somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগত ভৃত্য

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদা ছাইয়ের মত ধবধবে দাড়িগুলো হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে তিনি গাছগুলোতে পানি ঢালছিলেন।গায়ে আগের মত জোড় নেই।তবুও বিঁড়ি ফুঁকতে পারেন খুব।মাথার টাকটা রোদের আলোয় লাল হয়ে গিয়েছে।তবুও একমনে পানি ঢালছিলেন গাছগুলোর গোড়ায়।তার বাড়িটার চারদিকে বড় বড় অট্টালিকা।এই বাড়িটা কোনো এক জোতদারের ছিলো।তখন চারিদিকে বন ছিলো,ছিলো নদী।যুগের ভয়াল গ্রাসে সব নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।কেবল বাড়িটাই রয়ে গিয়েছে।এই বৃদ্ধের পিতামহ খুব শখ করে এ বাড়িটা কিনেছিলেন।নববধূর মনোরন্জনের জন্য ছাদের উপর বাগান করেছিলেন।সেই বাগান আজো আছে।সেইসব দূর্লভ প্রজাতির গাছগুলোর বংশধররা আজো সগর্বে দাড়িয়ে আছে।এই বৃক্ষরাজি তাকে মনে করিয়ে দেয় তার পিতামহের কথা।
বৃদ্ধের পিতামহ খুব অল্পসময়ের মধ্যে বিরাট ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন।তাই ধনাঢ্য গৃহস্থে পরিণত হন তিনি।কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও স্ত্রীকে সব সময় খুশী রাখবার চেস্টা করতেন।কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানকে জন্মদান করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।তখন বৃদ্ধের পিতামহ তার বড় ছেলেকে পাঠিয়ে দেন ঢাকায়।আর পিতামহ জেলা শহরে একা দিন কাটাতে থাকেন।শোনা যায় শেষ কালে তিনি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন।গাছগুলো ছাড়া তিনি কিছুই বুঝতেননা।সারাদিন বাগানে থাকতেন,গাছের সাথে কথা বলতেন।তার নাকি ভয় ছিলো তার স্ত্রীর মতো গাছ গুলো মারা যাবে।সারাক্ষণ ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন, কখন কি হয়ে যায়?তিনি নিজেকে সেই বৃক্ষদের ভৃত্য মনে করতেন।মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ ইচ্ছা ছিলো তার গাছগুলোকে যেন খুব যত্নে রাখা হয়।তখনা আশ্বাস দিলেও পরে এ গাছগুলোর খোঁজ কেউ রাখেনি।
উচ্চবিত্ত পুত্র পিতার এ বাগান সম্পর্কে উদাসীন থাকলেও তার পুত্র তার পিতামহের বাগানের প্রতি অতি মাত্রায় আকৃস্ট ছিলো। স্কুলের ছুটির দিন গুলো সে কাটাতো পিতামহের বাড়িতে। জীবনের স্রোতের টানে অনেক চেস্টা করেও এ বাগান বাড়িতে সে থাকতে পারেনি।যখনই সুযোগ পেতেন,ছুটে আসতেন এ বাগান বাড়িতে।এ বাড়ির প্রতি তার ছিলো অদম্য আকর্ষণ।কিন্তু স্ত্রীর চাপে একসময় তাকে প্রবাসে যেতে হয়।জীবনের আটচল্লিশটি বছর সেখানে কাটিয়ে প্রবাসের মাটি যখন তার যৌবনকে গ্রাস করলো দেশে আসার সুযোগ তার তখনই ঘটলো।টেম্‌স নদীর পাশে স্ত্রীকে কবর দিয়ে নিঃসন্তান বৃদ্ধ ছুটে এলেন বাগান বাড়িতে।ছোট বেলার মত স্কুলের ছুটিগুলোর দিন কাটাতে নয়।তিনি এলেন বাকি জীবনটা এ বাগান বাড়িতে কাটিয়ে দিতে।
