আকাশের রং যেমন ক্ষনে ক্ষনে বদলায়, ঠিক তেমনি আমার প্রতি মুহুর্তে জীবনে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যায়। কয়েকদিন আগে এতই অস্বাভাবিক একটা ঘটনা ঘটেছে, যেটা মনে পড়লে এখনো ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়।
ঘটনাটি বোঝার জন্য প্রথমেই নিজের সম্পর্কে একগাদা কথা বলা প্রয়োজন। আমার নাম মোঃ আশরাফুল আলম। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি’তে পড়ছি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংগঠন ‘আর্থ কেয়ার ক্লাবে’র চীফ মিডিয়া ইউং এর দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও ইংরেজী দৈনিক ‘নিউ নেশন’ এবং অনলাইন সংবাদ সংস্থা ‘বাংলাদেশের খবর’ এ করেসপনডেন্ট হিসেবে কাজ করছি।
যাই হোক এবার মূল ঘটনায় চলে যাই। ঘটনাটি এই বছরের ১৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ঘটেছে। রাজধানীর পাশ্ববর্তি নবাবগঞ্জে ‘আর্থ কেয়ার ক্লাবে’র বৃক্ষরোপন ও সচেতনতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে। দিনব্যপী কর্মসূচির তখন ঠিক মধ্যদুপুর। বৃক্ষরোপন করে চলেছে ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় স্কুলের ছাএরা। আমি ও আমার সাংবাদিক বন্ধুরা তখন সংবাদ সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। একদিকে নিজের পএিকা জন্য কাজ আর অন্যদিকে ক্লাবে’র চীফ মিডিয়া ইউং হিসেবে অন্য পএিকা ও চ্যানেলগুলোর সাথে যোগাযোগ।
অনেক ব্যস্ত সময় কাটছে। হটাৎ ক্লাবের তিন সদস্য আমার সামনে এসে দাড়াল। তাদের প্রত্যেকের সাথেই আমার পূর্ব পরিচয় আছে। তাদের নাম তাহেরা, নওশিন ও সর্ণা। এদের মধ্যে
সর্ণা অপরূপ সুন্দুরী। তাহেরা ও নওশিন আমাকে অনেক পীড়াপিড়ি শুরু করল যাতে আমি সর্ণা’র সাথে একটা ফটো তুলি। শত ব্যস্ততা সত্বেও অপরূপ সুন্দুরী একটা মেয়ের সাথে ফটো তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। তুললাম।
কপাল খারাপ !! ফটোগুলো তাহেরা তার সেলফোনে তুলেছে। আমি আমার ক্যামেরা দিয়ে একটা ফটোও অনেক অনুনয় বিনয় করে তোলাতে পারলাম না। আমার কাছে অপরূপ সুন্দুরী কারো সাথে তোলা প্রথম ফটোর কোন ফুটেজ থাকল না।
কর্মসূচির প্রথম পর্ব শেষ। এখন লাঞ্চ ব্রেক। সবাই লাঞ্চের অপেক্ষায়। আর আমি সংগ্রহ করা সংবাদের আপডেট ঢাকায় পাঠাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেছি। ঠিক সেই মুহুর্তে আমার কপাল খুলে গেল। তাহেরার ফোনে চার্জ নেই। বিদ্যুৎও নেই। তাই, আমার ল্যাপটপে কেবল লাগিয়ে সে চার্জ দিল। আর আমি পেয়ে গেলাম ফটোগুলো কপি করার সুযোগ।
ফটোগুলো নেয়ার কথা অসংখবার ছলছল নয়নে তাকে বলেছি। কিন্তু সে রোবটিক নীতি অবলম্বন করল। সে আমাকে দিবে না। তখন আমি দেখলাম সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। তাই আমি আঙ্গুল বাঁকা করলাম। তাকে না বলে ফটোগুলো কপি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সে যেভাবে আমার দিকে সুঁচ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, তাতে করে কপি করা ছিল হিমালয় জয় করার মত কঠিন কাজ। অবশেষে সে অসাধ্য সাধন হল। কথায় কথায় ব্যস্ত রেখে কপি করে পেললাম। দ্রুত কাজ সারার জন্য সেই ফটো গুলো বেচেঁ বেচেঁ কপি না করে পুরো মেমরি কার্ড কপি করেছিলাম।
অবশেষে একসময় কর্মসূচি শেষ হল। আমরা ঢাকায় ফিরে আসলাম। এখানে বলে রাখা ভালো, ফটোগুলো নেয়ার পর আমি সেই ফটোগুলো অনেকবার আমার ল্যাপটপে দেখেছি। আমার ছবি ভালো না আসলেও সর্না’র ছবি ভালো এসেছে।
রাতে বাসায় এসেই গুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফটোগুলো দেখার জন্য ল্যাপটপ অপেন করেই বোঁকা বনে গেলাম। জীবনে অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু এমন কিছু দেখব কখনো ভাবিনি।
মেমরি কার্ড থেকে নেয়া সকল ফটো আছে কিন্তু সেই বিশেষ ফটো নেই !! আমি রাতে ফটোগুলো দেখে ঘুমিয়েছিলাম। আর এখন ফটোগুলো নেই। সারারাত ল্যাপটপ আমার পাশে ছিল। ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দেয়ার কারনে অন্যকেউ ওপেন করে ডিলেট করার প্রশ্নই আসে না। তার চেয়েও বড় কথা আমি আমার রুমের দরজা লক করে ঘুমিয়েছিলাম।
এর কি আদৌ কোন ব্যাখ্যা আছে? আমার কয়েকজন আইটি স্পেশালিস্ট বলল, ভাইরাসের কারনে হয়ত এমনটা হইয়েছে। কিন্তু যখন বললাম, আমি লাইসেন্সেড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি। তখন তারাও কোন উত্তর দিতে পারল না। অনেকে আবার ডাটা রিকোভারি সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে বলল। আমি নিরাপত্তার খাতিরে ভালো রেটিংয়ের লাইসেঞ্চেড সফটওয়্যার দিয়ে রিকোভারি দিলাম। অনেকদিন আগে আমি যা কিছু ডিলেট করেছি, তার সবটাই রিকোভারি হল শুধু সেই বিশেষ ফটোটি ছাড়া।
আমি সবসময় নিজেকে ‘ইমোশন ও আসন্ন ক্ষতি’র হাঁত থেকে বাঁচাতে অটোসাজেশন দিই। এখন কি বলব এই ফটোর কারনে আমার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল ? তাই অটোমেটিকেলি ডিলিট হয়ে গেছে ? এটাও কি সম্ভব? শুনেছি এক যুদ্ধে দু’জন সেনা অফিসার হাজার মাইল দুরুত্বে থাকা সত্তেও টেলিপ্যাথির মাধ্যামে যোগাযোগ করেছিলেন। আমি কি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে এভাবে বর্ননা করন? নাকি এর অন্য কোন ব্যখ্যা আছে?