somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে নারীর মর্যাদা (পর্ব :৪)

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বিবাহ



বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারীকে কখনো পশুর পালের সাথে তুলনা করা হত আবার কখনো পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করা হত। যুগ যুগান্তর ধরে বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিয়ের মাধ্যমে যেখানে নারীকে অদৃশ্য শেকলে বন্দী করা হত, অনিয়ন্ত্রিত চাহিদা মেটানোর উপকরণ ও পুত্র সন্তান জন্মদানের মেশিন মনে করা হত, সেখানে হাজার হাজার বছর পূর্ব থেকেই ইসলাম নারীকে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সম্মানিত করেছে, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ইসলামের বিবাহের প্রতিটি নিয়মের মধ্যে রয়েছে নারীর জন্য নিরাপত্তা ও কল্যাণ।


# স্ত্রী তার স্বামীর জন্য প্রশান্তি :
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজে নারীর স্থান ছিল ঊনমানবীর, তাকে শুধু ভোগের সামগ্ৰীরূপে দেখা হত। তার দেহ, তার শ্রম তার প্রভুর ভোগের জন্য। তাই তাকে বন্ধক রাখা যেত, কেনা যেত, বিক্রি করা যেত; যজ্ঞের দক্ষিণা হিসাবে, যৌতুক হিসাবে বা অতিথির উপহার হিসাবে দানও করা যেত। শাস্ত্ৰে স্পষ্টই বলা হয়েছে, ‘নারী সম্ভোগ আনে।‘ (প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ)
প্রাচীন রোমে নারী বেচা-কেনার প্রচলন ছিল। তাই পুরুষরা বিয়ে করতে ও পরিবার গঠনে আগ্রহী ছিল না। যৌতুকের প্রলোভন দেখিয়ে পুরুষদেরকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহ দেয়া হত। (pars today)
প্রাচীন গ্রীসে পুরুষরা নারীর সম্পদের লোভে কিংবা যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করতো। (thoughtCo.)
পক্ষান্তরে ইসলাম ধর্মে বিবাহ নারীর জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে। মানবজাতি সৃষ্টির শুরু হয় আদমের (আ) মাধ্যমে। জান্নাতের হাজার নেয়ামতও আদমের জীবনের শূণ্যতা দুর করতে পারে নি। অতঃপর মহান আল্লাহ আদমের শরীরের অংশ দিয়ে তার স্ত্রী সৃষ্টি করে তার জীবনে পূর্ণতা এনে দেন।
وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ ٢١
"আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে।" (সুরা রুম:২১)
এ থেকে বুঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী কোন বোঝা নয়, বরং একজন পুরুষের জীবনে প্রশান্তি ও পূর্ণতা।


# যৌতুক বনাম মোহরানা:
প্রাচীন ভারত, প্রাচীন রোম, প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেখানে নারীদের যৌতুকের বিনিময়ে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হত। যা এখনো বিশ্বে বহু স্থানে বিদ্যমান রয়েছে। যৌতুকের চাপে অনেক পরিবার দায়গ্রস্ত হয়ে পড়ে, শ্বশুর বাড়ির অমানবিক অত্যাচারে অনেক মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু ইসলামে যৌতুক প্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বরং স্ত্রীকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বা সম্পদ দানের চুক্তির বিনিময়ে বিবাহ করতে হয়। যা আমাদের দেশে দেন মোহর বা মোহরানা নামে পরিচিত। কিন্তু একটি কুপ্রথা চলে আসছে যে, স্বামীরা ধার্যকৃত মোহর স্ত্রীকে দান করে না, তা কেবল কাবিননামাতেই উল্লেখ থাকে। এবং মৃত্যুর পর স্বামীর লাশের সামনে দাড়িয়ে বউকে মোহরানার দাবির হক্ক মাফ করে দিতে বলা হয়। মোহরানা স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওয়া। এটি না আদায় করলে ঋণের দাবির মত ঝুলে থাকবে। কোরআনে আছে,
وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِہِنَّ نِحۡلَۃً ؕ فَاِنۡ طِبۡنَ لَکُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡہُ نَفۡسًا فَکُلُوۡہُ ہَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا
নারীদেরকে খুশী মনে তাদের মাহর আদায় কর। তারা নিজেরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা সানন্দে, স্বচ্ছন্দভাবে ভোগ করতে পার। (আন নিসা - ৪)


