somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সিনেমার মতো প্রেম

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কাল থেকে দুপুর হয়ে গেল তবু রোদের দেখা নেই। ধোয়াটে কুয়াশা সাদা রুমালের ন্যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাশবন ও ব্রহ্মপূত্রের দু’তীর ধরে নেচে যাচ্ছে। শীত গেছে ফাগুন এসে গেল বলে তারপরও শীতের কমতি নেই। নচ্ছার কুয়াশা ধোয়ার পদাবলী খুলে বসেছে যেন; সাঁঝ-সকালে অবিরাম পড়তে থাকে। শীত দুপুরে জানালা খুলে দাড়িয়ে ছিল বাবলী। সিডি প্লেয়ারে তখন বাজছে “ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে” গানটা রিপিট করা আছে বলে বেজে যাচ্ছে একটানা। পাশের ঘরে আধবোজা চোখ নিয়ে শুয়ে ছিলেন বাবলীর মা সুহিনা বেগম। কানে লাগছিল গানটা! ঘুম চোখ নিয়ে উঠে এলেন। বিরবির করে বলতে লাগলেন, প্রতিদিন এক গান কতবার শুনে বাবলী?
-এবার না হয় বন্ধ কর? সেই কখন থেকে শুনছিস? খুব মন খারাপ তোর? বলতে বলতে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। বাবলী এতটাই তন্ময় হয়ে ছিল যে শুনতেই পায়নি। মেয়ের এমন তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা বেশ ক’দিন ধরেই দেখছেন তিনি। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে না। এখনকার মেয়ে-ছেলেদের কোন কিছুতে জোর করাটা বৃথা। সে চেষ্টা থেকে তিনি তাই বিরত থাকেন।

সুহিনা বেগমের তিন মেয়ে। স্বামী গত হবার পর থেকে তার রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর থেকে যে টাকা আসে তাতে দিব্যি চলে যায় সংসার। তিন মেয়ে। বড় মেয়ে রুপালীর গেলো বছর বিয়ে হয়ে গেল। বর খুজতে হয়নি, নিজেই খুজে নিয়েছে। ভালো-খারাপ বলবার সুযোগ দেয়নি; ছেলে কম্পুটার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাস্ বিয়ে দিতেই হলো। ছোট মেয়ে দিয়ালী সব-সময় ভাবগম্ভীর হলেও কথা বলতে গেলে হাজারটা যুক্তির খেল্ দেখায় ওকে নিয়ে চিন্তার কোন নেই। মেঝো মেয়ে বাবলী। একটু আলাদা, মিশুক এবং চঞ্চল। সুহানি মেয়েদের বয়েস বাড়বার পর থেকেই কিছুটা চিন্তিত বিয়ে দিতে পারলেই তবে স্বস্তি মিলবে।

বুবন গানের ক্লাস থেকে ফিরে শুয়েছিল বিছানায়। ঘুম নেই বলে শুধু শুধু শুয়ে থাকা। র‌্যাকের উপর থেকে উঁকি দিচ্ছে এরিখ সেগালের লাভ ষ্টোরি। পড়া হয়ে উঠেনি। সকালের রোদের পর দুপুর রোদেও বিছানা ছাড়ার ইচ্ছে হলোনা ওর। ইচ্ছে গুলো পর হয়ে যাচ্ছে। বাবলীকে সাহস করে ভালবাসি বলবার পর থেকেই এমনটার শুরু। ছ’মাস ধরে ছিল অপেক্ষা, তারপর বলা! মানুষ কেন প্রেমে পড়ে? কেন ভালোবাসে? কেন? অনেকগুলো উত্তর মাথায় এলেও তার কোন উত্তর খোঁজা হয়ে উঠেনি। আবেগে জীবন না চললেও থেমে থাকেনা, আবেগ জীবনগাছের আশ্চর্য এক ফুল। জীবনের শোভা বাড়াতে তার প্রয়োজন কম নয়। বুবনের কাছে ভাবনা দমিয়ে রাখা দায়! আর সেজন্যই বাবলীকে সোজা-সাপ্টা বলবে বলেই বেড়িয়ে পড়লো।

