তানিয়ার স্বামী ছোট একটা চাকরি করে। ছোট শহরে, ছোট্ট একটা বাসা, দম বন্ধ হয়ে আসে ওর। বিশেষ করে মামাতো খালাতো বোনদের সকলকে যখন দেখে, স্বচ্ছল, গাড়ি বাড়ি ওয়ালা স্বামীদের বিলাসী বৌ, ওর অন্তর্জ্বালা আরও বেড়ে যায়।
যদিও তানিয়ার নিজের বোনেরা গ্রামে থাকে, খুব বেশী স্বচ্ছল না, তাদের স্বামীরাও ক্ষেত-খামারে কাজ করে, কেউ তেমন শিক্ষিতও না, সেদিকে ওর খেয়াল নাই, ওর চোখ কেবল উপরের দিকে।
দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে আর ভাবে, কি করে ওখানে পৌঁছাবে সে। পথ খুঁজে পায় না কোন। ভাবে স্বামীটা দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ছোট লোকের বাচ্চা! বড় কিছু ভাবতেই জানে না। মানুষ কত ছোট থেকে বড় হচ্ছে! ব্যাটা রামছাগোল! কিছুই পারে না।
রাগে, ক্ষোভে, স্বামীকে ওর দুই চোখে দেখতে ইচ্ছে করে না। স্বপ্ন পূরণের ছোট্ট একটা পথ খুঁজে পেল তানিয়া, যখন ওর ছেলে তন্ময় জন্মাল। হ্যাঁ, ছেলেকে তার অনেক বড় করতে হবে, ওকে নিয়েই সে সবার সাথে টেক্কা দেবে।
ছেলের লেখা-পড়ার জন্য, ভাল রেজাল্টের জন্য সে সব কিছু করে। আর কোন দিকে খেয়াল নাই তার। যা কিছু সবই ছেলের জন্য।
ছেলেটাও লেখা পড়ায় খুব ভাল। ক্লাশ ফাইভে বৃত্তি পেল, ক্যাডেট কলেজে চান্স পেল, সেখান থেকে এইচ এস সি করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল; তানিয়ার স্বপ্নরা জীবন্ত রূপ নিতে লাগল; ছেলে ভাল রেজাল্ট করে বের হল। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভাল বেতনে চাকরিও পেল।
বাবা মায়ের সম্মতিতে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করল। বৌ সুন্দরী, শিক্ষিতা, ঢাকায় থাকে। তানিয়ার দু চোখ চক চক করে।
ছেলের এখন অনেক ব্যস্ততা। মায়ের সাথে যোগাযোগ করার তার সময় কম। তা ছাড়া, ওই ছোট শহরের ভাঙ্গাচোরা বাসায় থাকতে তার কষ্ট হয়, গা ঘিন ঘিন করে। তাই মায়ের কাছে আসা হয় না।
ছেলে একদিন ফোন করে মাকে বলে, ভাড়ার বাসায় থাকতে ভাল লাগে না মা, খুলনার জায়গাটা বিক্রি করে দাও, এখানে একটা ফ্ল্যাট কিনি।
তানিয়া ভাবে, তাইতো এই ছোট শহরে থাকার আর কি দরকার! না খেয়ে, না পরে, অনেক কষ্টে যে জায়গাটা কিনেছিল, স্বামীর অমত থাকা সত্ত্বেও তা বিক্রি করে ছেলের হাতে পুরো টাকাটা তুলি দিল তানিয়া।
কিছুদিন পরে হঠাৎ করে স্বামিটা ওর মারা গেল। তানিয়া গিয়ে উঠল ঢাকায়। ছেলের বাসায় ঢুকে তো চোখ তার ছানাবড়া। কি সুন্দর ফ্ল্যাট! ঝক ঝকে তক তকে দামী ফার্নিচার, পরিপাটি করে সাজানো গুছানো সবকিছু।
তানিয়ার জায়গা হল রান্না ঘরের চেয়ে ছোট একটা রুমে, যেখানে একটা মাত্র জানালা, একজন মানুষ কোন রকমে থাকার মত একটা চৌকি। ছেলে, ছেলে বৌয়ের খাওয়া হলে কাজের মেয়েটা ওকে খাবার দেয়।
