somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৬ মার্চের যে শিক্ষাটা বাংলাদেশ নিতে পারে

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৬ মার্চ ১৯৭১।
এক কালরাত্রির বিভিষিকা পেরিয়ে, সশস্ত্র প্রতিরোধের এক অসিম বীরত্ব ধারন করেছিলো স্বাধীনতা প্রত্যাশি এক জাতি। 'উই রিভোল্ট' বলার দৃঢ়তায় যুদ্ধে নেমেছিলো মুক্তিকামী মানুষ।

সুসংগঠিত একটি বাহিনীর বিপক্ষে প্রায় নিরস্ত্র একটি জাতির যে অসম লড়াই, সে লড়াইয়ে কি শামিল হয়েছিলো এ দেশের প্রতিটি মানুষ?
না, তা হয়নি! অনেকেই ছিলো যারা এ অসম যুদ্ধে আসন্ন পরাজয়ের বিষয়ে ছিলো নিঃসন্দেহাতিত! তাদের বিবেচনাবোধে এ প্রশ্নটি নিশ্চই যোক্তিকভাবেই আঘাত করেছে যে- জয়, কিভাবে সম্ভব?(আমি নিশ্চিত, এ প্রশ্নের কোন যুক্তিপূর্ন উত্তর ছিলো না।
অনেকেই ছিলো, যারা পরাধীনতার ইচ্ছায় পাকিস্তান কাঠামোর অভ্যান্তরেই থাকতে চেয়েছিলো! যারা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের উচ্ছিষ্ঠভোগী!
অনেকেই ছিলো বিজয়ের বিষয়ে দ্বিধান্নিত, ফলে তারা গোলামী করেছে তাদের ধারনার সম্ভাব্য বিজয়ীর! তবে অধিকাংশই ছিলো ১৯৪৭এর দেশ বিভাগকেই স্বাধীনতা জ্ঞান করা ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের অখন্ডতাকেই ইসলামের রক্ষা কবজ ভাবা তৎকালিন পরিস্থিতির অবিবেচকরা।

উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিত মানুষদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই শান্তির ধর্ম ইসলামের আবেগী অযুহাতে যারা হায়েনা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর বিপক্ষে দাড়িয়ে নরকের বিভিষিকায় জ্বালানী দিয়েছিলো।
হ্যাঁ, ইসলাম এবং ইসলামী রাস্ট্রের প্রতি তাদের এ অবস্থান ছিলো আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। ইসলামের কথিত আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছিলো, তাদের নজরে পরেনি শোষন বৈষম্য, তারা এড়িয়ে গেছে ইসলামের শান্তির বিপরীতে গনহত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষন। তারা আবেগী দাসত্ব করেছে ইসলামী রাষ্ট্র নামের এক শয়তানের।

আজ সময়ের নিরিখে আমরা দেখি, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। তারা ইসলামের কথা বলে দাড়িয়েছিলো ইসলামেরই বিপক্ষে। তারা দাড়িয়েছিলো ঈমানী অঙ্গ দেশপ্রেমের বিপক্ষে। এবং তারা ক্ষতি করেছিলো ইসলামেরই!! আজ টিভি, সিনেমা থেকে শুরু করে সর্বত্রই ভিলেন মানেই দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা ইসলামি ব্যক্তিত্ব! এটা কি তাদেরই পাপের ফসল নয়?

১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর, সেই কথিত ইসলামপ্রেমীদের ভুল প্রমান করেছিলো। শিক্ষা দিয়েছিলো- সময়ের দাবী আবেগীয় অন্ধত্বে নয় বরং বিবেকীয় বীরত্বের। তাই সকল অবস্থাতেই আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াতে হবে।

অনেকেই এখন প্রশ্ন করতে পারেন, ২০১৪এ এ থেকে বাংলাদেশ কি শিক্ষা নিতে পারে?