কমন রুমের জানালায় হাত ইশারায় ডেকে বললো, “বাইরে এসো কথা আছে”। বাবলী বেড়িয়ে বললো এখানে বলবে? নাকি ক্যান্টিনে বসবো। বুবন চা খাবার অফার করলো। টেবিলে হাতের বইগুলো রেখে বুবনের দিকে তাকিয়ে দেখল ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, নিরবতা ভাঙতেই বললো, “ কি বলবে বলো? চা খেতে নিশ্চয় ডাক নি?”
-খানিকটা সে রকমই।
-যাই হোক খানিকটা সেরকম, পুরোটা তো আর না। তা বলো শুনি? কেন ডাকলে?
বুবন মনে মনে ভাবছে মেয়েটা কি-না কি মনে করে? মাইন্ড করে বসবে না-তো! রিফিউজের খবর সবাইকে বলে বেড়াবে না-তো আবার- “জানিস রন্টি, বুবন উজবুকটা আমাকে প্রেমের অফার দিয়েছিল” দিয়েছি মুখে ঝামা ঘষে, দারুন হয়েছে না? ব্যাটার পিরিতের শখ। এমন কিছু বলবে না তো আবার। মাথা নিচু করে এগুলোই ভাবছিল। মাথা তুলবার আগেই টেবিলে চা চলে এলো। তিতকুটে চা মুখে নিয়ে বুবন বললো- বাবলী আমি তোমাকে ভালবাসি? যাকে বলে রিয়েল লাভ; নো ফান! সারা জীবন একসাথে থাকার অভিপ্রায়।
কথা কর্ণপাত হবার পর প্রায় দশ সেকেন্ড মুখ হা-করে বসে রইল বাবলী। বুবনের মতো বাস্তববাদী ছেলে শেষে আবেগের মালা গলায় দিল। কিভাবে হলো এমন? আরো দু’মিনিট চুপচাপ বসে রইলো ওরা দুজন। মুখ ভর্তি করে চা খেয়ে নিয়ে বাবলী একটু বিস্ময় চোখে নিয়ে বললো, বুবন আমাকে ভালবাসবে তুমি? ভাবনায় আসছে না আমার? ঠিক করে বলছো তো? এটা কোন এক্সপেরিমেন্ট নয়তো?
বুবন পর-পর দু’বার মাথা নেড়ে বললো না, না, কোন এক্সপেরিমেন্ট নয়। বাবলী চোখ বন্ধ করে মিনিট খানিক ভাবলো তারপর বললো-হ্যা; তোমাকে ভালবাসতে পারি তবে একটা শর্ত আছে? ভালোবেসে যেহেতু দুজন একসাথে বাঁচবো সেহেতু যেকোন কারণে বা অকারণে হোক আমার সাথে মরতে পারবে তুমি?
এবার বুবন ‘থ’ হয়ে গেল। বলে কি! একসাথে কি কখনো মরা যায়? আগে-পিছে হতে পারে। তাছাড়া ভালোবাসার জন্য মরে যাওয়া। এসব প্রেম-ট্রেম করে বুবন মরে গেলে জগতে নতুন কোন অমর প্রেম কাহিনী নিশ্চই হবে না! বেহুদা মরে কি লাভ? থাক্ প্রেমের প্রয়োজন নেই। বাবলী টেবিল ছেড়ে উঠে যাবার পর বুবন বাড়ি ফেরে সেই থেকে ভাবছে; মরণ তো আর অত সোজা না! আবার খুব কঠিনও না অন্তত ভালোবাসতে পারার চেয়ে মরন সহজ। কিন্তু বাবলী অমন কঠিন কেন?

বন্ধুরা বললো বাবলী তোকে ঢপ মেরেছে। দেখ-গিয়ে আর কারো সাথে....। -বুবনের চোখে ঘুম আসেনা। ভাতঘুমও চোখ থেকে হাওয়া, চারপাশটায় বাবলীর ছায়া তাড়িয়ে ফেরে। ভালোবাসা পেলে বেশ হতো না পেলে মনের ভেতর থেকে কোন তাগিদ আসেনা। মেঘের মতো ছুটে গিয়ে বাবলীর দিগন্তে হারাতে পেলে মন্দ হয় না। বাবলীর চোখ, হাসি, কথাবলায় অদ্ভুত আশ্চর্য ফরিঙ উৎসব! দুজনে আশ্চর্য ভাবে এক হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে দুঃখও ভেংচি কেটে পালিয়ে যাবে। কিন্তু একসাথে মরতে বলে যে!
বাড়ি ফিরে অন্যদিনের চেয়ে একটু আলাদা হয়ে গেছিল বাবলী। এতদিনকার “ঘরেতে ভ্রমর এলো গুন-গুনিয়ে” গান পরিবর্তন হয়ে তার বদলে বাজলো “খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি মনের ভেতরে” দিয়ালী বললো “তোকে আজকে উড়– উড়– লাগছে; ব্যাপার কি-রে? নতুন কিছু কি হলো?” বাজে বকাস না-তো? নতুন কিছু কি হবে? তুই যা ভাবছিস তা কিচ্ছু না।
মুখে কিছু না বললেও এরই মধ্যে ও ভেবে নিয়েছে বুবনকে সে ভালবাসবে। কাউকে ভালবাসবে বা কারো প্রেমে পড়ে যাবে সিনেমার মতো করে, এসব নিয়ে ভাববার কোন কারন এর আগে হয়নি। শুধু জানতো একদিন প্রেম আসবে, নিয়মের হাত ধরে। ছাপিয়ে দিয়ে যাবে সব। প্রেমের ঢেউয়ে হয় ভেসে যাবে, নয়তো ডুবে যাবে। একটা কিছু হবে; সিনেমার মতো শুরু হয়ে, গল্পের মতো প্রেম আসবে। বুবনকে উপেক্ষা করার কোন মানে নেই তার ওপর আবার প্রথম প্রেমের আহবান বলে কথা! বুবন একটু ক্ষ্যাপাটে! তার উপর আবার মাঝে মাঝে সব কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার খুব শখ। বাবলী মনে মনে বললো যাই হোক দেখাই যাক না কি হয়!

