somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিভি টকশো : আমার দেশ-এর পাশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা [সংগৃহীত]

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

>> দেশ-বিদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দৈনিক আমার দেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ এবং তার প্রেক্ষিতে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে তাকে গ্রেফতারে সরকারের তোড়জোড়। হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোর্ট থেকে আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রুলের বিষয়টিও সব আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে স্থান পাচ্ছে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টক-শোগুলোতেও এখন আলোচনার মুখ্য বিষয় এটি।
>> বৃহস্পতিবার দৈনিক আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল ও সিএমএম কোর্টে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের পর মধ্যরাতের সব টকশোতেই গুরুত্ব পায় বিষয়টি। বাংলাভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা মামলা ও রুল জারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে আমার দেশ কোনো অন্যায় করেনি। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সাহসের সঙ্গে প্রকাশের জন্য আমার দেশ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
>> এদিকে দিগন্ত টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে ড. পিয়াস করীম বলেন, যে বিচারকের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং সেই অভিযোগ বিবেচনাধীন আছে, সেই বিচারক আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রুল দিতে দেখে মনে হচ্ছে অদ্ভুত উটের পিঠে চড়েছে দেশ।
>> এদিকে গাজী টেলিভিশনের টকশোতে একই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন টকশোর দুই জনপ্রিয় মুখ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজুরুল। এতে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর কেউ যাতে আঘাত হানতে না পারে সে ব্যাপারে সাংবাদিক নেতাদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। ড. আসিফ নজরুল বলেন, জনস্বার্থে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে না। তিনি বলেন, আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যে কাজটি করেছেন তা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
টকশোতে উল্লেখিত চার তারকা ব্যক্তিত্বের বিশ্লেষণ আমার দেশ-এর পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
>> এবিএম মূসা : প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবিএম মূসা দৈনিক আমার দেশ-এ বিচারকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশে কোনো অপরাধ হয়নি মন্তব্য করে বলেন, চুরি করে হলেও আমি খবর ছাপতে চাই। যে বিষয়ে জনগণের আগ্রহ আছে সেটাই হচ্ছে খবর। তবে খবরটা সত্য না মিথ্যা শুধু সেটা যাচাই করতে হবে। মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পত্রিকায় যে স্কাইপ সংলাপ ছাপিয়েছেন তা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খবর। আর খবরটি একটি সত্য খবর।
বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনে প্রচারিত সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টকশো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে এবিএম মুসা এসব কথা বলেন। মোস্তফা ফিরোজের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আরও মতামত দেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সরকারের পক্ষ থেকে আমার দেশ পত্রিকার কণ্ঠরোধের চেষ্টা এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রথিতযশা এ সাংবাদিক বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী আমার দেশ ও এর সম্পাদক কোনো অন্যায় করেননি। বরং তারা দেশ ও জাতিকে প্রকৃত তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্য তারা সমগ্র দেশবাসীর সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সাংবাদিকতার বিষয়ে আমার যতটুকু জ্ঞান আছে তাতে আমি এটাই বুঝি।
