(৮ম কিস্তির পর)
একজন পরিচালক এর প্রধান কাজ শ্যুটিং করা।এই পর্বে শুটিং এর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।লাগাও বাজি ছবিটির শুটিং হয়েছে এফডিসিতে,গাজিপুর এর ভাওয়াল অঞ্চল,খাগড়াছড়ির সিকদার শুটিং স্পট,এবং একটি বিশেষ সিন ধারন করা হয়েছে মগবাজারে ময়ূরী আপার ফ্লাটে।আমি যেহেতু চলচিত্রে কাজ করার সব ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব,তাই আমি সকল তথ্য বাস্তবতার নিরীখে তুলে ধরব,কোন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করব না,একথা প্রথমেই বলে নেই।
ছবিটি আমার ২য় ছবি।তাই পরিচালক হিসেবে আমি তখনো নতুন ছিলাম।আমাকে ময়ূরী আপা বিশেষ ভাবে হেল্প করেছিলেন, আর কালাম ভাইয়ের কথা নাই বা বললাম।ছবির মহরত শেষ করে পরের দিন একটি গানের সিন ধারনের মাধ্যমে শুটিং শুরু হয়।এতে অংশগ্রহন করেন ময়ূরী আপা এবং মেহেদী।এফডিসির ভেতরেই শুরু হয়।পরে অবশ্য এই গানের কিছু অংশ খাগড়াছড়ি এবং ভাওয়াল অঞ্চলেও কিছু অংশ ধারন করা হয়।এই গানটি কিছুটা খোলামেলা টাইপের ছিল।ময়ূরী আপাকে দিয়ে এই গানটি করাতে গিয়ে আমি প্রথমে কিছুটা বিব্রতবোধ করি।কিন্তু ময়ূরী আপা নিজেই আমাকে হেল্প করেন এই বিষয়ে।যাই হোক মিডিয়াতো মিডিয়াই।আর হেল্প করেছেন মাসুম আজাদ,আমার বেশিরভাগ ছবিতে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেছেন এই মানুষটাই।এইসব গানের শুটিং দেখতে এত মানুষ ভীর করত,যে তাদেরকে কন্ট্রোল করতে প্রডাকশন টিমকে হিমশিম খেতে হত।
এই ছবিতে একটি আইটেম গান ছিল।গানটির চিত্রায়ন হয়েছে এফডিসির তিন নাম্বার ফ্লোরে এবং এতে নাসরিন পারফর্ম করেছেন।আমার প্রিয় যে কয়জন অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন,তাদের মধ্যে নাসরিন অন্যতম।খুব ভালো অভিনেত্রী নাসরিন,কিন্তু বেশিরভাগ ছবিতে তাকে থাকতে হয়েছে আইটেম গার্ল অথবা সাইড নায়িকা হিসেবে।এর কারন ও আছে,সেই বিষয়ে পরের পর্বে লিখব।এখন যেভাবে আইটেম গান প্রতিটা ছবিতে আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এমন ছিল না।তখন শুধুমাত্র বানিজ্যিক ছবিগুলোতেই আইটেম গান থাকত।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা ভিলেন দের মধুচক্র হিসেবে দেখানো হত।অর্থাৎ কোন বারে বা ভিলেনদের আস্তানায় নাচনেওয়ালী নাচছে আর ভিলেনরা এনজয় করছে,এইরকমই দেখানো হত।আইটেম গার্ল হিসেবে নাসরিন তখন দারুণ জনপ্রিয় ছিল।এমনো হয়েছে,একটি গানের সিন ধারনের জন্য সেট ফেলা হয়েছে সকালে,কিন্তু নাসরিন এসেছেন বিকেলে।প্রতিটি আইটেম গানের খরচ হত আলাদা ভাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা।
শুটিং এর আগে পরে নায়িকারা প্রযোজক দের সাথেই সময় কাটাবে,এটা ছিল তখনকার অলিখিত নিয়ম।প্রযোজক দের অন্যায় আবদার মেটাতে গিয়ে অনেকবার শুটিং বিলম্বিত হয়েছে,নিজের চোখে দেখা।এই প্রসংগে একটু বলি,তখন বাংলা সিনেমায় এমন কিছু প্রযোজক প্রবেশ করেছিল,যাদের উদ্দেশ্য টাকা কামানো ছিল না আর তারা সিনেমাকে ভালোবেসেও সিনেমায় আসেনি।তারা ছিল নারীলোভী। শুধুমাত্র এই একটি কারণে তারা বাংলা সিনেমায় বিনিয়োগ করত।একজন নামকরা প্রযোজক কে নিজ মুখে বলতে শুনেছি,"সিনেমায় এখন খালি লস,সিনেমা ছেড়ে দেব,এখন দশ থেকে পনের হাজার টাকা খরচ করলেই ভালো মেয়ে পাওয়া যায়"।এই একটি কথা থেকেই বুঝা যায়,কি রকম পরিস্থিতি ছিল তখন।
এই ছবি শুটিং এর সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।ছবিটির এক পর্যায় এসে এমন একটি সিন ছিল,যে ময়ূরী আপা আর আলেকজান্ডার দুইজন দুই দিক থেকে হেটে আসবেন এবং আসার সময় আলেক কলার খোসায় স্লিপ করে ময়ূরী আপার উপর এসে পরবেন,সেক্ষেত্রে আলেক নিচে এবং ময়ূরী আপা উপরে থাকবেন।যাই হোক লাইট,ক্যামেরা,একশন বলার সাথে সাথেই সিন শুরু হল,দুইজন দুইদিক থেকে হেটে আসছেন।সামনে কলার খোসা রাখা আছে এবং নিচে ম্যাট বিছানো।আলেক কলার খোসায় স্লিপ করে পরলেন,সাথে সাথে ময়ূরী আপা তার উপর পরলেন।আর বিপত্তি ঘটল তখনি।আলেক তার কোমরে এমন ব্যাথা পেয়েছিলেন,যে সেদিন আর শুটিং করতে পারেন নি।পরে অবশ্য আলেক এর জায়গায় ডামি শিল্পী দিয়ে সেই সিনের শুটিং করতে হয়েছিল
(চলবে)