somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথার কথা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথা অনেক প্রকারের—ছোট কথা, বড় কথা, হক কথা, মিথ্যা কথা, শেষ কথা, নিজের কথা ইত্যাদি। প্রচণ্ড শক্তির অধিকারী ‘কথা’। কথাই মানুষকে হাসায়, কথাই কাঁদায়। পৃথিবীতে যত বিপ্লব, বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে— তার মূলে রয়েছে কথা। এই কথা না থাকলে বিপ্লব সংঘটিত হতো না, হতো না উত্থান, পতন, পরিবর্তন। কথা আছে বলেই রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি মানুষের মধ্যে প্রচার প্রসার লাভ করে। মানুষ কথার মধ্য দিয়ে জোটবদ্ধ হয়। সমাজ গড়ে, সমাজ ভাঙে। আর এ ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে সমাজ বিবর্তনের ধারা বহমান। মানুষকে যদি প্রতিবেলা প্রতিদিন ভরপেট খাবার দেয়া হয়, থাকার জন্য দেয়া হয় সুন্দর নিবাস; কিন্তু কেড়ে নেয়া হয় কথা বলার স্বাধীনতা, তাহলে সে ভালো খাবার, বাসস্থানে সন্তুষ্ট হবে না। একদিন ফেটে পড়বে প্রচণ্ড বিক্ষোভে কথা বলার স্বাধীনতার জন্য। ইতিহাস তার সাক্ষী।
কথার যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি রয়েছে এক বিধ্বংসী প্রভাবও। ক্রমাগত মিথ্যা কথা গুজব আকারে প্রচার করতে থাকলে দেশ ও জাতির অকল্পনীয় ক্ষতি হয়। অহেতুক অপবাদের কথামালা প্রচার করতে থাকলে ব্যক্তি মানুষের জীবনেও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ ঘটে। কথার জ্বালায় একটি মানুষ হারিয়ে ফেলতে পারে তার মানসিক ভারসাম্য। সে পাগল হতে পারে, বেছে নিতে পারে আত্মহননের পথ। তবু আমরা পরের ব্যাপারে কথা বলি, পরচর্চা করি। নিজের দোষের কথা বলি সবচেয়ে কম। আর যেটুকু বলি, তা নিজের গুণের কথাবার্তা। চোর-ছ্যাঁচড়-বাটপার থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় নেতা-অভিনেতা সবাই নিজের গুণের কথা শুনতে ভালোবাসে, বলতে ভালোবাসে। প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে সব সময় জানান দিতে থাকে আমি তোমাকে ভালোবাসি—তোমার হাসি, কাশি, কুন্তলরাশি সবকিছু—এমনকি তোমার কুকুরকেও ভালোবাসি। এ জানান দেয়াই প্রেমের বৃক্ষে জলসেচন। ্তুও খড়াব ুড়্থঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি—এ কথার ঘড়ি যত দিন টিক্ টিক্ করে চলবে, তত দিন প্রেমের তরী পাল তোলা নৌকা ফুরফুরে বাতাসে ভাসবে। আর কথার ঘড়ি বন্ধ হলে বুঝতে হবে নৌকা চড়ায় আটকে গেছে।
