
ভালোবাসা নামক ক্ষুদ্র শব্দটার তাৎপর্য অতি সহজে বোঝা যায় কিনা সে ধারণা আমার নাই ।তবে ভালোবাসা শব্দটার তাৎপর্য তৈরী করা নিঃসন্দেহে খুব শ্রমসাধ্য ব্যাপার।পৃথিবীতে ভালোবাসা নামক এই শব্দটি খুব সরল আবার খুব জটিল।যেমন কারো ভালোবাসার অভাব থাকে না আবার কেউ ভালোবাসা কি জিনিস সেটাই টের পায় না কখনো।
জিও পুরো নাম জিয়াউল হক জিয়া কিন্তু সবাই তাকে জিও বলেই ডাকে।জিয়া বলে ডাকলেও আকীকা দেওয়ার একটা মুল্য থাকতো।কিন্তু নামটা একেবারেই সংক্ষেপে জিও হয়ে গেছে আস্তে আস্তে।জিও নামের জন্য আকীকা দেওয়া হয়নি।আকীকাবিহীন নামেই সবার কাছে পরিচিত সে।সবসময় চুপচাপ ও চাপা স্বভাবের অতি স্বাধারন একজন চরিত্র জিও।সব রকমের ঝুট ঝামেলা থেকে দূরে থাকাটাই তার স্বভাবের অন্যরকম একটা দিক।তবে প্রতিবাদী আওয়াজ তুলতে কখনো পিছুপা হয় না।কিন্তু ভালোবাসা নামক শব্দটি জিও কে উপলব্ধি করতে পারে না।অনেক সময় ভালোবাসারও উপলব্ধি থাকা উচিত।আমি কিন্তু অপরিচিত একটি মেয়ের সাথে সম্পুর্ন অপরিচিত একটি ছেলের যে মায়ার সম্পর্ক তৈরী হয় সে ভালোবাসার কথা বলছি।
প্রাইমারী স্কুলে পড়াকালীন সময়ে ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাস শুরু করেছিলো। ক্লাস ৬ থেকে ছেলে মেয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়।তার পর থেকে বয়েজ স্কুল বয়েজ কলেজ এবং অতপর বয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যাত্রা চলতে থাকলো।মেয়ে সমাজের সাথে সম্পর্ক একদম রাখতো না বললেই চলে।তাই বলে যে সে নারীজাতিকে সম্মান করতো না তা কিন্তু নয়।
যাই হোক এতো কথা বাড়িয়ে লাভ নাই মূল ঘটনায় আসি-
ক্লাস সিক্স এ জিও ঢাকার একটি নামডাকওয়ালা স্কুলে ভর্তি হলো।হাইস্কুল জীবন শুরু হলো তার।স্কুলের সকাল শিফট মেয়েদের বিকাল শিফট ছেলেদের।দিবা শাখা প্রভাতী শাখা!এর মধ্যেও একটা মজার ব্যাপার আছে দিবা শুনতেই ছেলে ছেলে আর প্রভাতী শুনতেই মেয়ে মেয়ে মনে হয়।প্রভাতীদের ক্লাস শেষ হলে দিবারা স্কুলে প্রবেশ করতো।বলে রাখা দরকার নেই যে গেইট আলাদা ছিলো না।প্রভাতীরা যেই গেইট দিয়ে বের হতো দিবারা সেই পথ দিয়েই প্রবেশ করতো।প্রবেশ করার আগে দিবারা প্রভাতীদের স্কুল ত্যাগ করবার দৃশ্য উপভোগ করতো।এমনকি যারা স্কুল পালাতো তারা স্কুলে আসতো শুধুমাত্র প্রভাতীদের চক্ষুদেখা দেখবার জন্য দাড়িয়ে থাকতো স্কুল গেইটের সামনে।কেউ কেউ হয়তোবা প্রভাতীদের নিয়ে ক্লাস বাদ দিয়ে প্রেম করতে চলে যেতো আশেপাশের কোন প্রেম নগরে!স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্হায় প্রেম !কি অদ্ভুত আনন্দ!এরক অদ্ভুদ উপভোগের ব্যাপারও যে আছে দুনিয়াতে জিওর তা মাথাতেই তখন জন্ম নেই নি!সে তার মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতো স্কুলে প্রবেশ করবার পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত মায়ের পাশেই দাড়িয়ে থাকতো।শেষ মেষ যতক্ষন না জিও গেইট দিয়ে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যেতো ততক্ষন তার মাতা গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাকতো।
মায়ের আদর আর স্নেহ ভালোবাসার কাছে জগতের অন্য সব আনন্দ পরাজিত।
