somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীন পুরনো একটি লেখা

১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদায় বেলায় মোদি সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুনে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন। একজন বক্তা হিসেবে যদি মোদিকে বিবেচনা করি তখন আমিও মুগ্ধ হয়েছি। কারণ তিনি এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা এতোটা সাবলিল ছিল্ এবং প্রায় সব বিষয়ই তিনি বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি একজন বাংলাদেশী হিসেবে যখন তার বক্তব্য বিবেচনা করি তখন মুগ্ধতার পরিবরতে আমাকে হতাশ করে। কারণ তার বক্তব্যটি ভারতীয় ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তিনি অত্যন্ত উচু মানের বক্তব্য দিয়েছেন। অনেকে তার এই বক্তব্যকে আব্রাহাম লিংকনের বক্তব্যের সাথেও তুলনা করেছেন। এমনকি তার বক্তব্যকে আরবীয় বাগ্মিতার সাথে তুলনা করলেও বোধ হয় ভুল হবে না। যাদের সামনে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন তাদের মন জয় করে নেয়ার জন্য সকল আয়োজনই তিনি সম্পন্ন করেছেন। বাংলা ভাষী বাঙালিরা বাংলা ভাষার প্রতি দূর্বল এটা তিনি ভালো করেই জানেন। এজন্য বাংলায় দু’চারটি কথাও বলেছেন। বলেছেন জাতীয় সংগীত ও জীবনানন্দ দাসের কবিতাও। এ সব কিছুই ঠিক আছে। তবে মোদি সাহেবের এই বক্তব্যে আমি হতাশ হওয়ার অনেকগুলো কারণ খুজে পেয়েছি। আর তখন মনে হয় মোদির যে বক্তব্য তা বাংলাদেশিদের হতাশায় কিছুটা প্রলেপ দেয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার ভুমিকা পালন করেছে।
এক. পুরো সফর শেষে আমি যখন হিসেবে করতে চাই, এই সফর থেকে আমরা বাংলাদেশ কি পেলাম। নিশ্চয় ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তাকারী ও পুরনো বন্ধু হিসেবে তাদের আরও কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছি। বন্ধুতের বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। এক বন্ধুত্ব ও একরাশ আশার বাণী ছাড়া আর কিছু কি মোদি সাহেব আমাদের দিয়েছেন? যদিও আমার এই চিন্তার কথা দুরদর্শী মোদি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। এজন্য তিনি তার বক্তব্যেই বলে দিয়েছেন, কি পেলাম কি পেলাম না কিংবা লাভ-ক্ষতির হিসাব অনেকেই করবে। কিন্তু এটা এই হিসেবের সময় নয়। আমিও জানি এটা লাভ-ক্ষতি হিসেবের সময় নয়। কিন্তু যখন দেখি মোদি সাহেব তার এই কথাতে কেবল বাংলাদেশীদের জন্য বলেছেন ভারতের জন্য নয়, তখন তা মানতে খুব কষ্ট হয়। আর এই সফরে ভারতের খাতায় রাশিরাশি অর্জন দেখতে পেলেও বাংলাদেশের খাতায় দেখতে পায় শূণ্য।
দুই.মোদি সাহেবের এই সফরে ভারত ট্রানজিট পেয়েছে, সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে তার সেভেন সিস্টার পরিচালনার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। গত ৬৮ বছরে অন্য সরকারগুলো যা করতে পারেনি তিনি এক সফরেই তা করতে পেরেছেন। ভারতের সফলতার খাতায় এমন আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। যা বাংলাদেশের খাতায় তাকালে হতাশ না হয়ে পারা যায় না।
অনেকেই হয়তো সীমান্ত চুক্তির কথা উল্লেখ করবেন। আমি জানি এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।কারণ ওই ছিটমহল বাসীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার মধ্যে ছিল। নিজেদের আত্ম পরিচয় ছিল না। এর মাধ্যমে তাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘব হয়েছে । তবে এটা শুধু কি বাংলাদেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নাকি ভারতের জন্যও ছিল? নিশ্চয় আমাদের মতো তাদেরও প্রয়োজন ছিল।
কেবল এই সফর নয়, এর আগেও অনেক দিন ধরে ভারতের সাথে যে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সেটি হলো তিস্তার পানি নিয়ে। আমরা জানি এই সফরেও এই চুক্তি হবে না। হয়ওনি। যদিও মোদি সাহেব খুব চমৎকার করে কথা বলেছেন আর আমরা হাততালি বাজিয়েছি। তিস্তার পানির বিষটির কথা তিনি মানবিক বলেছেন। মোদি বলেছেন, পানি, বাতাস আর জল—এগুলোর জন্য কোনো ভিসার দরকার নেই। পানি রাজনীতির বিষয় হতে পারে না। এগুলোর আলোচনা মানবিক মূল্যে দিয়ে করতে হবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস হারালে চলবে না। এ সমস্যার সমাধানে ভারতের চেষ্টা চলবে বলে জানান তিনি। আমার প্রশ্ন হলো যদি পানির ভিসার প্রয়োজন না হয় তাহলে সেটিকে কেন ভারত আটকে রেখেছে। আর কেনই এই মানবিক বিষয়টির জন্য এতোদিন ধরে আলোচনা দেন-দরবার করতে হবে। আর কত কিছু দিলে তারা আমাদের এই মানবিক বিষয়টি বুঝতে পারবেন? নাকি গঙ্গা বেরেজের মতো আরও একটি বাধ তৈরি করে পদ্মার মতো বালুচর বানাতে চান তিনি। যদিও মোদি সাহেব পদ্মাতে নৌকায় ঘুরতে চেয়েছেন। আমি মোদি সাহেবকে