমিদার থেকে পুরো রাজ্যের মালিক বনে গেল সেই ছেলেটি।

এইবার তাঁর অলস ও নিস্কর্মা “আসল পিতার” উদয় হল পিতার দাবী নিয়ে।

যেই পিতা ছেলের দুঃসময়ে পাশে না থেকে ছেলেকে সরিয়ে দিয়েছিল, সেই পিতাই আবার উদয় হয়েছে ছেলের সুসময়ে “পিতার দাবী” নিয়ে।

এইখানে অলস আর নিস্কর্মা পিতার দাবীটা যে খুব দৃষ্টিকটু একটা ব্যাপার এইটা বোঝার ক্ষমতাও এই জাতির দিন দিন লোপ পাচ্ছে।
যে মার্গারিটা মামুনকে পরির্চযা করে সোনা ফলালোর জন্য চেষ্টা করে গেল অন্য একটা দেশ, তখন কিন্তু তাঁর “আধা বাংলাদেশী” খেতাব নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা ছিলো না। তিনি কিন্তু এই দেশের হয়েই অলেম্পিকে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই সুযোগ আমাদের ততোধিক সুযোগ্য বোর্ড দেয় নাই। তাঁর যখন দরকার ছিল তখন এই দেশের কেউ তাঁর পাশে ছিলো না। কিন্তু যেই তিনি সফল হলেন, তখন সবাই তাকে "নিজের" বলে দাবী করা শুরু করল। আজকে যদি মার্গারিটা মামুন অলেম্পিকে কোন পদক না পেয়ে একেবারে শেষের দিকে অবস্থান করতেন, তখন কিন্তু তাঁর এই "আধা বাংলাদেশী" দাবীদারদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যেতনা।


৩।
যেহেতু বিদেশী থাকি, সেহেতু অনেক দেশের মানুষের সাথেই পরিচয় আছে।

এখন মার্গারিটা মামুনের “আধা বাংলাদেশী” গল্পটা যদি কোন বিদেশীকে বলি, সেও কিন্তু একই কথা বলবে, “তোমরা কি এমন করো যে তোমাদের দেশের সেরা প্রতিভাগুলোকে অন্য দেশের হয়ে সাফল্য অর্জন করতে হয়, কিন্তু তোমাদের দেশের হয়ে তাঁরা কিছু অর্জন করতে চায় না, বা করতে পারেনা?

আসলে উত্তরটা খুব সোজা-সাপ্টা, কিন্তু লজ্জায় কারো সামনে বলা যায় না যে আমাদের দেশের প্রতিভাগুলোকে আমাদের দেশে বিকশিত হতে দেয়া হয়না, বরং গলা টিপে হত্যা করা হয়।

যে মার্গারিটা মামুনের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি নাই, বাংলাদেশের হয়ে অলেম্পিকে অংশগ্রহণ করতে চেয়েও তার এই সামান্য আবদার রাখতে পারি নাই, এই দেশের নাগরিকত্ব দেবার মত উদারতা দেখাতে পারি নাই, এখন তার সাফল্যে ভাগ বসাতে আর কারো লজ্জা না লাগতে পারে, আমার লাগে।


৪।
যুগে যুগে অসংখ্য প্রতিভাবান মানুষ এই দেশে জন্মেছেন। দেশ-বিভাগ, ধর্মীয় রাজনীতি, সামাজিক অস্থিরতা সহ অসংখ্য কারণে এই দেশ থেকে প্রতিভাবান লোকেরা বিতাড়িত হয়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। এই সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের মানুষ আর সমাজ ব্যবস্থা এমনই যে বরেণ্য মানুষেরা এই দেশে জন্ম নিয়ে অন্য দেশে গিয়ে থিতু হয়, সাফল্য বয়ে আনে অন্য দেশের হয়ে। সেইসব বরেণ্য মানুষ হয়ত এই দেশে থাকলে চাটুকারদের কাছে নতি স্বীকার করে নোংরা রাজনীতির খেলায় হারিয়ে যেত। এই দেশ কখনোই প্রতিভার মূল্যায়ণ করে নাই, অথচ চাটুকারিতার সর্বোচ্চ সম্মান এই দেশে আছে। ব্যাপারটা যে "গর্বের" না, ব্যাপারটা "খুব লজ্জার" সেটা বুঝার মত ক্ষমতাও আমাদের দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।


৫।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পারিবারিক শেকড় ছিল যশোহরে। কিন্তু তিনি ভারতের হয়ে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারলে আমরাই এশিয়ার প্রথম নোবেল প্রাইজের দাবীদার হতে পারতাম।