জিও যখন ক্লাস এইটে উঠলো স্কুলের এক নামডাকওয়ালা স্যারের কাছে কোচিং করতে যেত।সেই স্যারের ছিলো অসম্ভব রকমের সুপরিচিতি।সবচেয়ে মজার এবং অদ্ভুতুরে ব্যাপার হলো স্যারের কোচিংয়ে সপ্তাহে একদিন ছেলে মেয়ে একসাথে এবং স্কুল বন্ধের সময় একসাথে ক্লাস হতো।সব ছাত্র ছাত্রীই ছিলো একি স্কুলের।সেই সুবাদে আবারো প্রভাতী আর দিবাএক হয়ে সুন্দর এক নাম কম্মাইন্ড হয়ে সপ্তাহে একদিন ফিরে আসতে লাগলো।অন্য সময় কোচিং মিস হলেও এই দিন কোন ক্রমেই কোচিং বন্ধ করা যাবে না কারো।
কম্মাইন্ডে পড়ার সুবাদে জিওর নতুন অভিগ্গতা শুরু হতে লাগলো।সেই সাথে আবার উঠতি কৈশোরের দুরন্ত একটা সময়।যদিও সে মেয়েদের দিকে কোন দিন কোন ক্রমে ভুলবশতও তাকাতো না বা দূর্বলতা তার ছিলো না।আজো নাই।কিন্তু সমস্যাটা হয়ে গেলো গোপনে,কেও জানলো না এমনকি জিও নিজেও বুজলো না ব্যাপারটা !আর কম্মাইন্ডে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ভালোলাগা কাজ করা শুরু করলো জিওর ভেতরে এ ভালোলাগা অন্যরকম ভালোবাসার মতন।হৃদয় নিংড়ানো ভালোলাগা!অপরিচিত কোন কিশোরীমুখের দিকে কিশোর জিওর লাজুক দৃষ্টি পড়তে লাগলো তাও আবার বাতাসের ফাকঁ দিয়ে কেও বুঝলোও না টেরও পেলো না।কেমনেই বা টের পাবে প্রত্যেকেই যে একি জিনিস উপভোগ করছে !যদিও এই ব্যাপারটিও তার মাথায় জন্ম নিতে অনেক দেরী করেছে!
বাপরে বাপ মোটা মোটা ঘন কালো লম্বা চুল অধিকাংশ দিনই খোলা থাকতো।মাঝে মাঝে ক্লাসে বসেই খোপা বাধতো !হরিণটানা টানা চোখদুটির মাঝে কালো মনি গুলো থেকেও মনে হতো উজ্জল আলো নির্গত হচ্ছে।
যেই রুমটাতে আমরা কোচিং করতাম সেখানে সূর্যের আলো খুব ভালো মতই আসতো।
বন্ধের দিনটাতে আমরা মূলত সকাল বেলাতেই পড়তে যেতাম।
সকালের সূর্যের আলোতে কিশোরীর ফর্সা লাল চিবুকে ভেসে উঠা নীলাভ শীরাগুলো একদিন মন ভরে উপভোগ করেছিলো জিও।আর রমনীর লাল ঠোটে কোন দিন লিপস্টিক দিত কিনা কে জানে !লিপস্টিকবিহীন লাল ঠোটজোড়া জিওর মনের অজান্তেই মনে হতো বিরবির করছে।সাথে বুকের ভেতরে হাতুরিপেটা করা মুচকি হাসি সে তো লেগেই আছে।এভাবেই শুরু হলো জিওর প্রথম ভালোলাগাকে উপলব্ধি করা।যেদিন জিও সকালের নাস্তা করে আসতো রমনীকে দেখে তার ক্ষুধা আরো বেড়ে যেতো।আর যেদিন নাস্তা করে আসতো না সেদিন রমনীর মুচকি হাসি লুকিয়ে দেখেই পেট ভরে যেতো তাও মন ভরতো না!!
জিও চিন্তা করলো কিশোরীর সাথে কথা বলতেই হবে।কিন্তু বাধা !সে যে কোচিংয়েও আসতো মায়ের হাত ধরেই।যতক্ষন পড়া শেষ না হয় ততক্ষন অব্দি মা বহিরে অপেক্ষা করতো।না হয় কোচিং শেষ হবার আগে আগেই আবার উপস্হিত হয়ে যেতো জিওকে নিয়ে যাবার জন্য।পড়া শেষে আবার মায়ের হাত ধরে বাসায় ফিরতো জিও।কি আর করার জিওর চিন্তা ভাবনা গুলো সব তার মনের ভেতরেই মরে যেতে থাকলো।জিও স্কুলে স্কাউটিং করতো।একদিন দেখলো কিশোরী সেই মেয়েটি গার্লস গাইডের ড্রেস পরিহিত অবস্হায়।বেনী করা লম্বা কালো চুল কোমরে সবুজ বেল্ট পড়নে সাদা ড্রেস আহা এতো অন্য আর এক রুপের রমনী!জিওর দাদী একটা কথা বলতো সে কথাটি তার মনে পড়ে গেলো তিনি বলতেন মেয়ে জাতি নাকি ১৮ রকমের রুপ ধারণ করে পুরুষদের ধোকা দিতে জানে !
