somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা !!

১২ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাসার জন্য কোনো ভাষার দরকার নেই, হাসলেই হলো , হাহ হাঃ হাহ্‌।কিন্তু হাসানোর জন্য দরকার পড়ে ভাষার । ভাষার প্রয়োগে হাসনো সম্ভব , ভাষার মার প্যাঁচেও হাসে অনেকে । কিন্তু ভাষা গত কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না। হয়তো হাসতে সাহায্য করবে , কারণ আমি মনে মনে হেসেছিলাম সেবার, মুখে গম্ভীর ভাব নিয়ে!


আমি তখন একটা অফিসিয়াল কাজে দেশের বাইরে । বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষা ভাষীর সমহার হয়েছে । মাস তিনেকের জন্য থাকতে হবে আমাকে সেখানে । হোটেলের ভাড়া অত্যাধিক , কিন্তু কয়েকজন মিলে এক হয়ে সুন্দর বাংলো টাইপের বাসা ভাড়া নেয়ার সুযোগ আছে , খরচ ও তখন সাধ্যের মধ্যে ।
বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গেলাম আমরা ,ধর্ম ভিত্তিক - মুসলিম , খ্রিস্টান;এলাকা ভিত্তিক-এশিয়ান ,ইউরোপিয়ান , আমেরিকান ; ভাষা ভিত্তিক - ইংরেজ , ফ্রেঞ্চ এবং এরাবিয়ান ।বাঙালি কিংবা ভারতীয় করো সাথে আমি গাট বাঁধতে পারলাম না ,তবে মুসলিম হিসাবে কিছু এরাবিয়ান আমাকে তাদের দলে নিলো ।
কিছুদিনের মধ্যে টের পেলাম একসাথে থাকার জন্যে ধর্ম থেকে ভাষাগত মিল থাকাটা বেশি জরুরী ।
আমার সাথে সকলে বার্তা ভাব আদান প্রদান করতো ইংরেজিতে , সকলেই অল্প বেশি ফ্রেঞ্চ পারতাম , দিব্যি চলে যেতো ।তবে আমার জন্য বিরক্তিকর ছিলো বৈকালিক কিংবা অবসরের গল্পের আসরটা । আমি ছাড়া এ বাড়িতে ওরা ছিলো চার জন , চার জন চার দেশের । মিশর , আলজেরিয়া , তিউনিসিয়া এবং জর্ডানের । জর্ডানের যিনি তিনি আবার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী পেয়েছেন আমেরিকান বিখ্যাত এক ইউনিভার্সিটি থেকে । সবাই চমত্‍কার ইংরেজি জানা সত্বেও আড্ডাতে আরবী ছাড়া কিছুই ব্যবহার করে না । যন্ত্রণা দায়ক ব্যাপার হচ্ছে জমপেস সেই আড্ডাতে হাসি হাসি মুখ করে আমাকে বসে থাকতে হয়।
প্রায় আমি বেশ উসখুশ করতে থাকি , ছটফট করলেও মুখে কিছু বলি না , হাসি হাসি মুখ করে এমন ভাব করি যেন খুব আনন্দ পাচ্ছি । ওরা আমার দিকে তাকায় , আমাকে নিয়ে বোধ হয় কিছু বলে , আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে । আমি একটু গম্ভীর হই । ওরা নড়ে চড়ে বসে , আমার সাথে দুই চারটা সৌজন্য আলাপ করে ইংরেজিতে , আবার কিছুক্ষনের মধ্যে আরবী আলাপ জমে যায় । অন্যের কথা শোনার থেকে বলার দিকেই ওদের আগ্রহ বেশি ।
আড্ডার আসরেই আমি একদিন মুখ খুললাম , "আচ্ছা ,তোমাদের কী একবারও আমার কথা মনে থাকে না! এই যে তোমরা এতো মজা করে আলাপ করছো , হাসা হাসি করছো , আমি যে মুখ কালো পাতিল হয়ে বসে থাকি !"
আমার কথা শুনে ওরা অবাক হলো ,"আরে তুমি হাস না কেনো আমাদের সাথে " জর্ডানের আল আউয়াদ বললো ,"আমরা তো অন্যকে হাসতে দেখেই হাসি , কারণ খুজি না , একে অন্যের কথা অর্ধেক বুঝি আর অর্ধেক বুঝি না । অন্যের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হয় হাসির কথা হচ্ছে , কিছু না বুঝেই সমানে হাসি ।"
"কেনো?"
ওদের অফিসিয়াল পজিসন আমার থেকে কোনো অংশে বেশি নয় , বরং অনেকাংশে ওরা আমার কাজের উপর নির্ভরশীল ।কোনো ভাবেই ওরা আমাকে খেঁপাতে চাইবে না।
"দেখোনা , আমরা শোনার থেকে কথা বলি বেশি " বললো তিউনিশিয়ান ।
"হুম! তোমরা দেখি সবাই চেঁচামেচি করছো আরবীতে,হাসছো ও প্রচুর " আল- আউয়াদ কে জিজ্ঞেস করলাম ,"একে অন্যের কথা অর্ধেক বুঝো আর অর্ধেক বুঝো না, মানেটা কি?"
মিশরের আহমাদ এর কথায় অবাক হলাম "তুমি দেখছো আমরা সবাই আরবীতে কথা বলছি , কিন্তু আমাদের এই এরাবিক উচ্চারণে এতো অমিল যে এক জন আরেকজনের কথা ধরতেই পারি না!এক দেশের আরবী ভাষা অন্য আরবী ভাষা থেকে অনেক আলাদা আঞ্চলিক টান এত বেশি যে বুঝাই মুস্কিল "
অবাক হলেও বুঝতে পারলাম আমাকে বলার জন্যই বললো কথাটা । আরো বুঝলাম ওদের হাসির মূল উপকরণ আমিই , কারণ আমি আরবী বুঝিনা বলে ওরা মনে হয় চরম স্বস্তিতে আছে , আমাকে নিয়েই বেশি হাসা হাসি করে মনে হয় !
বেশ কিছু দিন পরের কথা ।এমনি ভাবে চলছিল ভালোই । রমজান এসে গেলো । রমজানে ধর্ম কর্ম বেশ জোরে সরেই হচ্ছিল । ওরা খুব সুন্দর নামাজ পড়ে , ঈমামতি করে , আমি জামাতে শরীক হই ।একদিন কী প্রসংগে ওরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছিল আর হাসছিল । আল-আওয়াদ এর সাথে চোখা চোখী হতেই একটু বিব্রত হলো ,"আচ্ছা ! তোমরা তো আরবী জানো না , তাহলে কী নামাজ পড় ইংরেজিতে "
আমি বললাম "ইংরেজিতে পড়বো কেনো? আমাদের মাতৃ ভাষা তো বাংলা ! পড়লে তো পড়া উচিত বাংলায় "
আমার দিকে তাকিয়ে বোকার মতো অনিশ্চিত একটা হাসি দিয়ে সে সেখান থেকে কেটে পড়লো । একসাথে হলেই মনে হয় ওরা আমাকে নিয়ে ইয়ারকি করে নিজেদের মধ্যে , আমি আরবী জানিনা বলে ওরা মনে হয় অনেক শান্তিতে নিজেদের মধ্যে আড্ডা দেয় ; একদিন হঠাত্‍ সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো ।

