somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপাল

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাশ করার আগে ঠিক করেছিলাম ভার্সিটির লেকচারার হব। কয়েকজন বন্ধুকে মনের কথা জানিয়েওছিলাম। ওরা সেইসময় ব্যাপারটা তেমন পাত্তা দেয়নি। অথচ আমার ৬ জন বন্ধু এখন বিভিন্ন ভার্সিটির লেকচারার। এক এক ব্যাচে এক এক রকম ট্রেন্ড থাকে। আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ব্যাচের ট্রেন্ড ছিল ব্যাংকার হওয়া। অনেকেই ব্যাংকার তাদের মধ্যে। আমাদের ব্যাচের ছেলে পিলের মাথায় লেকচারার হবার জন্য পোকা ঢুকল (আমি মনে করি এর জন্য আমিই কিঞ্চিত দায়ী)। এখন আমাদের ব্যাচেই ৮ জন লেকচারার।

পরীক্ষা শেষ হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ। এরপর ১ মাস ঘুরোঘুরি করে কাটালাম। তার পর থেকে চাকরি খোজা শুরু, আজ অবধি চলছে। শুধু ভার্সিটিতেই এ্যাপ্লাই করে গিয়েছি, ভুলে ভালে কোন সফটওয়্যার কম্পানিতে এ্যাপ্লাই করা হয়নি। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভার্সিটিতেই সিভি ড্রপ করার পর আর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। যে কয়েকটি ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েছি তার মধ্যে দুটোর অভিজ্ঞতা না বললেই নয়।

প্রথমঃ
ঢাকার এক সাইডে এই ভার্সিটি। দেখতে শুনতে ভালই। এখানে প্রথম সিভি ড্রপ করি সেই জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। ফেব্রুয়ারি কোন একদিনে ফোন করে জানালো ২ দিন পর পরীক্ষা। ৩ ঘন্টা কম্পিউটার সায়েন্স রিলেটেড আর ১ ঘন্টা ইংলিশ। পুরা খাবি খাওয়ার যোগাড়। ৪ ঘন্টা পরীক্ষা তো জীবনে কখনও দেই নি। তাও আবার ২ দিনের মধ্যে বিগত ৪ বছর যা পড়েছি সব দেখতে হবে!!!! এক্ষেত্রে শাহ্রিয়ার নির্জন স্যারের (উনি সম্ভবত বুয়েটের টিচার ছিলেন এখন ইউ এস এ তে পি এইচ ডি করছেন) একটা পোস্ট এ পড়া আটলান্টার কোক পদ্ধতি আবলম্বন ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। জিনিসটা এরকম। উনি আটলান্টার বিখ্যাত কোকাকোলার হেড অফিসে গেলেন। ঢাকায় আসলে যেমন কেউ চিড়িয়াখানা না ঘুরে যায় না তেমনি আটলান্টা গেলে কোকাকোলার হেড অফিস না ঘুরে কেউ আসে না। ওখানে নাকি পৃথিবীর সব ধরনের কোকের আছে। ৩০ ডলার টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। এরপর যত ইচ্ছা কোক খাওয়া যায়। ২ গ্লাস খাওয়ার পর নাকি ওনার পেটে আর জায়গা হয় না, তাই যত কোকের স্যাম্পল আছে সব গুলো একটু একটু করে নিয়ে এক গ্লাস পূর্ণ করে মনকে এই বলে প্রবোধ দিয়েছিলেন সব দেশের কোক তো পেটে গেছে।

আটলান্টার কোক সিস্টেমে পড়া হল ঝড়ের গতিতে বইয়ের বোল্ড করা লাইন আর ফিগার গুলো কোনমতে দেখে নেয়া। কিছুই পড়া না হোক মনের ভিতরে একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আসবে। তো এই সিস্টেমেই একটা তুফান পড়া দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসলাম। খুব একটা খারাপও হয়নি আবার ভালোও হয়নি। মনে হচ্ছিল চাকরি হয়ে যাবে।