দেখতে দেখতে ক্লাস এইট শেষ হয়ে গেলো স্যারের কোচিংয়েও পড়া বন্ধ হলো।অদ্ভুত ভাবে জিও তার জীবনের সবচেয়ে বেশী পড়ালেখা করেছিলো এইট ক্লাসে থাকাকালীন সময়ে।হঠাৎ করেই রমনী জিও চোখের আড়ালে চলে গেলো।আস্তে আস্তে সে অনুধাবন করতে পারলো স্কুলের প্রায় সকল ছেলেরাই কিশোরীর রুপে হাবুডুবু অবস্হা।রমনী তো নয় সে যেন মডেল! সবার মুখে মুখেই রমনীর রুপের নামডাক!শতরকমের তথ্য ও মন্তব্য সবার মুখে মুখে।জিও এসব শুনে তার বন্ধুদের কারো উপর রাগও হচ্ছিলো কিন্তু মনে মনে !
অনেকদিন পড়ের কথা ক্লাসে এখনো স্যার আসেননি। প্রথম পিরিয়ড শুরু হবার আগে ক্লাসরুমে সবাই বসে আছে।অনেকেই প্রভাতীদের উপভোগ করছে জানালা দিয়ে।হঠাৎ যেন জানালায় চাপটা বেড়ে গেলো,একজন আরেকজনকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে কোন একজন স্পেশাল রমনীকে দেখানোর জন্য আর।একএকজনের মুখে একেকরকমের মন্তব্য অদ্ভুত রকমের জঘন্য ও বিরক্তিকর আওয়াজ!সবাই জানালার গ্রিল ধরে দেখছে একজন আরেকজনের উপর হুমরি খেয়ে পড়ছে।পৈশাচিক অবস্হা।
হঠাৎই কারো মুখে রমনীর নাম শুনলো জিও।অনেকদিন পর তাহার নামটি শুনে কেমন যেন অনুভুতি হতে লাগলো তার।অনেকদিন তাহারে সে চোখের দেখা দেখে না।ভালোলাগার ভালোবাসাগুলো আগ্নেয়গিরির মতো সুপ্ত হয়ে আছে তার বুকের ভেতর!
জানালার উপর সৃষ্টি হওয়া সেই জটলার ফাঁক ফোকর দিয়ে উকিঁ ঝুকি দিয়ে শেষবারের মতো রমনীকে দেখেছিলো সে।শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছিলো আর হ্যা লাল চিবুকে ভেসে উঠা নীলাভ শীরাগুলোও বোধহয় দেখতে পাচ্ছিলো সে।আস্তে আস্তে জানালার জটলা ভেঙ্গে গেলো।জানালার বাহিরের সব প্রভাতীরা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।জিওর অপরিচিত সারাজীবনের অপরিচিত যাকে তার প্রথম ভালো লেগেছিলো।যাকে ভেবে ভেবে তার মনের ভেতরে লুকায়িত ছোট্র একটু ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিলো সেই রমনীও হাওয়ার মিলিয়ে গেলো।
ক্লাসে স্যার তখনো আসেননি।জিও এখনও একা জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে আর জানালা দিয়ে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে বাহিরে তাহার প্রাণপ্রিয় মাতা দুরের বেলগাছটার নিচে দাড়িয়ে আছেন একা একা উনার দুটি চোখে ছোট্র ছোট্র কিছু স্বপ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে।
{বিঃদ্রঃ জিওর প্রথম ভালোলাগা মানুষটির নাম তানজিনা।যদি তানজিনা নামের সেই মেয়েটির চোখে দূভার্গ্যবশত লিখাটি পড়ে যায় দয়া করে জিওর সাথে একটু যোগাযোগ করবেন-লেখক নিজে এ ব্যাপারে সম্পূর্ন সহযোগিতা করবে।আর হ্যা জিও তার দ্বিতীয় ভালোলাগার মানুষটি আজ অব্ধি খুজে পায় নি।}
-আসিফ হাসান’২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




