somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক পরীক্ষা ও সৃজনশীল দুর্নীতি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল লেখা : http://www.banglatribune.com/news/show/118512/

স্মৃতিশক্তির দিক থেকে কখনই খুব বেশী পরীপক্ষ ছিলাম না, আর তাই হয়ত মনে করা কঠিন হয়ে গেছে, কোন পাবলিক পরীক্ষায় নকলের দায়ে বহিস্কারের খবর ঠিক কবে শেষ দেখছিলাম পত্রিকায় । তবে এটা মনে করতে খুব বেশী কষ্ট হয়না আমাদের সময়, যখন আমরা এস.এস.সি. পরীক্ষা দিয়েছিলাম এমনকি আমাদের সময়ের কয়েক দশক পরেও পত্রিকায় এরকম খবর ছাপা হয়েছে। আগে আমাদের কাছে পাবলিক পরীক্ষা বলতে ছিল মূলত মাট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট (অধুনাকালে যা এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি), আর ইদানিংকালে আরও কিছু পরীক্ষা যুক্ত হয়েছে তালিকায়, যেমন জে.এস.সি. / পি.এস.সি আরো কতকিছু। অনেকগুল পাবলিক পরীক্ষা চালু হবার পরও, আচমকা কোথায় যেন হারিয়ে গেল এসব খবর। ভাবলাম দেশ বোধহয় নকলমুক্ত হয়ে গেছে। শাবাস শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় । শাবাশ অভিভাবকবৃন্দ । সৎ, শিক্ষিত এবং পরিশ্রমী এক প্রজন্মের প্রত্যাশা নিয়ে করতে পারি আমরা স্বপ্নবিলাশ।

নিজের মাথার উপর খুব বেশী ভরসা না থাকলেও বেশ ভালই মনে আছে, আমাদের সময় পাবলিক পরীক্ষায় পাশের হার যদি পঞ্চাশ ভাগের বেশী হতো তাহলে সারাদেশের মিস্টির কারিগরদের কয়েকবার মিষ্টি বানাতে হত। আর এখন জিপিএ ফাইভ পাওয়া আর মুড়ি-মুরকি খাওয়া মনে হয় একই কথা। ভাবতে ভালই লাগে শিক্ষার মানের উন্নয়ন হয়েছে । আমরা আর নই মূর্খ জাতি।

আজকাল স্কুলের ভর্তি পরীক্ষাতে নাকি শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে অভিভাবকদেরও পরীক্ষা নেয়া হয়। বেশ ভালো কথা। বাচ্চারা স্কুলে কি শিখছে সেটা জানতে ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীর বিকাশগত আলোচনা করতে অভিভাবকের সক্ষতা সম্পর্কে জানা যাবে। একই সাথে শিক্ষকরা জানবেন অভিভাবকের চাওয়া নিয়ে, এবং প্রয়োজনীয় সংযোজক রেখা টানা সম্ভব হবে আকাঙ্ক্ষা আর বাস্তবতার মাঝে। ধারনাগুলো বেশ সৃজনশীল।

সৃজনশীলতা, আজকাল নাকি পাঠ্যপুস্তকগুলো সৃজনশীল। কমলমতি শিক্ষার্থীরা জানবে কিনিজেদের ছোট-বড় স্বপ্নগুল আকাঁবাকা অক্ষরে ফুটিয়ে তুলতে নিজেদের পরীক্ষার খাতায়। পরীক্ষাকে আর মনে হবে না কোন প্রতিযোগিতা, এগুল হবে ভালবাসা আর স্বপ্নের এক মিশ্রন। পরীক্ষার খাতার প্রতিটি অক্ষরে গন্ধ পাওয়া যাবে শিক্ষকের স্নেহের আর শিক্ষার্থীর মননশীলতার।

বলা হলো অনেক স্বপ্নের কথা, ছড়ান হল স্বপ্নের ফুলঝুরি । কিন্তু আসলে কী তাই পাচ্ছি আমরা ? স্বপ্নের মাঝে কি হানা দিচ্ছে কোন দুঃস্বপ্ন ?

