অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিলো আমার মত করে ফটোগ্রাফির উপরে কিছু লিখবো।সময় হয়ে উঠছিলো না।আজ কিছুটা সময় পেলাম হাতে।কারণ কাল হরতাল।ভার্সিটি যাওয়ার ঝামেলা নাই।আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এই লেখাটা লিখছি।আগেই বলে রাখি,আমি ফটোগ্রাফার নই।আমি ফটোগ্রাফির একজন নবিস ছাত্র,যে সব সময় চেষ্টা করে চলেছে কিভাবে ছবি তোলা যায়।কাজেই নিজেকে ফটোগ্রাফার বলার সাহস আমার নাই।
ফটোগ্রাফির দরকার কি???এর জন্য কি ইকুইপমেন্ট দরকার???ডি এস এল আর ছাড়া কি ফটোগ্রাফি হয়না???সাধারণ পয়েন্ট এন্ড শুট দিয়ে কি ভালো ফটোগ্রাফি সম্ভব????ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেত আমার মাথায়।আমার ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি একটা ক্যানন রিল ক্যামেরা দিয়ে।৩৬ টা ছবি তোলা যেত একটা দিয়ে।তারপর ছিলো দোকানে নিয়ে ডেভেলপ করার ঝামেলা।ডিজিটাল ফটোগ্রাফির সূচনা মোবাইল দিয়ে।এস এস সি দেয়ার আগেই মোবাইল পেয়ে গেছিলাম।স্যামসাং।তখন মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতাম।তখনো বাজারে ২ মেগাপিক্সেলের বেশী মোবাইল ক্যামেরা আসেনি।সেটা দিয়েই ছবি তুলতাম।কিছুদিন পর প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা পেলাম হাতে,সনি সাইবার শট।ছবি তোলা চলতে থাকলো।আমার সনি সাইবার শটের অভিজ্ঞতা পরবর্তিতে বহুত কাজে লাগছে।ফটোগ্রাফি করতে যেয়ে আমার কাছে সবচেয়ে প্রাথমিক যে সমস্যা চোখে পড়েছে সেটা হলো নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব কিংবা সংকোচ।কারণ যখন খুব আগ্রহ নিয়ে আপনি ডিজিটাল পয়েন্ট এন্ড শুট দিয়ে ছবি তুলছেন,তখন যদি পাশের জনের হাতে ঝলসে ওঠে DSLR এর flash,তখন সত্যি লজ্জায় পড়তে হয়।মনে হয় আমার বয়েসী একজন এত ভালো ক্যামেরা ব্যাবহার করছে,আর আমি…খুব স্পষ্ট করে একটা কথা বলে রাখি এবার।ফটোগ্রাফি মানে ফটোগ্রাফি।হোক সেটা মোবাইল ক্যামেরা হোক সেটা DSLR।আবার দেখা যায়,রাস্তায় দাঁড়ায় ছবি তুলছেন,মানুষ তাকাচ্ছে।নিজের কাছেই লজ্জা লাওগছে।ক্যানো????এভাবে চলতে পারবেন না ভাই দুনিয়াতে।ভাইরে,দুনিয়াটা খুব আজব জায়গা।এখানে নিজের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা নিজেই।কেউ কাউরে আটকায় রাখেনা,নিজেরাই আমরা নিজেদের খোলোসে আটকায় রাখি।কাজেই নিজের যা আছে তাই নিয়েই নেমে পড়ুন ফটোগ্রাফিতে,ফটোগ্রাফি ভালোবাসলে ভয়,সংকোচ,লজ্জা এগুলা কিচ্ছু না।অনেক বিজ্ঞ আবার বলেন,ডি এস এল আর থাকলেই ভালো ফটোগ্রাফার হওয়া যায়না।উনাদের ভাবখানা এমন যে উনারা খুব ভালো মানের ফটোগ্রাফার হয়ে গেছেন,তাই আর কেউ উনাদের মানে পৌছুতে পারবেনা।ক্যামেরায় ক্লিক না করে কনোদিন কেউ ফটোগ্রাফার হইছে এমন আমি শুনিনি।আজকে সে পারছেনা,কাল পারবে।তাতে আপনার সমস্যা কি????থাকুননা নিজের কারিশমা নিয়ে।
যাক,ভূমিকা অনেক বড় হয়ে গেলো।এবার আসি মূল কথায়।প্রথমেই জেনে নেই কিভাবে শুরু করবেন ফটোগ্রাফি।ফটোগ্রাফি করতে চাইলে ক্যামেরা তো লাগবে অবশ্যি,সে যেটাই হোক।কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে জরুরী দরকার চিন্তা করা,আপনি কি করতে চাইছেন।কিভাবে করতে চাইছেন।প্রয়োজনে একই ছবি ১০ টা তুলুন।দেখুন আপনার মনের মত ছবি এসেছে কিনা।
