আমি যেসময়টায় পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলাম,সেসময়টাকে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।কিন্তু,কথায় বলে,সময় যখন যেমন।সেই সময়ে সেই ধরনের ছবির চাহিদা ছিল,তখন আর্ট ফিল্ম টাইপের ছবি বানিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হত না।বস্তুতঃ একটা কথা না বললেই নয়।তখন বিভিন্ন কারনে অশ্লীল ছবির কথা বলে পরিচালকদের দোষারোপ করা হত।বিভিন্ন নায়িকাদের কেও একই দোষে দোষী করা হয়।কিন্তু,সত্য কথা হল,তখন একটি ছবির কোন কিছুই পরিচালক বা নায়ক নায়িকা দের ইচ্ছায় হত না।ছবির প্রযোজক ছিল একটি ছবির সব।ছবি সাইন করার সময় প্রযোজক নির্ধারণ করে দিতেন ছবিতে।এতগুলো গান,এতগুলো মারপিট সিন এবং এতগুলো রেপ সিন থাকতে হবে।আইটেম গান কয়টা থাকবে,কাকে পারফর্ম করানো হবে,কত মিনিটের হবে,সব কিছু নির্ভর করত প্রযোজকের উপর।যে গান নিয়ে এত অশ্লীলতার অভিযোগ,সেই গানের কোরিওগ্রাফ হত প্রযোজকের ইচ্ছায়।
সত্যকথা হচ্ছে,তখনকার ছবিগুলো ছিল পুরোপুরিভাবে যৌনতা এবং ভায়োলেন্স নির্ভর। একজন পরিচালকের কাজ ছিল তার ছবিতে যৌন দৃশ্য গুলো hard করা এবং মারপিটের সিন গুলোকে ভায়োলেন্স এর চূড়ান্ত রূপ দান করা।এইটুকু করতে পারলেই কেল্লাফতে।একটি ছবি হিট হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল সেটা।কারন তখন বাংলা সিনেমার দর্শক ছিল দেশের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকজন। তাদের প্রায় ৯০% লোক দেশের নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক শ্রেনির।তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছবি বানাতে হত।তাই হয়ত প্রযোজক রা বাধ্য হয়েই সেই পথে হাটতেন।
এমন নয় যে রোমান্টিক ধাচের ছবি বানানোর চেষ্টা করা হয়নি।কয়েকটি রোমান্টিক ছবি নির্মিত হয়েছিল,যেগুলো অনেকটা রক্ষণশীল টাইপের।কিন্তু ফলাফল সেই নৈব নৈব চ।সবকটি ছবিই ফ্লপ হয়।তখন বেশ কিছু প্রযোজক পরিচালক ও অভিনেতা অভিনেত্রী সিনেমা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন।অনেক নামী অভিনেতা অভিনেত্রী বাধ্য হয়ে কিছুটা খোলামেলা চরিত্রে অভিনয় করেন।তখনকার নির্মিত ছবিগুলো দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।শুধু যৌনতা নির্ভর ছবিতে অভিনয় করেই অনেকে স্টার হয়ে গিয়েছিলেন সেই সময়ে।সেইসব স্টার দের শিডিউল পেতে অনেক কষ্ট করতে হত।আমি নিজেই ব্যাক্তিগত ভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি শুধুমাত্র কতিপয় স্টার নায়িকাদের শিডিউল ফাসানোর কারণে।
২০০৮ সালের প্রথম দিকে র্যাব অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমাহল সিলগালা করে দেয়।বেশ কয়েকজন অভিনেতা অভিনেত্রীকে অশ্লীলতার অভিযোগে এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হয়।বাংলা সিনেমার ক্রান্তিকাল তখন থেকেই।যদিও বর্তমান কালে আবার মানুষ সিনেমা হল মুখী হচ্ছে।কিন্তু এখন যেসব ছবি নির্মিত হচ্ছে,সেগুলো তখনকার মতই,কিছু ক্ষেত্রে আরো বেশি খোলামেলা।কিন্তু এখন আর অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হচ্ছে না।কারন,সিনেমায় দর্শক টানতে হলে এগুলোর দরকার আছে,এটা হয়ত সিনেমার নীতিনির্ধারক রা বুঝে গিয়েছেন।তারা বুঝেছেন ঠিক,কিন্তু সেটা একযুগ পরে এসে।
বাংলা সিনেমায় ভায়োলেন্স প্রবেশ করেছে পরিচালক কাজী হায়াতের হাত ধরে।১৯৯২ সালে তার নির্মিত দাঙ্গা এবং ত্রাস,এই দুইটি ছবির হাত ধরেই বাংলা সিনেমায় ভায়োলেন্স প্রবেশ করেছে।পরে অন্যান্য পরিচালক রা সেটাকে আরো বহুলাংশে বর্ধিত করেন।এর সাথে মিশিয়ে দেন সেক্স ক্যাপসুল।তথাকথিত অশ্লীলতার শুরু তখন থেকেই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