somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রগকাটা বজলু'র গল্প

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বজলু প্রায়ই ভাবে কেন তার নাম "রগকাটা বজলু"?
তার কি দেহের কোন রগ কাটা?
কিংবা, সে কি ধরে ধরে মানুষের রগ কাটে?
সাধারনত এই লাইনে যারা কাজ করে তাদের সবারই নামের সাথে চেহারার কিংবা কাজের যথেষ্ট মিল থাকে। কেউ কি কখোনো শুনেছে যে কালা জাহাঙ্গীরের গায়ের রঙ ফর্সা কিংবা বাটু রমিজ আসলে অনেক লম্বা?
না।
রগকাটা বজলুর ক্ষেত্রে ব্যপারটা ব্যতিক্রম। আসলে তার রগ-টগ সবই বহাল তবিয়তে আছে, আর সে পারতপক্ষে ধরে ধরে মানুষের রগও কাটে না। কেউ একজন একবার বজলুর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিল "রগচটা বজলু।" আর লোকজন অভ্যাসমত সেই কথাকে "রগকাটা বজলু" বানিয়ে দেয়। এইটাইপ একটা নাম থাকলে বাজারে কাটতি বাড়ে। বজলু তাই মানুষের মুখে নিজের নাম শুনে মনে মনে খুশি হয়। এই নাম তো আর সার্টিফিকেটে লিখা থাকবে না যে স্কুলের বদরাগী বশির স্যার তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করবেন-
-তোর নাম রগকাটা বজলু?
-জ্বি স্যার।
-আমার সাথে ফাইজলামী করিস? যা ক্লাসের বাইরে গিয়ে আধাঘন্টা নীলডাউন করে দাঁড়িয়ে থাক।
-স্যার আমার নাম সত্যি সত্যি রগকাটা বজলু। আমি ধরে ধরে মানুষের রগ কাটি।
-কি? এত বর স্পর্ধা। এই কে কোথায় আছিস? আমার গাধাপেটানোর বেতটা নিয়ে আয়।
স্কুলের স্মৃতি মনে করলেই বজলুর মনে পড়ে বদরাগী বশির স্যার তাকে উপুড় করে পেটাচ্ছেন।
এই লাইনে বজলু তার নামের জন্য যথেষ্ট কদর পায়।
-"বজলুকে ভাড়া করেছি। কাজ হয়ে যাবে।"
-"রগকাটা বজলুকে ভাড়া করেছি। কাজ হয়ে যাবে।"
নিঃসন্দেহে ক্লায়েন্টদের জন্য দ্বিতীয় বাক্যটি প্রথমটির চেয়ে স্বস্তিদায়ক।
এলোমেলো চিন্তাগুলো মাথা থেকে সরানোর চেষ্টা করে বজলু। ডানে বামে তাকিয়ে বারান্দার দেয়ালের সাথে নিজেকে আরো লেপ্টে দেয়। "কাজটা হাইপ্রোফাইল। ঠিকঠাক মত করতে পারলে আরও কাজ পাবে।" সদ্যপরিচিত কাঁচাপাকা চুলের মধ্যবয়স্ক ক্লায়েন্ট তাকে অগ্রিম টাকা আর একটা এপার্টমেন্টের ঠিকানা দিতে দিতে কথাগুলো বলেছিল "লোকটা একা বাসায় থাকে। তোমার জন্য কাজটা খুব একটা কঠিন হবে না।" উৎকট হলুদ রঙের টি-শার্ট পড়া লোকটির মুখে ছিল স্পষ্ট ব্যক্তিত্যের ছাপ। বজলু আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি। এর বেশি কিছু জানার প্রয়োজন তার নেই। চিরকুটের ঠিকানা ধরেই বজলু এখানে এসেছে। সে অনেক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক শিকারের অপেক্ষায়। তবে আর বোধহয় অপেক্ষা করতে হবে না। বারান্দার দিকে একটা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই কাজটা শেষ করে ঘরে ফিরতে পারবে এই ভেবে মনে মনে স্বস্তি অনুভব করে বজলু। পায়ের শব্দটি এখন খুব কাছাকাছি। বারান্দার দরজা খুললো। হিংস্র শ্বাপদের মত নিঃশব্দে শিকারের পাশে এসে দাঁড়ায় বজলু। এই কাজ সে আগেও অনেকবার করেছে। দক্ষ হাতে শিকারের মুখ চেপে ধরে আরেক হাতে বুকের মাঝ বরাবর অবলীলায় গলিয়ে দেয় সদ্য শান দেয়া ছুরিটি। কিছুক্ষন দস্তাদস্তি। গরম তরলের ফোয়ারা। এরপর সব ঠান্ডা। আটকে থাকা নিঃশ্বাসটি সশব্দে ছেড়ে দিয়ে বজলু মেঝেতে লুটিয়ে পড়া শিকারের দিকে তাকায়। কাঁচাপাকা এলোমেলো চুল। রক্তের লাল রঙ এখনো টি-শার্টের সবটুকু হলুদ ঢেকে দিতে পারেনি। "শালা, বাকি ট্যাকাটা আর পাওন গেল না " অপ্রত্যাশিত শিকারের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয় বজলু। ছুরিটা হলুদ টি-শার্টে মুছতে গিয়ে শিকারের পকেটে বজলু পেয়ে যায় কাজ শেষে পাওনা বাকি টাকাটাও। বজলুর খুশি হবার কথা। কিন্তু তার চোখদুটি অকারণেই ছলছল করে ওঠে। বশির স্যার শুধুশুধু বজলুকে পেটাতেন না । এত টাকা হাতে পেয়েও কেউ কাঁদে? বজলু আসলেই একটা গাধা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×