দিন পনের এভাবে থাকার পরেও দেখে, ছেলে বৌয়ের মুখ অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর হচ্ছে। আর সইতে পারে না তানিয়া। মনটা ওর পুরোই ভেঙ্গে গেছে। এতকাল পরে কেন যেন গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করে। যে গ্রামকে এক সময় ঘেন্না করত তানিয়া, আজ সেখানেই যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল সে। প্রথমে গেল বড় বোনের বাড়ি, এখানে কদিন বেড়িয়ে পরে মেঝ বোনের বাড়ি যাবে।
ওর বড় বোনের দুই মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে, ছেলে রাসেল বিয়ে করেছে, ফুট ফুটে মিষ্টি বৌ, তাদের একটা বাচ্চাও হয়েছে, এদের নিয়েই ওর বোনের সংসার, ভগ্নিপতি মারা গেছে আরো কয়েক বছর আগে। ওকে পেয়ে বাড়ির সবাই খুব খুশি হল।
বিকেল বেলা রাসেল, দোকানের কর্মচারীকে দিয়ে বাজার পাঠিয়েছে। হরেক রকম ফল, মাছ, মুরগি, শাক সব্জী। এতদিন পরে খালা এসেছে তাই বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব ভাব।
রাসেল বাজার থেকে ফিরল রাত নয়টার দিকে, বৌ ততক্ষনে রান্না সেরে, বাচ্চাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। দুই বোন বসে গল্প করছে, তানিয়ার বোনের মুখে চোখে প্রশান্তির ছায়া। ছেলে আর ছেলে বৌয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সে।
রাসেল এসেই বলল খালা, তোমাকে কিন্তু এবার সহজে যেতে দেব না। তন্ময় তোমার বড় লোক ছেলে, তার মত যত্ন হয়তো আমি করতে পারব না, তোমার এখানে একটু কষ্টই হবে, কিন্তু, তুমি থাকলে মা খুব ভাল থাকবে খালা। মা তোমার কথা অনেক বলে।
ঘরের মেঝেতে সপ বিছিয়ে বৌ খাবার গুছিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে ডায়েনিং টেবিল আছে কিন্তু রাসেলের মা ওখানে খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না তাই এই ব্যাবস্থা। রাসেল বলল, মা আর খালাকে আগে খাবার দাও, আমরা পরে খাব। দুই জন পাশে বসে অনেক যত্ন করে খাওয়াল ওদের।
রাসেল খেতে বসেছে, বৌ বলল, তুমি শুরু কর, আমি মায়ের ওষুধ দিয়ে আসি। ওষুধ দিতে গিয়ে মনে পড়ল, মায়ের একটা ওষুধ তো নাই। স্বামীকে বলল, রাগ করোনা, মায়ের একটা ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, আমি সেই দুপুর থেকে ভাবছি, তোমায় ফোন দিয়ে বলব, পরে খালা এলেন, আমার আর মনে নেই গো।
রাসেল কেবল প্লেটে ভাত তুলে নিয়েছিল, খাবার রেখে উঠে বলল, ঠিক আছে, আমি মার ওষুধ নিয়ে আসি, তার পরে খাব, তুমি একটু অপেক্ষা কর।
মা, খালা দুইজনই বাধা দিল, বলল, সামনের ভাত রেখে ওষুধ আনতে যাওয়া লাগবে না। এক রাত ওষুধ না খেলেও চলবে।