অমর্ত্য সেনের জন্ম মানিকগঞ্জে। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলে আমরা আরো একটা নোবেলের অংশীদার হতাম।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ফরিদপুরে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধায়ের জন্ম ময়মনসিংহে। জীবনানন্দ দাসের জন্ম বরিশালে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম যশোহরে। ব্রজেন দাস ছিলেন মুন্সীগঞ্জের মানুষ। জগদীস চন্দ্র বসুর জন্মস্থান ছিলো ময়মনসিংহ। মিঠুন চক্রবর্তীর জন্ম বরিশালে। মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম কুষ্টিয়াতে। উনাদের সবার জন্ম বাংলাদেশে হলেও তারা সবাই থিতু হয়েছেন পাশের দেশে গিয়ে।

আর এই রকম বিখ্যাত লোকের লিষ্ট দিলে সেটা অনেক বড় হয়ে যাবে। এইসব বিখ্যাত লোকের সাথে নাম না জানা নিবেদিতপ্রাণ আরো অসংখ্য লোক দেশ ছাড়া হয়েছেন দেশ বিভাগের সময় বা তার কিছু আগে পরে। এই জাতিকে যারা পথ দেখাতে পারত, তাদের সবাইকে এই জাতি নিজ হাতে বিতাড়িত করেছে ধর্মের কথা বলে, জাত-পাত-দলের বিভাজনে ফেলে। এই দেশের কেউ তাঁদের প্রতিভার মূল্যায়ণ করে নাই, তাই এই জাতি দিনে দিনে মেধাশূণ্য হয়ে যাচ্ছে। আর এইখানে ইহুদী-নাসারা-ভারতের কোন ষড়যন্ত্র নাই, এই জাতির মন-মানসিকতাই দায়ী এর জন্য।

এখন অনেকেই বলবেন এইগুলা কিন্তু দেশ বিভাগের আগের কথা।

দেশ বিভাগের পর যেই প্রজন্ম দেশ ছাড়া হয়েছিল, তাদের সন্তানেরাই এখন পৃথিবী কাঁপাচ্ছে। আর সেইসব পৃথিবী কাঁপানো ছেলে-মেয়েগুলার সাফল্যে বাংলাদেশ নিজেদের গোঁফে তেল দিয়ে "আধা বাংলাদেশী" ভেবে খুব আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। অলেম্পিক বিজয়ী মার্গারিটা মামুন, অস্কার বিজয়ী নাফিজ বিন জাফর, খান একাডেমীর সালমান খান, ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম, নারী উদ্যোক্তা সুমাইয়া কাজীর শেকড় কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দেশান্তরী হয়েছেন। তাঁদের প্রতিভাবান পিতা-মাতাকে কিন্তু এই দেশ সেই সুযোগ-সুবিধা দেয় নাই। বরং, অনেকেই যারা নিজ উদ্যোগে দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরকে এমন গ্যাঁড়াকলে ফেলা হয়েছিল যে, তাঁরা আবার স্ব স্ব জায়গায় ফিরে গেছেন।

আর বর্তমান প্রজন্মের তো কথাই নাই। দেশে একটা ডিগ্রী মোটামুটি মানের ইউনিভার্সিটি থেকে জুটাতে পারলেই বেশিরভাগ মানুষই দেশ ছাড়ছেন, যাদের অনেকেই আর কোনদিন এই দেশে ফেরত আসবেননা। অথচ, সামান্য একটু মূল্যায়ণ, সুন্দর একটা কাজের পরিবেশ দিলেই কিন্তু কেউ আর উন্নত দেশের জীবন বরণ করে নিতে চাইবেনা। উন্নত দেশের বিশাল বেতনের হাতছানি উপেক্ষা করে বেশিরভাগই মেধাবী দেশে ফিরতে আগ্রহী। কিন্তু, যেই দেশে জান মালের নিরাপত্তা নাই, বুরোক্রেসী নিয়ম আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সবখানে, মেধাবীর মূল্যায়ণ নাই অথচ দলবাজী সম্মান সর্বোচ্চ, কাজের পরিবেশ তথৈবৈচ সেই দেশে তো মেধাবীরা নিজের জীবন দিতে আসবেনা। আর কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে এরাই অথবা এদের বংশধরেরা পুরা পৃথিবীকে বদলে দেবে তাদের কর্ম দিয়ে। আমি নিশ্চিত এরা দিবেই। তখন তাদের কাজের মূল্যায়্ণ করে যতই “আধা বাংলাদেশী” বলা হোক না কেন, তাতে তাঁদের অথবা বাংলাদেশের কিছুই যায় আসবেনা। আর এই সাফল্যের ভাগ বসানো তখন এক নির্লজ্জতা ছাড়া আর কিছুই না।

