শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করে নিজের হাউজিংয়ের জন্য জোরপুর্বক সড়ক নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হননি। ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু। আর এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরও হুমকী দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে এসে এ অভিযোগ করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা এম এ আউয়াল।
তিনি আরো বলেন, কলেজে না আসতে অধ্যক্ষকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম হুমকির মুখে পরেছে। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিয়মিত স্কুল-কলেজে যেতে পারছেন না ১৮ জন শিক্ষক ও দেড় হাজার শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, ১৯৯২ সালে দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই ভবনে দোলেশ্বর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান আদর্শ মহাবিদ্যালয় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি পরিচালিত হয়ে আসছে দোলেশ্বর কল্যাণ সংস্থার অর্থায়নে। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি নিজেই। ১৯৯৯ সালে এই কলেজের পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালান স্থানীয় এমপি নসরুল হামিদ বিপু। তার অনৈতিক তদবিরের চাপে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে কমিটির দ্বিতীয় মেয়াদের অনুমোদন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৭ জুলাই তাকে(এমএ আউয়াল) পরিচালনা পরিষদের সভাপতি করে কমিটির অনুমোদন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা বোর্ডের ২০০৯ সালের ৮ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপনে ‘ইন্টারমেডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিনেন্স-১৯৬১’ এর ৪৯ এর ১ প্রবিধান মালা অনুযায়ী কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এই বৈধ কমিটির বিরুদ্ধেই অপতৎপরতা শুরু করেন ওই সংসদ সদস্য। কমিটি পূনর্গঠনের জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুসারে তার আবেদন নাকচ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান আদর্শ মহাবিদ্যালয় আইনগতভাবেই ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়। সেজন্য এর সভাপতি এম এ আউয়াল। ২০১০ সালেও একবার আইন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে তাদের মতামত দিয়েছিল। এখন আবার যেহেতু সংসদ সদস্য আবেদন করেছেন, সেহেতু আমরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো।
জানা গেছে, এবার কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ডিও লেটার দিয়েছেন এমপি বিপু। আইনগতভাবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের কাছে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এরপরও ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা থেকে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালীরা তদবির করে ২ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে মতামত বাগিয়ে নেন। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এডহক গভর্ণিং বডি গঠনের অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত কলেজটিকে স্থানীয় এমপি’র অধীনে ছেড়ে দেয়া হলে সারাদেশের এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ আর শিক্ষা স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে না। ###

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




