somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভারত ভ্রমন (ঢাকা-কোলকাতা-আজমের ভায়া বিহার, ঝারখান্ড, উত্তর প্রদেশ আর রাজস্থান)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যে ভ্রমন পিয়াসু তা আমার আগে জানা ছিলো না। গত বছর কক্সবাজার যাবার পর তা বুঝেছিলাম। কঞ্জারভেটিভ পরিবার তাই বেশি একটা ঘরে বাইরে যাওয়া হয় না। আগে পিকনিক গুলো তে এটেন্ড করতাম কিন্তু ওখানে বমি হতো বলে স্বপ্ন মাটি হতো।গত ১৪ ই জানুয়ারী তে গেলাম প্রথম দেশের বাইরে। পাশের দেশ। তবে এটাই বিদেশ। বাসা থেকে বিদায় নেবার সময় কান্না এসে গিয়েছিলো যদি কোনো কারনে বেচে না ফিরতে পারি।

সোহাগ নন-এসি তে করে বেনাপোল গেলাম আর সেখান থেকে সোহাগ এ করেই ইমিগ্রেশন পার হবার পর কোলকাতা নিউমার্কেট পউছালাম

উদ্দেশ্য ছিলো আম্মাকে নিয়ে কোলকাতার মুকুন্দপুর এর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতাল এ যাওয়া সেখান থেকে রাজস্থান এর আজমের। কোলকাতায় আম্মা যতদিন হাসপাতাল এ ভর্তি ছিলো ততদিন আমি একাই ছিলাম মামার সাথে। অনেক বেশি একা ছিলাম। পরে আম্মা আশার পর একটু শান্তি পেয়েছিলাম।

বেনাপোল পার হয়েই একটা আইডিয়া সিম কিনেছিলাম। এই ফাকে কোলকাতা ঘুরা হল। এম্বাসেডর এর ট্যাক্সি তে করে ঘুরা আর কি। বেশি ঘুরা হয় নি। ওদের ট্রাফিকিং সিস্টেম টা ভাল লেগেছে আমার। রাস্তায় শুধু সিগ্ন্যাল জ্যাম নাই। তবে কিছু কিছু এলাকা এর পরিবেশ খুবি বাজে। নিউ মার্কেট এলাকা টা আমাদের টার মতন ই ঘিঞ্জি। কিন্তু রাস্তা এর পাশে বার আর ওপেন মদের দোকান গুলাই বুঝিয়ে দেয় যে ওদের দেশের যে কি হাল। ছেলেদের কি বলবো, মেয়ে দের ড্রেসআপ দেখে লজ্জা লেগেছে, কিছু ক্ষেত্রে আমার মন চেয়েছে আমার ওভার কোরট টা অদের গায়ে জড়িয়ে দেই। আল্লাহ রহম করেছে যে আমার আপন বোনটা পর্দা করে! আর কিছু বললাম নাহ।

কোলকাতা এর মানুষ বড্ড কৃপণ। অকথ্য। এমন কি ৭ বছর যাবত আমার মামা ওদের সাথে থেকে তিনি ও এমন হয়ে গেসে। কোলকাতা এর ওরা বাংলাদেশের মানুষ শুনে অনেক সম্মান দিলো। আমার শুদ্ধ বাংলা শুনে বলে আমি খুব সুন্দর বাংলা বলতে পারি। সবচেয়ে বিপদ খাওয়া দাওয়া। নামের সাথে খাবার এর চেহারা বেশির ভাগেরই মিল নাই। অনেক ভুগতে হয়েছে এ কারনে।

কোলকাতা ট্রাভেলস থেকে শিয়ালদহ থেকে আজমের এর যাওয়া আসার ট্রেইন এর টিকেট কিনলাম। শিয়ালদহ নাকি অনেক বড় রেলস্টেশন। স্টেশন এ আমাদের কম্পারটমেন্ট এ বাংলাদেশি কয়েকজন ছিলো। ওনাদের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। একসাথেই আজমের গেলাম। এক সাথেই থেকে ছিলাম। আজমের যেতে ৫ টা রাজ্য ঘুরতে হয় ভারতের। পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, ঝারখন্ড, উত্তর প্রদেশ আর রাজস্থান। আজমের এর ট্রেন এ উঠে ৩০ ঘন্টার ভ্রমন শেষে গেলাম আজমের। তখন রাত ৪ টা বাজে। আজমের এলাকা তে বাংলাদেশি শুনে কেউ রুম দিচ্ছিলো নাহ। না হোটেল না গেস্ট হাউজ। খুব অবাক লাগলো। এতো ভেদাভেদ? আমরা কি মানুষ নাহ? এটা কি ঠিক? এটাই কি ভারতের আধুনিকতার অংশ? পরে মামার কোলকাতা এর বাসার ঠিকানা দিয়ে মানে মিথ্যে বলে জান্নাত হোটেল এ রুম নিলাম। পাসপোর্ট এর ফটোকপি জমা দিতে হইসিলো। তারপর রুমে গিয়ে ঘুম।