এ কথা ঠিক, আমাদের অনেক অভাব রয়েছে। আমরা সে রকম কলকারখানা শিল্প গড়তে পারিনি, কৃষিপণ্যের চাষ কমে গেছে। কিন্তু কথার চাষ কমেনি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেড়ে গেছে। ভোটের সময় এই বাড়তি ফসল বিতরণে আমরা কোমর বেঁধে নেমে পড়ি। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, মাইক হাতে পেলে আমরা থামি না। কোথায় থামতে হবে জানা নেই। আর জানলেও থামি না, কারণ আমরা কথা বলতে ভালোবাসি। সভা-সেমিনারে এ কথা যেমন সত্য; তেমনি খেলাধুলার রানিং কমেন্ট্রি দিতে গিয়েও একই অবস্থা। ক্রিকেটে কমেন্ট্রি হচ্ছে। কমেনট্রেটর এক কথা বারবার বলছেন আর নিজের মাহাত্ম্য জাহিরে পিছপা হচ্ছেন না। কত রান হলো, কে কে খেলছেন, কত ওভার হলো, ক্রিকেটে কী কী রেকর্ড রয়েছে—এসব ছেড়ে আমি কী কী ভেবেছিলাম, আমি কী বলেছিলাম ইত্যাদি কথা আর কথা। মাইক যখন পেয়েছি আমি বলব, তুমি শ্রোতা, তোমাকে শুনতেই হবে। ধর্মীয় আলোচনা সভাতেও কথামালার চাষ। কেউ কেউ ছলে-বলে-কৌশলে পর্দা-পুশিদার নামে আলোচনায় ‘নারী’ আনবেন; তারপর বেশ জম্পেশ করে আদিরসের ভিয়েন। বক্তাও খুশি, শ্রোতাও খুশি। এই ভিয়েন দিয়ে শ্রোতা খুশি করেন ফুটপাতে ওষুধের ক্যানভাসাররাও। তাদের কথা শুনতে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। ‘কথা শিল্পে’ ক্যানভাসারদের রয়েছে এক অসাধারণ অবদান। যারা লেখেন অনেকে তাদের ‘কথাশিল্পী’ বলে থাকেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যারা কথা বলেন, কথা বলে যারা জীবিকার সংস্থান করেন, তারাই আসল কথাশিল্পী। এ ক্ষেত্রে নেতা, অভিনেতা, আইনজীবী, ব্রোকার, ক্যানভাসার অনেকেই আছেন। বেশি কথা বলার বিপদ অনেক। একজন মন্ত্রী দুঃখ করে বলছেন—আমি যেদিন জিনিসের দাম কমাতে বলি, পরদিন ব্যবসায়ীরা সেই জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে মন্ত্রী বললেন, ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ সে হুমকি কানে না নিয়ে তার দলের লোকজনই তাকে ছেড়ে যাওয়া শুরু করল। শুধু লোকজনই নয়, ‘পদ ও পদবী’ তাকে ছেড়ে চলে যাবে এমন গুজব বিদ্যমান। নির্বাচনের প্রাক্কালে একজন নেত্রী বললেন, চালের দাম তিনি ২০ টাকার নিচে নামিয়ে আনবেন। তিনি ক্ষমতা পেলেন। কিন্তু কোথায় কী? চালের দর বাড়তেই থাকল। টেলিভিশনের টক-শোর টকাররা তার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়লেন।
আপনি তো জানতেন চালের দাম কমানো সম্ভব নয়। চাষী চালের সঠিক দাম না পেলে ধান চাষ বন্ধ করে দেবে।
প্রশ্নের উত্তরে ধামাধরারা উত্তর দিলেন, নির্বাচনের সময় এ রকম কথা বলতেই হয়। এগুলো ‘কথার কথা’। আমার সেই গল্পের কথা মনে পড়ল। জামাই শ্বশুরবাড়ি গেছে ভালো-মন্দ খাওয়ার জন্য। গরিব শ্বশুর কেঁচকি মাছ দিয়ে জামাইকে সমাদর করলেন। রাতের বেলায় জামাই-শ্বশুর পাশাপাশি শুয়ে আছেন। জামাই হেঁচকি তুলে নাক ডাকার ছলে বারবার নাক ডেকে বলছে, ‘পাঙ্গাশ, পাঙ্গাশ’ শ্বশুর নাক ডেকে উত্তর দিলেন, ‘কাল খাস, কাল খাস।’
সেই কাল কবে আসবে কে জানে! কবে আমরা ২০ টাকা কেজি দরে চাল খাব, কে জানে!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×