এই রিক্সাওয়ালা ! যাবে ?
কোমরের সাথে লুংগিটাকে সেঁটে নিয়ে
টুংটাং ঘন্টি বাজিয়ে এক রিকশা খিদে নিয়ে
ঘামে ভেজা শুকনো শরীরে ছুটে চলেছে আসগর খান।
আঁকা বাঁকা সাদা কালো ছাল ওঠা
অজগরের পিঠে চলেছে ধেয়ে ।
ভস ভস শব্দে বাতাসের কোলে
ছেড়ে দিয়ে বড়ো বড়ো শ্বাস।
ঘুণধরা বাঁশের মাচার মতো বুকের খাঁচা
বার বার ওঠে আর নামে ডানে বাঁমে ।
দুর থেকে নাকে ভেসে আসে গরম ভাতের গন্ধ,
ধূমপানে ঝাঁঝরা কলিজা জেগে ওঠে ।
চোখে ভেসে ওঠে পাটকাঠি জ্বলা চুলা,
শিনশিনে দুটি কালোহাত হাতা নিয়ে
নাড়ে হাঁড়ি, ঘুরপাক খেয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়
গরম ধোঁয়া । পাশে বসে চুলার ধোঁয়ায় চোখ ভরা জলে
আদরের গোলাম। খসখসে কাশির আওয়াজে ভেসে ওঠে
কাশির ওষুধের শিশি।
ছিন্ন মলিন পোষাকের ভাঁজে মোছে হামিদা
তার নাক থেকে ঝরে পরা জল ।
ঝাপসা দৃষ্টিতে আরো যায় বেড়ে
আসগরের রিকশার গতি।
দিনশেষে লাল সাদা ধুলোবালি চুলে
পাখির মতো ঘরে ফিরে এসে বসে একচালার ধারে।
বাম হাত ওঠা নামা করে গোলামের শরীরে,
বুকে টেনে নিয়ে চুমু দিয়ে বুক ভরে নেয় আসগর,
গাঁট বাঁধা গামছা মুক্ত হয়ে আসে কটি থেকে,মুছে দেয়
গোলামের নির্মলমুখ চোখ হাত পা ।
দিবসের অবসানে ছোট্ট চালার নিচে তিনজনে বসে সারে
দিনরাতের আহার। কেরোসিনের ছোট বাতির আলোয়
রাত্রি আরো গভীর হয়ে যায় গোলামের চোখে । ঘুমের দেশে
এক্কা দোক্কা খেলতে খেলতে চলে যায় পরীর দেশে, যেখানে
আছে তার ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি।
হামিদার ঘর্মক্লান্ত চোপসানো শরীরটার থেকে সারাদিনের
ক্লান্তি সুখানুভূতির খোঁজে অতল তলে নিমগ্ন হয় আসগর।
যেন নিদাঘের শান্তি আসে একফালি মেঘ থেকে ঝরা বৃষ্টিতে।
ভাঙ্গা চালের ওপার থেকে অষ্টমীর বাঁকা চাঁদের কিরণে
ধুয়ে যায় দুঃখ বেদনা।
দখিনা বাতাস জানিয়ে যায় শুভরাত্রি ।
তখন নতুন দিনের স্বপ্ন চোখে নিয়ে চার চোখের পাতায় নেমে
আসে আরো গভীর রাত্রি ।
---------*****--------
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