রাসেল কাপড় পরতে পরতে বলল,ভুলে গেছ মা? কতবার আমার জন্য তুমি অর্ধেক খাবার প্লেটে রেখে উঠে গেছ, কতবার তোমার খাওয়াই হয় নি। পরে গেলে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। বলতে বলতে বাইকটা নিয়ে বের হয়ে গেল সে।
রাতে মায়ের মশারী নিজের হাতে টানিয়ে, ভাল করে গুঁজে দিয়ে, তবে রাসেল ঘুমোতে গেল।
পরদিন সকালে বাজারে যাওয়ার সময় রাসেলের ছোট্ট মেয়ে নিতু এসে বলছে, দিদু তুমি কি খাবা? তুমি তো আঙ্গুর খাও না।
জিগ্যেস করার কারণ হল, ওর আঙ্গুর খেতে ইচ্ছে করছে, আর দাদি সেটা খায় না। কিন্তু, বাবা কখনও ওর একার জন্য কিছু আনে না। তাই দাদি কি খাবে সেটা শুনে, বাবাকে দুজনের খাবার একসাথে আনতে বলবে।
সকালে খাওয়া দাওয়ার পর, তানিয়ার বোন বাক্স খুলে, এক গাদা শাড়ি বের করল, সবই নতুন,বলল, দেখ পাগোলের কাজ! বৌ, শাশুড়ি যার জন্য যখন শাড়ি কিনবে, সে সাথে আমার জন্য ওর একটা কিনতেই হবে। কত মানা করি, কার কথা কে শোনে! এত দামি দামি শাড়ি দিয়ে আমি কি করব বলতো? এখান থেক তুই কয়েকটা বেছে রাখ, যাওয়ার সময় নিয়ে যাবি।
না বুবু, রাসেল তোমায় কিনে দিয়েছে, তুমি প’র, না হলে ও কষ্ট পাবে।
সে কি রে? মা আর খালা কি দুই নাকি? আমি পরলে যা, তুই পরলেও তাই। নে কয়েকটা বুবু।
বোনের হাত এড়াতে না পেরে একটা শাড়ি নিল তানিয়া।
ওর বোন হাতের, কানের, গলার হাল্কা একটু একটু গয়না বের করে ওর হাতে দিয়ে বলল, দেখ,রাসেলের বিয়ের সময় বৌয়ের গয়নার সাথে এগুলো আমায় বানিয়ে দিয়েছে। সব সময় পরে থাকতে বলে, বলতো আমার লজ্জা করেনা! আগে কোনদিন পরি নি, আর এখন এই বুড়ো বয়সে!
তানিয়া গয়নাটুকু ওর বোন কে পরিয়ে দিতে দিতে বলল, এই আমি তোমায় পরিয়ে দিলাম বুবু, আর খুল না। দেখ তো কি সুন্দর লাগছে তোমায়!
তানিয়া রে, আমি নামাজ পড়তে গেলে , আমার দুই চোখ পানিতে ভরে যায়। প্রাণ ভরা দোয়া আসে আমার রাসেল আর বৌয়ের জন্য। বুঝি না কি পুণ্য ফলে এমন সন্তান পেয়েছি।
বুবু কিছু বুঝার আগেই তানিয়া মুছে ফেলল চোখের পানি। কাল রাত থেকেই এ বাড়ির সকল কিছু তার বেদনার সমুদ্রে বড় বেশি ঢেউ তুলছে, আর সইতে পারছে না সে। এত যত্ন, এত ভালোবাসা সব তাকে তৃপ্তি না দিয়ে, কষ্টই বাড়াচ্ছে।
পরদিন সকলের হাজার আপত্তি সত্ত্বেও তানিয়া বাসায় ফিরে গেল। মেঝ বোনের বাড়ি আর বেড়াল না। এত দিন পরে আজ প্রথম তার স্বামীর এই ভাঙ্গা ঘরটা্কে বড় আপন, বড় নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে। দু চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে আর ভেবে চলেছে তানিয়া, কি করে বুবু রাসেল কে অমন মানুষ করে গড়ে তুলেছে, প্রথম থেকে মনে করার চেষ্টা করছে সে।