সেদিন কলেজ ক্যান্টিনে বুবনকে কিছু না বললেও সেই ক্যান্টিন থেকে ভালবাসার শুরু হয়ে গেল। কিউপিডের তীর দুজনকে তাড়িয়ে ফিরল ক্যান্টিন থেকে কলেজ মাঠ, সার্কিট হাউসের লম্বা লনের ধার, জয়নুল আবেদীনের গ্যালারী। ছুটির দিনে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বসে লম্বা প্রেমালাপ। অদৃশ্য তরঙ্গ ধরে প্রেমপর্ব উঠে আসে বন্ধুদের আড্ডায়, পারিবারিক চায়ের কাপে। বুবনের মা সহেলী’ একদিন সাহস করে বলেই ফেললেন ছেলেকে
-বুবন তুই নাকি প্রেম করছিস?
-হুম!
-মেয়েটা ক্যামন?
-সাধারণ
-সাধারণ তো বুঝলাম। ওর বাবা-মা কিছু বলছে না, তোর সাথে ঢ্যাং-ঢ্যাং করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে? সব উচ্ছনে গেছে।
-ও ঘুড়ছে না; আমি ঘুড়ছি ওর সাথে। ওর বাবা নেই। মা মেয়েকে নিয়ে অত চিন্তিত না! মেয়ে তো আর উচ্ছন্নে যাচ্ছে না। তাছাড়া প্রেম করলে কেউ কি উচ্ছন্নে যায়?”
-আনন্দের প্রেম কোনদিন নিরানন্দ হয়ে গেলে পরে বুঝবে। আবেগে মন চলতে পারে কিন্তু জীবন সে-এক আজব নদী।
মায়ের কথা বুবন বুঝে কিন্তু মন হলো বড় অদ্ভুত এক আশ্রম; যার দ্বার খোলা কিন্তু বেড়িয়ে যাবার পথ বন্ধ। প্রেমের মরণ হলে পৃথিবী থেকে প্রেম ফুরিয়ে যেত। প্রেমের মরণ নেই, তাই ফুরিয়ে যাবার ভয় নেই। প্রেম পর্বের পাতা দীর্ঘায়িত হচ্ছিল এভাবেই। বাবলী ঠিক করে নিয়েছিল; পড়ালেখার পার্ট চুকে গেলে ঠিক বিয়ে করে ফেলবে তারপর জব। বুবনের অবশ্য তাতে কোন আপত্তি নেই। মা’কে একটু ম্যানেজ করতে হবে আরকি!

