এই শহরে লুলা পাগলা নামটা কারো কাছে পরিচিত নয়, এমনকি লুলা পাগলা নিজেও নিজের কাছে অপরিচিত! সে জানে না এই চিড়িয়াখনায় তার কী পরিচিতি। কার ঔরসে তার আগমন। যে গ্রামটায় সে থাকতো সেখানেই তার চেত ও চৈতন্যের জন্ম। চেত বলতে শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে চিন্তা। তার প্রথম চিন্তাটা ছিল যে এক ভারী শরীর তাকে বহন করতে হচ্ছে! দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই ভারী শরীর নিস্তেজ, দুর্বল হয়ে যায় খাবার না খেলে। আর তৃতীয় চিন্তাটি হচ্ছে এই খাবারেরই কিছু অংশ এই শরীর থেকে বের না হতে পারলে শুরু হয় দহররম মহরম! আস্তে আস্তে চিন্তার আরও সব শাখা উপশাখা সে গোগ্রেসে গিলেছে। গ্রামের লোকেরা গিলিয়েছে, সেও গিলেছে! তাকে সবাই নাম দেয় লুলা। কিন্তু তার শরীরের কোন অংশই লুলা বা অবশ না। শক্ত সামর্থ্য এক শরীরের অধিকারী সে। তার গলদ একটাই। সে বোবা। তার এই চিন্তা ও ভাবনাচক্র নিজের মাঝেই খেলা করে। চিন্তার জন্ম হবার আগে সে কী ছিল, এই প্রশ্নটি তার মাঝে আর খেলা করে না। একটা সময় করতো যদিও। সে এক নতুন চিড়িয়ায় চলে এসেছে। চিড়িয়ার নাম শহর- ঢাকা শহর। গ্রামে এখন পাগলামি করার মতো কিছু নেই! সব চায়ের দোকানে চারকোনা এক যন্ত্র চলতে থাকে। পাগলার পাগলামি দেখার সময় কই! কিছুটা অভিমানে, কিছুটা চয়ন নামের ছেলেটার চাপে। একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে বলতে যা বোঝায় তাই চয়ন। তবে মেধাবী, আর সে মেধার জোরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় সুযোগ পাওয়া এবং অতঃপর ঢাকায় চলে আসে। অপরিচিত, অজানা শহরে লুলা পাগলাকে সে টেনে নিয়ে চলে এসেছে। রক্তের টানে নয়, ভক্তের টানে লুলা পাগলাও তাই আজ ঢাকায়। গ্রামে তার একমাত্র ভক্ত এই চয়ন। গ্রামে সবাই যেখানে লুলার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সেখানে এই চয়ন কীভাবে লুলার ভক্ত তার কোন কারন কেউ খুঁজে পায় না! জীবনের মধ্যে রহস্য না থাকলেও গল্পের মাঝে এক ছটাক রহস্য থাকা লাগে। নাহলে গল্প গল্প হয়ে উঠে না। লুলা পাগলা চরিত্রটির মাঝেও এই ছটাক খানিক রহস্য রয়েছে। গ্রামের জীবন থেকে একটানে শহরে এসে এখনো সবকিছু হজম করে উঠতে পারেনি সে। চারকোনা যন্ত্রের যন্ত্রণা এখানে আরও বেশি। এখানে রাস্তায় রাস্তায় চারকোনা যন্ত্র। হাতে হাতে মিনি চারকোনা যন্ত্র। বিভিন্ন আকৃতির চারকোনা যন্ত্র। সে বুঝতে পারলো দুনিয়া চারকোনা যন্ত্রময়। চয়নের বদৌলতে লুলা সম্প্রতি ফেসবুকে তার আইডি খুলেছে। এখন অবশ্য চারকোনা যন্ত্রের প্রতি তার রাগটা একটু কম। যন্ত্রের বিবিধ ব্যবহারে সে এককথায় বিস্মিত ও মুগ্ধ। এই শহর লুলাকে আর কী কী উপহার দেয়, এখন দেখার বিষয় সেটাই।
*সৃষ্ট লুলা পাগলা চরিত্রটি আমার কল্পনাপ্রসূত একটি চরিত্র। কারো সাথে এর কোন যোগসাজশ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১১