মাছওয়ালা থেকে আমরা যখন মাছ কিনতে যাই তখন আমরা মাছওয়ালাকে বিচার করে মাছ কিনি না। আমরা জানতে চাই না মাছওয়ালা কি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহরুল উলুম নাকি ইংরেজি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ নাকি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। আমরা দেখতে চাই না মাছওয়ালা কি দাড়ি-টুপি-জোব্বাওয়ালা নাকি ধুতি-লালকোর্তা-ক্রুশওয়ালা নাকি কোট-স্যুট-টাইওয়ালা। আমরা জানতে চাই না মাছওয়ালা কি সুন্নী নাকি ওয়াহাবী নাকি শিয়া নাকি শীল নাকি দাস নাকি বড়ুয়া নাকি ক্যাথলিক নাকি অর্থোডক্স। আমরা শুধু জানতে চাই মাছওয়ালার মাছটি ভাল হবে কিনা। আমরা পরখ করে দেখি মাছটি পচা নাকি তাজা। মাছ ভাল হলে কিনে শান্তি খেয়েও শান্তি। আর পচা হলে তো সর্বনাশ।
সমস্যা হল এই আমরা যখন মতবাদ (ইসলাম, সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট ইত্যাদি) নামক একটি অদৃশ্য বিষয় মানতে যাই তখন বিচার করে দেখি না মতবাদটি কি ভাল না মন্দ, এটি কি আমাকে শান্তি দেবে নাকি অশান্তিতে রাখবে। আমরা জানতে চেষ্টা করি না মতবাদটি মেনে আমার কী হবে, মতবাদ আমি কেন মানবো। আমরা শুধু দেখি মতবাদওয়ালাকে, মতবাদকে নয়। মতবাদওয়ালা দিয়ে আমরা মতবাদ বিচার করতে নেমে পড়ি যা অত্যন্ত হাস্যকর আর বোকামি। মতবাদওয়ালাদের বাহিরের রূপ সাধু কিংবা সূফির কিন্তু ভেতরে পচা তথা শয়তানিতে পূর্ণ। তারা অদৃশ্যের ভয় দেখিয়ে মানুষদের থেকে ধান্ধা করে কেটে পড়ে। মাছওয়ালা এমবিএ পাস কিন্তু তার মাছ পচা, কোন লাভ আছে? মতবাদওয়ালা বাহরুল উলুম (অর্থ জ্ঞানের সাগর) কিন্তু তার প্রচারিত মতবাদ অদৃশ্য, অলীক আর কাল্পনিক স্বর্গ-নরকে ভরা, কোন লাভ আছে?
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এইসব মতবাদওয়ালাদের খপ্পরে পড়ে অন্ধত্ব আর বোকামিতে তাদের মূলবান জীবনটি পার করে দিচ্ছে। মরার পর যখন দেখে সবই ধোঁকাবাজি তখন তাদের হুঁশ হয় কিন্তু কোন লাভ নেই কারণ ফিরে আসার যে কোন উপায় নেই।
পুনশ্চঃ মতবাদ বলে কিছু নেই যা আছে তা কেবলই ’সত্য’। সব ’সত্য’ই মতবাদ কিন্তু সব মতবাদ ’সত্য’ নয়। মতবাদ শুধু কাগজে আর গলাবাজিতে আর ’সত্য’ সুন্দর, শাশ্বত, জ্ঞানবান, অনুভব ও চাক্ষুষ।