# ওয়ালিমা বা বিবাহোত্তর ভোজের আয়োজন:
যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষের বিবাহের অন্যতম প্রথা পাত্রীর বাড়িতে দলভেদে বরযাত্রী আগমন ও ভুরিভোজ করা। বর্তমানে মুসলিম সমাজেও এ রীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিবাহের পূর্বে কত লোক বরযাত্রায় আসবে তা চুক্তি করে নেয়া হয়। এ আয়োজন করতে গিয়ে অনেক সময় পাত্রীর পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সামান্য কমতির জন্য বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যায়, আবার অনেক সময় স্ত্রীকে সারাজীবন এ নিয়ে কটুকথা শুনতে হয়, যা একটা নারীর জন্য খুবই বেদনাদায়ক ও তার পরিবারের জন্য লজ্জাজনক। পক্ষান্তরে ইসলামে বিবাহের সময় পাত্রী পক্ষের খরচের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না বরং দাম্পত্য জীবন শুরু করার পরে ভোজের আয়োজন করা পাত্রপক্ষের দায়িত্ব। এতে দাম্পত্য জীবন শুরু করার পূর্বেই যদি কোন কারণে বিচ্ছেদ ঘটে তাহলে অধিক লোক জানবার আশংকা থাকে না এবং কোন বাড়তি খরচের হিসাবও গুণতে হয় না। হাদিসে এসেছে,
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বিয়ে করেছেন তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালিমার আয়োজন কর।’ (বুখারি ৫১৬৬ )


# জৈবিক চাহিদা পূরন :
নারী পুরুষ উভয়েরই জৈবিক চাহিদা রয়েছে। বিয়ে কেবল পুরুষের চাহিদা পূরন করে না, নারীরও পূরণ করে। প্রায় সকল ধর্ম ও সমাজে নারী জৈবিক চাহিদা পূরণের একমাত্র বৈধ মাধ্যম হচ্ছে বিবাহ। ইসলামি শরিয়তেও এক্ষেত্রে একই বিধান। পুরুষরা একাধিক বিবাহ করতে পারে ও শরীয়তসিদ্ধভাবে ক্রীতদাসী রাখতে পারে কিন্তু নারীদের জন্য কেবল তাদের একমাত্র বৈধ স্বামী। যে পুরুষ নারীর জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম তার জন্য বিয়ে করা হারাম। অন্য ধর্মে যেখানে তালাকি ও বিধবা নারীদের অশুভ ও অপয়া হিসেবে দেখা হয়, সেখানে বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একজন কুমারী নারীর তুলনায় তালাকী বা বিধবা নারীর প্রয়োজনীয়তা অধিক হয়ে থাকে। ফলে বৈধ উপায় না পেয়ে তারা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। নবীজি ﷺ এর স্ত্রীদের মধ্যে একজন ব্যতিত সকলেই ছিলেন তালাকি কিংবা বিধবা। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন,
وَأَنكِحُوا۟ ٱلْأَيَـٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّـٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا۟ فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌۭ ٣٢
আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার বিবাহহীন (বিধবা /বিপত্নীক /তালাকী/ অবিবাহিত) ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী। (সুরা নুর:৩২)


