আমাদের জেলা শহরে রেল লাইন আছে এবং যথারীতি রেল লাইনের পাশে বসতি ও আছে। নভেম্বরের বারো তারিখে রোযার ঈদের মাত্র সপ্তাহ খানেক পরে এই বস্তিতে এক অগ্রিকান্ড সংঘটিত হলো। পুড়ে যাওয়ার মতো মূল্যবান তেমন কিছু এই বস্তিতে ছিলনা বলে পুরো বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হলোনা।বাশ, ছন, পোড়া জংধরা টিন ও নানারকম ময়লা কাপড়চোপড়ের সাথে পুড়ে কয়লা হলো মোট 41জন আদম। অগ্রিকান্ড শেষ হওয়ারও অন্তত পনের মিনিট পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঐ 41টি আদম কয়লা উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে সকলের আস্থাভাজন হিসেবে আবারো তাদের কার্যকারিতা প্রমান দিল। অগ্রিকান্ড চলাকালে আশে পাশের লোকজন পানি ও বালিভর্তি বালতি সহকারে অগ্রিনির্বাপনে তাদের যথাসাধ্য করল। তবে রেল রোড মোড়ের হোটেল গুলির কোন কর্মচারী এই সুযোগ পেলনা কারণ আগুন লাগার সাথে সাথেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ল নানরুটির খামি তৈরি করতে। সবাই ধারণা করল যে এই বস্তিতে আগুন লাগলে নূন্যপক্ষে 5 জন 10 জন মারা যাবেই এবং পোড়া মৃতদেহ উদ্ধারের পর তা এই হোটেল গুলিতেই আসবে এবং সাথে সাথেই পোড়া মাংস মশলা সহযোগে নানরুটি দিয়ে খাওয়ার জন্য খরিদ্দাররা ভিড় শুরু করবে। তবে অবেলায় এতগুলি রুটি তৈরি করে হোটেল মালিকরা কোনো অতিরিক্ত লাভের মুখ দেখতে পেলনা কারণ যে মৃতদেহ গুলি উদ্ধার করা হলো তা এতবেশি পুড়ে গিয়েছিল যে খাওয়ার যোগ্য ছিলনা। এর বাইরে অন্য কম পোড়া বস্তিবাসীরা তখনও জীবিত ছিল। দু এক দিনের মধ্যে এদের অনেকেও মরার জন্য সম্ভাবনাময় তবে রুটি তো তখন আবার নতুন করে বানাতে হবে। আজকের রুটি তো আর পরশু খাওয়া চলেনা। এদিকে আবার চলছে ভেজাল ও পচা বাসী বিরোধী অভিযান।
ঘটনা একটু গোড়া থেকে বললে বুঝতে সুবিধে হবে। গত জুন মাসে তৃতীয় বারের মত পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হলেন আবু মোতাহার হোসেন সাহাবুদ্দিন ওরফে সাবু মিয়া। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে পুরো শহরজুড়ে চালানো হলো ব্যাপক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান। চারিদিকে এত ঝকঝকে তকতকে যে কোথাও কাকদের খাবার জন্যেও কিছু ছিলনা। সকল হকার উচ্ছেদ হল। ভিক্ষুকদের ধরে ধরে শহরের একটু বাইরে যেখানে ময়লা ফেলা হয় তার এক পাশটা কাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে তাদেরকে ফেলা হল। ময়লার অভাবে কাক এবং খাদ্যের অভাবে ভিক্ষুক সমপ্রদায় মারা যেতে লাগল সমানে। এরকমই কোন এক সময় ঘটল এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। জনসমক্ষে কয়েকটি বুভুক্ষ কাক একটি মৃত কাকের মাংস খেতে লাগল ঠুকরে ঠুকরে। এ ঘটনার পরপরই মাস ছয়েক আগের একটি পুরানো বিতর্ক আবারো ব্যাপক ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। গুঞ্জন উঠলো বিভিন্ন মহলে। পাড়া মহল্লায়, চায়ের দোকানে সর্বত্র এই একই বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনায় টেবিল গরম হতে থাকলো। চেয়ারম্যান সাবু মিয়া তার অভিষেক কর্মসূচীতে ফাটালেন দম আটকে থাকা এই বেলুন। তিনি বললেন, আমাদের চৈতন্য হওয়া উচিত। কাকের পর্যন্ত