সম্পত্তির একটা অংশ দিয়ে বাগানটাকে সংস্কার করলেন।বাড়ির চারদিকে গড়ে তুললেন বৃক্ষের সারি।বাড়িতে বৃক্ষের পরিচর্যায় কম করে হলেও দশ জন ভৃত্য ছিলো।তবুও তিনি বাগানে প্রতিটি গাছের গোঁড়ায় পানি ঢালতে ভালোবাসতেন।যখন তিনি পানি ঢালতেন তার গালের শুকিয়ে যাওয়া বলিরেখাগুলো স্ফীত হয়ে উঠতো।বৃদ্ধ শুধু এ সময়টাতেই হাসতেন।পাতাগুলোকে হাত বুলিয়ে দিতেন।কখনো একেবেকে উঠা গাছগুলোর দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতেন।সূর্যের আলোকে অনুসরন করে বেড়ে উঠা এ গাছগুলো তাকে কেন এত আকর্ষণ করতো হয়তো তিনি তা নিজেও জানতেননা।ধীরে ধীরে একসময় তিনি তার একাকী জীবনে বৃক্ষগুলোর ভৃত্য হয়ে পড়েছিলেন।দূর্বল চোখগুলো দিয়ে মায়া ভরে দেখতেন গাছগুলোকে।
গাছগুলো তাকে যেন রূপের খেলা দেখাতো।তারা কখনো বাতাসে দুলে উঠতো,কখনো বৃষ্টিতে ভিজে চুপটি করে বসে ।বৃদ্ধ ভাবতেন পাতার শিরাগুলো কেন একেবেকে এদিক ওদিক চলে যায়।কাণ্ডগুলো কি অদ্ভূত! কেমন সরু হয়েও ভেঙ্গে পড়েনা।
গাছগুলোর কাছে বৃদ্ধ বরাবরই নত হয়ে থাকতেন যেন তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়ে বৃদ্ধকে তারা কৃতার্থ করেছে।সেদিন রাত্রি গভীর ছিলো।বাগানে একটা চেয়ারে বৃদ্ধ বসেছিলো।শরীরটা ভালো নেই তার। হাত পা গুলো কাপছে।হঠাৎ নারী কন্ঠের কলকল ধ্বনি শুনতে পেল সে।সেই নারীর সাথে একটি পুরুষ কন্ঠ। ভালো করে দেখতে গিয়ে বৃদ্ধ অবাক হলো।একি এ যে বৃদ্ধ পিতামহ আর যুবতী পিতামহী হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে।চেয়ার থেকে উঠে পিতামহের কাছে যাবে ওমনি পড়ে গেলেন।ওঠার চেস্টা করেও উঠতে পারলেননা।কেমন একটা গভীর নিদ্রা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো।
বৃদ্ধের ব্যাংক থেকে তার মৃত্যুর পরেও ভৃত্যদের বেতন আসতো।গাছগুলোরও যত্নের কমতি হতোনা।কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া সবগুলো বৃক্ষ শুকিয়ে যেতে লাগলো।একে একে প্রতিটি বৃক্ষের মৃত্যু হলো।একটি গাছও বেঁচে রইলোনা।
আশ্চর্য্য! এই বৃক্ষের ভূবন তার প্রথম সেবককে হারিয়েও বহুদিন বেঁচে ছিলো।হয়তো তারা জানতো নতুন সেবকের আগমন ঘটবে।কিন্তু বৃদ্ধের মৃত্যুর পর তারা অনুধাবন করলো সেবকের আগমান ঘটলেও এমন অনুগত ভৃত্য মিলবেনা।প্রাচীন কালে রাজা বাদশাহরা যে স্হানে সেবার অভাব ঘটতো সে স্হান ত্যাগ করে সেবকে পরিপূর্ণ স্হানে গমন করতো।জানিনা তাদের পথ অনুসরণ করেই হয়তো বৃক্ষের ভূবন তাদের অনুগত ভৃত্যের কাছে পা বাড়ালো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:০১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×