somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন সার্চলাইট

২৫ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানা কথাগুলোই আবার বলি।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জানতেন, আওয়ামী লীগ একবার ক্ষমতায় গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের আর শোষণ করতে পারবে না। তাই কোনো অবস্থাতেই বাঙালিপন্থী কোনো দল যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক রইলেন। কিন্তু ইয়াহিয়ার শত সতর্কতা সত্ত্বেও ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল আওয়ামী লীগ। দুশ্চিন্তায় কপাল কুঁচকে উঠল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের হাতে। না, কোনো অবস্থাতেই বাঙালিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না রাষ্ট্রক্ষমতা। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বাঙালিদের দূরে সরিয়ে রাখার প্রয়াসে শুরু হলো এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
এ কথা এখন সবাই জানে, ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ঢাকার বুকে ট্যাংক নেমেছিল। সঙ্গে ছিল ভারী কামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আক্রমণ পরিচালনা করেছিল, তাদের সঙ্গে হেডকোয়ার্টারের ওয়্যারলেসে কী কথপোকথন হয়েছিল, সেটা একটু জানিয়ে দেওয়া যাক।
৮৮ শীর্ষক সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত ইউনিটকে কন্ট্রোলরুম বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিকার হলো কত? চোখে যা দেখেছ, তাতে কত আন্দাজ হয়? কত খতম, জখম বা বন্দী? ওভার।’
‘মনে হয় শ তিনেক। ওভার।’
‘বাহ! বেশ! তিন শ খতম? না বন্দী? জখম? ওভার।’
এবার শীতল কণ্ঠে জবাব আসে, ‘না, না, একেবারে সাফ। খতম। ওভার।’
‘খাসা। খাসা। খুব ভালো কাজ। চালিয়ে যাও, কোনো পরোয়া কোরো না। তোমার কাছে কৈফিয়ত চাইবার কেউ নেই। আবারও বলছি, যা করছ—জবাব নেই। সাবাস। বড় খোশ খবর। ওভার।’
পরিকল্পিতভাবে চালানো এই অপারেশনের যে জবাবদিহি ছিল না, তার প্রমাণ এই কথোপকথন। পুরো ঢাকা শহর, শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ হত্যার লাইসেন্স পেয়েছিল তারা। এ কারণেই দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছিল নয়া বাজার। আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। গোলা এসে পড়ল ইত্তেফাক, সংবাদ ও দ্য পিপলস পত্রিকা অফিসে। সাঁজোয়া গাড়ি হামলা চালাল পুরান ঢাকার অলিতেগলিতে। ধ্বংসলীলা চলল পিলখানার তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। বাদ থাকল না পথের ধারের অসহায় মানুষও। যাকে সামনে পাওয়া গেল, তার দিকেই নিশানা করা হলো অস্ত্র। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে অবস্থানরত সেনাদলের প্রতিও নির্দেশ ছিল গণহত্যা চালানোর। তারাও এ নির্দেশ পালন করেছে।
অপারেশন সার্চলাইট সফল করার জন্য ছিল সাতটি নির্দেশ। বলা হয়েছে, সারা দেশে একযোগে পরিচালিত হবে এ হামলা।
দুটি কমান্ড ছিল অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার জন্য। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিলেন ঢাকা শহরের অপারেশনের দায়িত্বে। তাঁর অধীনে ব্রিগেডিয়ার জেহানজেব আরবাব ও তাঁর ৫৭ পদাতিক ডিভিশন দায়িত্ব পায় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্য অঞ্চলগুলোয় গণহত্যার। ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না, এই রাও ফরমান আলীই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই শান্তি কমিটি ও আল-বদর বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই শান্তি কমিটি ও আল-বদর বাহিনী কতটা নৃশংসতার সঙ্গে মানুষ হত্যায় মেতেছিল।
অপারেশন সার্চলাইট দলিলটির দিকে মনোযোগ দিলেই বোঝা যাবে, এটি কোনো সামরিক অভিযানের দলিল নয়, বরং একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। ইয়াহিয়া খান ও তাঁর জেনারেলরা ২৫ মার্চের অনেক আগে থেকেই এ ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনার কথা ভাবছিলেন। বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছিলেন ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান। ২২ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন প্রদেশের কমান্ডারদের সঙ্গে যে বৈঠক করেন, তাতেই এই সামরিক অভিযানের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেনারেল নিয়াজি। অথচ মার্চজুড়েই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনার প্রহসন চালিয়ে গেছেন ইয়াহিয়া খান!
অপারেশন সার্চলাইটের মূল পরিকল্পনাকারী কে? সে কথা এখনো জানা যায়নি। তবে নানা দলিল থেকে বোঝা যায়, রাও ফরমান আলী এই পরিকল্পনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বলছেন, জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এর মূল পরিকল্পনাকারী। কিন্তু ফরমান আর খাদিমের মনে নাকি সামরিক অভিযানের ব্যাপারে ছিল সংশয়। তাই পিন্ডি থেকে তাঁদের সাহায্য করার জন্য পাঠানো হলো মেজর জেনারেল মিঠঠা ও মেজর জেনারেল জানজুয়াবকে। সার্বিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান।
২৫ মার্চ রাতে শুরু হলো ‘অপারেশন সার্চলাইট’; রাতের অন্ধকারে বাঙালি নিধনের মহাযজ্ঞ। ঘৃণিত এই মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাঙালিবিদ্বেষ। বিশ্ববাসী নিশ্চিত হলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের যথার্থতা সম্পর্কে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×