চৈতন্য হয়েছে অথচ আমরা কোথায় পড়ে আছি। অপ্রয়োজনীয় আবেগ যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী আমাদের শুধু পিছিয়েই দিচ্ছে। আমাদের ইতিহাস ভরে আছে কুসংস্কারে। চিন্তা করা যায় যে কত দীর্ঘ সময় আমাদের সিরাজুদৌল্লাহকে ইতিহাসের বীর বানিয়ে মীরজাফর কে ভিলেন বানিয়ে রেখেছিলাম। তবে ভরসার কথা, পরিবর্তনের ছোয় লাগতে শুরু করছে। আমাদের সচেতন নাগরিকগণ জেগে উঠছেন। প্রগতির জং ধরা চাকায় তারা তেল মবিল লাগাচ্ছেন। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি যে সিদ্ধান্ত কযেক মাস আগেই রাজধানী নেয়া হয়েছে, আমরাও তা নিতে পারবো। খাওয়ার যোগ্য টাটকা মৃতদেহ গুলিকে পুড়িয়ে অথবা কবর দিয়ে আমরা নষ্ট করবো না।
যে কোন ধরণের দোদূল্যমনতা বা সিদ্ধান্তহীনতাকে কচুরিপানার মতো ভাসিয়ে কিংবা পেজা তুলোর মত উড়িয়ে দেয়ার জন্য সাবু মিয়ার এই প্রত্যয়দীপ্ত বক্তব্য যথেষ্ট হওয়ার কথা ছিল। আশ্চর্য হলেও সত্য, তা হলোনা। পৌরসভার গৃহীত সিদ্ধান্ত ঘীমিত আকারের বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হলেও পথ বিপক্ষেও নিরসন হলোনা। কেমন একটা দ্বন্দ, কেমন একটা খটকা যেন রয়ে গেল। তাছাড়া বেশ কিছু সমস্যা উদ্ভুত হলো যা আগে ভাবা হয়নি। যেমন কেউ তার মৃত আত্নীয় স্বজনের মাংশ দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে কি মেটাবে না তা থাকল একান্তই তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের ওপর ন্যস্ত। এক্ষেত্রে পৌরসভার হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসেনা। এখন দেখাও গেল, বুড়ো বাবা মা অথবা বয়স্ক কোন আত্নীয় মারা গেলে অধিকাংশরাই সহজ পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব খেতে লাগল কিন্তু মুশকিল হলো ছোট বাচ্চা কাচ্চারা যারা যারা যাচ্ছিল তাদের নিয়ে। এমন একজন মাও পাওয়া গেলনা যে শোক কাটিয়ে বাচ্চার মাংশ খাওয়ার শক্তি অর্জন করতে পারল। অথচ পারিবারিক মিটিংয়ে সাধারণ ভাবেই অন্যরা আমিষের চাহিদা পুরনের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছিল। এটি একটি খন্ডচিত্র। এরকম নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ঘরে ঘরে অশান্ত তৈরি হলো।
এতো গেল একটি দিক। অন্তর্গত সমস্যার দিক। সমস্যা বহিরে ও ছিল। বেশ কিছু কলেজের ছাত্র বিষয়টি নিয়ে খুব হৈচৈ শুরু করল। অনেক দিন ধরেই আমাদের শহরে একটি রেওয়াজ চালু আছে। একুশে ফেব্রুয়ারী পালন উপলক্ষে রাতে ফুল দেয়া শেষ হওয়ার পরে সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ উপস্থিত সবাইকে ডিসি অফিসের পথ থেকে খিচুড়ী সরবরাহ করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা। কিন্তু মানুষের মাংশ দেয়া খিচুড়ী খেতে আপত্তি ওঠাতে এবারের একুশে প্রথম প্রহর গোলযোগপূর্ণ হয়ে উঠল। আপত্তিকারী ছাত্রদের যে পূর্ব প্রস্তুতি ছিল তা বোঝা গেল কারণ মুহুর্তের মধ্যেই তারা প্রচার পত্র বিলি শুরু করল। নিয়ে। এমন একজন মাও পাওয়া গেলনা যে শোক কাটিয়ে বাচ্চার মাংশ খাওয়ার শক্তি অর্জন করতে পারল। অথচ পারিবারিক মিটিংয়ে সাধারণ ভাবেই অন্যরা আমিষের চাহিদা পুরনের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছিল। এটি একটি খন্ডচিত্র। এরকম নানা খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ঘরে ঘরে অশান্ত তৈরি হলো।