মেধাবীদের প্রকৃত মূল্যায়ণ করেই কিন্তু সাউথ কোরিয়া, মালয়শিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান আর চীন আজকের অবস্থানে এসেছে। এশিয়ার মধ্য থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াও এখন মেধাবীদের নিজ দেশে ফিরে আসার পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছে। আর বাংলাদেশ তাঁর প্রবাস ফেরত সন্তানদের কেমন অর্ভথ্যনা বিমানবন্দরে দেয় সেটা দেখে এই দেশের জন্য কিছু করার সাহস আর কারো হয় না। তাই সবাই আবার ফিরে যায়।


৬।
তবুও কিছু মানুষ বোকার মত এই দেশকে ভালোবেসে কিছু দিতে থেকে যায়, আর তার প্রতিদানও এইদেশের মানুষ ঠিকমত বুঝিয়ে দেয়।

এই দেশের মানুষই বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে। জিয়াউর রহমানও এই দেশের মানুষের হাতেই নিহত হয়েছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ মনসুর আলী, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান সহ অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক বাংগালিকে এই বাংগালিরাই হত্যা করেছে।

হুমায়ূন আজাদকে এই দেশের মানুষই কুপিয়েছে। অভিজিত দা’কেও এরাই মেরেছে। ডঃ ইউনুসকে এরাই হেনেস্তা করেছে।
কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতা আসিফকে এই দেশের পুলিশ পিটিয়ে হাতের মাংস থেতলে দিয়েছে। সাবেক জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ফুটবলার মুন্না প্রায় বিনা চিকিতসায় কিডনী রোগে মারা গেছেন। আরো অনেক কিছুই খুঁজলে পাওয়া যাবে, কিন্তু আর এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছা করছেনা।

অথচ, এই দেশের মানুষ রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাস্ট্রপতির আসনে বসিয়েছে। মতিউর রহমান নিযামীকে মন্ত্রী বানিয়েছে। এই দেশের অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা না খেয়ে, বিনা চিকিতসায় মারা গেছে অথচ ভন্ড রাজাকারেরা স্বাধীনতা পদক পেয়েছে।

যে মার্গারিটা চেষ্টা করেও বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারে নাই অথচ চেষ্টা না করেও গোলাম আজম বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছেন (১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন)।


৭।
এই দেশ শুধু প্রতিভাবানদের অবমূল্যায়ণ করে নাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাটুকার ও প্রতারকদের সম্মান দিয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকে ব্রজেন দাসের জীবনী বাদ দিয়ে "এভারেস্টজয়ী" মূসা ঈব্রাহীমের জীবনী ঢুকানো হয়েছে। মূসা ইব্রাহীমের "এভারেস্টজয়" সত্য ধরে নিলেও, সেটা রের্কড নয়, প্রথমবার নয়, তাই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করার মত কোন বিষয় নয়।

৮।
শুধু দেশীরা নয়, যেসব বিদেশী এই দেশের জন্য কাজ করেছে তারাও তাঁদের কাজের প্রতিদান পেয়েছেন এই দেশে মানুষের কাছ থেকে।

যেই ভেলরি টেইলর এইদেশে পক্ষঘাতগ্রস্থদের জন্য বিনামূল্যে চিকিতসার জন্য সি.আর.পি গড়ে তুললেন তার বেতন হল সাড়ে সাত হাজার টাকা (ঢাকা শহরে ড্রাইভারের বেতন এর চেয়ে বেশি) আর যেই আমলা সুই হয়ে সি.আর.পি গোছানোর নামে ঢুকলেন তার বেতন হয়ে গেল আড়াই লাখ টাকা। ভেলরি টেইলরের প্রতিবাদের কারণে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয় সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকে তাঁর নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানে।

এইদেশের মানুষ সস্তা নায়ক-নায়িকাদের খুব চিনে কিন্তু তাঁরা ভুলে গেছে ফরাসী সৈনিক জঁ ইউজিন পল ক্যুয়ের কথা, যিনি কিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য একটা বিমান ছিনতাই করেছিলেন। এই দেশের মানুষেরা তাঁকে মনে রাখে নাই। তাঁকে নিয়ে নির্মিত হয় নাই কোন ছবি, ডকুমেন্টারী অথবা অন্য কিছু।

