somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ছেড়া টাকা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি মাসেই কয়েকবার শপিং করা মৌরীর স্বভাবে পরিণত হয়েছে। শপিং না করলে কেমন কেমন যেন একটা লাগে। কখনো কখনো বান্ধবীর সাথে আবার কখনো কখনো মায়ের সাথে।


আজ শপিং ডেট মৌরীর। পড়ন্ত বিকালে হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়িটা থেমে গেল। এই নতুন
ড্রাইভারটা যে কিভাবে গাড়ি চালায়!! জাস্ট অসহ্য। গাড়ির প্রতি তার বিন্দুমাত্র যত্ন নেই, ছোটলোকের জাত।আজকে মামা সামনে বসা না থাকলে কিছু একটা বলেই ফেলত মৌরী। আর একটু হলেই তার নতুন আই ফোন 5টা হাত থেকে পরে যেত। মেজাজটা গরম হয়ে আছে,তার সাথে মনে হয় শরীরটাও। এতক্ষণ এসির বাতাসে শীত শীত লাগছিল, এখন গরম লাগতে শুরু করেছে। জানালার গ্লাসটা হালকা নামিয়ে বাইরে তাকাল মৌরী। দুপুর গড়িয়ে বিকালের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে উঁকি দিচ্ছে। সূর্যের তীব্রতা নেই, অথচ বাইরে গরম বাতাস বইছে। এরই মধ্যে লোকজন ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে। তাদের চেহারায় কিছুটা ক্লান্তি থাকলেও বিন্দুমাত্র অস্বস্তিবোধ নেই। মৌরী জানালাটা বেশিক্ষণ খোলা রাখতে পারলনা, বাহির থেকে যেটুকু বাতাস আসছে তাতেই তার অস্বস্তি লাগছে। বাইরের মানুষগুলো যে কিভাবে আছে এর মধ্যে!! গাড়িটা এখনঠিক পান্থপথ শমরিতা হাসপাতালের সামনে।

আশ্চর্য!!মোহাম্মদপুর থেকে স্কয়ার হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে সময় লাগল ১০ মিনিট,আর স্কয়ার থেকে শমরিতায় আসতে আধা ঘণ্টা লেগে গেল। কতক্ষণ
যে লাগবে বসুন্ধরা সিটি যেতে!!
এয়ারফোনটা কানে গুঁজে গাড়ির
সিটে শরীরটা এলিয়ে দিল মৌরী।
পাশে মা গভীর মনোযোগে রান্নার বই পড়ছেন আর মামা আপন
মনে গান শুনছেন। এরই মাঝে মস্তিষ্কে বাজতে শুরু করেছে,

“There’s a place in your heart,And I know that it is love And this place could be much
brighter than tomorrow”

বসে থাকতে থাকতে কখন
যে ঘুমিয়ে পড়েছে মৌরী,বুঝতেই পারেনি। বিকাল বেলা ঘুমিয়ে পড়ায় শরীরটা খারাপ লাগছে। ঘুম ঘুম চোখেই জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। ঘুম ভাঙল জানালায় খট খট শব্দ শুনে। গাড়ি এখন পান্থপথ সিগনাল পাড় হয়ে জ্যামে পরে আছে। এখান থেকে বসুন্ধরা সিটি দুই মিনিটের হাঁটা পথ। অথচ ওরা গাড়িতেই বসে আছে। অবশ্য মৌরীর ও হাঁটতে ইচ্ছা করছে না, হাঁটার অভ্যাস ওর নেই বললেই চলে।

জানালায় খট খট শব্দটা আবার শোনা গেল।৩-৪ বছরের
একটা বাচ্চা ছেলে বাইরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। বাচ্চাটাকে দেখেই
বোঝা যাচ্ছে ও ক্ষুধার্ত, সারাদিনকিছু খায়নি। চেহারাটায় একটা মায়া মায়া ভাব আছে। এদের দেখে সবসময় মৌরী বিরক্ত হয় বরাবরই। কোন বিচিত্র কারণে আজ সেই বিরক্তি ওকে স্পর্শ করল না। মৌরী জানালার গ্লাসটা নামাল। বাচ্চাটা মায়াবী সুরে বলে যাচ্ছে, ‘আপা দুইটা ট্যাকা দেন,সারাদিন কিছু খাই নাই, বিস্কুট খাব।’

ছেলেটা যৌক্তিক কথা বলেছে। দুইটাকা দিয়ে বিস্কিট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবেনা।

আজ খুব ইচ্ছা করছে বাচ্চাটাকে কে এফ সি তে নিয়ে যেয়ে কিছু খাওয়াই..

রান্নার বই থেকে মা মুখ ফিরিয়ে বাচ্চাটাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল,মৌরী বাঁধা দিল। দুটা টাকাই তো চাচ্ছে।

সামনে পড়ে থাকা মামার ওয়ালেটটা থেকে দুই টাকা বের
করে এগিয়ে দিল। টাকা নিয়ে সে আর অপেক্ষা না করে সীমাহীন
আনন্দে দৌড়ে চলে গেল। বাধভাঙ্গা আনন্দের জোয়াড় স্পর্শ করেছে ওকে।

মৌরী এর দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্টির
হাসি হাসতেও ভুল করলনা।কি আশ্চর্য,সারাদিন না খেয়ে থাকার
পর কেউ দুই টাকা নিয়ে এতটা আনন্দিত হতে পারে!!

মৌরী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে, সে কিছুদূর
গিয়ে ফুটপাতে বসে টাকাটার
দিকে তাকিয়ে আছে।এর মধ্যে জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। মৌরীদের গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, মৌরী তাকিয়ে আছে সেই বাচ্চা ছেলেটার দিকে। কাছাকাছি আসতেই মৌরী লক্ষ্য করল ছেলেটা হতাশ দৃষ্টিতে দুই টাকার
নোটের দিকে তাকিয়ে আছে,নোটটা মাঝ বরাবর বেশ খানিকটা ছেড়া।আর
বাচ্চা ছেলেটা থুথু দিয়ে নোটটা জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে।তার চেহারায় কোন
অস্বস্তি নেই,চোখে মুখে দৃঢ় বিশ্বাসের ছাপ, সে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুই টাকার নোটটা সে একসময় জোড়া লাগিয়ে সেটা দিয়ে বিস্কুট কিনে খাবে। এই মাসের শপিং ও আজকেই শেষ করে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ ও কিছুই কিনতে পারলনা। পুরো সময়টা ওর মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে থাকল। ছেড়া একটা দুই টাকার বিনিময়ে কি দরকার ছিল একটা অসহায় মুখে মেকি হাসি ফোটানোর??এর চেয়ে কি বাচ্চাটাকে তাড়িয়ে দেয়াই ভাল ছিল না?? আসলেই,গাড়ির রঙ্গিন জানালা দিয়ে পৃথিবী দেখা যায়না,পৃথিবী দেখতে চাইলে পথে নামতে হয়..
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×