এতো গেল একটি দিক। অন্তর্গত সমস্যার দিক। সমস্যা বহিরে ও ছিল। বেশ কিছু কলেজের ছাত্র বিষয়টি নিয়ে খুব হৈচৈ শুরু করল। অনেক দিন ধরেই আমাদের শহরে একটি রেওয়াজ চালু আছে। একুশে ফেব্রুয়ারী পালন উপলক্ষে রাতে ফুল দেয়া শেষ হওয়ার পরে সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ উপস্থিত সবাইকে ডিসি অফিসের পথ থেকে খিচুড়ী সরবরাহ করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা। কিন্তু মানুষের মাংশ দেয়া খিচুড়ী খেতে আপত্তি ওঠাতে এবারের একুশে প্রথম প্রহর গোলযোগপূর্ণ হয়ে উঠল। আপত্তিকারী ছাত্রদের যে পূর্ব প্রস্তুতি ছিল তা বোঝা গেল কারণ মুহুর্তের মধ্যেই তারা প্রচার পত্র বিলি শুরু করল।
প্রচার পত্রের ভাষা ছিল এরকম, যে অগ্রগতির ফলাফল হিসেবে আমরা আজ মানুসের মাংশওয়ালা খিচুড়ী খেতে যাচ্ছি তা যদি আরো অনেক আগে 1952 সালে সার্ধিত হতো তা হলে নিশ্চয়ই আমরা সালাম, রফিক বা জব্বারের ও একই পরিণতি করতাম। ইত্যাদি ইত্যাদি। বক্তব্যের আবেগ বেশি যুক্তি কম। তবে আবেগের জায়গাটি যে উপস্থিত কাউকে কাউকে নাড়া দিলনা তা নয় পরিস্থিতি আরো গরম হতে পারতো। তবে ডিসি, পুলিশ সুপার ও পৌরসভার চেয়ারম্যান এবার দূর্বলার চরে অনুশ্চিত রাস মেলাগামী নৌবিহারে এসব ছাত্রদের সংগে নিলেন এবং হিযবুল বাহারের ঐতিহাসিক কার্যকারিতা আবারো একবার প্রমাণিত হলো। অর্থাৎ সব ঠিক ঠাক।
তবে হুজুররা যে মাঠ গরম করলেন তা আর কোনভাবেই শান্ত হচ্ছিলনা। কলেজ মাঠের বিশাল সমাবেশ থেকে মুফতি জাহেদী ঘোষণা দিলেন, কুরআন হাদিসে পরিস্কার উল্লেখ আছে মৃত ভাইয়ের মাংশ খাওয়া এবং গীবত করা সমপরিমান গুনাহের কাজ। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই। অতএব মৃত ভাইয়ের মাংশ ভক্ষন করলে গীবত করা হবে। কোনোভাবেই এটা চলতে দেয়া যাবেনা। তবে মৃত অমুসলিমের মাংশ ভক্ষণ প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে এরকম একটি তাৎক্ষনিক প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে গেলেন। সুতরাং ফাক ফোকার থেকেই গেল। এবং এই ফোকর গলেই যে বেওয়ারিশ মৃতদেহ গুলির উপর ব্যবসায়ী এবং আমলাদের এক চেটিয়া কর্তৃত্ব ছিল তা প্রতি শুক্রুবার পৌছে যেতে লাগল বড় বড় মসজিদ এবং লিল্লাহ বোডিং গুলোতে। অবশ্যই গোপনে। বলাবাহুল্য যে সবগুলি মৃতদেহ অমুসলিমদের নয়। ফলাফল সব ঠিকঠাক। কিন্তু কোন ভাবেই ঠিক করা গেলনা সদরুল আমিন কে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকতার কাজে এক বছরের মাথায় ইস্তফা দিয়ে কি এক অজ্ঞাত কারণে বাড়ী ফিরে এসে প্রায় দুবছর মত অন্তরীন জীবন কাটিয়ে বাজারের ভেতর হলুদ এবং মরিচ গুড়ো করার মিল চালু করেছিল। নাকের ওপর মাস্ক লাগিয়ে হিসেব করতে করতেই যে সম্পাদনা করতো এ শহর থেকে প্রকাশিত বহুল প্রশংসিত ছোটো কাগজ পাতিকাক। উল্লেখ্য তার বড় ভাই বদরুল আমিন কোন এক ভূত সংক্রান্ত ক্যাচালে পড়ে বছর চারেক আগে রাজধানী থেকে উম্মাদ অবস্থায় বাড়ী ফিরেছিল। এ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনায় আমরা পরে যাব।
পেছনে ফিরে দেখা; রাজধানীতে আসলে কি ঘটেছিল?
