[কোরআনের বিভিন্ন তাফসীরগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে একটি আরেকটির নকল। কেউ কেউ নিজের তাফসীরে আরেক তাফসীরকারকের উদাহরণ টেনেছেন। যার যতটুকু জ্ঞান তিনি ততটুকুই বলবেন বা লিখবেন। আল্লাহর বাণীকে মানুষদের মাঝে তুলে ধরতে তাঁরা চেষ্টা তো করেছেন। যেহেতু কোরআন এসেছেন অলৌকিক এবং অসীম এক জ্ঞান ভান্ডার থেকে সুতরাং একে আয়ত্ত করতে হলেও অলৌকিক এবং অসীমের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।]
ধারাবাহিকটির প্রথম পর্বে আমরা আজ পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম সূরা সূরা ফাতিহা’র তৃতীয় আয়াত নিয়ে আলোচনা করব। আয়াতটির আরবী হল-
”মালিকি ইয়াওমিদ দ্বীন”।
অধিকাংশ কোরআনের বঙ্গানুবাদে আয়াতটির অর্থ লেখা হয়েছে,
”যিনি বিচার-দিনের মালিক”।
এবার আয়াতটিতে আসা যাক। আমরা আগে আয়াতটির প্রতিটি শব্দের অর্থগুলো জানতে চেষ্টা করব।
’মালিকি’ অর্থ মালিক বা রাজা, ইয়াওম অর্থ দিন বা কাল এবং দ্বীন অর্থ বিধান বা মতবাদ। সুতরাং আয়াতটির অর্থ দাঁড়াল,
”বিধানের কালের মালিক”।
আরবী দ্বীন অর্থ বিচার কীভাবে হল আমি অনেক গবেষণা করেও বের করতে পারিনি। আয়াতটির আগের দু’টি আয়াত লক্ষ্য করুন। প্রথমে মহান আল্লাহর প্রশংসা পরে তাঁর ’রহমান’ এবং ’রহীম’ গুণের উল্লেখ। যিনি রহমান আবার একই সাথে রহীম তিনিই নাকি আবার বিচার করবেন! ধারাবাহিকতা তো মিলছে না। আচ্ছা, আমাদের সৃষ্টি কিংবা পৃথিবীতে আমাদের আগমন কি আমাদের নিজের ইচ্ছায় হয়েছে নাকি আল্লাহর ইচ্ছায়? আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি? আমাদের ’ইচ্ছা’ বলে কি কিছু ছিল? আমরা তো অত্যন্ত অসহায়। অসহায়দের সহায় তো একমাত্র আল্লাহ (কারণ পরের আয়াতেই আছে আমরা তাঁর সাহায্য চাই)। সেখানে আবার বিচারের কথা আসবে কেন? আসতে পারে বিধানের কথা। ’বিধানের কাল’ গভীর রহস্যবোধক একটি বিষয়। ব্যাখ্যা করতে গেলে বেদ, ত্রিপিটক, ইঞ্জিল সব এক হয়ে যায়। ’বিধানের কাল’ থেকে মহান আল্লাহ মুক্ত কারণ তিনি কালজয়ী। কাল আবার তিন প্রকার- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। ’বিধানের কাল’ বলতে তবে কোন কালকে বুঝানো হয়েছে? বিধান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ জগৎটি অর্থাৎ এ পৃথিবী বিধানের অধীন। এখানে যে-ই আগমন করবে তাকে বিধানের ভেতরই থাকতে হবে। পৃথিবীতে আমার অবস্থান তো ’বর্তমান’। ’অতীত’ কিংবা ’ভবিষ্যৎ’ কোথায়? আমাকে থামতে হচ্ছে। জানলেও আর এগোনো যাবে না। শরীয়ত আছে।