ওরা দেখি আমার সাথে কথা বলছে খুব মেপে মেপে , নিজেরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে না । বিশেষ করে আরবিতে কথা বলছে খুব হিসাব করে,অবাক কান্ড !!! আমি বেশ অবাক হই ওদের আচরণে , কিন্তু এর পিছনে কী রহস্য কী কারণ তখন ক্লেয়ার নই। কয়েকদিনের মধ্যে রহস্য ক্লেয়ার হলো ।

অনেক দিন পর সেদিন বিকেলের আড্ডা টা জমে উঠেছে । যথারীতি আমিও আছি ওদের সাথে । লোনে চমত্কার বাগান , সাথে বিশেষ পাত্রে চা , বেশ ভালো লাগছে। কী একটা বিষয় নিয়ে আরবীতে কথা হচ্ছে , হঠাত আল-আওয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আমার মতামত চাইল , ভাষা যেহেতু আরবী আমি তাই আগের মতই কিছুই না বুঝে মাথা নাড়্লাম । আমার সম্মতিতে মনে হয় ওরাও খুশি হলো , তাল মিলিয়ে আমিও ওদের সাথে হেসে যাচ্ছি । ওরা মনে হচ্ছে ইদানীং আমাকে নিয়ে তেমন ঠাট্টা মস্করী করে না।
সেদিন রাতেই মিশরের আহমাদ আমার কাছে আলাদা করে এলো,কেমন সংকোচ সংকোচ ভাব,"দেখো,আম্রাত সবাই বন্ধু কিংবা ভাই , তাই না!"
আমি সম্মতি দিলাম ,"অবশ্যই আমরা সবাই খুব ফ্রেণ্ডলী "
"ইয়ে , মানে...এই যে না বুঝে আমরা তোমার সাথে তোমাকে নিয়ে এত ঠাট্টা করতাম ..কিছু মনে করো নি তো!!" আমি আসলে তার কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না , পরের অংশে আমার অনেক কিছু ক্লিয়ার হলো,"আসলে আমরা অনেক কথা বলতাম তোমাকে নিয়ে , আসলে আমরা ভেবেছিলাম তুমি একেবারেই আরবী জানতে না "
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি , কী কারণে ওদের হটাত ধারণা হলো আমি আরবীতে খুব ঊস্তাদ !!!
আমার মনের কথা মনে হচ্ছে আহমাদ ঠিক বুঝে নিয়েছে ।
" সেদিন তুমি নামাজ পরছিলে যখন তখন তোমার কোরআন পাঠ থেকে আমরা প্রথম বুঝি যে তুমি আরবীতে ঊস্তাদ মানুষ , আমাদের থেকে স্পষ্ট উচ্চারণ তোমার! অনেক চমত্কার আরবী পর তুমি, কিন্তু ভীষণ অবাক হই আমরা তুমি আরবীতে একটা কথাও বলনা দেখে "
জীবনে প্রথম বারের মতো আমার ছোটবেলার আরবী হুজুর কে অনেক কৃতজ্ঞতা জানালাম মনে মনে । উচ্চারণ ঠিক না হলে পিটিয়ে শরীর রক্তাক্ত করে ফেলতেন ক্বারী সাহেব । সারাজীবন তাকে অসম্ভব অপসন্দ করে এসেছি, এই প্রথম তার প্রতি আমার প্রচন্ড ভক্তি হলো ।
আমি তাড়াতাড়ি কৌশলে প্রসংগ চেঞ্জ করে বললাম, "আমরা তো সবাই কমবেশি ফ্রেঞ্চ ও পারি , পারলেই তো হলো না,যেহেতু অফিসিয়াল লেঙ্গুয়েজ ইংলিশ , সবার সে ভাষায়ই কথা বলা উচিত ।"

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:৫১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×