রাসেল ওই গ্রামের স্কুলেই পড়ত। খুব যখন ছোট, টু অথবা থ্রীতে পড়ে তখন থেকেই বুবু ওকে দিয়ে মানুষের কাজ করাত। দাদার ওষুধ আন, দাদীর পথ্য আন, অমুকের বাড়িতে খাবার দিয়ে এস, তমুক কেমন আছে দেখে এস ইত্যাদি।
একবার রাসেল যখন ক্লাশ নাইনে পড়ে, ফাইনাল পরীক্ষা সামনে, লেখা-পড়ার খুব চাপ। রাসেলের ফুফুর বাড়ি থেকে খবর এল, ফুফুর খুব দরকার, পাঁচ হাজার টাকা তখনি পাঠাতে হবে। দুলাভাই বাড়িতে ছিল না, বুবুর ঘরেও অত টাকা নাই, বুবু পাশের বাড়ি থেকে বাকি টাকা ধার করে এনে বলল, রাসেল যাও, টাকা দিয়ে এস।
পরীক্ষার পড়ার কথা বলে রাসেল যেতে চাইল না। বুবু ক্ষেপে গিয়ে বলল, কি কথা বললি তুই? যে ফুফু তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে, তার প্রয়োজনের চেয়ে তোর লেখা-পড়া বড় হয়ে গেল! চাইনে তোর অমন বিদ্যে।
পরে বুঝিয়ে বলল, বাবা শোন, মানুষের উপকারের চেয়ে বড় কাজ আর নাই। দেখ অন্যের কথা যে ভাবে, আল্লাহ নিজে তার কথা ভাবেন। তুমি যাও বাবা, দেখ তুমি দিন রাত মিলে যে পড়াটা করতে, শুধু রাতেই আল্লাহর রহমতে তোমার সেই পড়াটা হয়ে যাবে।
আমার খুব হাসি পাচ্ছিল, আল্লাহ ওর ছেলের পড়া করে দেবে! আল্লাহর তো আর কাজ নাই!হায়রে অশিক্ষিত মা! নিজেরা যেমন অশিক্ষিত ছেলেটাকেও তেমন করে রাখবে।
রাসেলও এম, এ, পাস করেছে, যদিও তন্ময়ের মত অত ভাল রেজাল্ট না। ভাল একটা চাকরিও পেয়েছিল, কিন্তু ওর মা বাড়ি ছেড়ে যাবে না, আর রাসেল মাকে একা বাড়িতে রাখবে না, অগত্যা কি আর করা, চাকরিতে জয়েন না করে, রাসেল ওই মফস্বলের বাজারে ব্যবসা শুরু করল।
বুঝতে পারল তানিয়া নিজের ভুল। ছেলেকে সে লেখা-পড়া শিখিয়েছে, কিভাবে বড় লোক হওয়া যায় তা শিখিয়েছে,কিন্তু, কিভাবে বড় মানুষ হওয়া যায় তাতো সে শেখায় নি। শেখায় নি কারো প্রতি কোন দায়িত্ব, কর্তব্য।
কখনও ছেলেকে সে অন্যের কথা ভাবার সুযোগ দেয় নি, বরং কারো বিপদে-আপদে তন্ময় যদি এগিয়ে যেতে চেয়েছে, ও ধমক দিয়ে বলেছে, পড়তে বস, অন্যের কথা ভাবতে হবে না। কি ভাবে নিজে ভাল থাকা যায় সেই চেষ্টা কর।
তন্ময়ের আর দোষ কি! নিজে ভাল থাকা তো সে ভাল মতই শিখেছে। তাদের স্বামী-স্ত্রীর সংসারে মা তো অন্যই।
আসলে তানিয়ার এক দিকে সামাজিক স্ট্যাটাস, অর্থনৈতিক স্বচ্ছ্বলতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর অন্যদিকে তার অভাব। তার কাছে মনে হত এ দুটোতেই পৃথিবীর সকল সার্থকতা, সকল সুখ। এর বাইরেও যে কিছু আছে, এটা সে ভাবার বা বুঝার সুযোগ পায় নি।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে তন্ময়ের উপর থেকে তার সব রাগ মুছে গেল, অনুতাপ জন্মাল তার মনে। আহারে! স্বামিকে সে কত তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করেছে, কত আঘাত দিয়ে কথা বলেছে!
