somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমায় আমার অভিজ্ঞতা-৯ম কিস্তি

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৮ম কিস্তির পর)

একজন পরিচালক এর প্রধান কাজ শ্যুটিং করা।এই পর্বে শুটিং এর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।লাগাও বাজি ছবিটির শুটিং হয়েছে এফডিসিতে,গাজিপুর এর ভাওয়াল অঞ্চল,খাগড়াছড়ির সিকদার শুটিং স্পট,এবং একটি বিশেষ সিন ধারন করা হয়েছে মগবাজারে ময়ূরী আপার ফ্লাটে।আমি যেহেতু চলচিত্রে কাজ করার সব ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব,তাই আমি সকল তথ্য বাস্তবতার নিরীখে তুলে ধরব,কোন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করব না,একথা প্রথমেই বলে নেই।

ছবিটি আমার ২য় ছবি।তাই পরিচালক হিসেবে আমি তখনো নতুন ছিলাম।আমাকে ময়ূরী আপা বিশেষ ভাবে হেল্প করেছিলেন, আর কালাম ভাইয়ের কথা নাই বা বললাম।ছবির মহরত শেষ করে পরের দিন একটি গানের সিন ধারনের মাধ্যমে শুটিং শুরু হয়।এতে অংশগ্রহন করেন ময়ূরী আপা এবং মেহেদী।এফডিসির ভেতরেই শুরু হয়।পরে অবশ্য এই গানের কিছু অংশ খাগড়াছড়ি এবং ভাওয়াল অঞ্চলেও কিছু অংশ ধারন করা হয়।এই গানটি কিছুটা খোলামেলা টাইপের ছিল।ময়ূরী আপাকে দিয়ে এই গানটি করাতে গিয়ে আমি প্রথমে কিছুটা বিব্রতবোধ করি।কিন্তু ময়ূরী আপা নিজেই আমাকে হেল্প করেন এই বিষয়ে।যাই হোক মিডিয়াতো মিডিয়াই।আর হেল্প করেছেন মাসুম আজাদ,আমার বেশিরভাগ ছবিতে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেছেন এই মানুষটাই।এইসব গানের শুটিং দেখতে এত মানুষ ভীর করত,যে তাদেরকে কন্ট্রোল করতে প্রডাকশন টিমকে হিমশিম খেতে হত।

এই ছবিতে একটি আইটেম গান ছিল।গানটির চিত্রায়ন হয়েছে এফডিসির তিন নাম্বার ফ্লোরে এবং এতে নাসরিন পারফর্ম করেছেন।আমার প্রিয় যে কয়জন অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন,তাদের মধ্যে নাসরিন অন্যতম।খুব ভালো অভিনেত্রী নাসরিন,কিন্তু বেশিরভাগ ছবিতে তাকে থাকতে হয়েছে আইটেম গার্ল অথবা সাইড নায়িকা হিসেবে।এর কারন ও আছে,সেই বিষয়ে পরের পর্বে লিখব।এখন যেভাবে আইটেম গান প্রতিটা ছবিতে আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এমন ছিল না।তখন শুধুমাত্র বানিজ্যিক ছবিগুলোতেই আইটেম গান থাকত।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা ভিলেন দের মধুচক্র হিসেবে দেখানো হত।অর্থাৎ কোন বারে বা ভিলেনদের আস্তানায় নাচনেওয়ালী নাচছে আর ভিলেনরা এনজয় করছে,এইরকমই দেখানো হত।আইটেম গার্ল হিসেবে নাসরিন তখন দারুণ জনপ্রিয় ছিল।এমনো হয়েছে,একটি গানের সিন ধারনের জন্য সেট ফেলা হয়েছে সকালে,কিন্তু নাসরিন এসেছেন বিকেলে।প্রতিটি আইটেম গানের খরচ হত আলাদা ভাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা।

শুটিং এর আগে পরে নায়িকারা প্রযোজক দের সাথেই সময় কাটাবে,এটা ছিল তখনকার অলিখিত নিয়ম।প্রযোজক দের অন্যায় আবদার মেটাতে গিয়ে অনেকবার শুটিং বিলম্বিত হয়েছে,নিজের চোখে দেখা।এই প্রসংগে একটু বলি,তখন বাংলা সিনেমায় এমন কিছু প্রযোজক প্রবেশ করেছিল,যাদের উদ্দেশ্য টাকা কামানো ছিল না আর তারা সিনেমাকে ভালোবেসেও সিনেমায় আসেনি।তারা ছিল নারীলোভী। শুধুমাত্র এই একটি কারণে তারা বাংলা সিনেমায় বিনিয়োগ করত।একজন নামকরা প্রযোজক কে নিজ মুখে বলতে শুনেছি,"সিনেমায় এখন খালি লস,সিনেমা ছেড়ে দেব,এখন দশ থেকে পনের হাজার টাকা খরচ করলেই ভালো মেয়ে পাওয়া যায়"।এই একটি কথা থেকেই বুঝা যায়,কি রকম পরিস্থিতি ছিল তখন।

এই ছবি শুটিং এর সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।ছবিটির এক পর্যায় এসে এমন একটি সিন ছিল,যে ময়ূরী আপা আর আলেকজান্ডার দুইজন দুই দিক থেকে হেটে আসবেন এবং আসার সময় আলেক কলার খোসায় স্লিপ করে ময়ূরী আপার উপর এসে পরবেন,সেক্ষেত্রে আলেক নিচে এবং ময়ূরী আপা উপরে থাকবেন।যাই হোক লাইট,ক্যামেরা,একশন বলার সাথে সাথেই সিন শুরু হল,দুইজন দুইদিক থেকে হেটে আসছেন।সামনে কলার খোসা রাখা আছে এবং নিচে ম্যাট বিছানো।আলেক কলার খোসায় স্লিপ করে পরলেন,সাথে সাথে ময়ূরী আপা তার উপর পরলেন।আর বিপত্তি ঘটল তখনি।আলেক তার কোমরে এমন ব্যাথা পেয়েছিলেন,যে সেদিন আর শুটিং করতে পারেন নি।পরে অবশ্য আলেক এর জায়গায় ডামি শিল্পী দিয়ে সেই সিনের শুটিং করতে হয়েছিল

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×