উপমহাদেশীয় ক্রিকেট চর্চার একটা সংস্কৃতি আছে। সংস্কৃতিটা অনেকটা এমন- আমরা পাশের পাড়ার দলটার কাছে হারতে চাই না। দলটা ভালো হলেও হার-জিত যাই হোক না কেন তা আমাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেলিত করে। তাই পাকিস্তানকে হারালে যেমন আমরা মজা পাই, ইন্ডিয়াকে হারালে তার চেয়ে একটু বেশি মজা পাই। আর উপমহাদেশের ক্রিকেট উন্মাদনার 'মজা' কিন্তু নেহায়েত কোন মজা নয়। আবেগ, রাগ, প্রতিশোধপরায়নতা -এই সবকিছুর মিশেল। তো এই ক্রিকেট উন্মাতাল উপমহাদেশের খেলোয়াড়েরা যখন সাধ্যের চেয়েও বেশি করে দেখায় তখন সমাজের গণ্যমান্যরাও তাদের রত্নভাণ্ডার থেকে নজরানার পুষ্পবৃষ্টি ছড়ায়। এই উপমহাদেশীয় চর্চাটা সেই রাজরাজাদের বাইজি ঘর থেকে শুরু হয়ে এখনকার রাজাদের ভবন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। এতক্ষণ পর্যন্ত যে কথাগুলো বললাম তাতে সবারই একটি ধারণা আসতে পারে যে আমি অতিমাত্রায় সমালোচনাপ্রবণ আমাদের ক্রিকেট দলের প্রতি। ধারণাটা ভুল। আমি এ কারনেই বাংলাদেশ না বলে উপমহাদেশ বলার চেষ্টা করেছি। কারন আদ্যোপান্ত আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতিটা এমনি। একজন ডাই হার্ড ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের এই প্রাপ্তিতে আমি যারপরনাই আনন্দিত। খেলোয়াড়দের উৎসাহ প্রদানে এ এক অন্যতম ঔষধি। কিন্তু সাথে সাথে এর যে কিছু প্বার্শপ্রতিক্রিয়া আছে তাও আমাদেরকে খুব দ্রুতই বুঝতে হবে। অন্তত প্রফেশনাল একটা দল হয়ে উঠার জন্য এর ব্যতিক্রম কিছু নাই। উদাহরন চোখের সামনে। সাউথ আফ্রিকা। তারা চোকার, দুর্ভাগা যাই হোক না কেন, খেলাকে খেলা হিসেবেই দেখে। আমাদের আবেগটা বাড়তি বটে। কিন্তু প্রফেশনাল দলের চর্চাটাও তো করে দেখাতে হবে। আর কখন- যখন দরকার পরবে। আর এই একটা জায়গায় আমরা হেরে গেছি। গত টি২০ টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচটা মনে হল আমরা খুব আয়েশ করে হেরেছি! কথাটা খারাপ লাগলেও সত্য। মনঃসংযোগের তীব্র ব্যাতয়। সৌম্য সরকারের কথাতেই স্পষ্ট যে সাউথ আফ্রিকার বোলিং আহামরি কিছু না। কিন্তু আমরা যেন বিলিয়ে দিয়ে এসেছি আমাদের মহামূল্যবান উইকেটগুলো। কিছু জিনিস খুব গভীরভাবে নজর দেওয়ার আছে-
• ইন্ডিয়া সফরের পর খুব কম সময় পেলেও খেলোয়াড়দের অনেকেই বাড়ি গিয়েছেন। আসন্ন একটা সিরিজের জন্য মনঃসংযোগ পুনরায় তৈরি করার জন্য হলেও ১ সপ্তাহ আগথেকে ক্যাম্পিং করা বাঞ্ছনীয় বোধকরি। যা হয়নি।
• বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ইফতার পার্টি ও সামাজিক কাজকর্মে ব্যস্ত থাকায় খেলোয়াড়েরা খেলা থেকে অনেকটাই বাইরে চলে যায়।
• খেলার মাঝে ১/২ দিনের বিরতিতেও বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং-এ অংশ নেওয়ার চর্চাটাও দৃষ্টিকটু।
• সাউথ আফ্রিকার পক্ষে যেটি কাজ করে তা হল- বিশ্বকাপের শেষে তারা অনেকটা সময় পর এই সিরিজ দিয়েই ক্রিকেটে ফিরেছে। পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের পরপর দুইটি সিরিজ দলের কম্পিউটার এনালিস্ট নিশ্চয় খূব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সাথে এ নিয়ে খেলোয়াড়দের সাথে কয়েকটি ক্লাসও করা হয়ে গেছে বোধকরি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়রাও বাংলাদেশের খেলায় নজর রেখেছেন তা আজ হাশিম আমলার জবানীতেই প্রমানিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গ্যামপ্লেন তৈরি করা ও সেই অনুযায়ী তৈরি হয়েই এসেছে তারা । আহামরি মানের স্পিনার না হলেও বেশ ভালোমানের স্পিনার নিয়ে এসেছে সাউথ আফ্রিকার এই দলটি।
তারপরেও সেই উপমহাদেশীয় রক্তের ধর্মমতে একটা থাপড় খাওয়া দরকার ছিল আমাদের। তা আমরা টি২০ তে খেয়েছিও। এখন মনঃসংযোগ রেখে ঝাপিয়ে পড়ার সময়। আশাকরি মাশরাফি এন্ড গং আমাদের আশাহত করবে না। যদি বলা হয়, আমরা যে ফরমেটে ভালো খেলি তাতে সাউথ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে আপনার প্রত্যাশা কি? আমার উত্তর হবে- বাঘের মতো লড়াই, সে লড়াই এ ৩-০ তে হারলেও ক্ষতি নেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