একথা সবাই জানে যে আমাদের নদীগুলোতে লক্কড় ঝক্কড় মার্কা লঞ্চ চলাচল করে। যারা চড়ায় তারা তো জানেই যারা চড়ে তারাও জানে। সুতরাং অস্বাভাবিক নয় যে বছরে দু পাঁচটা লঞ্চডুবি হবেই এবং দু পাঁচশো মানুষ ও মারা যাবে বটে। ভালো কথা। কিন্তু গত বছর লঞ্চডুবি কোনো নিয়মকানুন মানতে চাইলোনা। একটার পর একটা লঞ্চ ডোবে আর ডোবে। নৌপরিবহন মন্ত্রী পড়লেন মহা ফাপড়ে। সারা বছরে মোট তিন বার বেশ জোরেসোরেই তার পদত্যাগের দাবী উঠল। ফাপড় পরিস্থিতি জন্ম দেয় সৃষ্টিশীলতার। প্রথমবার তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার বর্গকে যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেন। দ্বিতীয দফা তাতে আর কুলোয়না। তখন প্রধান মন্ত্রীর ব্ল্যাক বেঙ্গল গো কর্মসূচীর আওতায় নগদ অর্থের পাশাপাশি ছাগল বিতরণ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হল। শেষবার কোনোভাবেই মন্ত্রীর শেষরক্ষা যেন আর হয়না। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, সিভিল সোসাইটি, পত্র পত্রিকা এমন ভাবে মন্ত্রীর অপসারণের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠল যে গদীরক্ষার্থে মন্ত্রী তার চূড়ান্ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিলেন। পত্রিকায় এক সাক্ষাতকারে তিনি বললেন, আমরা গরীব দেশ। ছোট দেশ। আমাদের সম্পদ অপ্রতুল। পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে আমাদের শিশুরা রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হচ্ছে। ফলে বিশ্বায়ন পরবতর্ী প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের অবস্থান ক্রমাগত দূর্বল হচ্ছে। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি একমাত্র পুষ্টিহীনতার অবসানের মাধ্যমেই এপরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব। অথচ তা নিয়ে কেউ ভাবেনা। কোথায় কয়েকজন মানুষ মারা গেল তা নিয়ে হৈচৈয়ের অন্ত নেই। এতসব ভূমিকা করেই তিনি দিলেন তার বিখ্যাত বর্ধিত আমিষ যোগান। অর্থাৎ মৃতের মাংশ খাওয়ার তত্ব। ভোজবাজির মত কাজ হলো। প্রথম অবস্থায় সবাই হতচকিত হয়ে গেলেও দেখা গেল মন্ত্রীর অপসারণ বাদ দিয়ে সকলে বর্ধিত আমিষ যোগান তত্বের পক্ষে বিপক্ষে ধুন্ধুমার বিতর্কে লিপ্ত হলো। পাঁচ ছয় মাস ধরে আলোচনা চলার পর ইলেকট্রানিকস মিডিয়ায় এক প্রকাশ্য বিতর্ক অনুষ্ঠানের পরে বিষয়টিকে আইনগত ভাবে সিদু করা হলো এবং পরীক্ষামূলক ভাবে রাজধানীতে চালু করা হল। আইন চালুর দুদিনের মাথায় আরেকটি ব্যাপক লঞ্চডুবি হওয়ার ফলে বিষয়টির বাস্তবায়ন সহজতর হলো। বহিবিশ্বে বাংলাদেশের এই কর্মসূচী ইতিমধ্যে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। শোনা যাচ্ছে নোবেল পুরস্কারের মনোনীতদের মধ্যে ডঃ ইউনুস ছাড়াও প্রতিযোগিতায় থাকবেন নৌ মন্ত্রী। লোকজন বলাবলি করছে এবার বাংলাদেশের ভাগ্যে শিকে ছিড়বেই কারণ দুজনের মধ্যে অন্তত একজন কে না দিয়ে পারবেনা।
