somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন রাত একটায়

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত একটার একটু বেশি বাজে। প্রচণ্ড ভ্যাঁপসা গরম আবার ইলেক্ট্রিসিটি নেই। এই গরমে ঘুম আর আসবেনা। ঘরের মধ্যে থেকে সিদ্ধ হওয়ার থেকে ছাদে যাওয়া বেশি ভাল মনে হল। যেই কথা সেই কাজ। চলে গেলাম পাঁচতলার ছাদে। আসলেই ছাদে বেশ ভাল ঠান্ডা বাতাস বইছে। পুরো এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিপাশে। আলোক দূষণ কম থাকায় আকাশটাও বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মিটমিট করে প্রচুর তারা দেখা যায়। ছোটবেলার আকাশের দিকে তাকালেই মনে হতো এতো তারা গুণে শেষ করতে পারবো না। কিন্তু বড় হতে হতে আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিঙের সংখ্যা বাড়তে থাকলো আর আলোক দূষণও বাড়তে থাকলো। ফলে রাতের আকাশে তারা দেখাটাই একটা কঠিন কাজ হয়ে যায়। আজ বহুদিন পর মনে হল সেই ছোটবেলার মতো তারা গুণে শেষ করতে পারবো না। ছাদের চিলেকোঠার উপর উঠে সেখানে শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখতে থাকলাম। প্রচুর বাতাস লাগছে গায়ে। আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে ছোটবেলায় শোনা অনেক কাহিনী মনে পড়ে যেতে থাকলো।

ছোটবেলা শুনেছিলাম অনেকে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আগুনের গোলা ছুটে যেতে দেখতো। সেগুলো নাকি জ্বীন। তারা আগুনের তৈরি। তাই যখন তারা রাতের বেলা কোথাও দ্রুত যেতে চায় তখন আগুনের গোলার মতো ছুটে যায়। গ্রামের দিকেই এসব বেশি দেখা যেত তবে শহরের আকাশেও নাকি কেউ কেউ দেখেছে। আমি ছোটবেলা শুনতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম আমিও কবে দেখবো। ছাদে উঠে অনেক বসে থেকেছি কিন্তু কখনো আমার চোখে কিছুই পড়েনি। বড় হতে হতে একসময় ভাবতে থাকি হয়তো যারা দেখেছে তারা ভুল দেখেছে। অথবা উল্কা ছুটে যেতে দেখেছ তাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে জ্বীন মনে করেছে। তবে ব্যপারটা এমন না যে আমি জ্বীনে বিশ্বাস করিনা। মুসলিম হিসেবে আমি অবশ্যই জ্বীনে বিশ্বাস করি। তবে মুরুব্বীরা হয়তো অন্যকিছু দেখেই জ্বীন ভেবে নিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের ডানদিকে হঠাৎ কিছু একটা নড়াচড়া ধরা পড়লো। পাশে তাকাতে দেখি পশ্চিমের আকাশে একটা আগুনের গোল বলের মতো কিছু একটা উড়ে যাচ্ছে। জিনিসটাকে দেখে মোটেও উল্কার মতো লাগলো না। জিনিসটা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে উড়ে যাচ্ছে। উল্কা যেমন চোখের পলকে একটা সাদা রেখার মতো চলে যাওয়ার কথা জিনিসটা সেভাবে যাচ্ছেনা। বেশ আস্তে আস্তে যাচ্ছে। তার সামনের দিকটা আগুনের গোলার মতো গোল আর পিছন দিকটা একটা লেজের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে উড়ছে। আমি আগুনের গোলাটা দেখে ঝট করে উঠে বসলাম। প্রচণ্ড বিস্ময়ে আমি চোখ বড় বড় করে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আগুনের গোলাটা ঠিক আমার চোখের সামনে দিয়ে দূর পশ্চিম আকাশ বরাবর কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে গিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে ভাবতে থাকলাম যে জিনিসটা নিয়ে আমি চিন্তা করছিলাম ঠিক সেই জিনিসটাই আমার চোখের সামনে সাথে সাথে ঘটলো কিভাবে?! এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে?

