somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন স্বার্থে পোষ্ট-6 ঃ অ্যান্টিবায়োটিক

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যবহারে চাই সচেতনতা
ডা. সৈয়দ মুহিব্বুল আবরার জাবের

অ্যান্টিবায়োটিক কি?

অ্যান্টিবায়োটিক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মানব শরীরের কোষসমূহকে অক্ষত রেখে শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহকে ধ্বংস বা তাদের বংশবৃদ্ধির গতিকে নষ্ট করে দেবার মাধ্যমে কাজ করে।

একটি আদর্শ অ্যান্টিবায়োটিকের কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত

* এটির জীবাণুবিরোধী কাজের বিস্তৃতি ব্যাপক হবে।

* জীবাণুর বংশবৃদ্ধির গতি কমানোর চেয়ে জীবাণু বিধ্বংসী ক্ষমতা বেশি থাকবে।

* শরীরে এটির শোষণ, বিতরণ এবং স্বাভাবিকভাবে বর্জ্য রূপে নির্গমিত হবে।

* এর জীবাণুধ্বংসী ক্ষমতা শরীরের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পদার্থ, প্লাজমা প্রোটিন বা এনজাইম দ্বারা নষ্ট হবে না।

অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার

* ব্যাকটেরিয়ার উপর যথাযথ তথ্যের উপর নির্ভর করে ওই ব্যাকটেরিয়া বিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।

* একের অধিক অ্যান্টিবায়োটিক সেখানেই ব্যবহার করা উচিত যেখানে একটি অ্যান্টিবায়োটিক অপ্রতুল। অথবা যেখানে একটি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি জীবাণুর প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে।

* ব্যাপক বিস্তৃতির কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচারে ব্যবহার অনুচিত।

* যথাযথ রোগ নির্ণয়ের পর অ্যান্টিবায়োটিক উপযুক্ত মাত্রায় (উঙঝঊ), নির্ধারিত সময় বিরতিতে (ওঘঞঊজঠঅখ) এবং উপযুক্ত সময় পর্যন্ত (উটজঅঞওঙঘ) ব্যবহার করা উচিত।

* যে-সব ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা যায়নি, সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ব্যাপক বিস্তৃতির বা একের অধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

*রোগীর অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত। যেমন: গর্ভাবস্থা, কিডনি ফেইলর (কওউঘঊণ ঋঅওখটজঊ).

অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপব্যবহার

যেখানে রোগের কারণ ব্যাকটেরিয়া (ইঅঈঞঊজওঅ) নয়। যেমন ভাইরাসজনিত জ্বর (ঠওজঅখ ঋঊঠঊজ), মিসেল্স (হাম) চিকেন পক্স, মাম্পস ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অবাধে করা অনুচিত ও উদ্বেগজনক।

* অপরিমিত মাত্রা (উঙঝঊ), দীর্ঘ বা অল্প সময়ের বিরতি (ওঘঞঊজঠঅখ), এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করা।

* অনেকে একটু পেট খারাপ, জ্বর-এর জন্য ফার্মেসী থেকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় অষুধ সেবন করেন এর ব্যবহার বিধি না জেনেই। পরবর্তীতে রোগী ওই সব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ফল নাও পেতে পারেন। কারণ অপরিমিত মাত্রা বা নির্বিচারে সেবনের ফলে ব্যাকটেরিয়া ওই সব অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একে ইঅঈঞঊজওঅখ জঊঝওঝঞঅঘঈঊ বলা হয়। তাই খুবই সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।

কি কি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা বিফলে যেতে পারে

* কোন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যদি উপযুক্ত/যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা হয়।

* নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে যদি ব্যাকটেরিয়া ওই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আগেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

* অপর্যাপ্ত মাত্রা (উঙঝঊ), বা দুটি মাত্রা গ্রহণের সময় বেশি দীর্ঘ বা অল্প হয়, বা ব্যবহার কাল (উটজঅঞওঙঘ) অপর্যাপ্ত হয়। যেমন: কোন অ্যান্টিবায়োটিক যদি 500 মি. গ্রাম. করে 8 ঘণ্টা পর পর 7 দিন খেতে হয়, কিন্তু কেউ যদি মাত্রা নির্দিষ্ট সময় পর পর, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন।

* কিছু কিছু শারীরিক অসুখ যেমন: ডায়াবেটিস (উওঅইঊঞওঝ) ব্লাড ক্যান্সার, এইড্স্ বা অ্যান্টিক্যান্সার জাতীয় অষুধ সেবনে অ্যান্টিবায়োটিকের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।

* যদি শরীরে সংক্রমিত ঋঙজঊওএঘ ইঙউণ,পূঁজ (চটঝ) বের করে দেয়া না হয়।

পরিশেষে: এটা আমরা জানতে পারলাম কেন, কিভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা উচিত। মানুষ যুগ যুগ ধরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মানবজাতির ঊষালগ্ন থেকে মানুষের এই নিরন্তর সংগ্রাম। অ্যান্টিবায়োটিক বিজ্ঞানের এক অন্যন্য আবিষ্কার। মানবকল্যাণে এর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। আমরা যেন এর সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারি সেজন্য একজন চিকিৎসককে অ্যান্টিবায়োটিক-এর চজঊঝঈজওচঞওঙঘ-এর পাশাপাশি এর ব্যবহার বিধি রোগীদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। রোগীদেরও এই অষুধটি গ্রহণে যথেষ্ট সচেতন হবার প্রয়োজন রয়েছে। ধীরে ধীরে অ্যান্টিবায়োটিক জঊঝওঝঞঅঘঈঊ বেড়েই চলেছে যা অত্যন্ত আশংকাজনক। নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে আমরা এই যুগান্তকারী অষুধটিকে নির্বিষ করে ফেলছি ব্যাকটেরিয়ার জন্য, যা ভয়াবহ অবস্থা বয়ে আনবে আমাদের জন্য। হাতুড়ে ডাক্তারদের মাধ্যমে এই অষুধটির অপব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রোগের উপসর্গ কমে এলে অনেক শিক্ষিত লোকও অষুধটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে চান না_অন্যদের কথাতো বলাই বাহুল্য। আসুন, আমরা সচেতনতার সাথে এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে আমাদের নিজেদেরই রক্ষা করি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×