বছর চারেক আগের কথা। বদরুল আমিন তখন পররাষ্ট্র দফতরের তরুন আমলা। চলনে বলনে দক্ষতায় তুখোড় ও বটে। আমাদের দেশের সর্বকালের সেরা মন্ত্রী হিসেবে খ্যাত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী তখন তৃতীয়বার ও একই পদে সদ্য অভিষিক্ত হয়েছেন। একথা সবারই জানা যে তার মাথায় সিজগিজ করছে অসংখ্যা পরিকল্পনা যার বীজ বীজানু ছড়িয়ে পড়ছে হাটে ঘাটে ঘাটে। এসময়ের তিনি হাজির করেছিলেন তার যুগপত বিখ্যাত ও কুখ্যাত ভূত বিষয়ক পরিকল্পনা। বেশ কয়েকদিন ধরে সরকারী টেলিভিশনে আসিতেছে নতুন দিন, এজাতীয় প্রপাগান্ডা চালানোর পর মন্ত্রী এক ভাষণে বিস্তারিত জানালেন তার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিন বললেন,
প্রিয় দেশবাসী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক অভূত পূর্ব উৎকর্ষের কালে বাস করছি আমরা। চিন্তা করা যায়না, পৃথিবী কত দ্রুত কোথায় এগিয়ে চলছে। বিজ্ঞানের নানা অগ্রগতির ধারায় মানুষ আজ কাজে লাগাতে শিখেছে ভূত সমপ্রদায়ের অমিত শক্তিকে। এবং এই ভূত শক্তি বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে আমরা নিজেদের ক্ষমতায় ভূত কাজে লাগাতে শিখিনি। তবে বিশ্বায়নের সুফলে আমরাও এই মহার্ঘ্য শক্তির প্রাপ্তির দার প্রান্তে দাড়িয়ে আছি। আপনারা জানেন, উন্নত বিশ্বের দানে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌছে যাচ্ছে ভূতি শক্তি। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে আমরা একটি বিদেশী কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদু হয়েছি এবং কয়েকদিনের মধ্যে দ্রুত প্রজননশীল বেশ কয়েক জাতের ভূত আমাদের দেশে আসছে এবং আমাদের সরকার আশাবাদী যে ছয় মাসের মধ্যে আমরা 14 কোটি মানুষকেই এই প্রকল্পের আওতায় এনে সবাইকে একটি করে ভুত গছিয়ে দিতে পারব।
মন্ত্রীর পরিকল্পনায় দেশজুড়ে তুমুল আনন্দের প্রবাহ তৈরী হলো। বিনামূল্যে একটি করে ভুত পাওয়া যাবে এই আনন্দের আতিশয্যে অনেক লোকজন রাস্তায় নেমে আসল। সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন বিদেশী ভুতের আগমন, শুভেচ্ছা, স্বাগতম দিয়ে বিশাল মিছিল বের করল। আর এই ডামাডোলের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরুন কর্মকর্তা বদরুল আমিন কেমন একটা অস্বস্তিমাখা অনুভূতি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এরকম অনুভূতি নিয়েই ছোট বেলায় যে স্কুল পালিয়েছিল টীকার হাত থেকে বাচতে। কিন্তু যখন সে কোথায় যাবে?
