বাবা আর একটা সুযোগ আমাকে দাও আর কোনদিন চাইব না, অনেক কষ্ট করেছো তোমরা, পেটে তিনবেলা ভাত দিতে পারনি অথচ আমার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছ। নারে মা আর সম্ভব না, কোনভাবেই সম্ভব না, একটা পাশ তো দিয়েছিস, আর কি দরকার; সেই-ইতো হাড়ি-পাতিল টানতে হবে, হারি পাতিল টানার জন্য পড়া-শোনার দরকার হয় না। না বাবা আমি পড়ালেখা করে অনেক বড় হব, বড় চাকরি করব, তারপর তোমাদের সব কষ্টগুলো ঘুঁচে যাবে। নারে আমাদের এই স্বপ্ন দেখে কোন লাভ নেই, যত পড়ালেখাই কর আমাদের মেয়েদের চাকরি হবে না। মেয়ের কথা একসময় শুনতেই হল। মেয়ে কলেজে ভর্তি হল। গরিব পিতা মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে লাগল। একসময় সে আর একটি পাশ দিল, মেয়ে খুশিতে আতœহারা না হয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ল, এবার কিভাবে তার বাবাকে বোঝাবে যে সে আরো উচ্চশিক্ষা নিতে চায় এবং তার জন্য প্রয়োজন শহরের কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত কলেজের কয়েকজন শিক্ষক তার বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হয়। বাবা হতবাক এতদিন মেয়ে নিজের কাছে থেকে পড়ালেখা করেছে তাতে খাবারের খরচ টের পাওয়া যায়নি, পড়ালেখার খরচটা চালাতে হয়েছে। কিন্তু এখন সবকিছুর কথাই ভাবতে হবে। শহরে থেকে পড়ালেখা করতে হলে থাকা-খাওয়া পড়ালেখা ছাড়াও আনুষঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। এত খরচ তার বাবা কোথা থেকে জোগাড় করবে। মেয়ে আশ্বাস দিল বাবা তুমি শুধু থাকা-খাওয়ার খরচটাই দাও, পড়ালেখার খরচ আমি টিউশনি করে চালাব তুমি দোয়া কর। তাই-ই হল একটা সময়ে মেয়ে পড়ালেখা শেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করল। চাকরির দরজায় দরজায় দাঁড়িয়ে ফিরে আসছে কোথাও তার চাকরি হয় না এমন একটি দৈনিক পত্রিকা নেই, যে পত্রিকায় প্রতিদিন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যতগুলো কর্মসংস্থানের বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়, হিসেব করলে অনেক কর্মসংস্থান রয়েছে আমাদের এই ক্ষুদ্র বাংলাদেশে। কি করে স্বীকার করি আমাদের এই দেশ গরিবদেশ।
প্রতিবছরের মত এবছরও এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টে মেয়েরা শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের যতটা অগ্রগতি রয়েছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ততটা অগ্রাধিকার নেই। কিছু কিছু কর্মসংস্থানে যদিও বা মেয়েরা চাকরি করছে, সেখানে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। পড়াশোনার ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের সাথে এক টেবিলে বসে পড়াশোনার গন্ডি পার করলেও কর্মক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষাস্থান থেকেই হোক মেয়েরা সন্ধ্যার পড়ে বাড়ি থেকে বের হতে সংকোচ করছে। কিভাবে তারা চাকরি করবে? বিশেষ করে সাধারণ ঘরের মেয়েরা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক দ্বিধা-দ্বন্ধের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা থাকতো তাহলে গামেন্ট শ্রমিক বিউটিকে এভাবে কেউ উপর থেকে ফেলে মেরে ফেলতে পারত না। এরকম অনেক বিউটিরা এভাবেই মৃত্যুবরণ করছে। খতিয়ে দেখলে দেখা যাচ্ছে বড় মহলের বড় কোন কর্মকর্তার হাত আছেই। আমাদের দেশে নিম্ন শ্রেনীর ছেলে-মেয়েরাই বলতে গেলে গার্মেন্ট টিকিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি, এই কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের প্রবেশ করাটা তাদের কাছে পানি-ভাত। কিন্তু অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে ভাল গরিব ঘরের সাধারণ মেয়েদের প্রবেশ খুব কঠিন, কারণ হিসেবে আছে- নিরাপত্তার অভাব, মামা-খালুর জোরের অভাব, লাখ টাকা ঘুষ না দিতে পারার অভাব। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, রংপুর জেলায় বদরগঞ্জ মুন্সীপাড়া গ্রামের মর্জিনা খাতুনের কথা। সে ১৯৯৫ সাল থেকে এসএসসি পাশ ও ক্রমে ক্রমে ২০০৮ সালে এসে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাশ করে। তার অপূরনীয় চেষ্টা ছিল বলেই এটা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। বিধবা মা ও মানসিক প্রতিবন্ধি ভাই-এর সংসারে মর্জিনা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে চেয়েছিল। অনেক জায়গায় চাকরির পরীক্ষা দিয়ে লিখিত পরিক্ষায় পাশ করলেও তার চাকরি হয়নি কারণ হিসেবে দাঁড়ায় অনেক টাকার ঘুষ। দুবেলা ভাত জোটেনি যার, নাই কোন জমি জমা এতো টাকা ঘুষ সে কোথা থেকে দিবে? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য আধিদপ্তরের লোক নিয়োগ হবে জেনে মর্জিনা সেখানে আবেদন করল। ২৪/০৪/২০০৯ তারিখে খাদ্য পরিদর্শক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিল পরীক্ষার কেন্দ্র রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পরীক্ষায় ৯৮% উত্তর তার জানা ছিল এবং যথারীতি লিখিত পরীক্ষায় সে পাশ করল। এবং মৌখিক পরীক্ষায়ও পাশ করল, শেষ পর্যন্ত তার চাকরিটা আর হল না। উপরের সব বিবরণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে একটি চিঠি লিখেছিল এবং আরো লিখে জানিয়ে ছিল যে তার বয়স ৩০ বৎসর ০৮ মাস এবং চাকরিতে দরখাস্ত করার বয়স আর নাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার একটাই দাবী ছিল মর্জিনার প্রাপ্য চাকরি না পেলে তার সকল সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলবে। ৩০ জুলাই ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে আতœহত্যা করবে। তার পরের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এটাই যদি হয় তার পরিণতি। তাহলে এত টাকা খরচ করে পড়ালেখা করে তার এই সার্টিফিকেটের কি মূল্য রইল।
কপি পেষ্টঃ নতুন গন্তব্য

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