এবিএম মূসা বলেন, সরকার তাদের আইন কিভাবে প্রয়োগ করবে, এটা একান্ত তাদের নিজস্ব মর্জির ওপর নির্ভর করছে। সংসদে যারা আইন করে তাদের কথায়ই আইন চলে। এখানে আইনের কোনো নিজস্ব গতি নেই। যদি এটাই না হতো তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়া যায়, আর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সরকার নয়াপল্টন থেকে বিএনপির নেতাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যেত না। এ ধরনের অদ্ভুত ও আজগুবি কাণ্ডকারখানা হওয়ার কথা নয়।
এবিএম মূসা বলেন, স্কাইপ সংলাপ নিয়ে মাহমুদুর রহমান যে সংবাদ প্রকাশ করেছেন এটা মিথ্যা কিনা কিংবা তিনি কোনো ভুল তথ্য দিয়েছেন কিনা, এটাই হচ্ছে দেখার বিষয়। কিন্তু এটি সত্য কি মিথ্যা এ নিয়ে সরকার পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। মাহমুদুর রহমান যদি কোনো ভুল তথ্য দিতেন, তাহলে আমি বলতাম তিনি অবশ্যই আইন ভঙ্গ করেছেন এবং সাংবাদিকতার নীতিবহির্ভূত ও আনঅ্যাথিক্যাল কাজ করেছেন। মাহমুদুর রহমান ভুল তথ্য দেননি। কেননা, ওই বিচারপতি সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করে প্রমাণ করেছেন যে, মাহমুদুর রহমান সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
এবিএম মূসা স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যখন পাকিস্তান অবজারভারে ২০ বছর ধরে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলাম, যা ছিল সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তখন আমি আমার রিপোর্টারকে বলতাম, আমি এই রিপোর্ট চাই। যেটা আমার বসও বলতেন। তুমি এটা চুরি করে পারো কিংবা ভিক্ষা করে পার অথবা ধার করে পারো আমাকে কিন্তু রিপোর্ট দিতেই হবে। মানুষকে জানাবার একটা দায়িত্ব আমার আছে। মানুষেরও জানার একটা অধিকার আছে।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সংলাপ প্রসঙ্গে এবিএম মূসা আরও বলেন, এতো বড় একটা ঘটনা, যার দায় স্বীকার করে জজ সাহেব নিজেও পদত্যাগ করেছেন। এক্ষেত্রে আমারও প্রশ্ন—যদি মাহমুদুর রহমান অপরাধ করেই থাকেন, তাহলে ওই বিচারপতি পদত্যাগ করলেন কেন? এখানে নিউজ ভেল্যু দেখেন। এটা এমনই একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যা পরবর্তীতে দৈনিক ইত্তেফাক, যুগান্তরসহ অন্যান্য পত্রিকাও ছাপিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি যখন পিআইবির পরিচালক ছিলাম তখন ইউনেস্কোর উদ্যোগে সাংবাদিকদের একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উঠেছিল হোয়াট ইজ নিউজ—সংবাদ কি? ওই কর্মশালায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক হ্যারি হিরনস বলেছিলেন, হোয়াট ইন্টারেস্ট পিপল, দ্যট ইজ নিউজ—অর্থাত্ যাতে জনগণের আগ্রহ আছে সেটাই হচ্ছে সংবাদ।
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে এবিএম মূসা বলেন, সাইবার ক্রাইম অ্যাক্ট অনুযায়ী সরকার এ মামলাটি করেছে। আমিও কিন্তু এ সরকারের করা তথ্য অধিকার সংরক্ষণ আইনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। আইনে বলা আছে, কোনো সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যম তথ্যের সোর্স সম্পর্কে জানাতে বাধ্য নন।
>> ড. পিয়াস করীম : ব্রাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, টেলিভিশন টকশো’র জনপ্রিয় মুখ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করীম বলেছেন, আমার দেশ-এর সম্পাদক অত্যন্ত সক্রিয় ও সাহসী সম্পাদক। সত্য প্রকাশের দায়ে তার ওপর অত্যাচারের খড়্গ নেমে এসেছে। তিনি যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন। আমরা যখন বিজয় মাসের কথা বলছি, গণতন্ত্রের কথা বলছি, বাকস্বাধীনতার কথা বলছি, সে সময় সঠিক খবর ছাপার জন্য যদি একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়, তা হলে এর চেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার আর কী হতে পারে? মাহমুদুর রহমানের ওপর আঘাত গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।
বৃহস্পতিবার বেসরকারি টেলিভিশন দিগন্ত টিভির সংবাদপত্র পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘নিউজ অব দ্য ডে’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন দিগন্ত টিভির বার্তা সম্পাদক জুলফিকার হায়দার।
ড. পিয়াস করীম বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী সত্য প্রকাশের দায়ে গ্রেফতার হতে চলেছেন। মনে হচ্ছে, গত ৪১ বছরে আমরা ইতিহাসের কাছে কিছুই শিখিনি। এ দীর্ঘ সময়ে আমরা শিখিনি বাকস্বাধীনতা কী। গণতন্ত্রকে বিকশিত করার জন্য আমরা যে সংগ্রাম করেছি, তা কি বৃথা গেল।