# ভরণপোষণের দায়িত্ব অর্পণ :
বিবাহের মাধ্যমে একজন নারীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার স্বামীকে অর্পণ করা হয়। একজন পুরুষকে বিয়ে করার জন্য শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে যাতে সে তার স্ত্রীর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে পারে। কেবলমাত্র দৈহিক চাহিদা মেটানো বিয়ের লক্ষ্য নয়, নারীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও স্বামীর দায়িত্ব। তার জন্য নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা, দ্বীনি শিক্ষা ও হালাল বিনোদনের সুব্যবস্থা করা স্বামীর অবশ্য কর্তব্য।
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ وَبِمَآ أَنفَقُوا۟ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ ۚ فَٱلصَّـٰلِحَـٰتُ قَـٰنِتَـٰتٌ حَـٰفِظَـٰتٌۭ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُ ۚ
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক/ব্যবস্থাপক/অভিভাবক , এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে। (সুরা নিসা:৩৪)
হজরত মুয়াবিয়া বিন হায়দার (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, স্বামীর উপর স্ত্রীর কী অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, ‘সে আহার করলে তাকেও একই মানের আহার করাবে, সে পরিধান করলে তাকেও একই মানের পোশাক পরিধান করাবে’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫০)।


# বিয়ের বয়স নির্ধারণ :
বিয়ের জন্য কোন ধর্মেই বয়স নির্ধারিত নয়। এমনকি কয়েক দশক পূর্বেও কোন সমাজে তা ছিল না। অল্প বয়সে নারীর বিবাহকে অনেক ধর্মে পূণ্য বলে ধরা হত। হিন্দু ধর্মে সাত বছর বয়সে কনের বিয়েকে গৌড়ী দান বলে আখ্যায়িত করা হত (হৈমন্তী)। অপরদিকে বিধবাবিবাহ বলে কিছু ছিলো না। ইসলামি শরীয়তেও নারীর জন্য কোন বয়সের সীমারেখা দেয়া হয় নি। যে কোন বয়সের নারীকে তার অভিভাবক বিবেচনা সাপেক্ষে বিয়ে দিতে পারে। অল্প বয়স্ক মেয়ের জন্য যেমন বিয়েতে কোন বাঁধা নেই তেমনি একজন বয়োবৃদ্ধ নারীও চাইলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। এতে করে সমাজে যেনা ব্যভিচারের বিস্তার রোধ করা যায়। আমাদের সমাজে তালাক বা স্বামী মারা যাওয়ার পর একটা বয়সে নারীর পুনঃবিবাহকে মন্দ দৃষ্টিতে দেখা হয়, এমনকি সন্তান থাকলে অল্প বয়সী বিধবাদেরও পরিবার থেকে বিয়ের ঊদ্যোগ নেয়া হয় না। এতে করে বাধ্য হয়ে অনেকে যেনার পথ বেছে নেয়। আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত বয়সের পূর্বেই যখন কোন মেয়ে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় তখন পরিবার চাইলেও বিয়ে দিতে পারে না। ফলে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমান বিশ্বের কিশোর কিশোরীদের দিকে লক্ষ্য করলে তা খুব ভালো মত স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি সমাজে বিয়ের বয়স নির্ধারিত না থাকতো তাহলে বহু পরিবারই তাদের মেয়েদের উপযুক্ত পাত্র বাছাই করে সসম্মানে বিয়ে দিতে পারতো, বদনামের গ্লানি বহন করতে হতো না। কোরআনে আছে,
وَٱلَّـٰٓـِٔى يَئِسْنَ مِنَ ٱلْمَحِيضِ مِن نِّسَآئِكُمْ إِنِ ٱرْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَـٰثَةُ أَشْهُرٍۢ وَٱلَّـٰٓـِٔى لَمْ يَحِضْنَ ۚ وَأُو۟لَـٰتُ ٱلْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مِنْ أَمْرِهِۦ يُسْرًۭا ٤
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবর্তী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। (সুরা তালাক:৪)
এ থেকে আরও স্পষ্ট হওয়া যায় যে নারীর বিয়ের কোন সুনির্দিষ্ট বয়স নেই।


# অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে :
একজন পুরুষ শারীরিক মানসিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম হলে যে কোন সময় বিয়ে করতে পারে, কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। কিন্তু একজন নারীর বিয়ের জন্য অবশ্যই তার অভিভাবকের উপস্থিতি অপরিহার্য। সৃষ্টিগতভাবেই নারীরা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে, আর বিয়ে হলো বাকি জীবন একসঙ্গে বসবাসের একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। আবেগতাড়িত হয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, যার প্রমাণ হরহামেশাই দেখা যায়। তাই শরীয়তে অভিভাবককে বলা হয়েছে নারীকে দেখেশুনে বিবাহ দেওয়ার জন্য। তবে এক্ষেত্রে নারী সাবালক হলে তার সম্মতি জরুরি। হাদিসে আছে,
»لا نكاح إلا بولي«
“অভিভাবক ব্যতীত কোনো বিয়ে নেই”। [তিরমিজি :১১০১]
পাত্র পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মে দ্বীনদারিতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কুফু(সমতা) বজায় রাখার প্রতিও বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। একজন অভিভাবক জানেন তার পরিবারের মেয়েটি কেমন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে এবং কেমন পরিবার ও পরিবেশ তার জন্য উপযুক্ত।


# পুরুষের বিয়ের সংখ্যা সীমাবদ্ধকরণ:
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের বিয়ের কোন সীমারেখা ছিলো না। একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারতো কিন্তু তাদের অধিকারের ব্যাপারে ছিল উদাসীন। যাকে আর ভালো লাগতো না তাকে তালাকও দিতো না আবার অধিকারও আদায় করতো না, একরকম নামমাত্র সম্পর্কে ঝুলিয়ে রাখতো। তাছাড়া স্ত্রীর সংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় সবার সাথে সমতা বিধান করাও ছিলো অসম্ভব বিষয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় পশুর পালের সাথে স্ত্রীর সংখ্যার তুলনা করা হত। মনে করা হত, যে পুরুষের স্ত্রী যত বেশি সে তত বেশি সমৃদ্ধ। ইসলাম ধর্মে পুরুষের জন্য চারটির অধিক স্ত্রী রাখা নিষেধ। এমনকি তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা অবশ্য কর্তব্য। নচেৎ একাধিক স্ত্রী রাখা সমীচীন নয়। আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا۟ فِى ٱلْيَتَـٰمَىٰ فَٱنكِحُوا۟ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثْنَىٰ وَثُلَـٰثَ وَرُبَـٰعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ فَوَٰحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُوا۟ ٣

আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশী। (সুরা নিসা:৩)


# পরিবার গঠনের সৌভাগ্য লাভ:
পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থা ও পতিতালয়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নারী কেবল ভোগের সামগ্রী। পুরুষ কেবল দৈহিক চাহিদা মেটানোর জন্য তাদের ব্যবহার করে। লিভ টুগেদার ও ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড এর মত জঘন্য প্রথা পরিবার ব্যবস্থাকে ভেঙে দিচ্ছে। বিয়ে করে বংশবৃদ্ধি করার প্রতি মানুষের অনীহার ফলে অনেক জাতি আজ বিলুপ্তির পথে। উদাহরণ স্বরূপ জাপানের কথা বলা যায়। জাপান প্রযুক্তির দিক দিয়ে অন্যতম উন্নত জাতি কিন্তু পরিবার গঠনে যুবসমাজের অনাগ্রহ জাপানের জন্য হুমকি স্বরুপ। ইসলাম ধর্মে বিয়ের মাধ্যমে নারীকে পরিবার গঠনের সৌভাগ্য প্রদান করা হয়েছে, কোন পুরুষ চাইলে একজন মুসলিম নারীকে ভোগ্যপণ্য বানাতে পারবে না। ইসলামে বৈরাগ্যবাদকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং বিয়ে করে পরিবার গঠনে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘বিবাহ করা আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত থেকে বিরাগভাজন হয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম: ১৪০১) 