এরপর আমার হঠাৎ মনে পড়লো আব্বার কাছে শোনা এক ঘটনা। আমার আব্বা এক সময় অনেক রাতে ছাদে উঠে পায়চারী করতেন। তার কাছে থাকতো একটা দুরবিন। সেই দুরবিন দিয়ে আব্বা রাতের আকাশে কি কি জানি দেখার চেষ্টা করতেন। একদিন তিনি এইভাবে পায়চারী করছিলেন। তখন তিনি হঠাৎ দেখেন একটা অবাক করা জিনিস। আমাদের বাড়ির সামনেই একটা রাস্তা। রাস্তাটা দিনের বেলায় বেশ ভাল ব্যস্ত থাকে আর শহরের মাঝের দিকের বেশ বড় একটা রাস্তা বলা যায়। সেই রাস্তার ওপাশে সেই আমলে বেশকিছু দোতলা একতলা বাড়ি ছিল। সেই বাড়িগুলোর সামনের দিকে ছিল বেশ কিছু নারিকেল গাছ। আর পিছনদিকে ছিল নারিকেল গাছ আর একটা পুকুর। সেই পুকুরের আশেপাশে আরো কিছু টিনের ঘর ছিল কিন্তু সেগুলো আমাদের বাড়ি থেকে আর দেখা যেতোনা। আমাদের বাড়ির ঠিক সোজা যে দোতালা বাড়িটা আছে সেই বাড়ির সামনে একটা বড় উঠোন আছে আর তার সামনে কিছু নারকেল গাছ। আব্বা একরাতে পায়চারী করতে করতে দেখেন ঐ বাড়িটার পিছন থেকে অনেক লম্বা নারিকেল গাছের চেয়ে অনেক লম্বা সাদা মানুষের আকৃতির একটা কিছু সব দোতালা তিনতালা বিল্ডিং গুলো ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে পুকুরের দিকে চলে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত পুকুরটা একবারে পার করে ওপাড়ে চলে যায়। আমার আব্বা প্রচণ্ড সাহসী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন এমনভাবে যে একটু নড়াচড়া করলে সেই লম্বা জিনিসটা আব্বাকে দেখে ফেলতে পারে। জিনিসটা চোখের আড়াল হলে আব্বা সেদিন নিচে এসে শুয়ে পড়েন।

ছাদে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আমি সেই বিল্ডিং গুলোর দিকে তাকাই। সেখানে এখন আর আগের মতো সেই দুই তিনতলা বাড়ি গুলো নেই। দশতালা আধুনিক বিল্ডিং হয়ে গেছে। নারিকেল গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়ে গেছে অনেক আগে। ঐ বাড়িগুলোর পিছনদিকে যে পুকুরটা ছিল সেইটাও ভরাট করা হয়েছে। আমি ভাবছিলাম এখন আর এতো লম্বা বিল্ডিং গুলো ডিঙিয়ে যাওয়ার জন্যে সেই জিনিসগুলোও হয়তো নেই। এটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমি বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দেখি সেই দশতালা বিল্ডিঙের পিছন থেকে অনেক লম্বা সাদা মানুষের আকৃতির কিছু একটা সেই বিল্ডিং ডিঙিয়ে আমাদের বাড়্রির দিকে এগিয়ে আসছে। এখন আর আশেপাশে আগের মতো এতো গাছপালা পুকুর কিছুই নেই। আমি খোলা ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছি। ঐ জিনিসটা এদিকে আসতে থাকলে আমাকে সহজেই দেখতে পাবে। প্রচণ্ড ভয়ে আমি পাথরের মতো জমে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দেখলাম সেই লম্বা সাদা জিনিসটা দশতলা বিল্ডিংটা ডিঙিয়ে রাস্তায় একটা পা ফেলল। এরপর একবারে ঠিক আমার মাথার উপর দিয়ে আমাদের পাঁচতলা বিল্ডিংটা ডিঙিয়ে তার পরের পা ফেলল আমাদের বাড়ির পিছনদিকে। জিনিসটা এতোটাই লম্বা ছিল যে আমি তার মাথার দিকটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। এরপর সে এক এক করে আরো বিল্ডিং ডিঙিয়ে আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল।

আমি আর এক মুহুর্তের জন্যেও ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইলাম না। না জানি ছোটবেলায় শোনা কোন কোন কাহিনী আবার মনে পড়ে যাবে আর সেটাই আমার সাথে ঘটতে শুরু করবে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমার পা চলতে চাইছিল না। তারপরেও আমি কোনভাবে সিঁড়ি বেয়ে নিচে আমার ঘরে চলে এলাম। আর তখনি ইলেক্ট্রিসিটিও চলে এলো। বাকিরাত আমি লাইট জ্বালিয়েই ঘুমিয়ে থাকলাম। এরপর আমি অনেক চিন্তা করেও বের করতে পারিনি আমি সেদিন যা যা ভেবেছি ঠিক তাই কিভাবে আমার সাথে ঘটলো। বাড়ির কাউকে এসব ঘটনা আমি শেয়ারও করিনি পাছে কেউ ভয় পায়। এরপর থেকে রাতে কারেন্ট গেলে আমি অনেকবার ছাদে গিয়েছি, অনেক পুরনো শোনা কাহিনী মনে করে চিন্তাও করেছি। কিন্তু ওমন অদ্ভুত ঘটনা আর কখনোই ঘটেনি আমার সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×