”যেভাবে আমি ’সত্য’ অর্জন করলাম” (প্রকাশিত ২০শে এপ্রিল, ২০২১) লেখাটি প্রকাশের পর দু’জন পাঠকের ’মোরাক্বাবা’ বিষয়ে উদ্ভট আর মনগড়া মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই লেখা।
একজন লিখেছেন, ’ধ্যান অনেক আগের বিষয়’। কথা সত্য। ধ্যান তথা মোরাক্বাবা আজকের বিষয় নয়। মহাদেব, বুদ্ধ, মুসা, ঈসা, মহানবী হতে শুরু করে আল্লাহর ওলিরা সবাই ধ্যান সাধনা করেছেন এবং করছেন। এরপর তিনি লিখেছেন, ধ্যানে কোন কামেল লাগেনা। আর শেয়ার করেছেন একটি ছবিও যা দেখে আমি হেসে গড়াগড়ি খেয়েছি। পাঠক, কুয়োর ব্যাঙের গল্পটি আমি আপনাদের আর নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছি না। তিনি কোন ধ্যানের কথা বলতে চাচ্ছেন আমি জানি না, জানার দরকারও নেই। তবে আমার ধ্যানে কামেল আল্লাহর ওলি লাগে। কেউ যদি এ যুগে বলে যে আমার মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগ আমি হাওয়া থেকে নিচ্ছি, কোন মোবাইল অপারেটর কিংবা ব্রডব্যান্ড সংযোগদাতা থেকে নয় তখন পুরান ঢাকার ঘোড়াগুলোও হাসবে।
আরেকজন উদাহরণ টেনেছেন কোন এক বিখ্যাত পীরের যাদেরকে আমি বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছি বহু পূর্বেই। তিনি আরো শেয়ার করেছেন হ্যলুসিনেশনের উপর একটি নিবন্ধ।
ইসলামের ২য় খলীফা হযরত উমর (রা.) মদীনায় খুতবারত অবস্থায় শত মাইল দূরে তাঁর সেনাপতি সারিয়াহকে বিপদোম্মুখ দেখে যখন ডাক দিয়েছিলেন এই বলে যে, হে সারিয়াহ, পাহাড়ের দিকে যাও; তখন ছিল না কোন কৃত্রিম উপগ্রহ বা মোবাইল। সেটা কি হ্যলুসিনেশন ছিল?
কেউ যদি বলে আমি আমার ঘরে বসে সুইজারল্যান্ডের সবুজ গ্রাম দেখি। এ যুগে একে কি হ্যলুসিনেশন বলা যাবে? লোকে হাসবে। কারণ মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে এগুলো কোন ব্যাপারই না। এগুলোর পেছনে আছে বিজ্ঞান। আর ইসলামে এ বিষয়গুলোর চর্চা ছিল আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে। ঘরে বসে মানুষ মোরাক্বাবায় আরশের মালিকের সাথে কথা বলতেন। ইসলামের ৪র্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) মূহুর্তে বলে দিয়েছিলেন যে হযরত জীবরাঈল (আ.) কোথায়। একদিন বিখ্যাত ওলি সহল ইবনে আবদুল্লাহ তশতরী (রহ.) পা লম্বা করে ও দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসলে তাঁর ভক্তরা আশ্চর্যিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হুযুর, আপনি তো আগে কখনো এরূপ করেননি। তখন সহল তশতরী বললেন, আজ আমার গুরু যুন্নুন মিশরী (রহ.) ইন্তেকাল করেছেন। উনার সম্মানে আমি এতদিন পা লম্বা করে ও দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসতাম না। সহল তশতরী ছিলেন তখন পারস্যে আর যুন্নুন মিশরী মক্কায়। তখন ছিল না কোন কৃত্রিম উপগ্রহ বা মোবাইল।
দিনে দিনে মানুষগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের এ শক্তিগুলো চলে যাচ্ছে। তারা এখন বিজ্ঞানের জোয়ারে এমন ভাবে গা ভাসিয়ে দিয়েছে যে নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে বসে আছে। বলে এগুলো নাকি রূপকথা। মাম্মি-ড্যাডির কোলে, নারীর আঁচলে আর মোবাইল-ল্যাপটপের মনিটরে বুদ হয়ে থাকলে এগুলো রূপকথাই মনে হবে। ইসলাম আগে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে শুধু নষ্ট হয়ে গেছে মানুষগুলো। এই নষ্ট মানুষগুলোই এক ইসলামকে কত যে দলে ভাগ করেছে। আর এখন একদল গুগলীয় জান্তা বের হয়েছে। তাদের জ্ঞান গুগল পর্যন্ত। তাদের ধর্ম-কর্ম পাঁচ ওয়াক্ত লেফট-রাইট। তারা ধর্মেও থাকে আবার জিরাফেও থাকে।
সত্য-মিথ্যার এ খেলা থাকবে। আমি ’সত্য’কে বেছে নিয়েছি। কেউ যদি মিথ্যার বেসাতি করে বেড়াতে চায়, বেড়াক।
”যদি তাদের জন্য আসমানের কোন দরজাও খুলে ধরি এবং তারা তাতে আরোহণও করে তবুও (ঈমানের পরশ না পাওয়াতে) তারা বলবে- আমাদের চক্ষু বিভ্রান্ত হয়েছে বরং আমরা সকলে যাদুগ্রস্ত হয়েছি” (সূরা হিজর, আয়াত ১৪-১৫)।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:১০