পরদিন ঊঠেই মাজার জিয়ারত করলাম। কিছু ধান্দাবাজ তো ছিলোই কিন্তু বেচে গেসি আর কি। তো বিকেল এ হঠাত আমাদের সাথে থাকা এক বাংলাদেশি বলল আনা সাগার লেক দেখতে যাবে, অটো তে উঠে আমরা ও গেলাম। জায়গা টা খুব সুন্দর আর পরিষ্কার। তবে পানি টা অপরিষ্কার। সেখান থেকে তারাগার পাহার দেখা যাচ্ছিলো যা ছিলো ভূমি থেকে ২৪০০ ফুট উপরে। উৎসুক ছিলাম ওই পাহাড়ে উঠার জন্য। যেই কথা সেই কাজ। গেলাম। উঠতে খুবি ভালো লাগছে। ওখানে একটা মাজার ছিলো ওটা জিয়ারত করে নামতে নামতে সন্ধ্যা তার উপর খাড়া পাহাড় এর আকা বাকা পথ। ভয়ানক রাস্তা আর ভীষণ ভয় পাইসিলাম। চালক আমার বয়সি তবে চতুর ও অভিজ্ঞ ছিলো বিধায় বেচে গেসি। তবে তারাগার পাহাড় থেকে আজমের শহড় দেখতে ভয়ানক সুন্দর লাগছিলো। উপরে উঠতেই কান বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

ওখান থেকে এসেই পর দিন কোলকাতা তে ফিরলাম। ৩০ ঘন্টা এর ভ্রমন পথ ৩৮ ঘন্টায় শেষ হলো। পথ নিজেদের কম্পারট্মেন্ট এ কিছু ভারতীয়দের সাথে কথা বললাম সম্পুরণ হিন্দী তে। ভাগ্য ভালো যে হিন্দী ছবি দেখতাম। নাইলে যোগাযোগ এ অনেক ঝামেলা হয়ে যেতো। ওরা বল্লো আমি নাকি আজমের এর হিন্দী ভাষী দের চেয়ে স্পষ্ট হিন্দী বলি আর সুন্দর করে বলি। ওদের সাথে অনেক কথা হল। একজন এন.টি.পি.সি এর ইঞ্জিনিয়ার (ঝারখন্ড), একজন শিক্ষক (উত্তর প্রদেশ), আর একজন অবসর প্রাপ্ত বি.এস.এফ এর সুবেদার (রাজস্থান)। সবার সাথে ওদের নিয়ম নীতি এর ব্যপারে কথা হলো। ওরা আমার অনেক প্রশংসা করলো। আর বল্লো যে বাংলাদেশীরা যে এতো টা আন্তরিক তা নাকি তাদের জানা ছিলো না।তবে ওদের সাথে কথা বলে আমার ও অনেক ভালো লেগেছে। আমার ব্যবসা এর কথা শুনে ওরা তো অবাক।

সেখান থেকে কোলকাতা এসে আবার চিতপুর স্টেশন থেকে ভোর ৬ টায় চেক ইন করিয়ে ৭ টা ১০ এ ট্রেইন এ করে ঢাকা এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেখানে আমাদের প্রথম শ্রেনী এর কম্পারট্মেন্ট ছিলো দুজন হিন্দু পুরুষ(৬০) ও মহিলা(৫০) লোকটা বাংলাদেশি, বরিশাল এর। কিন্তু এখন ব্যাঙ্গালোর থাকেন। ৪৫ বছর পর দেশ আসছে এক বন্ধুর বাসায়। তবে বন্ধু ফোন ধরছে নাহ। কোলকাতা এর গেদে স্টেসন এ ইমিগ্রেশন এ চেক ইন করতে লাগেজ নামাতে হলো আমার আর আম্মা এর অনেক সময় লাগ্ল ১০০ রূপী ঘুষ ও দিতে হইসে। ৩০ মিনিট অপেক্ষা ও করতে হইসে। তারপর আবার সব নিয়ে ট্রেন এ উঠলাম। বাংলাদেশ এ সীমান্দতে ঢুক্রতেই শান্তি পেলাম। দর্শনা স্টেশন এ এসে আবার চেকশন। এবার বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন। আবার নামাইলাম লাগেজ ট্রেন থেকে।ট্রলী খুব কম ছিলো আবার ছিলো লাইন ফর্ম পূরন। হাত পা আমার শেষ। তারপর ট্রেন এ। সেখান থেকে ঐ ভারতীয় দের সাথে অনেক কথা হলো মাঝে অনেকক্ষন ঘুমালাম। ওনাদের পুরা বাংলাদেশ এর বর্ণনা দিলাম। উনারা ও একি কথা বল্লো যে বাংলাদেশীরা যে এতো টা আন্তরিক তা নাকি তাদের জানা ছিলো না।তবে ওদের সাথে কথা বলে আমার ও অনেক ভালো লেগেছে। অনাদের আমি সি.এন.জি করে দিসি তারা মিরপুর যাবে বলে। তারা কাল বরিশাল যাবে সেখান থেকে এসে তারা আমার সাথে আবার যোগযোগ করবে। আমাদের বাসায় আনবো তাদের। তিনি ও দাওয়াত দিয়েছেন যাতে ব্যাঙ্গালোর গেলে অবশ্যি তাদের বাসায় যাই।

ঢাকাতে আইসাই সেই গেঞ্জাম শুরু। জ্যাম। ৯। টা ৩০ এ বাসায় আসচি। আল্লাহ রে! বাচাও!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! এই ছিলো ১৪ তারিখ রাআত থেকে ২৭ তারিখ রাত নাগাদ আপডেট :

ছবি এর লিঙ্ক এ যান এখানে :)
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×