কিন্তু দিন, সপ্তাহ, মাস যাবার পরও যখন কোন রেসপন্স পেলাম না তখন আশা ছেড়ে দিলাম। মজার ব্যাপার ঘটল তার সাড়ে তিন কি চার মাস পর। হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে বলে আপনি কি আগামীকাল একটা ডেমো ক্লাস নিতে পারবেন। আমি বললাম নো প্রবলেম, পারব। তো গেলাম ডেমো ক্লাস দিতে। ভেবেছিলাম ৫-৬ জন টিচার থাকবে। কিসের কি? ক্লাস ভর্তি স্টুডেন্ট সাথে ৫-৬ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার। ৩০-৪০ মিনিটের মত একটা প্রেজেন্টেশন দিলাম। কোয়েশ্চেন এ্যান্সার পার্ট খতম হল। তালি দিয়ে ডেমো ক্লাস খতম। এরপর বলা হল একটু বসেন আরেকটা ইন্টারভিউ হবে। কিছুক্ষন পর ডেকে নিয়ে গেল। সি এস ইর ফেকাল্টি মেম্বার রা আমাকে ঘিরে বসে এটা ওটা জিগেস করল। সেদিনের মত যুদ্ধ শেষ। পরেরদিন আবার আসতে বলল। আবার নাকি ইন্টারভিউ আছে। গেলাম পরের দিন। দীর্ঘক্ষন বসে থাকার পর প্রো ভিসি ম্যাডামের রুমে ডাক পড়ল অনেক কথাবার্তা হল। সবই পজিটিভ। ওনার কাছে ভাইবা খতম হবার পর নিয়ে যাওয়া হল ভিসি স্যারের রুমে। ওখানেও দীর্ঘক্ষন বসে থাকবার পর ডাক পেলাম। ঢোকার সাথে সাথেই ঢাক্কা। হোয়াই ইউ আর নট ক্লিন শেইভড (আমি স্টাইল করে থুতনিতে চুগি দাড়ি রাখি, বাকি মুখ শেইভ করা) এন্ড হোয়্যার ইজ ইউর টাই (ঐ ভার্সিটির নিয়ম হল টিচারদের শীত গ্রীষ্ম সবসময় টাই পড়তে হবে। আমি যেই সময় গিয়েছিলাম তখন কঠিন গরমের টাইম। কোন টিচারের রুমেও এসি নেই, ক্লাস রুমেও এসি নেই)। আমিতো পুরা থ। মনে মনে বলছিলাম, আমি কি এখানে জয়েন করিসি যে শেইভ কইরা টাই পইড়া আসমু?? এটা তো আর বলতে পারিনা, সরি টরি বলে বসার পর সেকেন্ড কোয়েশ্চেন। এক্সপ্লেইন, হোয়াই ইউর ডেপথ অব নলেজ ইজ ঠু মাচ শ্যালো? আমার মাথার পুরা রক্ত চড়ে গেল (আব্বে আমার নলেজ যদি এতই শ্যালো হয় তাহলে সাড়ে ৩ মাস পর আমাকে ডেকে এনে এত রঙ তামাশা করবার মানে কি??) বললাম স্যার আসলে দুই দিনে পুরো চার বছরের জিনিস কভার করা একটু টাফ হয়ে যায়। বলে উহু বাও হার্ট পড়ালেখা করলে কোন কিছুই ভুলবার কথা না। কি আর বলব? এরপর আমাকে ইন্ডিরেক্টভাবে কোয়েশ্চেন করল আমি ভার্সিটির জন্য স্টুডেন্ট জোগাড় করে দিতে পারব নাকি। আমি পুরোই তব্দা। পুরো চুপ। কোন এন্সার দিতে পারিনা। লাস্টে জিগেস করল হোয়াটস ইউর এক্সপেক্টেড রিনিউমারেশন? আমি বললাম টোয়েন্টি থাউস্যান্ড। জিগেস করলে ইউর এক্সপেক্টেশন ইজ টোয়েন্টি থাউস্যান্ড, হোয়াটস দ্যা রিজন বিহান্ড ইট। আমি বললাম ইট মাই এক্সপেক্টেশন, নো রিজন বিহাইন্ড ইট। ইন্টারভিউ খতম। বুঝলাম হবে না।