ভুতশক্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে যখন লোকজন ঠিকমতো ঠাহর করে উঠতে পারেনি প্রকল্পের কার্যকারিতা সম্পর্কে শুধুমাত্র ঘাড়ের ওপর একটি অতিরিক্ত বোঝার অস্তিত্বের অনুভূতি ছাড়া; এরকম একটি সকালে বদরুল আমিনকে দেখা গেল উম্মাদের মত খালি পায়ে, হাতে একটি হ্যান্ডমহিক নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মহা শোরগোল তুলে বেড়াচ্ছে। সে শুধু চেচিয়ে বলছিল, ভাইসব আমাদের সামনে মহাবিপদ। ভাইসব, আমাদের সামনে মহাবিপদ। তার চেচামিচি শুনে কিছু লোকজন জড়ো হলে সেখানে হাজির হলো একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল। অতি উৎসাহী কয়েকজন কোত্থেকে একটা মাইকও যোগড়া করে ফেলল। বদরুল আমিন শুরু করলেন ভাষন। ভাইসব, আমাদের সামনে মহা বিপদ। বিরাট এক ভুতুড়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি আমরা। অগ্রগতির নাম করে আমাদের ঘারে যে ভুত গছিয়ে দেয়া হয়েছে তা যে সে ভুত নয়। তা হলো সিন্দাবাদের ভুত। এই ভুত জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসতে চায়। একবার চেপে বসতে পারলে কোনোভাবেই তাকে আর নামানো যাবেনা। এক সময় গিয়ে দেখা যাবে যে ভুতটাই শুধু আছে। আমি আপনি আর নাই। ভাইসব এখনো সময় আছে। সময় শেষ হয়ে গেলে
* আলিফ লায়লা দ্রষ্টব্য
আমদের আর কিছুই করার থাকবেনা। সুতরাং আমাদের রক্তমাংস, অস্থিমুজা খয়ে ফেলার আগেই এ ভুত ঝেড়ে ফেলতে হবে। এ পর্যন্ত বলে তিনি তার দাদীর কাছ থেকে পাওয়া বিদ্যা কাজে লাগালেন। অর্থাৎ সরিষা পড়া ও ডালের কাঠি ব্যবহার করে কিভাবে ভুত নিধন করতে হবে তা সবাইকে শিখিয়ে দিলেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। পটপট শব্দ ও ভুতের আর্ত চিৎকার ভারী হয়ে উঠল আকাশ বাতাস। সরকারী প্রশাসন যন্ত্র ভালোমতো কিছু টের পাওয়ার আগেই দেখা গেল অর্ধেক ভুতের কম্মোসাবাড়। সরকারী টেলিভিশনে পাল্টা ভাষন দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী চেষ্টা করলেন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। পাগলের প্রলাপ আর কাকে বলে। সিন্দাবাদের ভুত, সিন্দাবাদের ভুত। কোথা থেকে আসবে সিন্দাবাদের ভুত। সিন্দাবাদ ব্যাটাই তো মরে ভুত হয়ে গেছে কবে। এসব গুজবে কান দেবেন না। ভুত হত্যা করে মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করবেন না। কে শোনে কার কথা। পাবলিককে তখন ভুত খতমের নেশায় পেয়েছে। নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসের উদ্ধানী প্রদানের দায়ে বদরুল আমিনকে গ্রেপ্তার করাহল। বছর খানেক পরে ছাড়া পেয়ে সে যখন দেশের বাড়ীতে অর্থাৎ আমাদের শহরে ফিলে এল তখন সে বদ্ধ উম্মাদ। সে সারাদিন বাড়ীতেই থাকে এবং একটি কাজই করে। আদার (খাবার) ছাড়া একটি বড়শী পানিতে ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করে।
ইতিহসা যুগে যুগে পরিগ্রহ করে ভিন্ন ভিন্ন বাঁক
