আমি হাটছি পশ্চিম পাড়ের মাঠে।
এখানে আকাশ মেঘলা। পরিবেশ ঝাপসা।
বাতাসের গতিবেগ মাপা যায়নি তবে আমার লম্বা চুল উড়ছে। আশে পাশে তেমন কেউ নেই। আমি হাটছি নিচের দিকে চেয়ে কারন পানি আর কাঁদায় পরিবেশ নাজুক অবস্থায় আছে।
সামনে তাকিয়ে দেখি গৌতম বুদ্ধ সাহেব আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।
এই ভদ্রলোককে আমি আগে থেকেই চিনি। ইনি তার বয়সে গৃহ ত্যাগ করেছেন জীবনকে জানার জন্য। অবশ্য তা হাজার বছর আগের কথা। এখন তিনি আমার প্রায় সব কথার সহজ উত্তর দিতে পারেন। আমি মুচকি হেসে দিয়ে ওনাকে আমন্ত্রণ জানালাম।
আমি জানি তিনি আমাকে কিছু কথা শোনাবেন। তিনি প্রায় আধ ঘন্টা আমাকে একটা ভাষণ দিবেন। সেখানে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে কিছু কথা চলে আসবে। সেই প্রেক্ষিতে আজ তাহসান মিথিলার ব্যাপারটা উঠে এসেছে। আমি অবাক হয়েছি তিনিও এসব নিয়েও চিন্তা করেন। স্ট্রেইঞ্জ। এইবারের রেজাল্ট নিয়েও অনেক্ষন কথা বললেন। রেজাল্টের অংশটা আপনাদের শোনা উচিত। তার কথা নিজের মত করে বলা যেতে পারে।
তিনি বললেন -
রেজাল্ট কি আসলো তা নিয়ে অবশ্যই হতাশ হওয়া উচিত না। এইটা কোন অনুপ্রেনার কথা না সহজ স্বাভাবিক কথা। দুনিয়াতে কার্মা নামক একটা ব্যাপার আছে যাকে ইংরেজিতে বলে Cause and effect.
আপনি কি পাচ্ছেন তা ১০০ ভাগ নির্ভর করছে আপনি কি করছেন।
কেউ যখন তার রেজাল্ট নিয়ে হতাশ তখন তার ধরে নেয়া উচিত সে খাতায় ভালভাবে লিখতে পারেনি। তার যোগ্যতা অনুযায়ী সে পেয়েছে। এইটা মেনে নিতে হবে। না মেনে নিলে আমরা আগাতে পারবোনা।
আর আসল হতাশা তখনই আসে যখন আপনি অন্যের রেজাল্ট দেখে হিংসে করবেন। হিংসা বা লোভ ছাড়া হতাশা আসেনা।
এইটা সহজ হিসেব যে
আপনার বন্ধুর রেজাল্ট যদি আপনার চাইতে ভাল আসে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে সে আপনার চাইতে ভাল লিখেছে খাতায়। আপনি খাতায় লিখতে পারেন্নি তার মানে এই না যে সে যা জানে আপনি তা জানেন না।
ব্যাস আলাপ শেষ।
যে যার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবেন।
রেজাল্ট নিয়ে যদি এতই হতাশ হয় কেউ তাহলে তাকে বলুন পরিক্ষার খাতায় ভাল করে লিখতে। তা সে যেভাবেই করুক, ভাল করে পড়াশোনা যাকে বলে হার্ডকোর পড়াশোনা করেই করুক অথবা প্রশ্ন পেয়েই করুক। রেজল্ট আসবে খাতায় কি লেখা হয়েছে তার উপর।
পরিক্ষা দেয়ার আগে এসব নিয়ে ভাবা দরকার।
ফল নিয়ে ভাবার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে।
গৌতম সাহেবের কথা সহজ সরল বৃষ্টির পানিত মত পরিষ্কার ছিল। তবুও আমি ওনাকে সামনে রেখে খানিক্ষন এটা নিয়ে ভাবলাম।
আসলেইতো, গৌতম সাহেব এত সহজ করে কিভাবে ভাবলেন। কিন্তু তিনিকি আমাদের পরিস্থির কথা জানেন !