উত্তরঃ ২০১৪তেও কি আমরা উচ্ছিষ্ঠভোগী, দ্বিধান্বিত এবং আবেগীয় শ্রেনী দেখতে পাচ্ছি না?
৫ জানুয়ারীর যে অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন হয়েছে! ভোটাধিকার বঞ্চিত অনেক মানুষেরাই নির্বাচন মেনে নিয়েছে! তাদের বিবেচনাবোধে এ প্রশ্নটি যোক্তিকভাবেই আঘাত করেছে যে- ভোটাধিকার হরনকারীর পরাজয়, কিভাবে সম্ভব?(আমি নিশ্চিত, এ প্রশ্নেরও কোন যুক্তিপূর্ন উত্তর নেই)
এরাই এ সময়ের দ্বিধান্বিত বা নিঃসন্দেহাতিত শ্রেনী।
ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ইচ্ছায় অনেকেই ভোটাধিকারের সেচ্ছাত্যাগী পুষ্পে ক্ষমতায় পূজা দিয়েছে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী!
আগের মতোই, আমি উচ্ছিষ্ঠভোগী ও দ্বিধান্বিতদের নিয়ে কিছু বলবো না, এরা সব সময়ের এবং সমাজেরই সমস্যা। আমি নজর দিতে চাই সেই আবেগীয় শ্রেনীর প্রতি, যারা ৫ জানুয়ারীতে ভোট দিয়েছে, এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে কারন তারা আওয়ামীলীগকে ভালোবাসে, তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসার আবেগীয় অন্ধত্বে তারা গনতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, জনমানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।

হ্যাঁ, আওয়ামীলীগের প্রতি তাদের এ অবস্থান আবেগীয় ভাবে সঠিক, তবে বিবেকীয় ভাবে সম্পূর্ন ভুল। আওয়ামী আবেগের অন্ধত্বে তাদের বিবেক এতটাই চাপা পড়েছে, তাদের নজরে পরেনি একদলীয় অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন যেখানে ভোটের আগেই সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া হয়ে গিয়েছিলো, যেখানে মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলো, গনতন্ত্রের কফিনে ঠোকা হয়েছিলো পেরেক। আওয়ামী আবেগে তারা দাড়িয়েছিলো গনতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করা দলটির মূল আদর্শের বিপরীতে। তারা বিবেকীয় বীরত্বের বিপরীতে গ্রহন করেছিলো আবেগী অন্ধত্ব।

সময়ের নিরিখে একদিন প্রমান হবে, তাদের অবস্থান ছিলো ভুল। প্রমান হবে- আওয়ামী আবেগে তারা ক্ষতি করেছে গনতান্ত্রিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগেরই। ঠিক যেমন ইসলামের ক্ষতি করেছিলো ১৯৭১এ ইসলাম আবেগীরা।

তাই, ২৬ মার্চ, দ্বিধান্বিত অথবা নিঃসন্দেহাতিত শ্রেনী শিক্ষা নিতে পারে- জয় কিভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নে দ্বিধা না রেখে, এ উত্তরে ভরসা রাখতে হবে যে- জয় আসবেই।
২৬ মার্চ, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ঠভোগীরা শিক্ষা নিতে পারে- কোন ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়।
২৬ মার্চ, আবেগী শ্রেনী শিক্ষা নিতে পারে- সময়ের দাবী আবেগের অন্ধত্বে নয় বরং বিবেকের বীরত্বে।
সর্বপরি- ২৬ মার্চ, বাংলাদেশ শিক্ষা নিতে পারে- সময়ের সংকটে 'উই রিভোল্ট' বলতে পারার বীরত্বের।

বর্তমানে সকল বাংলাদেশীকে আবেগকে নয় বিবেককেই গুরত্ব দিতে হবে, সময়ের সকল সংশয় দূরে ঠেলতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দাবীতে, নিজেদের ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নির্মোহ হয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়াতে হবে। দৃঢ় কন্ঠে বলতে হবে 'উই রিভোল্ট'
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×