--< গাইড বই নামে একজাতের “পুস্তিকা” নাকি পাওয়া যায় বাজারে, যা পরে শিক্ষার্থীরা জানতে শিখে কী করে স্বপ্ন দেখতে হয়, ঠিক করে বললে গাইড বইয়ের লেখক কী স্বপ্ন দেখেছেন বা লিখেছেন। তার একটু কষ্ট করে মুখস্ত করে নিতে হবে লেখাগুল। আগের দিনে যেখানে দশটা প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে হত আজকের দিনে মুখস্ত করতে হয় হয়তবা পনের বা বিশটা। ভালোইতো আর কিছু না হোক মুখস্ত করার দক্ষতা বারছে আমাদের ।
--< অভিভাবকদের যেই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তাতে আর কিছু জানা না যাক বা না যাক, অন্তুত জানা যাবে যে কিভাবে কীভাবে সাহায্য করতে পারবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে, সেটা আর্থিকভাবে, সামাজিক দৃষ্টিকোণ বা রাজনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে।
--< পাশের হার কমানে যাবে না কোন মতেই। যদি কমে যায় তাহল বুঝতে হবে শিক্ষার মানের অবনমন হয়েছে অথবা কোন কারনে কোন প্রশ্ন হয়েছে কঠিন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গনিত বা ইংরেজী প্রশ্ন খারাপ হয়।
--< আজকাল আর আগের মত কষ্ট করে রাত জেগে নকল লিখে নিয়ে যেতে হয়না। খুদে খুদে অক্ষরে লেখা নকল পরতে গিয়ে চোখের উপর চাপ ফেলতে হয়না । আর যাই হোক দেশ এখন ডিজিটাল। হলের বাইরে থেকে জানিয়ে দিবে মুঠোফোন বা অন্য কোন মধ্যমে উত্তর, পরীক্ষার হলে আসার সময় কষ্ট করে বইয়ের পাতাগুলর ছবি তুলে আনলেই হল । হয়তো বা এসব নিয়ে পরীক্ষার হলে যাওয়া নিষিদ্ধ । তবে কত গ্যাজেট আছে ঘড়ির মত দেখতে । সেগুলো নিলেই কেল্লা হতে। “কানে কম শুনি” বলে যদি ব্লু-টুথ নিয়ে চলে যাই, কেউতো আসবেনা কান দেখতে।

গুনগতমান আর পরিমানগত মানের তর্ক সবসময়ই ছিল, হয়তোবা থেকে যাবে । কিন্তু একথা মানতে হবে সৃজনশীলতার মাপকাঠি একমাত্র গুনগত পরিমান। আমার কাছে যা সৌন্দর্যের মানদণ্ডে অপূর্ব আপনার কাছে তা নাও হতে পারে শ্রেষ্ঠ, তবে একপরতা ভাবে ভাললাগার কিছু সাধারণ গুনাবলি আছে আর পরিবেশনবাদী বিদ্যাতে (যেমন প্রবন্ধ, বিশ্লেষণ ইত্যাদিতে), পরিবেশনরীতির আছে কিছু সাধারন ধারনা। আর গনিতের ক্ষেত্রে পরিবেশন তত্ত্ব যটনা গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশী প্রয়োজনয়ীয় গানিতিক তত্ত্বের প্রয়োগ । একই কথা সত্য বিজ্ঞানের বিষয়গুলতে।

তথাকথিত প্রজ্ঞাবান মহল যখন বলেন, “প্রশ্ন কঠিন হবার জন্য পাশের হার কমে গেছে ” তখন খটকা লেগে যায়, সৃজনশীল প্রশ্নকে কিভাবে কঠিন করা যায় ? প্রশ্নের ধারা হবে ভিন্ন বা প্রচলিত ধারার বাইরে, তবেই না বুঝা যাবে সৃজনশীলতার ধারায় কতখানি আগিয়ে গেছি আমরা।

তবে বিস্ময়ের মাত্রা সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় যখন দেখি কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার হলে দেয়া হচ্ছে নকল । তারপরও থামতে পারে না দুঃসংবাদের বন্যাধারা। মিথ্যা গৌরবের আকাঙ্ক্ষার বিভোর হয়ে অনেক অভিভাবক কিনে নিচ্ছেন প্রশ্ন। একবারও কী আমরা ভাবতে পারছিনা আমরা দুর্নীতির হাতেখড়ি আমারা দিচ্ছি আমাদের সন্তাদের । জানিয়ে যাচ্ছি অর্থের বিনিময়ে নীতিরীতি সবই কেনা সম্ভব হয়। সৃজনশীল ছাত্র-ছাত্রী আমরা না পেলেও হয়তোবা পেয়ে যাব সৃজনশীল দুর্নীতিগ্রস্থ এক প্রজন্ম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×