ড. পিয়াস করীম বলেন, মুনির চৌধুরী থেকে মাহমুদুর রহমান। মাহমুদুর রহমান সত্যের জন্য আত্মত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তাকে গ্রেফতার হতে হবে, তারপর তার ওপর নির্যাতন হবে। আজকের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে আমার বক্তব্য, মাহমুদুর রহমানের এ আত্মত্যাগের কথা আমরা যেন ভুলে না যাই।
উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরে ড. পিয়াস করীম বলেন, আমি আইনজীবী নই। কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার জানার অধিকার আছে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমার দেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করেছে। যখন এই সংলাপ প্রকাশ করেছে, তখন আমার দেশ-এ তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ওই সংলাপ মাহমুদুর রহমান হ্যাক করেননি। তিনি ওই সংলাপের রেকর্ড পাওয়ার জন্য কোনো অর্থ খরচ করেননি। তার কাছে খবরটি পৌঁছেছে এবং কীভাবে পৌঁছেছে, সেই উত্স প্রকাশ করতে তিনি বাধ্য নন।
ড. পিয়াস করীম বলেন, আমার দেশ-এর কাছে ওই সংলাপটি আসার পর তারা জনস্বার্থে তা প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। ইকোনমিস্ট যে ঝুঁকি নিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে, একই ঝুঁকি নিয়ে আমার দেশ খবরটি প্রকাশ করেছে। অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে, ইকোনমিস্ট সংলাপের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ না করে নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করেছে। কিন্তু আমার দেশ বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এই যুক্তির জবাবে আমি বলব, আহমদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হকের সংলাপ বিস্তারিত না পড়লে বোঝা যাবে না, তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের স্তর কী। তাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রটা যদি আমরা না বুঝি, তাহলে আমরা বুঝব না যে, সংলাপে আইন কোথায় লঙ্ঘিত হয়েছে। কোথায় তারা অন্যায়ভাবে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন। এটা বোঝানোর জন্যই পুরো সংলাপ ছাপানো দরকার ছিল এবং সেটা পাবলিক ইন্টারেস্টেই হয়েছে।
ড. পিয়াস করীম আরও বলেন, আমরা বিজয়ের মাসের কথা বলছি, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, বাকস্বাধীনতার কথা বলছি, সেখানে সঠিক খবর ছাপার জন্য যদি একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে বিজয়ের মাসে এর চেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার আর কী হতে পারে? তিনি বলেন, মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের একটি অভিযোগ বিবেচনাধীন আছে। সেক্ষেত্রে মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ-এর বিষয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিব্রত হওয়ার কথা ছিল। সেই বিচারপতি আবার কী করে মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে রুল দেন? এটা যেন অদ্ভুত উটের পিঠে দেশটা চলছে। আইনের কোনো বোধ যেন কারও মধ্যে কাজ করছে না।
তিনি বলেন, আমি মাহমুদুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে একমত হই বা না হই, যদি সত্যিকারের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রের প্রতি আমরা যদি কমিটমেন্টের দাবি করি, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি বুদ্ধিজীবীর, প্রতিটি সাংবাদিকের, প্রতিটি লেখকের, প্রতিটি সচেতন মানুষের মাহমুদুর রহমানের পক্ষে এগিয়ে আসা উচিত এবং বলা উচিত, আবার যেন মাহমুদুর রহমানের ওপর গ্রেফতার ও নির্যাতন নেমে না আসে। কারণ আমরা একটি ফ্যাসীবাদী দেশে বাস করছি না। গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয়, এমন একটি দেশে আমরা বাস করছি।
পিয়াস করীম বলেন, মাহমুদুর রহমানের ওপর আঘাত গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। মাহমুদুর রহমানের ওপর এ আঘাত যদি আমরা প্রতিহত করতে না পারি, তাহলে নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করার কোনো অধিকার আমাদের নেই।