দ্বিতীয়ঃ
মিরপুরে অবস্থিত একটা প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম দেড় মাস আগে। হেক্টিক অভিজ্ঞতা। পরীক্ষা হল। বলল ১ ঘন্ট পর রেজাল্ট দিয়ে দেয়া হবে। আবার যারা রিটেনে টিকবে তাদের ওইদিনই ইন্টারভিউ। একঘন্টা পর এসে বসে আছি টাইম চলে যায় রেজাল্টের খবর নেই। ২ আড়াই ঘন্টা পর রেজাল্ট দিল। ২০ জনের মধ্যে থার্ড। তিনজন লেকচারার নেবার কথা তাই আশায় বুক বাঁধতে থাকলাম। ইন্টারভিউও ভালই হল। কিন্তু চান্স পেলাম না। আমার এক ফ্রেন্ড ওখানের লেকচারার। ওর কাছ থেকে শুনলাম আমাকে ওয়েটিং এ রাখা হয়েছে। কোন টিচার চলে গেলে ডাকা হতে পারে। মাঝে ওই ভার্সিটির নতুন সার্কুলার দিল আবার। আশা ছেড়ে দিলাম।

গত পরশু আগারগাঁওয়ে গেলাম পাসপোর্ট অফিসে ফরম জমা দিতে। ওখান থেকে বের হবার পর একটা আননোউন নাম্বার থেকে ফোন আসল। জিগেস করে আপনি ইমতিয়াজ সাহেব। বললাম জ্বি। বলে আপনি এখন কোথায়? বললাম পাস্পোর্ট অফিসে। বলে আপনি কি কোথাও জয়েন করেছেন? বললাম না। তখন আমি জিগেস করলাম আপনি কে বলছেন। বলল ওমুক ভার্সিটি থেকে বলছি, আপনি কি এখনই আমাদের এখানে আসতে পারবেন? আমি এক্স ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার। গেলাম। উনি আমাকে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। চেয়ারম্যান স্যার অনেক কথা টথা বললেন। খোশগল্প আরকি। শেষমেষ বললেন মেন্টালি প্রিপেয়ার থাকেন আগামি কাল থেকেই ক্লাস নেয়া লাগতে পারে, আমি ফোন দিব আপনাকে। আর এ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার কালকেই দেয়া হবে, আবার ২-৩ দিন পরেও দিতে পারে। আমি তো খুশি। চাকরি হয়ে গেছে। ফোন দিয়ে আব্বু, আম্মু কে জানালাম।

পরের দিন দেখি ফোনের দেখা নেই। কি আর করা ভাবলাম আজ তো ফোন দিবেই (ওখানের একজন লেকচারার চলে গিয়েছে ওই ক্লাস গুলো তো চালানো লাগবে)। আজকেও ফোন দেয় না। আমার ফ্রেন্ডটাকে ফোন দিলাম। কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। বলে চেয়ারম্যান স্যার নাকি বলেছেন নতুন সার্কুলার দিয়েছে তাই এখন আমাকে নেয়া যাচ্ছেনা। নুতন সার্কুলারের ডেট ক্লোজ হয়েছে আজ থেকে বিশ দিন আগে? আর আমাকে ডাকা হল গত পরশু। এসবের কি মানে কিছু মাথায় ঢুকছে না। চেয়ারম্যান স্যারকে ফোন দিলাম, বললেন এখনো হয় নাই, হলে আপনাকে ফোন দিয়ে জানানো হবে।


পরশু রাতে শার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করে রেখেছিলাম। দেড় দিন চেয়ারে ঝুলে থাকার পর ওগুলোকে আবার হ্যাঙ্গার বন্দি করা হল। পলিশ করা জুতোয় হালকা ধুলো জমেছে। জানি ধুলোর পুরুত্ব বাড়তে থাকবে।

রুদ্রপ্রতাপের লিংকের আমিটাই আসলে যথার্থ। একজন সাক্ষাত বেকার……….


বিঃদ্রঃ মন মেজাজ অনেক খারাপ। কমেন্টের এন্সার দিতে পারবনা মনে হয়। লেখাটা একবারে বসে লেখা। অনেক বানান ভুল ভাল আছে। ঠিক করার ইচ্ছা নাই জোশ নাই……………
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৮
৩৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×