০১:
দক্ষিণের জানালাটা খোলা। জানালার পাশের শিমুল গাছটা ঠায় দাড়িয়ে আছে। দক্ষিণের বাতাসের ধাক্কা জানালার পর্দাটাকে একটু ভিতরের দিকে সরিয়ে দিচ্ছে। জানালার ধারে দাড়িয়ে আছে চব্বিশ বছরের টগবগে যুবক শাহিন। দৃষ্টি তার একটু দুরের সেই জানালাটার দিকে। দক্ষিণ পাশের জানালার ধারে একটি সপ্তদর্শী অপরূপ মেয়ে দন্ডায়মান। মেয়েটার নাম শ্যামা। একনজর সে দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল শাহিন। চিন্তিত মুখে কি যেন ভাবছে সে। এইতো সেদিন রাস্তার ধারে মেয়েটির সাথে সরাসরি দেখা। অবশ্য এর আগে যে তাকে দেখেনি তা নয়। তবে এর আগে কোনদিন তার সাথে সরাসরি দেখা বা কথা হয়নি। সেদিন চিঠি পোষ্ট করার জন্য পোষ্ট অফিসের দিকে যাচ্ছিল সে। মেয়েটা তাকে দেখেই তার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে বলল- আপনার নাম শাহিন না?
হ্যাঁ
আপনি নিশ্চয় রাজু ভাইয়াদের বাসায় থাকেন?
হ্যাঁ
দুইটি হ্যাঁ ছাড়া সেদিন আর কোন কথাই হয়নি মেয়েটার সাথে। এরপর তার সাথে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে শাহিন- মেয়েটি তাকে কি যেন বলতে চায়। শাহিন এতটা অপরিপক্ক নয় যে- মেয়েটা কি বলবে তা বুঝেনা। তবুও সে না জানার ভান করে তাকে পাশ কাটিয়ে চলতে লাগল। কিন্তু আজ হঠাৎ করে রাস্তায় দেখা হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটা তার হাতে গুঁজে দিয়েছে এক টুকরো রঙ্গিন কাগজ। বাসায় এসে কাগজটা পড়ে শাহিনের ধারনাটাই সঠিক বলে প্রমাণিত হল। সে যা ভেবেছিল তাই।
০২:
বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান আশরাফ। বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অবসর নিয়েছেন কিছুদিন হল। ছোট ভাই তৌহিদ দশম শ্রেণীতে পড়ে। তৌহিদের বড় আরো দুইটি বোন। বিয়ের বয়স হয়েছে এখনো বিয়ে দেয়া হয়নি। আশরাফ সদ্য বি.এ পাশ করেছে। একটা চাকুরির জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে সে। জানেনা সহসা চাকুরি পাবে কিনা। তবে এই মুহূর্তে তার চাকুরির বড্ড বেশি প্রয়োজন। চাকুরি না পেলে হয়তো ছোট ভাইটির প্রাইভেটের বেতন দেয়া হবেনা। বোন দুটিকে ভালোভাবে বিয়ে দেয়া যাবে কিনা সন্দেহ। বাবা-মায়ের সপ্ন সে চাকুরি পাবে পরিবারের অভাব ঘুচবে। তৌহিদের পড়ালেখা হবে। বোন দু’টির বিয়ে দেয়া হবে। আশরাফ জানেনা চাকুরি নামের সোনার হরিণ কবে ধরা দেবে তার জীবনে।
০৩:
মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আগুনের মত রূপ। আর গুনের কথা নাইবা বলা হর। এস.এস.সি তে জি.পি.এ ৫ পেয়েছে। বড্ড সুন্দর গানের গলা। কি চমৎকার হাতের লেখা। মেয়েটাকে খুব পছন্দ হয়েছিল তার। তাকে নিয়ে কি সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে সে। চাকুরি পেলেই মেয়েটাকে বিয়ে করবে সে। তারপর ছোট্র একটা চিলেকোটা.... একটা সংসার........ এক টুকরো সুখ। না আর ভাবতে পারেনা সে। কিন্তু সে নিরুপায়।
০৪:
আশরাফ হোসেন শাহিনের জীবনে স্বপ্নরা এসে ভিড় জমিয়েছে। এত স্বপ্ন! কোন স্বপ্ন রেখে কোনটাকে বাস্তবায়ন করবে সে। যে মা-বাবা তাকে তিল তিল করে মানুষ করেছে; তাদের স্বপ্ন সে কিভাবে স্বার্থপরের মত ভেঙ্গে দেবে। অপর দিকে শ্যামার কি হবে। সে যে বলেছে শাহিনকে ছাড়া তার জীবন চলবেনা। কি করবে এখন শাহিন। না! একটি স্বপ্ন রক্ষা করার জন্য তাকে আরেকটি স্বপ্ন বিসর্জন দিতেই হবে । তবে দ্বিতীয় স্বপ্নটাই বিসর্জন দেয়া হোক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