উপস্থাপকের আরেক প্রশ্নের উত্তরে ড. পিয়াস করীম বলেন, আমার জানা নেই যে, বাংলাদেশের কোনো আদালত আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমের ওপর রুলিং জারি করতে পারে কি না। এই রুলিং কার্যকর করার ক্ষমতা আমাদের আদালতের আছে কি না, তা-ও আমি জানি না। ইকোনমিস্ট একটি স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে ব্রিটিশ সরকারকেই তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশ মেনে সে খবর ছাপা বন্ধ করে দেবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পাবলিক ইন্টারেস্টে এ খবর ছাপতে কোনো বাধা নেই বলে নিশ্চিত হয়েই ইকোনমিস্ট এ খবরটি ছেপেছে।
>> নাঈমুল ইসলাম খান : দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক, বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সাংবাদিকতা পড়তে গিয়ে আমি শিখেছি, কোনো তথ্য সংগ্রহে যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে, তবু সেটা জানানো সাংবাদিকের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থে যদি এটা প্রকাশ করা হয় আর এতে যদি ওই সংবাদকর্মীর ওপর বিপদ আসার আশঙ্কা থাকে, তবু যেন সে এটা প্রচার করে।
বৃহস্পতিবার রাতে বেসরকারি চ্যানেল গাজী টেলিভিশনের সংবাদপত্র পর্যালোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘সংবাদ সংলাপ’-এ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আমার দেশ সম্পাদক সম্পর্কে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান সাহেব এর আগে যে মামলায় জেল খেটেছেন, সেখানে আমরা দেখেছি সংবাদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের চেয়ে গুরত্বপূর্ণ ছিল, যার বিষয়ে লেখা হয়েছে লেখাটি তার বিরুদ্ধে গেছে কি না। আর তা-ই হয়েছে। অর্থাত্ আপনার লেখা আমার বিরুদ্ধে গেছে, তাই আপনাকে জেল খাটতে হবে। তখন সাংবাদিক নেতারা কোথায় ছিলেন? এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে সরকার পরিবর্তনে এর প্রতিফল দ্বিগুণ হবে এবং বহু কষ্টে অর্জিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। কোনোভাবে যাতে কেউ কোনো গণমাধ্যমের ওপর আঘাত হানতে না পারে, সে ব্যাপারে সাংবাদিক নেতাদের সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে আমরা অনেক সম্পাদক যখন মাহমুদুর রহমানকে সাংবাদিক বা সম্পাদক হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও কুণ্ঠিত, তখন তিনি তার সাহসী ভূমিকার কারণে দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল অবস্থান করে নিয়েছেন।
>> ড. আসিফ নজরুল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যে কাজটি করেছেন, তা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইকোনমিস্ট যে তথ্যটি ছেপেছে, তা বাংলাদেশের অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে ছাপানোর দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। একমাত্র আমার দেশই তার অনুলিপি প্রকাশ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।
মধ্যরাতে বেসরকারি চ্যানেল গাজী টেলিভিশনের এর সংবাদপত্র পর্যালোচনা অনুষ্ঠান ‘সংবাদ সংলাপ’-এ অংশ নিয়ে ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশে যদি কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে, তবে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা যাবে। অপরদিকে কোনো তথ্য যদি জনস্বার্থে কাজে লাগে, তবে সেটা প্রকাশে অপরাধ হবে না। সেদিক থেকে আমার দেশ অন্যায় করেছে বলে আমার মনে হয় না। হ্যাক করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি যে মাধ্যমে কথা বলেছেন, তা ইন্টারনেটে তথা সবার নাগালের কাছে চলে গেছে। তার একটি কপি শুধু আমার দেশ প্রকাশ করেছে। বিশ্বায়নের যুগে এটা খুব সাধারণ বিষয়।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের মিডিয়ার ওপর এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার একটা আস্থা রয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের মিডিয়াগুলো যতটা উন্নতি লাভ করেছে, অন্য কোন সেক্টর ততটা পারেনি। মিডিয়ার কারণেই এখন কেউ অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে পারে না। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতেও মিডিয়ার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। সরকারের সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বাধ্য করা হচ্ছে। এ সেক্টরের উন্নতি আর কয়েকটা বছর আগে ঘটলে আমাদের রাজনীতির এমন অবস্থা থাকত না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×