somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিবৃতিতে 'সীমান্ত হত্যা'র বিষয়ে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবাদ

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চার দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক নিয়ে বুধবার (০৯ সেপ্টেম্বর) একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়। ৩৩ অনুচ্ছেদের ওই বিবৃতিতে বলা হয়ঃ সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই শীর্ষ নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই পক্ষই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

কিন্তু, সীমান্তে হত্যা বিষয়ে ওই বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ভারতের ভেতর থেকেই। শুক্রবার (০৯ সেপ্টেম্বর) কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ বা মাসুম ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ বিষয়ে ইংরেজিতে প্রকাশিত মাসুম এর সম্পাদক কিরীটী রায় স্বাক্ষরিত বক্তব্যটির হুবহু বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলোঃ

০৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ দিনের সফরে দুই দেশের মধ্যে অনেক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে এবং তারা এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) তে স্বাক্ষর করেছে। ৭ই সেপ্টেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়, যেখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় দুজনই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান এবং পাচার বন্ধে নিজেদের প্রচেষ্টার জন্য তারা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের প্রশংসাও করেছেন। অবশ্য, সীমান্তে হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে এখনও আরও কিছু করার বাকি বলে দুই প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। পরিহাসের বিষয় এই যে, যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মিনারুল ইসলাম নামে এক নাবালক বাংলাদেশি স্কুল ছাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে।

আমাদের হিসেব অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সীমান্তরক্ষীদের হাতে নিহতের সংখ্যা চলতি দশকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রিপোর্ট বলছে, আগের দশকে প্রতি বছর নিহতের সংখ্যা ছিল ১৫০, এই দশকে সেটা বেড়ে প্রতি বছর প্রায় ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
মনমোহন সিং এর সরকারের সময় ২০১১ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর কাছে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র) দেওয়ার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, ২০১৪ সালে (নরেন্দ্র) মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে, ওই সিদ্ধান্ত পাল্টে বিএসএফ এর কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে সীমান্তে হত্যা ব্যাপক আকার ধারণ করে।

চোরাচালান বন্ধে প্রচেষ্টার জন্য দুই প্রধানমন্ত্রী যেসব সীমান্ত রক্ষীদের প্রশংসা করছেন, তারাই সেসব অপরাধী যারা সীমান্ত জুড়ে 'ক্রস বর্ডার মুভমেন্ট' এ সহায়তা করছে। বারবার এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সীমান্ত পার হতে সাহায্যকারী উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের ছাড়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ক্রস বর্ডার মুভমেন্ট, মাদক ও গবাদি পশুর চোরাচালান সম্ভব হতো না।

উভয় দেশের বাহিনীতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সীমান্ত জুড়ে এই ধরনের অবৈধ ব্যবসায় সহায়তা করে। তাছাড়া, গবাদিপশু ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেলেও ছোটো-খাটো চুনোপুঁটি যারা কিছু নগদ চোরাচালানের দিকে ঝুঁকে পড়ে তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীদের মুখ থেকে সীমান্তরক্ষীদের তৎপরতার প্রশংসা আসা- এসব ইস্যুতে তাদের অজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে অথবা অবৈধ কর্মকান্ডকে বশে নিতে তাদের রাজনৈতিক অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে। সত্য গোপন করা, মিথ্যা তথ্য প্রচার করা এবং সীমান্তবাসীদের দুর্ভোগ আমলে না নিয়ে এই বিবৃতির মাধ্যমে দুই সরকারের যে রাজনৈতিক অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। আমরা দাবি করছি, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ্যে আসা উচিত এবং দোষী সীমান্তরক্ষীদের তাদের ট্রিগার--হ্যাপি (তুচ্ছ কারণে গুলি ছুড়ে) মনোভাবের জন্য আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করাই যদি উভয় দেশের সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হয় তাহলে উভয় দেশের ভেতরেই দায়মুক্তির অবসান ঘটিয়ে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করা উচিত।

কোর্টেসি: মানব জমিন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×