অঝোর ধারায় ঝরছে, দুচোখের জল। স্বামীর ছবিটাকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে, বার বার বলছে, আমায় ক্ষমা কর, ক্ষমা কর আমায়। তন্ময় কে তো আমি তোমার কোন কাজেও কোন দিন সাহায্য করতে দেই নি।
অসুস্থ শরীর নিয়ে ক্লান্ত তুমি, ওকে দিয়ে যেদিন বাজার করাতে বললে, তন্ময় তখন পড়া থেকে উঠে টি, ভি দেখছে। সে পড়া থেকে উঠেছে, আবার একটু পরে পড়তে বসবে, তার রেস্ট দরকার, এই কথা ভেবে আমি তন্ময় কে যেতে দিলাম না।
সব দোষ আমার, সব দোষ আমার। হায় আল্লাহ! আমি আল্লাহর কাছেই বা কি জবাব দেব!
তানিয়া শুনতে পেল, মা, মা করে কে যেন ডাকছে। পাশ ফিরে শুতে শুতে ভাবল মনের ভুল। আবার ডাক, এবার যুগল কন্ঠে। উঠে বসল তানিয়া। তাই তো তন্ময় আর তন্ময়ের বৌয়ের কন্ঠ।
আলো জ্বেলে বের হয়ে দেখে সত্যি ওরা দুজন। ছেলে- ছেলের বৌকে এক সাথে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ঘরে ঢুকল। বলল, তুরা? এত রাতে কোত্থেকে এলি? আসবি যে, আমায় একটু ফোন দিয়ে জানাবি না! ঘরে তো বাজারও নাই, তোদের এখন কি খাওয়াই বল তো?
ওরা বলল, তোমার কিছু ভাবতে হবে না মা, তুমি শান্ত হয়ে বস তো। আমরা রাসেলদের ওখানে গিয়েছিলাম, ওদের বাড়ি দুই দিন বেড়িয়ে এলাম।
আমি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসেছি মা, এত রাতে রান্না করা কঠিন, তাছাড়া তুমি হোটেলের খাবার পছন্দ কর তাই। খুলে দেখ মা, তোমার পছন্দের সব খাবার। বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে, মনে মনে বলে তানিয়া, আমার পছন্দ অপছন্দ কি আর তোর মনে আছে বাবা!
মুখ, হাত ধুয়ে এসে তিন জনে একসাথে খেতে বসল। খেতে খেতে তন্ময় বলল, মা, আমরা সকালেই চলে যাব, তোমাকেও আমাদের সাথে নিয়ে যাব।
তানিয়া বলল, সে কি কথা বাবা? কালই যাবি? একদিনও ছুটি নাই? আমিতো তোদের সাথে যেতে পারব না, আমি এখানেই ভাল আছি বাবা।
আমি জানি মা, এ তোমার অভিমানের কথা, তুমি ঢাকায় থাকতে পছন্দ কর। আমাদের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে তুমি আমাদের সাথে যেতে চাইছ না।
না, তা কেন বাবা? আসলে বাইরের একজন মানুষ থাকলে, যে কোন সংসারে একটু সমস্যা তো হয়ই।
তুমি যদি আমার বাইরের হও, তাহলে আমার ঘরের মানুষ কে মা? আমায় আর লজ্জা দিও না মা, রাসেল আমার চোখ খুলে দিয়েছে। কাল তোমায় আমি নিয়েই যাব।
দু চোখের কোল বেয়ে তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে খাবারের প্লেটে, ঝাঁপসা চোখে প্লেটের খাবার শুধু নাড়া চাড়া করছে, মুখে তুলতে পারছে না তানিয়া।
ফজরের আজান শুনে ধড় মড় করে উঠে বসল তানিয়া। কতক্ষন কিছু বুঝতে পারল না , মনে পড়ল, রাতে না খেয়েই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। ক্লান্ত, অবসন্ন দেহটাকে অনেক কষ্টে তুলে নিয়ে ওযু করে এসে নামাজে দাঁড়াল তানিয়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




