somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে পারতেন হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি এবং আমার স্ত্রী সাদিয়া অসীম পলি বিগত 2004 সাল থেকেই পৃথিবীর সেরা অনেক গ্রন্থ একই সঙ্গে পাঠ করেছি। তার মধ্যে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর লেখক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডও উল্লেখযোগ্য। অবশ্য আমরা তার অনুবাদ গ্রন্থগুলোই পাঠ করেছি। হ্যাগার্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোমাঞ্চকর, কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীই লিখেছেন। লিখেছেন ইতিহাস নিয়েও। তবে তা অবশ্যই আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাস।

স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর জন্ম ইংল্যান্ডে। তিনি ১৯২৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। এই ইংরেজ ঔপন্যাসিক ইতিহাসকে বাস্তবেই ফিরিয়ে আনতে পারতেন। বিশেষ করে দুঃসাহসিক কাহিনী নিয়ে উপন্যাস রচনায় তিনি ছিলেন দারুন দক্ষ একজন শিল্পী।
হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড দশ ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন অষ্টম। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভালো কোন স্কুল-কলেজেও পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। মাত্র উনিশ বছর বয়সে সরকারের চাকুরি নিয়ে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকায়। ছ’বছর ওখানে কাটিয়ে আবার ফিরে যান ইংল্যান্ডেই। তারপরই মূলত তিনি মনোনিবেশ করেন লেখালেখিতে।
একের পর এক চমকপ্রদ কাহিনী তিনি উপহার দিতে থাকেন পাঠকদের জন্য। চাকরিসূত্রে আফ্রিকা মহাদেশ সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান লাভ করেন হ্যাগার্ড। সেসব অভিজ্ঞতাই ছিল তাঁর বইগুলোর মূল উপজীব্য।
হ্যাগার্ডের বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে আছে মন্টেজুমা'স্ ডটার, মর্নিং স্টার, পার্ল মেইডেন, দ্য ব্রেদরেন, অ্যালান এন্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার ইত্যাদি। মন্টেজুমা'স ডটার প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৩ সালে। আর পার্ল মেইডেন ১৯০৩ সালে। আমরা সবচেয়ে আগে পড়ি মন্টেজুমা'স ডটার, পার্ল মেইডেন এবং ক্লিওপেট্রা।
প্রাচীন গ্রিস এবং ট্রয় নিয়ে শৈশবে খুব সামান্যই পড়েছিলাম। কিছু পড়েছিলাম গল্প: যেমন `হেক্টরের বীরত্ব’। বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর করা স্কেচ থাকতো ওসব গল্পের লেখার ফাঁকে ফাঁকে। বর্তমান তুরস্ক এবং প্রাচীন গ্রিসেই ছিলো এ ট্রয় শহরের অবস্থান।
কিন্তু ক্লিওপেট্রা-র আবাস ছিলো মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। এই ট্রয় এমনই একটি কিংবদন্তির শহর, যাকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের বিখ্যাত ট্রয়ের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই শহর এবং সংশ্লিষ্ট যুদ্ধের বর্ণনা প্রাচীন গ্রিসের অনেক মহাকাব্যেই দেখা যায়। বিশেষত `ইলিয়াড’-এর নাম করা যেতে পারে।
অন্ধ মহাকবি নামে প্রচারিত হোমার রচিত অমর দুই মহাকাব্যের একটি এই ইলিয়াড। বর্তমানে ট্রয় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম। হোমারের ইলিয়াডে যে ট্রয়ের উল্লেখ রয়েছে, সেটিকেই এখন ট্রয় নামে আখ্যায়িত করা হয়। ট্রয় অনেক প্রাচীন নগরী। যেমন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া। ট্রয়-হেলেন অব ট্রয় এবং ক্লিওপেট্রা ইত্যাদি সব চলচ্চিত্রও আমরা বারবার দেখেছি এবং বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার বা সাহিত্যের ও চলচ্চিত্রের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছি বারবার।
রোমান সাম্রাজ্য প্রাচীন রোমান সভ্যতারই একটি পর্যায়। রোমান সাম্রাজ্যের শাসনাধীন অঞ্চলসমূহ ভূমধ্যসাগরের চারিদিকে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
খ্রিঃপূঃ ১০০-৪০০ খ্রিঃ পর্যন্ত রোম পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম নগরী ছিল। সে সময়ে জুলিয়াস সিজারকে স্থায়ী ডিক্টেটর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। খ্ৰী:পূ: ৪৪-এ তাকে কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী হত্যা করে। ফলস্বরূপ গৃহযুদ্ধ এবং হত্যালীলা অব্যাহত থাকে। সিজারের পোষ্য পুত্র অক্টাভিয়ান খ্রী:পূ: ৩১-এ এক্টিয়ামের যুদ্ধে মার্ক এন্টনী এবং ক্লিয়পেট্রাকে পরাজিত করে। এরপর অক্টাভিয়ান অদমনীয় হয়ে উঠে এবং খ্রী:পূ: ২৭-এ রোমান সিনেটে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়।
সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর ইতিহাসে কেবল ক্লিওপেট্রা নামে পরিচিত, ছিলেন টলেমিক মিশরের সর্বশেষ সক্রিয় ফারাও। তার রাজত্বের পর, মিশর রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ক্লিওপেট্রা ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় টলেমিক বংশের সদস্য।
আলেকজান্ডারের একজন সেনাপতি আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর মিশরে কর্তৃত্ব দখল করেন ও টলেমিক বংশের গোড়াপত্তন করেন। এই বংশের বেশিরভাগ সদস্য গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন এবং তাঁরা মিশরীয় ভাষা শিখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ফলে রোসেত্তা স্টোনের সরকারি নথিপত্রেও মিশরীয় ভাষার পাশাপাশি গ্রিক ভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে ব্যতিক্রমী ক্লিওপেট্রা মিশরীয় ভাষা শিখেছিলেন এবং নিজেকে একজন মিশরীয় দেবীর পুর্নজন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। বাবা চতুর্দশ টলেমি অলেটেসের সাথেই ক্লিওপেট্রা দ্বৈতভাবে মিশর শাসন করতেন।
বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ভাতৃদ্বয় ত্রয়োদশ টলেমি ও চতুর্দশ টলেমির সাথে রাজ্য শাসন করতেন। তৎকালীন মিশরীয় ঐতিহ্য অনুসারে তিনি তাঁদেরকে বিয়েও করেছিলেন। পরবর্তীতে একসময় ক্লিওপেট্রা মিশরের একক শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। ফারাও হিসেবে তিনি রোমের শাসক গাউস জুলিয়াস সিজারের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, যা মিশরের সিংহাসনের ওপর তাঁর হাতকে আরও শক্তিশালী করেছিলো। পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে ক্লিওপেট্রা তাঁর বড় ছেলের নাম রেখেছিলেন সিজারিওন।
কিন্তু এতো ইতিহাস। বাস্তবে ক্লিওপেট্রা-র কাহিনী এবং বুনন কিংবা এর ভাষারীতি এমন অপূর্ব ও জীবন্ত করে সৃষ্টি করেছেন হ্যানরি রাইডার হ্যাগার্ড, গ্রন্থ পাঠ ব্যতিত এর পাঠরস বিনিময় করা অসম্ভব। তাঁর রচিত ‘ক্লিওপেট্রা’ গ্রন্থই এর পুষ্ট সাক্ষ্য দেবে। একজন লেখকের এমন সৃষ্টিশৈলী সারা পৃথিবীতেই বিরল। এই মহান লেখকের প্রতি আজীবন নিবেদিত আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×