ঘুরে ফিরে ফেরত আসছি পুরোনো প্রসঙ্গে। আমাদের শহরে মৃত মানুষের মাংশ খাওয়া স্বাভাবিক অন্যান্য ঘটনার মতই সহজ হয়ে আসছে, প্রায়ই একটু মাংশের আশায় লাশকাটা ঘরের সামনে ছোটখাট ভিড় লেগেই থাকে এবং কাধের মাংশের কাবাব বা স্তনের সু্যপ প্রভৃতি মেত্রু্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। শুরু থেকেই যারা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিলেন তাদের মধ্যে সদরুল আমিন অন্যতম। তার কথা আগে একবার বলেছিলাম। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষতায় ইস্তফা দিয়ে বাজারের মধ্যে হলুদ মরিচ গুড়ো করার মিল দিয়েছিল। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে আয়না আপার প্রেমিক। যে জন্য শহরসুদু লোক তাকে ঘোর ইর্ষার চোখে দেখে। শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আয়না আপনা; পদ্মাবতী রুপ কি কবিহ মহারাজ অর্থাৎ আয়না আপার রুপের বর্ণনা দিতে গেলে অন্যসব প্রসঙ্গ গুবলেট হয়ে যাবে। আয়না আপা। সবুজ ধানক্ষেতের মত, আয়না আপা চাদের আলোর মত। যা হোক পুরো শহরবাসী বিমুড় হয়ে গেল যখন তারা শুনল সদরুল আমিন এবং আয়না আপা তাদের ভাষায় পৌরসভার গৃহীত জঘন্য সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্নহুতির ঘোষণা দিয়েছিন। সদরুল তো বদরুল পাগলারই ভাই, ও যা খুশি তাই করতে পারে তাই বলে তুমি কেন- এ বলে মুভানুধ্যায়ীরা নিরস্তকরার চেষ্টা করলেন আয়ান আপাকে কিন্তু কোন লাভ হলোনা।
আত্নহুতি দেয়ার দিনটির দুদিন আগে এক সাথে বসে প্রস্তুতির খুটিনাটি নিয়ে আলাপ করছিলেন তারা দুজন। এ সময় তারা লক্ষ্য করছেন তাদের দুজনের কাছেই বেশকিছু চিঠি, চিরকুট ইত্যাদি জমা আছে। এগুলো খুলে তারা যা দেখলেন তাতে শোকে গ্রানাইট হয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কিছুই করনীয় ছিলনা। বিভিন্ন লোকজন তাদের কাছে তাদের আত্নহুতি পরবতর্ী মৃতদেহ চেয়ে সুপারিশ করেছেন এবং এ ব্যাপারে আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। সদরুল আমিন এবং আয়না আপা পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন এবং কোন কথা বলার পয়োজনীয়তা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে এইসব অর্বাচীনদের জন্য তারা মরতে যাচ্ছেন না। অনেক দিন পর তারা একান্ত সময় কাটাতে গেলেন সদরুল আমিনের নানা বাড়ির গ্রাম হামানকুদ্দির নির্জন খামার বাড়ীতে। গভীর রাত পর্যন্ত চিংড়ি ঘেরের সামনের তেতুল গাছটার পাশে অন্ধকারের মধ্যে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তারা কাদতে লাগলেন। এক সময় তারা থামলেন এবং উভয়েরই চোখ জ্বলে উঠল কিন্তু কেউই তা দেখতে পেলেন না । রাতে ঘরে ফিরে তারা যখন প্রেমে প্তি হলেন তখন যে উম্মত্ততা দেখা দিল তার ধরণ তাদের প্রেম করার গতানুগতিক ধরুণ থেকে ভিন্ন। সদরুল আমিনের রাত ভর কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল আয়নার স্তুন দুটি, আর সদরুলের কাধ থেতে তো রক্তই ঝরতে লাগল। এর পরেও মাংশের কাবাব বা স্তনের সু্যপের প্রতি অবচেতনে তাদের কোন ক্ষুধা তৈরী হয়েছিল একথা আমি কোনভাবেই বলবো না। তবে একথা ঠিক যে পোড়া মাংশের সুগন্ধে এ কালে বাতাস বড় অস্থির।
সপ্তাহ খানেক পরে পশু প্রেমী সংস্থা আয়োজিত এক মানব বন্ধনে দেখা গেল হাস্যোজ্জ্বল সদরুল আমিন আর আয়না আপাকে। পশুর প্রতি সদর হোন, শীতকালে তাদের গোসল করাতে অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার করুন এই ছিল মানববন্ধন এর মূল দাবী।
সর্বশেষ
আত্নঘাতি বোমা হামলায় নিহতদের মাংশের ভাগ দাবী করে পত্রিকা অফিসগুলির কাছে এক ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছে জে এমবি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