তিনি কি জানেন আমাদের এক্সামিনদের অবস্থা ?
জানারতো কথা।
আমি বললাম'
কিন্তু আমরা খাতায় যাই লিখিনা কেন খাতা যে পরিক্ষা করবে সে যদি সঠিকভাবে নাম্বার না দেয় তাহলে কি যোগ্যতা অনুযায়ী আমরা নাম্বার পাবো ?
দেখা গেল যে ভুল উত্তর লিখেছে সে ভাল নাম্বার আর যে সঠিক লিখেছে সে খারাপ নাম্বার পেয়েছে। এর ব্যাখ্যা কি ?
তা অবশ্যই শিক্ষা ব্যাবস্থার ব্যার্থতা। তাতো আর পরিক্ষার্থীর হাতে নেই। কিন্তু কারো যদি মনে হয় সে যোগ্যতা অনুযায়ী নাম্বার পায়নি তাহলে সে তার খাতা আবার পরীক্ষা করানোর জন্য আবেদন করতেই পারে। যোগ্যতার কমে কেউ কিছু পাবেনা। হোক এখন হোক তখন।
যতকিছুই হোক রেজল্ট নিয়ে হতাশ হওয়া অবিদ্যার লক্ষন। আর অবিদ্যাই দুঃখের মুল কারন। আসলে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তাই আমাদের প্রাথমিক সমস্যা। সামান্য রেজাল্ট নিয়ে ভাবতে গিয়ে পুরো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি।
অথচ একটা ভবীষ্যত্ কতকিছুর উপর ভিত্তি করেইনা গড়ে উঠে। রেজল্ট যেখানে একটি উপাদান মাত্র।
আমি চুপ করে বসে রইলাম। এই লোকের কথা ফেলে দেয়া যাচ্ছেনা। তার উপর এই লোক হচ্ছে গৌতম বুদ্ধ। আমি মনে মনে বললাম, তুমি একটা ভয়ঙ্কর লোক।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে , গোতম বুদ্ধ সাহেব লম্বা লম্বা পায়ে হাটা ধরেছেন। কিন্তু তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটছেন। ফিরের যাওয়ার সময় দার্শনিকদের কি উপরের দিকে চেয়ে হাটার কোন নিয়ম আছে ? থাকলে আমি জানলামনা কিভাবে ! তুচ্ছ ব্যাপার। উপরে তাকানো কোন ঘটনা না।
আমি ডাকলাম। তিনি থেমে গিয়ে আমার দিকে ফিরলেন।
আমি বললাম
যদি হতাশা আসেও আসুক না। তাতে কি ! সামান্য কিছু নিয়ে মন খারাপ করলে তেমন কিছুতো হয়না। এটা ২০১৭ , এইটা আপনার যুগ না। একশবার মন খারাপ করবো আমরা।
নাকি মন খারাপ করা পাপ ?
তিনি হাসলনে। এই হাসি আমি চিনি। এই হাসি মানে হচ্ছে তুমি যা ইচ্ছা করো। মন খারাপ করো, হতাশ হও। জীবন এসব ফালতু কথায় চলেনা। তোমাদের রেজাল্টের ঝামেলা হচ্ছে ভংচং। জীবন চলবে তার গতিতে। তার গতি খুব সহজ। এই গতি যুগ মানেনা। এই গতির শেষ হচ্ছে মৃত্যু।
এর মাঝে দু একবার আকাশ থেকে ডাক এসেছে।
তিনি মনোযোগ দিয়ে আকাশের অনেক গভীরে দেখার চেষ্টা করছেন।
বৃষ্টি আসার আগেই তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



