somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দোভাষী!!

৩১ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকুরীর প্রয়োজনে দেশের বাইরে । সব সময় মন খারাপ থাকে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারিনা।এখানে ভাষা গত অনেক সমস্যা।দেশটি এক সময় বেলজিয়াম এর কলোনি ছিলো , নিজেস্ব আফ্রিকান ভাষা , উপজাতীয় ভাষা তো আছেই কিন্তু অফিসিয়াল ভাষা হচ্ছে ফ্রেঞ্চ ।

আমার সাথে অনেক কর্মচারী কর্ম কর্তা । লোকাল লোকজন ছাড়াও আছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগতরা ।প্রথম কিছুদিন যাওয়ার পরই টের পেলাম ফ্রেঞ্চ না জানলে আমি অচল । স্থানীয় একজনকে দোভাষী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হলো , কালো লিকলিকে বডি , হাসার আগেই দাত বের হয়ে যায় ।নাম ফেলিক্স । আমরা যে টুকটাক ফ্রেঞ্চ বলতাম ফেলিক্স এসে বুঝি দিত এসবের সব উচ্চারণ ভুল । কথায় কথায় তার মাস্টারি ,"স্যার ,আসলে ফ্রেঞ্চ ভাষাটা অসাধারণ ,আপনারা এটাকে বিকৃত করে বারোটা বাজিয়েছেন ,আমার উচ্চারণ টা সব সময় ফলো করবেন , ইম্প্রুভ হবেই "
আমাদের কাজে কর্মে বাজারে অফিস এ সব জায়গাতে ফেলিক্স এর প্রচন্ড প্রভাব । নতুন কেও এলেই আমরা তাকে ফেলিক্স এর হেফাজতে দিয়ে দেই কয়েকদিনের জন্য । রাস্তাঘাটে বের হবার আগে ফেলিক্স তাকে ঘষে মেজে ফ্রেঞ্চ টা ধরিয়ে দেয় ।

সেদিন অন্যদিনের মতো ফেলিক্স কে নিয়ে বাজার করে ফিরছি । যথা রীতি আমি তার কাছ থেকে অবিরত জ্ঞান লাভ করেই যাচ্ছি । এটা এভাবে বলো না, এর উচ্চারণ টা আর গভীর থেকে বলতে হবে ..ইত্যাদি ।
বাসায় দেখি আমাদের নতুন অফিস কলিগ রিও বসে আছে ।সকালে এসেছে ,বিশ্রাম পর্ব শেষ। রাজধানী হেড অফিস থেকে আজ ই তার পোস্টিং হয়েছে আমাদের সাথে,আমারই সমপর্যায় এর অফিসার সে।প্রাথমিক পরিচয় পর্ব এবং সৌজন্য বার্তা বিনিময় শেষ হলো, আমাদের কথা হচ্ছিল ইংরেজীতেই । ফেলিক্স শুরুতেই বুঝিয়ে দিলো তার অবস্থান টা ।
"বস! যতই ইংরেজিতে পট পট করন না কেনো আমাকে ছাড়া কিন্ত আপনারা অচল।"
রিও প্রশ্ন নিয়ে তাকাল তার দিকে ।
ফেলিক্স খুব উত্সাহের সাথে বলে যাচ্ছে ,"ফ্রেঞ্চ না বলতে পারলে এখানে অচল "
রিও বললো ,"আমি কিছুটা ফ্রেঞ্চ বলতে পারি"
"আপনাদের দের ওই বলাতে কিছু হবেনা স্যার , উচ্চারণে অনেক ভুল থাকে "এতটুকু বলে ফেলিক্স রিও এর ফ্রেঞ্চ কত টুকু জানে তার পরীক্ষা নেয়া শুরু করলো "বলেন তো আমি অল্প ফ্রেঞ্চ পারি এটা ফ্রেঞ্চ লাঙ্গুয়েজ এ কী হবে?"
রিও কিছু একটা বললো , আমি হসলাম , হয়নাই । আমাদের মাত্র দুদিন আগে ফেলিক্স আসল উচ্চারণ টা ধরিয়ে দিয়েছে ।
ফেলিক্স খুব মনোযোগ দিয়ে তাকে সঠিক উচ্চারণ টা শিখালো ।
রিও এর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছিল ফেলিক্স এর পাণ্ডিত্য দেখে সে মুগ্ধ ।
ফেলিক্স এক এর পর এক অতি দরকারী ফ্রেঞ্চ গুলো রিও কে শিখিয়ে দিচ্ছিল । রিও ও অতি মনোযোগের সাথে বার বার প্র্যাক্টিস করে উচ্চারণ টা তালিম নিয়ে নিচ্ছিল । ফেলিক্স খুব উস্তাদ উস্তাদ ভাব নিয়ে আছে? কী একটা উচ্চারণ একেবারেই হচ্ছিল না রিওর ।খুব বিরক্ত প্রকাশ করলো ফেলিক্স ,"আসলে সমস্যা হয়েছে আপনারা যে আগে থেকে ভুল উচ্চারণে ফ্রেঞ্চ টা শেখার চেষ্টা করেছেন সেটাই ।"
রিও হাসল , লাজুক হাসি । ফেলিক্স জানতে চাইল ,"নিশ্চয় আপনি আগে যেখানে পোস্টিং ছিলো সেখানকার ইন্টারপ্রেটার এর কাছ থেকে এই সব ভুল ফ্রেঞ্চ শিখেছেন ?"
রিও লাজুক হাসি হেসে না বোধক মাথা নাড়াল ,"আমি আসলে নিজে নিজেই শিখেছি "
হালকা একটু বকুনি দিল ফেলিক্স তার বস রিও কে ,"ফ্রেঞ্চ কী এতই সহজ যে নিজে নিজে শেখা যাবে ?"
তার জবাবের জন্য ফেলিক্স মোটেও প্রস্তত ছিলনা ,আমরাও বেশ অস্বস্তি বোধ করলাম।রিও বললো ,"আসলে এ ছাড়া আমার উপায় ছিলো না , ফ্রেঞ্চ টা শেখা আমার খুব জরুরী ছিলো"রিও একটু রহস্যময় হাসি হাসল ,"কারণ শুধু আমিই না, আমার মা বাবা , দাদা নানা চৌদ্ধ গুষ্টি আমরা ফ্রাণ্স থাকি ,আমার মাতৃভাষাই ফ্রেঞ্চ ! "
আজীবন ফ্রাণ্স এর লিয়োঁ এলকাতে তার বাস , সামান্যতম অহংকার বা বিরক্ত বোধ নেই তার মধ্যে, বেশ আগ্রহ নিয়েই সে বলছিল ,"এখনো শিখতে হলে অবশ্যই আমি শিখবো ।"
ফেলিক্সএর হাসি হাসি মুখটা বিকৃত হতে হতে ক্রমান্বয়ে তরমুজ এর মতো হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যে !!!!




সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:১১
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×