সেদিন ভোর কুয়াশায় বাবলী বেড়িয়ে ছিল টিউশনের উদ্দেশ্যে। অত সকালে রিকসা থাকেনা। হেটে যেতে হয়; তাতে অবশ্য আপত্তি নেই ওর। মাঝে মাঝে বুবন দাতে ব্রাশ চেপে সঙ্গ দেয়। শুনশান রাস্তায় একলা চলা ঠিক না। মা প্রায়ই বলে, কিন্তু অত ভাবলে জীবন চলে না। সংসার নিয়ে মা’র কম ভাবনা নয় তাতে একটু হাত দিতে পারলে ভালো লাগে। সকাল থেকে বা চোখটা লাফাচ্ছে ওর। কলেজ মোড় থেকে পায়ে হেটে সারদা রোড অবধি যেতে হবে; শর্টকার্ট করে গলির ভেতরে ঢুকে পড়লো বাবলী। মা’কে নিয়ে ভাবনা যতো তার’চে বেশি দিয়ালীকে নিয়ে ও মেয়ে কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। এমন হলে চলে, সংসার জীবনে গিয়ে কি করবে কে জানে। এসব ভাবতে ভাবতেই পথ চলছিল বাবলী অন্ধকার গলির শেষটায় আসতেই পেছন থেকে হঠাৎ যে যেন জাপটে ধরলো! রাস্তাটা সকালের দিকে নিরব থাকে এখানে খালি বিল্ডিং ছাড়া কোন বসতি নেই যে চিৎকার দিলে কেউ ছুটে আসবে।
ও পিছু ফিরে আক্রমনকারীর মুখটা দেখবার আগেই সাদারঙের ওষুধটা নাকে লাগলো। মাথাটা দুলে উঠে চোখ ঝাপসা হয়ে পড়ে গেল। এর পর অনেকটা সময় অচেতন! কিচ্ছু মনে নেই। একটা ভয়ঙ্কর ঘোরের মধ্যে শুধু গোঙ্গানির শব্দ ছাড়া বাকী সব অচেনা। যখন চোখ খুলে চাইলো তখন নিজেকে অচেনা আধপাকা বিল্ডিং ঘরের নোংরা বিছানায় আবিস্কার করলো। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথাটা আগের চেয়ে বেশি রকমের দুলে উঠলো। মনে হচ্ছে কোমর থেকে নেমে গেছে বিষধর সাপ। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো! বুঝতে পারলো, গেছে সব! অনেকক্ষণ কাঁদল আশে-পাশে কেউ নেই শুধু ঘরে টিউব লাইট জ্বলছে। বুবন আর মা’ কে কি বলবে সে? এখন দু’ চোখ খুলে পৃথিবী দেখার চেয়ে সিলিংফ্যানে ঝুলে গেলে বেশ হয়।

তিনদিন পর সন্ধ্যে বেলায় হাসপাতাল থেকে সিএনজি বাবলীকে উঠোনের দোরগোড়ায় ফেলে রেখে গেল। সুহানী বেগম ব্যাপারটি আচঁ করতে পেরেছিলেন ঘটনার দিন সন্ধ্যেয়। গলা চিড়ে কান্না এলেও কিছু করার ছিলনা। থানা-পুলিশ করা হয়েছিল। যদিও এসব ব্যাপারে পুলিশ বড় উদাসীন। থানার দারোগা বাবুর অতিরঞ্জিত প্রশ্নে তিনি শুধু বিচলিত হন নি মনে হয়েছিল এর’চে মরণ ভালো। বুবনকে একদল পুলিশ এ কাজেই সন্দেহ করে ভীষন ভাবে ঠেঙ্গিয়েছে সে এখন হাসপাতালে। বাবলীকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি। সে সুযোগ পায়নি। কলেজ থেকে চাপ ছিল সন্দেহভাজন সবাইকে ধরার এবং অদ্ভুত কাণ্ড ছিল এই, সন্দেহের তীরটা বুবনের দিকেই বেশি ।

মেয়েকে নিয়ে যখন দুর্বিপাকে সুহানী বেগম তখন বুবনের গ্রেফতারের খবরে আরও মুষড়ে পড়েছিলেন। পাঁচটা লোকের কথার উত্তর দেয়াটা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক! তার মর্মার্থ তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। থানা থেকে বাড়ি ফিরবার পর সমাজ-সংস্কার নিয়ে যতটা ভয় তিনি করছিলেন তারচে বেশি ভয় ছিল বাবলীকে নিয়ে। উঠোন থেকে দিয়ালীই বাবলীকে ঘরে পৌছে দিল ও অবশ্যি কারো সাথে কথা বলেনি। আর কেউ জিজ্ঞেসও করেনি কিছু। আজ নিয়ে তিনদিন পার হলো। যখন উদ্ধার করা হয়েছিল তখনও কিছু বলেনি। হাসপাতালেও মুখে কোন কথা ছিলনা। আজ ঘরে ঢুকবার পর শুধু ছিটকিনির আওয়াজ শোনা গেছে।