এই দেশের বাচ্চারাও সস্তা ছবির গান জানে, পরিবারের সবাই মিলে হিন্দী ছবির গান শুনতে পারে, অথচ এই জাতির টিভিতে কখনো দেখানো হয়না কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। জর্জ হ্যারিসন এবং রবিশঙ্কর কর্তৃক সংগঠিত কনসার্ট দুটি ছিলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সচেতনতার জন্য। এই দেশের কেউ মনে রাখেনি এই কনসার্টের কথা। এই দেশের কেউ জানেনা বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার আর রিঙ্গোর কথা।

এই দেশের সবাই ভুলে গেছে গর্ডন গ্রীনিচের কথা, ডেভ হোয়াটমোরের কথা। এই দেশের ক্রিকেটের জন্য এত কিছু করেও তাঁরা ভিলেন হিসেবেই এই দেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন। অথচ, কত নিস্কর্মা আর দলবাজ লোক বোর্ডে ঢুকে দাপটের সাথে সবকিছু চালিয়ে নিয়ে গেছেন।

সেই সাত জাপানি নাগরিক যারা মেট্রোরেলের জন্য গুলশানের হামলায় নিহত হল, তাঁদের নামে কখনো নামকরণ হবেনা এই দেশের সাতটি মেট্রোরেল স্টেশনের নাম। এর জন্য কোন মানব-বন্ধনও হবেনা। অথচ "ফ্রী তাহমিদ" নামক জঙ্গির জন্য ঠিকই ক্যাম্পেইন করবে এই দেশের জনগণ।


৯।
আজকে বিবিসি বাংলায় ঢাকা উইমেন ম্যারাথন নিয়ে রিপোর্ট পড়লাম। তারপরে সেই রিপোর্টের উপর মানুষের কমেন্টগুলো দেখলাম। সত্যি বলতে কি, এই কমেন্টগুলো থেকেই বুঝা যায় এই দেশের মানুষের সত্যিকারের সার্বিক মানসিকতা।

এই কারণেই এই দেশে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে কোন ছবি নির্মিত হয়না, পাঠ্য-পুস্তক থেকে সবার আগেই তাঁদের জীবনী বাদ দেয়া হয়।
এই দেশের মানুষ রুমীর ভাত না খেয়ে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি অবস্থায় অত্যাচারে শহীদ হবার গল্প জানে না, তারা জানে চোর আরেফিন রুমীকে।

এই দেশের জনগণ অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে কোন মুভি বানায়নি, কোন পাঠ্যপুস্তকে এর কাহিনী নেই, আছে হাবিজাবি বস্তাপচা কাহিনীর সমাহারে গড়া ছবি।

এইদেশে বাফুফের কর্মকর্তারা বিশাল গাড়ি-বাড়ির মালিক, অথচ খেলোয়াড়দের কোন জিম নেই। দেশের সেরা ভারউত্তোলনকারী প্রাকটিস করেন গোডাউনে। খেলোয়াড়দের কোন কোচ নেই, নেই ট্রেনিং, নেই সুযোগ-সুবিধা। নেই কোন নিরাপত্তা। তারপরেও এই জাতি তাদের কাছ থেকে সাফল্য আশা করে। আবার কেউ সাফল্য পেলে তারা জামার দৈর্ঘ্য, আস্তিকতা-নাস্তিকতা, তাঁর বউ-মা-বোন সহ চৌদ্দগৌষ্টির কষ্টি মাপতে বসে।

এরা জাতির পিতাকে হত্যা করে, নোবেল জয়ীকে আস্তাকূড়ে ফেলে দেয়। আবার আশা করে মেধাবীরা এইদেশে এসে চাটুকার আর তৈলবাজদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে।

এখন হয়ত এই দেশের জনগণ "আধা বাংলাদেশী" হয়ে খুব আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন, ভবিষ্যতে "সিকি বাংলাদেশী" হিসাবে আত্মতৃপ্তি পেতে হবে।

মানসিকতা চেঞ্জ না করলে এইটাই হবে বাংলাদেশের একমাত্র সম্বল।


১০।
এই লেখাটি অসম্পূর্ণ। আরো অসংখ্য ঘটনা লিপিবদ্ধ করা যাবে এই লেখার প্রেক্ষিতে, কিন্তু সেই চেষ্টা করার ইচ্ছা আর করছেনা। এই লেখার তথ্যগুলোতে কিছুটা গড়লিম থাকতে পারে, যেহেতু তথ্যগুলো স্মৃতি থেকে লেখা হয়েছে। কিন্তু, লেখার মূল সুরটা একই থাকবে।


১১।
লেখাটি ফেসবুক থেকেও পড়তে পারেনঃ
ফেসবুক


মার্গারিটা মামুনের উইকি পেজঃ
উইকি
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×