# দ্বীনের অর্ধেক পূরণ :
ভয়াবহ ফেতনার এই যুগে দ্বীনের পথে টিকে থাকা মুষ্টিবদ্ধ হাতে অগ্নি শিখা ধরে রাখার মত। এমতাবস্থায় একজন দ্বীনদার ব্যক্তির সাথে বিবাহ হওয়া মানে দ্বীনের পথে অটল থাকার জন্য একজন সহযোগী পাওয়া। অশ্লীলতার জোয়ার ও বিশৃঙ্খল এই সমাজ ব্যবস্থার ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে বেঁচে থাকার এক অন্যতম উপায় হল বিবাহ।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস : ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস : ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ২৭২৮)

প্রিয় দ্বীনি বোন, আপনার ধর্ম বিয়ের মাধ্যমে আপনাকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেনি বরং আপনাকে সংসারে রাণীর আসনে বসিয়েছে। সংসার জীবনে আপনি রাণী হলে, আপনার স্বামী হচ্ছে রাজা তাই তাকে যথাযথ মর্যাদা দিন। "পুরুষকে সম্মান করুন, দেখবেন সে আপনার জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবে" (জেমস হাওয়েল)। আপনার স্বামী যদি আপনার সাথে অন্যায় আচরণ করে তবে সেটা তার অজ্ঞতা, তার জন্য ইসলামকে দায়ী করা কোনভাবেই কাম্য নয়। লেজকাটা নারীবাদীদের মত নিজের বৈবাহিক জীবনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। এতে পরিবার ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে।
প্রিয় দ্বীনি ভাই, আপনার স্ত্রী আপনার দায়িত্ব, কেবল ভোগের সামগ্রী নয়। ঘরের রমণীর প্রতি আপনার অবহেলা, আপনার সংসার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নষ্ট করে দিতে পারে। মনে রাখবেন, " উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার ঘরণীর কাছে উত্তম " (তিরমিজি :৩৮৯৫)। আপনার কন্যা ও বোনকে উত্তম পাত্র দেখে কুফু বজায় রেখে বিয়ে দেয়া আপনারই দায়িত্ব। যাতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনি নিজ দায়িত্বে সমাধান করতে পারেন। আপনার দায়িত্বশীলতায় ফুটে উঠবে ইসলামের সৌন্দর্য্য।


মানবজীবনে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে এই পোস্ট পড়ে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হযরত আলীকে (রা.) মাওলা বলতে বন্ধু বুঝানো হয়েছে, শিয়া ইরানী বা অন্য শিয়াদের দাবী অনুযায়ী তাঁকে নেতা বা খলিফা বুঝানো হয়নি

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:০৯




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব: ইসরায়েল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:২০




ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব। এটি করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই এটি করা সম্ভব- এমনটা জানালেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার।

সোমবার ( ১৬ জুন) মেরিট... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্যাবলেট খেলেই নির্মূল হবে রক্তের ক্যানসার? নতুন ওষুধ আসছে দেশে, দাম কত?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬





ট্যাবলেট খেলেই আর ক্যানসার ছড়াবে না? রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন ওষুধ আসতে চলেছে দেশে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধটি বানিয়েছে। আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার ওয়ার্কশপ রয়েছে ভারতেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংরক্ষিত নারী আসন: সংস্কারের নামে চাপিয়ে দেওয়া, না কি গোপন এজেন্ডার বাস্তবায়ন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৭


বাংলাদেশে সংস্কারের নামে আজ যে কাণ্ড চলছে, তা দেখে পুরনো প্রবাদটি মনে পড়ে—"অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।" একটি ইন্টেরিম সরকার, যাদের চেয়ারে বসা একটি জটিল ক্ষমতার সমীকরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×