(৪র্থ কিস্তির পর)
আগের অংশগুলো এখান থেকে পড়ুন
২০০২ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমি চলচিত্র পরিচালনা করতাম।এই সময়ে আমাকে যারা সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন, তার মধ্যে ময়ূরী আপা এবং কালাম ভাই অন্যতম।যদিও কালাম ভাই মাঝে মাঝে বিদেশ চলে যেতেন বা ভিবিন্ন কাজে বিজি থাকতেন,কিন্তু ময়ূরী আপা সার্বক্ষণিক ভাবে হেল্প করতেন।এছাড়াও,আরো অনেক লোক আছেন,যারা বিশেষ ভাবে হেল্প করেছেন।তাদের প্রতি আমি বিশেষ ভাবে ঋনী।নায়িকা হিসেবে আমার ছবিতে কাজ করেছে সবচেয়ে বেশি ময়ূরী আপা এবং তারপর মুনমুন।এছাড়াও পলি,ঝুমকা,নদী,নিশি,নাসরিন,রত্না সহ আরো অনেকেই কাজ করেছে।এখন তাদের সম্পর্কিত কিছু কথা লিখব।আর এর পরের পর্বে লিখব নায়ক দের নিয়ে।
ময়ূরীঃ আমার চলচিত্রের আসা সম্ভব হয়েছে এই মানুষ টার জন্যই।উনি হেল্প না করলে আমার হয়ত কখনোই চলচিত্রে আসা হত না।ময়ূরী আপা চলচিত্রে এসেছিলেন ১৯৯৮ সালে "মৃত্যুর মুখে" চলচিত্রের মাধ্যমে।ময়ূরী আপার মা সেতু আন্টি ছিলেন চলচিত্রের জুনিয়র আর্টিস্ট। উনাকে এই ছবির মাধ্যমে চলচিত্রে নিয়ে আসেন প্রযোজক মাহমুদ ভাই।আর পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত কবি আবুল হাসানের ছোট ভাই আবিদ হাসান বাদল।যদিও পরে এই ছবিতে ময়ূরী আপা ছিলেন না,কিন্তু একই বছর "রাজা" নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন যেটা হিট হয়।তখন মুনমুন ছিলেন সুপারহিট নায়িকা।ময়ূরী আপা এসে মুনমুন কে টেক্কা দেন এবং এক পর্যায়ে মুনমুন কে ছাপিয়ে যান।প্রায় তিনশ ছবিতে অভিনয় করেছেন ময়ুরী আপা,যার বেশিরভাগ ব্যাবসা সফল।নারগিস আক্তার পরিচালিত "চার সতীনের ঘর" ছবিতে বিখ্যাত অভিনেতা আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন।উনার জন্ম ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে,ঢাকার রামপুরায়।উনার আসল নাম মুনমুন আকতার।কিন্তু তখন চলচিত্রে নায়িকা মুনমুন ছিলেন বলে ময়ূরী নামে চলচিত্রে অভিষেক হয় তার।ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী।উনার হাজবেন্ড রেজাউল করিম মিলন ভাই খুব হাসিখুশি ফ্রী মাইন্ডের মানুষ ছিলেন এবং টাঙাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।থাকতেন ঢাকার মগবাজারের ময়ূরী আপার ফ্লাটে।গত সেপ্টেম্বর মাসে মিলন ভাই মারা গেছেন।
মুনমুনঃ মুনমুন একসময় বাংলা সিনেমার শীর্ষ স্থান দখল করেছিলেন।অসংখ্য বাংলা ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।তার কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব ছবিই ব্যাবসা সফল।মুনমুনের জন্ম ৩ জুলাই,১৯৭৯ সালে। মুনমুনের বাবার বাড়ি চট্রগ্রামের রাওজান উপজেলায়,একই জায়গায় নায়িকা শাবানার বাড়িও অবস্থিত।মুনমুন এর বাবার চাকরির সুত্র ধরে মুনমুন এর মা বাবা ইরাক চলে যান এবং সেখানেই মুনমুনের জন্ম হয়।১৯৯৭ সালে মৌমাছি ছবির মাধ্যমে মুনমুন বাংলা সিনেমায় আসেন।ব্যাক্তিগত জীবনে মুনমুন দুইটি বিয়ে করেছেন।কিন্তু একটিও টেকেনি।দুই ঘরের দুটি ছেলে নিয়েই তার দিন কাটছে।থাকেন আশুলিয়ায় নিজের ফ্লাটে।সম্প্রতি সরকারী অনুদান প্রাপ্ত একটি চলচিত্রের মাধ্যমে আবার বাংলা সিনেমায় ফিরেছেন তিনি।ছবিটি ২০১৬ সালের ২৬ march এ মুক্তি পাবে।
পলিঃ মোহাম্মদ হোসেনের "ফায়ার" ছবি দিয়ে চলচিত্রে অভিষেক হয় পলির।ছবিটির শুটিং হয় ব্যাংককে এবং পলির বিপরীতে নায়ক ছিলেন মান্না।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি।আর মুক্তি পায়নি।ছবিটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়।কথিত আছে,এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য পলি ব্যাংককের একটি বারে নগ্ন হয়ে অভিনয় করেছিলেন।পলিও অনেক ব্যাবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন।ব্যাক্তি গত জীবনে পলি দুই জময সন্তান সহ চার সন্তানের জননী।পলির হাজবেন্ড ব্যাবসায়ী এবং তারা তাদের গুলশানের ফ্লাটে বেশ সুখেই আছেন।আমি মাঝেমাঝে যাই তাদের সাথে আড্ডা দিতে,বেশ ভালই কেটে যায় সময় গুলো।
ঝুমকাঃঝুমকা কিভাবে চলচিত্রে এসেছিল আমি জানি না।তবে সে বেশ কয়েকটি ছবি করেছিল।আমার প্রায় ৫ টি ছবিতে ঝুমকা অভিনয় করেছিল,যেগুলোতে সে সাইড রোল প্লে করেছে।সবকটি ছবি ব্যাবসা সফল হয়।
নিশিঃনিশি আমার সেভেন মার্ডার ছবিতে অভিনয় করেছে।ভালই অভিনয় করত মেয়েটা।কিন্তু পরে সে নীল ছবির সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িয়ে,চলচিত্র থেকে ছিটকে পরে।পরে আর তার খবর পাইনি।শুনেছিলাম বিয়ে করে তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী তে চলে গিয়েছিল।
নদীঃআমার পরিচালিত "লন্ড ভন্ড " ছবির মাধ্যমে নদীর অভিষেক হয়েছিল বাংলা চলচিত্রে।যদিও এর আগে সে আরো দুইটি চলচিত্রে অভিনয় করেছিল,কিন্তু একটিও মুক্তি পায়নি।"লন্ড ভন্ড" ছবির প্রযোজক বাচ্চু ভাইয়ের অনুরোধে আমি এই ছবিতে পলি কে সাইন করাই।নদী এরপর আরো অনেক ছবিতে কাজ করেছিল।২০০৭ সালে এক গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীকে ভালবেসে বিয়ে করে সুখেই আছে।নদী এখনো মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করে মাঝে মাঝে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