somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী শাহাবুদ্দিনের চিত্রকর্ম : অদম্য বাঙালির ছবি

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিল্পী শাহাবুদ্দিনের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিরন্তর সৃজনের বীজ রোপণ করে দিয়েছে। তার চিত্রে মুক্তিযোদ্ধার অবিশ্রাম পথচলা ও গতি অনিঃশেষ শক্তি নিয়ে প্রতিফলিত হয়। এই সৃজনকর্মের মধ্য দিয়েই তিনি হয়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনন্য রূপকার। শিল্পীর এই অভিযাত্রা তাকে বিশেষত আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে। তিনি হয়ে উঠেছেন বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের চিত্রকলার অনন্য প্রতিনিধি। আজ বেঙ্গল গ্যালারিতে শুরু হচ্ছে বরেণ্য এ শিল্পীর 'জয়বাংলা' শীর্ষক একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
এ প্রদর্শনীকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন। তাকে বলতে বলা হলে তিনি প্রথমেই বলেন, কী বলবো? আপনারা প্রশ্ন করলে আমার বলতে সুবিধা হবে। প্রথমেই প্রশ্ন? সাংবাদিকরা ঘোর কাটিয়ে টুকটাক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। একে একে বেরিয়ে আসলো স্বনামধন্য শিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ দেশ, শিল্প ও জীবন ভাবনার নানা কথা।

শিল্পী মনে করেন, নতুন চিন্তা, নতুন দর্শনের উদ্ভাবন এশিয়ায় এই বাংলাদেশ থেকেই উঠে আসবে। কারণ আমরা অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় আমাদের দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। এই প্রেরণা অনুরণনের মত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে যাবে। সেই প্রেরণাই নতুন কিছু সৃষ্টির শক্তির উৎস হয়ে রইবে দীর্ঘকাল। তিনি বলেন, পৃথিবীতে আরো অনেক জাতি ও দেশ রয়েছে। কিন্তু অভাবতাড়িত বাংলাদেশে এত শিল্পী-কবি নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে উঠে আসছে কেন? এর প্রধান প্রেরণা মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যলালিত সৃষ্টিধারা।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, সৃষ্টির পেছনে আবেগই প্রধান। শিল্পে পুরোপুরি মৌলিক বলে কিছু নেই। কারো না কারো অনুপ্রেরণা থাকে। শিল্পে সম্পূর্ণ নিজস্বতা আনা কঠিন কাজ। কারো না কারো প্রেরণার ছোঁয়া লেগে থাকে। শিল্পের সাথে এসব মেলানো ঠিক নয়। কারণ শুধু বুদ্ধি দিয়ে শিল্প সৃষ্টি হয় না। তেমনি টাকা দিয়েও শিল্প সৃষ্টি হয় না। শিল্প এসব কিছু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
শাহাবুদ্দিনের ছবি গতি ও শক্তি প্রধান- এ প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, গতি অনেক শিল্পীর ছবিতেই রয়েছে। আমি চেষ্টা করি গতিটা অন্তরের সাথে সমান তালে যাচ্ছে কিনা তা ক্যানভাসে ধরে রাখতে। এই গতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমি মানুষকে বেছে নিয়েছি। আমি মূলত পোর্ট্রেট পেইন্টার। মন থেকে আমি যা ভালবাসি তাই তুলে আনি ক্যানভাসে। মন থেকে ভালবাসি বলেই বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধি আমার ছবিতে উঠে আসে। এই ভালবাসার ভাষাটাকে আমি ছবিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছি। কিন্তু সফলতা পাইনি এখনো। গতি থাকলেই ছবি ভাল হবে এমন কোন কথা নেই। তিনি জানান, জয়নুল আবেদিনের ‘ষাড়’, ‘গুণটানা’ এবং শিল্পী গয়া, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ছবি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। বিনয়ের সঙ্গে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি এই শিল্পীদের পরিবারভুক্ত শিল্পী’।
আপনার ছবি মানুষকে প্রাণিত করলেও সেই শুরু থেকেই একই ধারার ছবি আঁকছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পী বলেন, আমি যে বিষয় নিয়ে ছবি আঁকছি সেই বিষয়ে পুরোপুরি কথা এখনো বলতে পারিনি। আমার ছবিতে একজন আঘাতপ্রাপ্ত মানুষ তার সমস্ত ইচ্ছাশক্তি এক করে ছুটছে। এগুচ্ছে। ক্ষভ-বিক্ষতের পরেও মানুষটি জীবিত। ক্যানভাসে লালের আঁচড়। রক্তক্ষরণের স্বাক্ষর রাখছে। প্রমাণ দিচ্ছে সে জীবিত। এটাই বাঙালি। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন অবশ্যই সে তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমি যোদ্ধা নই। ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হবার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এই লড়াই আমাকে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছে। প্যারিসে গিয়ে টিকে থাকা সহজ কথা নয়। আরো দশটা দেশের শিল্পীর মত আমিও সেখানে হারিয়ে যেতে বসেছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা আমাকে সেখানে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছে। আমি সেখানে উঠে দাঁড়িয়েছি। নিজের প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, ’৭৪ সালে যখন ফ্রান্সে যাই তখন একটা স্বপ্ন ছিল। একটি নতুন দেশ, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। তখন ফ্রান্সের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন একটি দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের সম্মান জানাতো। পরিচয় পেয়ে অভিবাদন জানিয়ে চুমু পর্যন্ত দিতো সাধারণ দোকনদাররা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সে স্বপ্ন, সে সম্মান ভেঙ্গে যায়। তখন আমি রাস্তায় রাস্তায় কেঁদেছি। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এদেশটার আর কোন অগ্রগতি হবে না। এমনটাই ভাবতাম। কিন্তু আমার সেই হতাশা দূর করে দিয়েছে বর্তমান প্রজন্ম। তারা এই দেশকে অবলম্বন করে নতুন করে উঠে দাঁড়াচ্ছে।
তার কাছে প্রশ্ন করা হয়ে- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আপনি দেশে এসে প্রদর্শনী করেন-এটা হচেছ কেনো? উত্তরে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি ঠিক নয়, আগেও প্রদর্শনী হয়েছে। তবে বিগত পাঁচ বছর প্রদর্শনী করিনি সচেতনভাবে। দেশটাকে যেভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে একটা আমার একটা প্রতিবাদ ছিল। রাজাকারের গাড়িতে পতাকা এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
সংবাদ সম্মেলনে একজন তাঁর শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঢাকার বাইরে অন্তত জেলা পর্যায়ে আয়োজনের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বেঙ্গল গ্যালারির পক্ষ থেকে এ ব্যপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
শিল্পীর এই প্রদর্শনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী শাবানা আজমী। আজ বিকেলে পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×