হুট করেই বিপুল আর মিতার বিয়েটা হয়ে গেল। বিপুলের পরিবার থেকে প্রস্তাব আসার পর খুব একটা দেরি করেনি মিতার পরিবার। তাছাড়া বিপুলকে অনেক আগ থেকেই খুব ভালো করে চেনে মিতার বড় ভাই ডাক্তার আনোয়ার।
এইতো সেদিনের কথা তখন বিপুল একটি কম্পিউটার এডুকেশান সেন্টারের ফ্যাকাল্টি। একদিন বড় ভাইয়ের সাথে করে এসে সেই কম্পিউটার সেন্টার এ ভর্তি হল মিতা। মিতার ক্লাস নেবার দায়িত্ব পড়ল বিপুলের উপর। একটু গম্ভীর প্রকৃতির হলে টিচিং এ বিপুলের তুলনা কেবল বিপুলই। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল বিপুলের পাঠদানে। মিতা বিপুলকে টিচার বলে ডাকত। শুনতে ভালোই লাগত বিপুলের। মিতার কথার বলার স্টাইল ছিল খুবই ভালো। ও কথা বললে মনে হত কেউ যেন ১০০% শুদ্ধ উচ্চারনে কবিতা আবৃত্তি করে চলছে। অনেক সময় বিপুল যখন কোন কিছু বোঝানোর চেষ্টা করত মিতাকে সে হুট করেই একটা ভুল ধরে বসত। বলত টিচার এ উচ্চারনটা কিন্তু আপনার ঠিক হয়নি। এটা এভাবে না হয় ওভাবে হবে। শুনে মনে মনে হাসত আবার খুব ভালোও লাগত তাঁর।
একদিন বিপুলের কি একটা জরুরী কাজ ছিল। এদিকে মিতাও ক্লাসে এসে বসে আছে। শেষে বিপুল এসে ওকে একটা এপ্লিকেশান টাইপ করার জন্য দিয়ে গেল। বলল যে তুমি একটু প্র্যাকটিস কর আমি আসছি। কিছূক্ষন পরে বিপুল এসে দেখে যে মিতা এক লাইনও টাইপ করেনি। জিজ্ঞেস করলে বলল আমার ইচ্ছে হয়নি তাই করিনি। খুব রাগ হল বিপুলের। কিছূ বলল না। ক্লাস কো-অর্ডিনেটরকে জানিয়ে দিল কাল থেকে আমি আর মিতার ক্লাস করাতে পারবোনা। আপনি বরং রাহাত সাহেবকে ক্লাসটা দিন।
এরপর থেকে মিতা আসত আর রাহাত স্যারের কাছেই ক্লাস করত। পুরো দুইমাসে একবারের জন্যও মিতার সাথে কোন কথা বললনা এবং কি তার দিকে ভালো করে তাকায়ওনি বিপুল। শেষ যেদিন মিতার ক্লাস সে দিন জানালার পাশে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিল বিপুল। হঠাৎ করে মিতা পাশে এসে বলল যে
টিচার মনটা কি আজ খূব খারাপ?
কিছুক্ষন চুপ থেকে বিপুল বলল না।
সে রাতেই বিপুলের মোবাইলে প্রথম কল আসলো মিতার কাছ থেকে।
কলটা রিসিভ করল বিপুল।
হ্যালো কে বলছেন?
আমি মিতা
কোন মিতা?
চিনতে পারছেন না?
পরিচয় না দিল চিনবো কি করে
চিনার দরকার নেই। আমি আপনাকে চিনি। আপনার নাম টিচার।
মিতার কাছ থেকে টিচার শব্দটা শুনে কোথায় যেন বিপুলের সব রাগ হারিয়ে গেল। বলল- কেমন আছ?
এইতো ভালো টিচার। আপনাকে খুব মনে পড়ছিল তাই ফোন করলাম।
সেই থেকে শুরু। ক থেকে কমলাকান্তের দপ্তর পর্যন্ত আলোচনা। একদিন মিতার সাথে কথা না বলতে পারলেই মনটা যেন কেমন কেমন করত বিপুলের। আর একদিন বিপুলের ফোন না পেলেই কান্না শুরু করে দিত মিতা। দুজনের ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে আলোচনা হত। আজ আবার বিকেলে বিপুলের ফোনটা বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখে মিতার ফোন।
হ্যালো কি ব্যাপার আজ হঠাৎ করে বিকেলে ফোন দিলে যে। এই সময়েতো কখনো ফোন করোনা তুমি
না হঠাৎ তোমাকে মনে পড়ল তাই
ফোন করেছ ভালোই হয়েছে। আজ কেন জানি ভালো লাগছেনা তাই রিকশা করে ঘুরতে বেরিয়েছি। তোমারতো সমস্যা, না হয়ে তোমাকে সাথে নিয়ে,বের হতাম।
তাই? তুমি বুঝি রিকশায় ঘুরা পছন্দ কর?
হ্যাঁ
আর কি কি পছন্দ কর?
অনেক কিছু। এখন বলব না। বিয়ের পরে বলব।
বাহ! শখ কত আবার বিয়ে
আচ্ছা যাও তোমাকে বিয়ে করব না
কি বললে আমাকে বিয়ে করবে না। তো শুনি কাকে বিয়ে করবে?
মিতাকে। আচ্ছা মিতা বলতো তুমি কি কি পছন্দ কর?
এখন না বিয়ের পরে বলব
আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছ। আচ্ছা পছন্দটা থাক তুমি কি কি অপছন্দ কর তাই বল
আমি?
হ্যাঁ
বলব?
বলনা প্লিজ
আমি পছন্দ করিনা মিথ্যে কথা বলা। তারপর কি যেন ভুলে গেছি। ও মনে পড়েছে নাক ডাকা।
ইন্টারেষ্টি ব্যাপার
নিউ টপিকস
হতে পারে
এই শুন কাল কিন্ত মামা যেতে পারে তোমার ভাইয়ার চেম্বার এ
কেন?
কেন আবার। আপনাকে তার ভাগনের বউ করে নিয়ে আসতে
আমি ভাইয়াকে বলব যে ভাইয়া আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করবনা
আচ্ছা ম্যাডাম আপনার ইচ্ছা।
আজ মনে হয় মিতার চেয়ে সুখি কেউ নেই পৃথিবীতে। তার পাশে শুয়ে আছে বিপুল। ঘড়ির কাটা রাত চারটার ঘরে। বিপুলকে যতটানা দুর থেকে দেখে ভালোবেসেছে মিতা আজ সন্ধ্যা রাত থেকে বিপুলের কথা শুনে ভালোবাসাটা একলাফে যেন হিমালয় অতিক্রম করে ফেলেছে। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে বিপুল। বিপুলের কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মিতা। অবাক চোখে তাকে দেখছে। এক ভালোলাগা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে মিতাকে। কিসের যেন একটা স্পষ্ট শব্দ টের পাচ্ছে মিতা। কোথা থেকে আসছে? বুঝতে পারে মিতা। বিপুল নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছে। যে জিনিসটা মিতার অপছন্দের ছিল সেটাই আজ সারাজীবনের জন্য তার সঙ্গী হল। মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল তার। কি করবে সে এখন? পুনরায় বিপুলের মুখের দিকে তাকায় সে। ভালবাসার কাছে সবই তুচ্ছ। মাথাটা বিপুলের বুকে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