বুবন হাসপাতালে শুয়ে জানতে পেল বাবলী বাড়ি ফিরে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব পুরোটা জানতে হবে। এ ঘটনার পর মা হয়তো কিছুতেই মানতে চাইবে না। বন্ধু-বান্ধব, সমাজ সে-তো মহা হ্যাপা, কি যে করা যায়? তবে যাই হোক বাবলী তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেই কিন্তু ভালবেসেছে। এখনও বাসে। ওকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবাটা অন্যায় হবে। বাবলী ঠিক ধরে নেবে এটা সত্যিকারের ভালবাসা ছিলনা হয়তো এটা এক্সপেরিমেন্ট ছিল। দুর্ঘটনা হতেই পারে তাই বলে ভালবাসাকে বদলে ফেলা অসম্ভব।
সে রাতে ঘুমুতে পারেনি বুবন। অজানা অস্থিরতায়। ঘুমুতে পারেনি সুহানী বেগমও। ও ঘরে মেয়ে কি করছে কে-জানে? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে ছিলেন ভোরের দিকে হঠাৎ দরজায় বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন। দিয়ালী কাঁদছে- “মা আপুর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে কি আপু?”
হুড়মুড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দিয়ালীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন তিনি। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকবার পর দেখা গেল বাবলী খুব শান্ত হয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে; ওড়না ঝুলে রয়েছে গলার কাছে।

বুবনের সাথে শেষ দেখা হয়নি বাবলীর। হাসপাতালের বেড থেকে মা সহেলী বেগম উঠতে দেয়নি। কলেজের মাঠ ও বকুল তলা হয়ে বাবলীর মরদেহটা অনেক পথ ঘুরে শেষে পুরোনো গোরস্থানের দূর্বাঘাস মাটিতে ঘুমিয়ে গেল সব-সময়ের জন্য। সাংবাদিকের দল ভীড় করেছিল বাড়ির উঠোনে দিয়ালী ক্ষেপে সবকটাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সুহানী বেগম পর-পর মুর্ছা গিয়েছিলেন। রুপালী শুধু অনঢ় ছিল সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছিলেন আনটোল্ড কোন স্টোরি যেন পত্রিকায় না ছাপায়।

সেই সকালে হাসপাতালে রুমকে উত্তাল কান্নাঘরে পরিনত করে দিয়েছে বুবন। ওর কান্না আর চিৎকারে আশ-পাশের মানুষগুলো পর্যন্ত কাঁদল। বিকেলের দিকে গলায় আর স্বর ফুটছিল না। বুবনের শুধু বলছিল এ জীবন আমি চাইনা! আমি বাবলীকে চাই! অন্ধ প্রেম ওকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল প্রতিটি মুহুর্তে । জানা গেল না বাবলীর মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? বুবন ভাবছিল কোন অশুভ চক্রের লিপ্সার জন্য আজ তার জীবনে শূন্যতার কালে মেঘ ক্রমাগত ছড়িয়ে যাচ্ছে। অনেক রকম প্রশ্ন গুলো বুবনকে চক্রাকারে আঘাত করতে লাগলো ক্রমাগত।

কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বুবনকে দায়ী করছিল, আরেকদল দায়ী করছিল অনাকাঙ্খিত কিছু নামধারী ছাত্রদের। তবে আসল সত্যিটা অদৃশ্য হয়েই রইল। বুবনের অন্ধ প্রেম কয়েক ঘন্টার মধেই শহুরে অলি-গলিতে কেচ্ছার মতো রটে গেল। পত্রিকায় এলো, প্রেমের জন্য প্রেমিকা ধর্ষিত অতঃপর আত্মহত্যা। খবরের কাগজ পড়বার পর সহেলী বেগম বুবনকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো সারাটা দিন পড়ে রইলেন হাসপাতালের বেডে। উনি বুঝতে পেরেছিলেন কিছুতেই একা ছাড়া যাবেনা ওকে। একটা কিছু অঘটন যদি হয়ে যায়! কিন্তু সন্ধ্যের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যখন দেখলেন বুবন নেই তখন কি করবেন ভাবতে পারছিলেন না। দু’ হাত তুলে শুধু চিৎকার করলেন খানিকটা সময়। নার্স কিছু বলতে পারলো না। তিনতলার বারান্দায় এসে যখন দেখলেন মানুষের জটলা তখন বুঝতে বাকী থাকলো না কি হয়েছে। বারান্দায় এসে নিচের দিকে তাকাবার আর সাহস পেলেন না।
বুবন যখন হাসপাতালের ছাদ থেকে পাখির মতো উড়ে নিচের দিকে পড়ছিল তখন ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছিল- “বুবন তোমাকে ভালবাসতে পারি, কিন্তু কারণে বা অকারণে হোক আমার সাথে মরতে পারবে তুমি? বুবন হয়তো একসাথে পারেনি তবে খুব বেশি দেরিও করেনি মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধান ছিল! ছাদ থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির মতো ঝাঁপ দিয়েছিল বুবন। ও যখন উড়ছিল তখন দেখছিল বাবলী ওকে দু-হাত তুলে তাকে ডাকছে।



==============সমাপ্ত=============
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×