আমন্ত্রণ জানাবো দয়া করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আপনি পদ্মায় ঘুরতে যাবেন। তাহলে আপনি দেখতে পাবেন আপনারা মানবিক মূল্যবোধের কতটুকু স্বীকার করেছেন। টিপাইমুখ বাধও নিশ্চয় আপনারা মানবিক মূল্যবোধ থেকেই দিচ্ছে। আপনারা সত্তরের দশকে যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, বাংলাদেশের আশাপাশে যে নদীগুলো আছে তার গতিপথ পরিববর্তন করে ভারতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করার তাও নিশ্চয় মানবিক মূল্যবোধ থেকেই নিয়েছেন। কারণ বাংলাদেশে প্রবেশে তো বাধার প্রশ্ন আসে গতিপথ পরিবর্তন করে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করলে তাতে তো আর ভিসার প্রশ্ন আসে না। প্রশ্ন আসেনা মানবিকতার। মোদি সাহেব আমাদের ধৈয্য ধরতে বললেন, আমি বলবো মোদি সাহেব আপনি কেন ধৈয্য ধরতে পারলেন না,যখন তিস্তা চুক্তি হবে তখন ট্রানজিট পাবেন। আপনি বলেছেন, ত্রিপুরায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার পর বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে ত্রিপুরায় জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যশস্য পরিবহনে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। আপনি বলেছেন, সংকটকালে মানবিক মূল্যবোধই যে সব কিছু ছাপিয়ে যায়, বাংলাদেশের এ সহযোগিতা তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ওই সময় বাংলাদেশ হয়ে খাদ্যশস্য পাঠানো না হলে ত্রিপুরায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিত। আপনি কি আপনাদের নিজেদের মূল্যবোধকে কিছুটা জাগ্রত করতে পারেন, আপনি কি দেখেছেন তিস্তার পানি না থাকার কারণে তিস্তা পারের হাজার হাজার মানুষ কি মানবেতর জীবন যাপন করছে। যারা এই নদীর উপর জীবিকা নির্বাহ করতো। যাদের ফসল হতো এই তিস্তার পানিতে। আপনি দেখেছেন আপনাদের ছেড়ে দেয়া উজানের পানির কারণে কাচা ধান কেটে নিতে বাধ্য হয়েছে কুড়িগ্রামের কৃষকরা। জানি এসময় আপনাদের মানবিকতা জাগ্রত হবে না। কারণ আপনারা নিতে এসেছিলেন, দিতে নয়।
তিন. স্থল সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু কোন সমাধানের কথা বলেননি। বরং সীমান্তের অন্যরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। অর্থাৎ ভারতের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চেয়েছেন। আমরাও চাই আমাদের সীমান্ত ভিন্নকাজে যেন ব্যবহৃত না হয়। মোদি সাহেব সীমান্ত সমস্যা দুঃখজনক উল্বলেখ করে বলেছেন কখনো কখনো সীমান্তে এমন কিছু ঘটনা হয়, যা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। এটি সবার জন্য দুঃখের বিষয়। তিনি বলেন, গুলি যেখান থেকে চলুক। এতে গরিব মানুষ মারা যায়। যারা আমাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে চায়, তারা যাতে সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অথচ তার অবস্থান কালেই সীমান্ত হত্যা হয়েছে। ফেলানী হত্যার কোন বিচার্ এখনো বাংলার মানুষ পায় নি। ভারত জমি নিয়ে কোন যুদ্ধ করেনি বলে মোদি উল্লেখ করেছেন, আপনার এই কথার সাথে আমি এটিও বলতে চায়, আমি সীমান্ত এলাকার মানুষ। তাই ছোট বেলা থেকেই দেখেছি আপনার কাটা তারের পাশে বাংলাদেশি কৃষকরা তাদের জমিতে চাষ করতে পারে না। সব সময় আতঙ্কে থাকে কখন আপনার বিএসএফেরগুলি তাদের বুকে বৃদ্ধ করে। আমার দেশের গরু ভুলেও যদি আপনার কাটাতারের সীমানার কাছাকাছি ঘেষে আপনার বিএসএফ তা নিয়ে চলে যায়। এসমস্যার কোন সমাধান তো আপনি দিলেন না। কই আপনার কৃষকরা যখন বাংলাদেশে এসে চাষ করে তখন তো বিজিবি তাদের বুকে গুলি চালায় না। যদিও সেই সাহস তাদের নেই।
চার. আপনি ‍ৃণ দেয়ার কথা বলেছেন, আমরা শুনেছি আপনারা আমাদের অর্থ দিবেন আর সেই অর্থতে আবার আপনাদেরই চাকরি হবে। মাঝ খানে হয়তো ভূখন্ডটুকু ব্যবহার হবে আমাদের। বিদ্যুৎ ৫০০ মেগাওয়াট থেকে ১০০০ মেগাওয়াট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এটা নিশ্চয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই আপনি দিবেন। এর বিনিময়ে আমরা আপনাকে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করবো।
পাঁচ.সাকিব আল হাসান, সালমা, ক্রিকেট প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়নের কথা তিনি বলেছেন, এগুলো সবই হয়েছে এ দেশের মানুষের প্রচেষ্টায়। আর বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তিনি যে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন সেখানেও নিশ্চয় বাংলাদেশের কোন সার্থ প্রাধাণ্য পাবে না। পাবে ভারতের স্বাথ। আর সেখানেও আমরা বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে হাত তালি দিবো। কিন্তু বুঝবো না এই তালি কি একজন বক্তার জন্য নাকি ভারতীয়দের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×