রাজশাহীর দুর্গাপুরে আজ শুক্রবার রবিউল ইসলাম নামের এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়েছে পুলিশ। সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে যাবার সময় রবিউলের মা তার ছেলেকে আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা তাকেও লাঞ্ছিত করে। রবিউল ইসলাম রাজশাহীর স'ানীয় দৈনিক সানশাইনের দুর্গাপুর প্রতিনিধি। দুর্গাপুর থানা পুলিশের দাবি, একটি ডাকাতি মামলায় আটক এক আসামী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে রবিউলের নাম উল্লেখ করায় সেই মামলার আসামী হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। তবে রবিউলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুলিশের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দেয়ায় সাংবাদিক রবিউলকে হয়রানি করছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ যে ডাকাতি মামলার কথা বলছে সেই মামলায় স্বীকারোক্তি দেয়া আসামী পরবর্তীতে হলফনামার মাধ্যমে জানিয়েছে, পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় সাংবাদিক রবিউলের নাম তাকে স্বীকারোক্তিতে বলতে বাধ্য করিয়েছে। মামলার বাদীও হলফনামার মাধ্যমে এই ডাকাতির ঘটনায় রবিউল জড়িত নন বলে জানিয়েছেন। রবিউল ইসলামের মা হাজেরা বেগম জানান, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে রবিউল সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এছাড়া দুর্গাপুর থানার তৎকালীন ওসি এসাহাক আলী ও দারোগা খবিরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি বিভাগীয় মামলার সাক্ষী ছিলেন রবিউল। ওই বিভাগীয় মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার পর থেকেই দুর্গাপুর থানা পুলিশ রবিউলকে একজন গরুচোরের দায়ের করা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে আসছিলো। এ ব্যাপারে রবিউল এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর সুষ্ঠু তদন- ও প্রতিকার দাবি করে একটি আবেদন করেন। রবিউল এই আবেদনে বলেন, গত বছরের ১২ মে সাবেক সাংসদ নাদিম মোস-ফা বিরুদ্ধে থানায় মামলার এজাহার দেন কিসমত বগুড়া এলাকার আমান আলী। পুলিশ ওই মামলাটি নাদিম মোস-ফার নাম বাদ দিয়ে রেকর্ড করে। এ ঘটনা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ফলে দুর্গাপুর থানা পুলিশ ক্ষুব্ধ হয় রবিউল ইসলামের ওপর। ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নারী নির্যাতন মামলার আসামীকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ফলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্গাপুর থানার ওসি এসাহাক আলী ও দারোগা খবির উদ্দিনকে বদলী করেন। আসামী পক্ষের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেয়ায় বিভাগীয় মামলা হয় দারোগা খবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ওই বিভাগীয় মামলায় সাক্ষী করা হয় সাংবাদিক রবিউল ইসলামকে। রবিউল পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দেয়। এ ঘটনার পর গত বছরের ১৯ অক্টোবর দুর্গাপুরের নুরুজ্জামান লিটনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই মামলার আসামী হিসেবে জামাল উদ্দিনকে আটক করে। জামাল উদ্দিনকে দিয়ে পুলিশ আদালতে বলায় এ ঘটনার সঙ্গে রবিউল জড়িত। পুলিশ রবিউলকে আটকের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালাতে শুরু করে। রবিউল ইসলামের মা হাজেরা বেগম আরো জানান, এ ঘটনায় দীর্ঘদিন রবিউল পালিয়ে ছিলেন। জামিন নিয়ে আজ শুক্রবার তিনি বাড়ি যান। দুপুরে দুর্গাপুর থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে বাড়িতে এসে রবিউলকে আটক করে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে রবিউলকে মারপিট করে। রবিউলকে আটক ও মারপিটের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা তাকেও লাঞ্ছিত করে বলে তিনি জানান। এরপর রবিউলকে পেটাতে পেটাতে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। ডাকাতি মামলার যে অভিযুক্ত আসামীর আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দীর ওপর ভিত্তি করে পুলিশ রবিউলকে আটক করেছে, সেই জামালউদ্দিনও তার জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বেশ আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেছেন। তিনি ওই আবেদনে উল্লেখ করেছেন, দুর্গাপুর থানা পুলিশ তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাংবাদিক রবিউল ইসলামের নাম বলতে বাধ্য করেছে। মামলাটির বাদী নুরুজ্জামান লিটনও অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার বাড়িতে ডাকাতি ঘটনার সঙ্গে রবিউল জড়িত নয়। ফলে তার প্রতি কোন অভিযোগও নেই।
তারপরেও পুলিশের এমন আচরন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা নয় কি? আবার দেখুন, তাকে আটক করা হলো শুক্রবারে। মানে ছুটির দিন আদালত চালু না থাকায় থানায় ঢুকিয়ে যাতে আচ্ছাসে প্যাদানি দেয়া যায়। আমাদের আইজিপি মহোদয় যে পুলিশের ভাবমুর্তি নিয়ে এতো লেকচার দিচ্ছেন, তার সুফলটা কোথায়? রাস্তায় সাইড দিতে দেরি হলে ট্রাক ড্রাইভারকে পেটানো, সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেয়া আর এভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা?