somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাভার আমাকে ছুতে পারেনি!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাভারে রানা প্লাজা ধসে অন্তত ২৩০ জন মানুষ মৃতু্বরণ করেছেন। আহত হয়েছেন দেড় সহস্রাধিক মানুষ।উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। প্রতিমূর্হুতেই বাড়ছে মৃত মানুষের সংখ্যা। দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি এই দূর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করছেন। কিন্তু তার পরেও কি অদ্ভুত ব্যাপার দেখূন এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আমার মনকে ছুতে পারেনি। শুধু আমাকে নয় আমার আশপাশে থাকা অনেক মানুষকেই জিজ্ঞেস করে পেয়েছি একই রকম উত্তর। তাদেরও এই ট্রাজিটি কোনভাবেই ছুতে পারেনি। দেশের এই ক্রান্ত্রিকালে, জাতীয় বিপর্যয় ও ধ্বংসের মহাযজ্ঞ দেখেও আমাকে স্পর্ষ করতে না পারার কথা শুনে অনেকেই হয়তো আমার উপর ভীষণ চটেছেন। কিন্তু কি করবো বলেন? মনটাকে তো আর আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। বারবার খারাপ লাগানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না।
কেন জানেন? কারণ যখন দেখি একটির পর একটি দূর্ঘটনা আগের সব নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে যায়। কয়েকটি পত্রিকাতে আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন গত ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ট্রাজেডির তথ্য এবং এতে হতাহতের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আমিও দেখেছি এবং এই সংবাদ গুলো থেকে একটি তথ্যই জানতে পেরেছি, ওরা শ্রমিক মানুষ। ওরা নিচু শ্রেণীর মানুষ। ওদের জীবনের কোন দাম নেই। ওদের জন্যই হয়েছে পূজিপতিদের জন্য নিজের জীবন দিয়ে অর্থ উপার্জন করবে। আর বিনিময়ে তারা পাবে অত্যাচার, নির্যাতন, লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা। ২৩ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রমিক কারখানায় সংঘটিত বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় এক বছর পর পর কিংবা কয়েক বছর পর পর একটি করে দুর্ঘটনা (সবার মতে দুর্ঘটনা। তবে আমার মতে হত্যাকান্ড) ঘটে। সবাই শোক প্রকাশ করে। রাজনৈতিক দলগুলো এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে। গঠিত হয় দেশের চিরাচরিত নিয়ম মেনে একটি দুটি কিংবা একাধিক তদন্ত কমিটি। আহত ও নিহতদের জন্য দেয়া হয় যতসমামান্য ক্ষতিপূরণ (একজনের মৃতু্র জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। যেন একজন মানুষের জীবনের মূল্য সেই কয়টাকা মাত্র) পেরিয়ে যায় কিছু দিন। সবাই ভুলে যায় সেই ভয়াবহ ঘটনা। সরকারও তৎপর থাকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে। যেন যারা মারা গেছেন তাদের দায় দায়িত্ব সরকারের নয়। তারা এই দেশের কেউ নয়। বরং তারা মারা গিয়ে দেশের সরকারকে রেহায় দিয়েছেন। আর ঘটনার পেছনে যারা থাকেন সরকার তাদের আড়াল করতেই সব সময় ব্যস্ত থাকেন। কখনও কথনও তা বিরোধী দলের উপর চাপাতে চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন না বরং চাপিয়ে দেন। যেন সরকার ভাবে বাংলাদেশের মানুষ এখনও শিশু আছে। তারা দুধ খায়। কিছুই বুঝে না। মাঝে মাঝে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের মুখেও পাগলের মতো অনেক কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশি হিসেবে আমি নিজেকে সত্যিই দুর্ভাগা মনে করি। কারণ যে দেশের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা ভবনের পিলার ধরে নাড়াচাড়ার কারণে ভবন ভেঙ্গে পড়েছে। আর সেই কথা বারবার মিডিয়ার সামনে বলা হয়। তখন দেশে ও দেশের বাইরে সমালোচনা দেখে মনে হয় আমি এখনই এই দেশ ছেড়ে চলে যায়। আর একই সাথে যখন ধ্বংস স্তুপ থেকে মানুষ মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কেউ মারা যাচ্ছেন কেউ বা বেচে যাচ্ছেন। আর তখনই বঙ্গভবনে বর্ণিল অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। যেন এই অনুষ্ঠানের আর সুযোগ আসবে না। হতেও পারে। কারণ সাভারে যারা মারা যাচ্ছেন তারা তো মানুষ না। এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেলে ক্ষমতাসীনদের কিছুই আসে যায় না। কারণ তারা তো জনগণের জন্য রাজনীতি করেন না। তারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন। তাই সভাবতই আগে ক্ষমতা তার পরে বাকি সব কিছু। সাভারের বিপর্যয়ের জন্য শপথ অনুষ্ঠানে পেছালে যদি পরবর্তীতে আর ক্ষমতার সুযোগ না আসে। তাই সব কিছুর আগে ক্ষমতা। আসলে এটি শুধু এবারের ঘটনা না বরং এটি সব সময়েরই ঘটনা। ক্ষমতাসীনরা কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে। আর ক্ষমতায় গেলে তাদের লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সংসদ আর সচিবালয়, ন্যাম ভবন ছাড়া অন্য কোথাও আর মানুষ থাকে না। তারা অন্যদের মানুষ মনে করেন না। তারা শ্রমিক। তাদের কাজ হলো পূজিপতিদের জন্য পূজি তৈরি করা। আর এটি তারা জীবন দিয়ে করুক আর যেভাবেই করুক। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের সকল ঘটনা।
ও অনেক কথা বলতে গিয়ে ভুলে গেছি যেটি আপনাদের বলতে চেয়েছি কেন আমাকে এই ঘটনা স্পর্ষ করেনি। কারণ আমি যখন দেখি একই ঘটনা বার বার ঘটছে। কিন্তু ঘটনার পেছনে দায়ি কাওকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। সাম্প্রতিক যে কোন ঘটনাই যদি উল্লেখ করি। চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারের পাইল ভেঙে সাধারণ মানুষের মৃতু্য, তাজরিন ফ্যাশনে শ্রমিকদের পুড়িয়ে মরা, কিংবা ২০০৫ সালে ভবন ধসে শতাধিক মানুষের মৃতূ, পুলিশের গুলিতে একই দিনে শতাধিক মানুষসহ প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের মৃতু্য। একের পর এক মানুষ গুম হচ্ছে। তখন কিভাবে এধরণের ঘটনা আমাকে স্পর্ষ করতে পারে বলতে পারেন। পারে না কারণ আমি প্রতিনিয়ত দেখছি মানুষ মরছে। মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে কিন্তু এর কোন বিচার কোন শাস্তি হচ্ছে না। বরং যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা পুরস্কৃত হচ্ছেন সরকার তাদের পদায়ন করছেন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। তাই আমার হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে। আমিও এসব ঘটনাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমি মনে করেছি। সরকার ও ক্ষমতাসীনরা ছাড়া এ দেশে কেউ মানুষ নয়। এদের মৃতু্যতে কারও কিছু আসে যায় না। দেশের সব মানুষ মৃতু্যবরণ করলেও সরকার তাদের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পেছাতে যাবে না। কারণ সেটি তাদের ক্ষমতা আর সাধারণ মানুষ (আমার মতে) যাদের কে তার মানুষ মনে করে না তারা মরলো না কি হলো তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×