আর ক’দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নানা ঘটনা প্রবাহের কারণে এবারের নির্বাচন নিয়ে জনগণের অনি:শেষ কৌতুহল বিদ্যমান। কারা আসছেন ক্ষমতায় এ প্রশ্ন এখন নিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।
এবারের নির্বাচনী লড়াই-এর একদিকে যেমন রয়েছে সাবেক মতাশীল বিএনপি’র নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট, তেমনি আবার তাদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
এর বাইরে আরো কতিপয় ক্ষুদ্রশক্তির রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সবার চোখ এই দুই বড় জোটের দিকে। ইতিমধ্যেই দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের দুই শীর্ষনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা সারাদেশে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিনরাত্রি তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়ে জনসভা, পথসভায় অনবরত বক্তৃতা দিচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছে তারা ভোটও প্রার্থনা করছেন। বলছেন নিজেদের সাধ আর সাধ্যের কথা। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও দিয়ে চলেছেন সাবেক এই দুই প্রধানমন্ত্রী।
বরাবরের মতো এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের শেষ নেই। তরুণ প্রজন্মের এই বিরাট অংশ এবারে নতুন ভোটার হয়েছেন। যারা এবারের নবম সংসদ নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার স্বাদ গ্রহণ করবেন।
বলতে দ্বিধা নেই যারা নতুন ভোটার হয়েছেন সেই তরুণ প্রজন্ম ভোট দেয়ার জন্যে একেবারে মুখিয়ে আছেন। তবে একই সাথে এটাও সত্য নির্বাচন আচারণবিধি কঠোর হওয়ার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিগত দিনগুলোতে তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার করতো এবার আর সেটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বিগত দিনে দেখা যেতো নির্বাচন এলেই তরুণদের কেন জানি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্যরকম এক কদর বেড়ে যেতো। আর্থ-সামাজিক দৈন্যতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে নানা কৌশলে তরুণদের দলে টানতে এবং নানা উপায়ে রাজনৈতিক কাজকর্মে ব্যবহার করতে উৎসাহী হয়ে উঠতো।
অনেকেই তরুণদেরকে অস্ত্রশস্ত্র পর্যন্ত সরবরাহ করে বিপথগামী করতেও কার্পণ্য করতেন না।
প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, ভিন্নমতালম্বীর সাথে জোর জবরদস্তিমূলক আচারণ করা-এ সব যেনো বিগত দিনে কতিপয় রাজনৈতিক দলের কারণে তরুণদের নিয়তিই হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু এবার খানিকটা হলেও বদলে গেছে বিগত দিনের সেই চিত্র। এরজন্য অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। তাদের সময়োপযোগী নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়নের কারণেই রাজনৈতিক দল আর নেতারা সংযত আচরণ করতে বাধ্য হয়েছে।
আর এ কারণেই তারুণ্যকে খানিকটা হলেও নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে। তারুণ্যের সেই অযাচিত ব্যবহার এখন পর্যন্ত সেভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে না। আমার মতে এ এক দারুণ পরিবর্তন। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা হলে নিশ্চিত আমরা আরো বলিষ্ঠ, সমৃদ্ধ, যুক্তিশীল নতুন প্রজন্ম খুঁজে পাব।
নতুন প্রজন্মের তরুণদের এক বড় অংশ এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট প্রদান করবে। তাদের মাঝে উৎসাহ আর উদ্দীপনার শেষ নেই। তবে যারা এবার নতুন ভোটার হয়েছেন তারা অন্যরকম এক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান থাকা অবস্থায় ভোটার হয়েছেন।
খুব পরিষ্কার করে বলে অনেকটা পরিচ্ছন্ন এক অবস্থার মাঝেই তারা ভোটার হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ভোটার হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তারা ভোটার হয়েছেন।
নতুন ভোটাররা প্রথমে ভোটার হয়েই আইডি কার্ড পেয়েছেন এটাও অন্যরকম এক নতুন অনুভূতির বিষয়। একটি অন্যরকম পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্ম ভোটার হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় দেশ ও জাতির কাছে তাদের প্রত্যাশার ব্যাপ্তিও বেড়েছে।
খানিকটা আগ বাড়িয়েই বলা যায় নতুন প্রজন্মের এক বিরাট অংশই এখন আর পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক দীক্ষায় দীক্ষিত নয়। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তরুণদের মাঝে তথাকথিত রাজনীতি নিয়ে সেভাবে আগ্রহ মোটেও লক্ষণীয় নয়।
এ কারণেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তরুণরা এখন অনেকটাই শৃঙ্খলমুক্ত। বিগত দিনে আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের তরুণরা যতোটা ব্যবহারিক পণ্য হিসেবে গণ্য হয়েছে ঠিক ততোটাই তাদেরকে গড়ে তোলার ব্যাপারে দেখা গেছে চরম কার্পণ্য।
আর এ কারণেই তারুণ্য বারবার বিপর্যস্ত নয়তো পর্যদস্তু হয়েছে। আর রাষ্ট্র সেখানে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারুণ্যকে আমরা আর মোটেও রাজনৈতিক দলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার দেখতে চাই না। আমরা তারুণ্যকে দেখতে চাই মুক্ত বিহঙ্গের মতো।
তারুণ্যের বিবেককে আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলহীন। বর্তমান প্রেক্ষিতে নতুন প্রজন্ম, তারুণ্য যতোটা রাজনীতিমুক্ত থাকবে ততোটাই আমাদের এ প্রজন্ম আরো সমৃদ্ধশালী ও বিবেকবান মানুষ হিসেবে তৈরি হবে।
আর এ কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো আগামীতে আমাদের নতুন প্রজন্মের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি আরো দায়ীত্বশীল হবে বলে আমার ঢের বিশ্বাস। জ্ঞানে দতায় তুখোড় তারুণ্য অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে। নতুন বছরে আমরা সেই তারুণ্যকেই দেখতে চাই।
সুএঃ বাংলাদেশ ইনফো. কম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




