somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতের এ কেমন খেলা ?

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, রেলস্টেশন, হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে হামলাসহ সহিংস সব ঘটনায় সামনে রাখা হয়েছিল শিশু-কিশোরদের। গত দুই দিনের হরতালে রাজপথ অবরোধ ও জামায়াত-শিবিরের মিছিলেও তাদের সামনে রাখা হয়। এর আগে পলাশবাড়ী উপজেলায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনার দিনেও মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের সামনে রেখে পেছনে থেকে নেতৃত্ব দেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত লোকজন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বলছেন, এসব শিশু-কিশোরের বয়স ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তারা গাইবান্ধার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সহিংসতায় মাদ্রাসার ছাত্রদের বেশি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে চারটি মাদ্রাসার নাম পাওয়া গেছে, যেখানকার হাজার খানেক শিশু সেদিনের তাণ্ডবে ব্যবহূত হয়।
গাইবান্ধা জেলায় মোট ২৩৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। জেলার মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে মাদ্রাসার দায়িত্বরত শিক্ষকদের সতর্ক থাকতেও বলেছেন।
জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের রাজনৈতিক তাণ্ডবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব শিশু-কিশোরের অধিকাংশই রাজনীতি কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—এসব কিছুই বোঝে না। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের নেতারা ও কিছু মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তাদের ‘ইসলাম ধর্ম রক্ষাসহ নানা কথা বলে’ মাঠে নামিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, মিছিলের সামনে ও হামলায় শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করায় পুলিশ যেমন গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তেমনি এলাকার লোকজনও কীভাবে প্রতিরোধ করবেন, বুঝতে পারেননি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবিরের মূল ক্যাডাররা পুলিশের ওপর চড়াও হয়, অগ্নিসংযোগসহ অরাজকতা করে। গাইবান্ধায় বৃহস্পতিবার চার পুলিশ সদস্য, এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে মারা হয় এই কায়দায়।
বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলার পর সেদিন সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। সেখানেও সামনে রাখা হয় শিশু-কিশোরদের। স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৭১ সালের পর গত ৪২ বছরে তাঁরা এমন তাণ্ডব দেখেননি।
বামনডাঙ্গায় গত বৃহস্পতিবারের ওই হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান, রনজু মিয়া, মোহাম্মদ আলিম, সাইফুল ইসলাম আয়নাল, শামীম, আলমগীর, গনিসহ আরও অনেকেই প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই দিন বেলা তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা তাণ্ডব চলে বামনাডাঙ্গায়। হামলার সময় সামনে রাখা হয় বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিশু-কিশোরকে। আর বয়স্ক নেতা-কর্মীরা ছিলেন পেছনে। এসব হামলায় কিছু নারীকেও ব্যবহার করা হয়।
বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে শিশু-কিশোরেরা থাকায় আমরা গুলি করতে পারিনি। আমরা বারবার বলেছিলাম, সামনে এগোলে গুলি করব। তারা সামনে এগোতে থাকলে আমরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে নিরাপদে সরে যাই। তখন একটা দল নিরস্ত্র কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিশু-কিশোরকে সামনে রাখা হয়েছিল। এই বাচ্চাদের দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ কী করবেন, বুঝে উঠতে পারেনি। আমরা পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এসব শিশুর অনেককে ধর্মের কথা বলে আবার অনেককে টাকা দিয়ে আনা হয়েছিল।’
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার আল-হিকমা একাডেমি, বামনডাঙ্গা সরকারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, সর্বানন্দ ইউনিয়নের হাফেজিয়া মাদ্রাসা, একই ইউনিয়নের খানাবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেদিনের হামলায় অংশ নিয়েছিল। এই মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকেরা এখন পলাতক। সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলার সময় আশপাশের মাদ্রাসার অনেক শিশু-কিশোর অংশ নেয়।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেক মাদ্রাসার শিশুকে হামলায় অংশ নিতে দেখেছি। সন্দেহভাজন মাদ্রাসাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রাখছি।’
গত ২২ ফেব্রুয়ারি পলাশবাড়ী উপজেলায় গণজাগরণ মঞ্চে ভাঙচুর ও তাণ্ডবের দিনেও ওই এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার কয়েক শ শিশু-কিশোরকে সামনে ঠেলে দেয় জামায়াত-শিবির। গত দুই দিনে গাইবান্ধায় হরতাল চলাকালে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর, সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা, সুন্দরগঞ্জ-তারাপুর সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। সব কটি ঘটনায় সামনে রাখা হয় মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ছিলেন পেছনে। অনেক সময় তাঁদের রাস্তার পাশে থেকে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। গাইবান্ধার কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পলাশবাড়ীতে ২০টি এবং সুন্দরগঞ্জ ৫২টি দাখিল মাদ্রাসা আছে। এসব মাদ্রাসা নির্মাণ ও এমপিওভুক্ত করাসহ সরকারি-বেসরকারি নানা অনুদান আনার ক্ষেত্রে গাইবান্ধার জামায়াতের সাবেক সাংসদ আবদুল আজিজের ভূমিকা ছিল। এসব মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের প্রায়ই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন,‘ জামায়াত-শিবির এখন ঢাল হিসেবে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে। জেলার মাদ্রাসাগুলোর ৯০ ভাগ শিক্ষকই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য শিক্ষার্থীদের সহিংসতায় নামিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারা সরাসরি সহিংসতায় অংশ নিচ্ছে এবং শিশু-কিশোরদের আনছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির যাতে ধংসাত্মক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমরা সাধারণ জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
হামলায় মাদ্রাসার শিশুদের কেন ব্যবহার করা হলো—জানার জন্য সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ইউনুস আলীর মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সব কটি ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। শিবিরের নেতারাও কেউ ফোন ধরছেন না।
জেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও খানকা শরিফ সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শরীফ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘এভাবে মাদ্রাসার নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের হামলা, তাণ্ডবে নিয়ে যাওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। আমরা মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের যেকোনো ধরনের রাজনীতিতে যুক্ত না করার জন্য অতীতেও বলেছি। এখনো জেলার ২৩৪টি মাদ্রাসার শিক্ষকদের এই অনুরোধ জানিয়েছি।
সূএ:প্রথম আলো ৫/৩/১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×