somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিত্রা নদীর পাড়ে : দেশভাগের করুণ চিত্র

২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিত্রা নদীর পারে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ১৯৯৮ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের জীবনে যে প্রভাব ফেলেছিল, তা এই ছবিতে দেখানো হয়েছে। কাহিনীর শুরু ১৯৪৭ থেকে এবং শেষ হয় ৬০'-এর দশকে।



১৯৪৭ সাল, তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের যশোরের অধীনে মহাকুমা নড়াইল। শশীভূষণ সেনগুপ্ত নামের এক হিন্দু উকিল  তার বিধবা বোন অনুপ্রভা  দুটি ছোট ছেলে-মেয়ে মিনতি ও বিদ্যুৎকে নিয়ে। বাড়ির পাশেই বয়ে চলেছে চিত্রা নদী  ততদিনে শুরু হয়ে গেছে হিন্দু-মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেশভাগ। পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এ অবস্থায় শশীভূষণের উপরেও দেশত্যাগের চাপ আসতে শুরু করে, কিন্তু তিনি বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে পরদেশে পাড়ি না জমানোর সিদ্ধান্তে অনড়। কিন্তু তার ছোট ছেলে বিদ্যুৎ মুসলমান বন্ধুদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে কোলকাতা চলে যাবার বায়না শুরু করে। অগত্যা বিদ্যুৎকে পড়াশোনার জন্য কোলকাতা পাঠিয়ে দেন শশীভূষণ। এরপর কিছু সময় কেটে যায়।




১৯৬৪ সাল, শশীভূষণের মেয়ে মিনতি ততদিনে বড় হয়ে গেছে। ছোট বেলার খেলার সাথী বাদলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিনতির। বাদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে মার্শাল’ল বিরোধী আন্দোলনে। একদিন মিছিলে পুলিশের অতর্কিত গুলিতে মারা যায় বাদল। এরমধ্যে চারিদিকে শুরু হয়ে যায় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।



সেই দাঙ্গার শিকার হন শশীভূষণের বিধবা ভাতিজি বাসন্তী। ধর্ষিত হয়ে চিত্রা নদীর পারে আত্মাহুতি দেয় সে। ঘটনাটি শশীভূষণকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। অসুস্থ শশীভূষণ সেই চিত্রা নদীর পাড়েই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিয়তির নির্মম পরিহাসে অবশেষে দেশ ছেড়ে কোলকাতায় পাড়ি জমায় মিনতি ও অনুপ্রভা।




দেশভাগের এই করুণ চিত্র নিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল নির্মান করেন উনার ক্যারিয়ারের সেরা ছবি 'চিত্রা নদীর পারে'। নির্মান,গল্প,সংলাপের পাশাপাশি এই ছবির অন্যতম প্রশংসিত দিক বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের ক্যামেরার মুন্সিয়ানা,দারুণ করেছিলেন। অভিনয়ে আফসানা মিমি 'মিনতি' চরিত্রে এত ভালো অভিনয় করেছেন,পুরো মিশে গিয়েছিলেন। উকিল শশীভূষণের চরিত্রে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন,তবে দুইজনের কেউই জাতীয় পুরস্কার পান নি। তবে পিসিমা চরিত্রে অভিনয় করে রওশন জামিল জাতীয় পুরস্কার পান,তবে তিনি ততদিনে চলে গিয়েছেন মৃত্যুর ওপারে। বাদল চরিত্রে ছিলেন তৌকীর আহমেদ। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু।





১৯৯৯ সালে ছবিটি মোট সাতটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে: 

১.সেরা চলচ্চিত্র
২.সেরা পরিচালক: তানভীর মোকাম্মেল
৩.সেরা কাহিনীকার: তানভীর মোকাম্মেল
৪.সেরা সংলাপ রচয়িতা: তানভীর মোকাম্মেল
৫.সেরা অভিনেত্রী(পার্শ্ব): রওশন জামিল
৬.সেরা শিল্প নির্দেশক: উত্তম গুহ
৭.সেরা রুপসজ্জাকর: দীপক কুমার সুর। 




এছাড়া ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট এর জরিপে সেরা দশ বাংলাদেশী ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।চিত্রা নদীর পারে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ১৯৯৮ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। 
ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউশন দ্বারা দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে চলচ্চিত্র চিত্রা নদীর পাড়ে বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের মধ্যে  তৃতীয় স্থান অর্জন করে।  





হিন্দু পিঁপড়া লাল ও মুসলিম পিঁপড়া কালো এই সাধারণ কথাটা ছোট বেলায় খুব শুনতাম । সিনেমায় খুব সুন্দর করেই তুলে ধরেছেন । বলিষ্ঠ অভিনেত্রী রওশন জামিলের ন্যাচারাল অভিনয় । চিত্রার পারে স্নানের সময় ভাতিজিকে বলা ডায়লগ " এই নদী দিয়ে বই হয়ে গিয়েছি , আবার এই নদী দিয়েই বেধবা হয়ে ফিরিছি "  কি সুন্দর সাবলীল অভিব্যক্তি ছিলো । আফসানা মিমি ও তৌকির আহমেদ এর পরিমিত অভিনয় ডায়লগ । লতামঙ্গেশকরের গান , সন্ধ্যাবেলায় তুলসি তলায় তুলসী তলায় প্রদীপ , ধুপ-ধুনোর আয়োজন সাথে জল খাবার সব মিলিয়ে খুব সুন্দর ভাবে তৎকালীন আবহ তুলে ধরেছে ।




স্কুল জীবন থেকেই এই সিনেমা এতোবার দেখেছি তাও মন ভরে না । সিনেমার আবহ এতোটাই বাস্তব ছিলো যে আমার মনের মধ্যে সেই আবেশ এখনো রয়ে গেছে। প্রায়ই সময় পেলে সিনেমাটি দেখি । বছর খানেক আগে নড়াইল গিয়েছিলাম সেই চিত্রা নদীর পাড়েই গিয়েছিলাম  , আমি পুরো নস্টালজিক হয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ । যশোর ও নড়াইল গেলে আমি বার বার হারিয়ে যায় এই সিনেমার মধ্যে। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের এক অনন্য সম্পদ এই "চিত্রা নদীর পাড়ে " সিনেমা ।  

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া ও নিজস্ব অনুভূতি ।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৮
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×