এবার দেখি ক্যামেরার খুটিনাটি কিছু জিনিস।
আমরা প্রায় ই শুনে থাকি এক্সপোজার,আপারেচার,শাটার স্পিড,আই এস ইত্যাদি শব্দগুলি।আসুন খুব সংক্ষেপে দেখে নেই এগুলি কি।
১।exposer:তিন রকম exposer আছে।
Over expose(বেশী সাদা হয়ে যাওয়া),under expose(বেশী কালো হয়ে যাওয়া),perfect expose(বুঝতেই পারছেন।).exposer কিভাবে পাবো??shutter speed আর aperture এর সঠিক সমন্বয় আপনাকে দিবে সঠিক exposer।
২।shutter speed:বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ,যারা ক্যামেরা নিয়ে টুকটাক কাজ করেছেন তারা খুব ভালোভাবেই এটা শুনেছেন।শাটার হলো আপনার ক্যামেরার লেন্সের সামনের একটা ছোট্ট পর্দা।অনেকটা চোখের পর্দার মত।যখন ছবি তোলেন,তখন এই পর্দাটা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় আবার এইটার কাজ হলো আলো আটকে রাখা। লেন্সের মধ্য দিয়ে আসা আলো সেনসরে প্রবেশের জন্য এটি খুলে দিতে হয়। ছবি তোলার সময় অর্থাৎ Shutter release button চাপার সাথে সাথে এই শাটার অল্পক্ষণের জন্য খুলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। শাটার স্পিড হচ্ছে লেন্স ও সেনসরের মাঝখানে আলো ঠেকানোর আবরণটি (শাটার) খুলে যাওয়া এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ার টাইম গ্যাপ। অর্থাৎ আবরণটি কতক্ষণ খোলা থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করা। শাটার স্পিড প্রকাশ করে সেকেন্ড দিয়ে( 8,4,2,1,1/2,¼,1/15,1/600)।এখন কথা হলো,কোন শাটার স্পিড এ কতটুকু আলো আসে এটা জানা।সহজ বাংলায় বললে,০ থেকে যত উপরে উঠবেন,মানে পুর্নসংখ্যার দিকে যাবেন,আপনার শাটার তত বেশী খোলা থাকবে,আলো ও তত বেশী ঢুকবে ক্যামেরায়।ছবিও তত বেশী সাদা হবে।আর ভগ্নাংশে গেলে ঠিক তার উল্টা।ভিন্ন ভিন্ন ছবির জন্য ভিন্ন ভিন্ন শাটার স্পিড ব্যাবহার করতে হয়।এইটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার।আরেকটা বিষয় ক্লিয়ার করি,খুব দ্রুতগামী কিছুর স্পষ্ট ছবি পেতে চাইলে অবশ্যি ক্যামেরার শাটার স্পিড বাড়াতে হবে,মানে ভগ্নাংশে আসতে হবে।কিন্তু সেই জিনিসটার চলমান ছবি চাইলে কিন্তু শাটার স্পিড কমাতে হবে।সেক্ষেত্রে আলো কম বেশী র বিষয় টা ছেড়ে দিবেন এপারেচার এর হাতে।
৩।aperture: এপারেচার হলো আপনার শাটারকে কতখানি খুলবেন।মানে অল্প খুলবেন নাকি বেশী খুলবেন।শাটার স্পিড হলো জানালা কত তাড়াতাড়ি খুলবেন আর বন্ধ করবেন আর এপারেচার হলো কতটুকু খুলবেন।নিশ্চই বুঝেছেন,অল্প খুললে কম আলো ঢুকবে,বেশী খুললে বেশী আলো।এপারেচার বোঝায় f দিয়ে।যেমন ধরুন f/2,f/3,f/8 ইত্যাদি।সাধারণ সুত্র f/#.# এর মান যত বড় মানের দিকে যাবে আপনার লেন্সের জানালা তত ছোট হবে।মানে 8 এ গেলে যেমন থাকবে 4এ তারচেয়ে বেশী বড় ছিদ্র থাকবে, আবার 2এ আরো বেশী থাকবে।মানে ২ এ আলো প্রবেশ করবে বেশী।
৪।ISO:আলোক সংবেদনশীলতা।এইটা আজকে বলবোনা।তাইলে আউলায় যাবেন।এতটুকু বলে রাখি,ISO কম দিয়ে আপাতত ছবি তুলেন,ভালো ছবি আসবে।রাতের বেলায় আবার উলটা করবেন।বেশী ISO দিবেন।
যাই হোক,আজকের মত এতটুকুই।সামনে আবার যদি হরতাল পাই,তাইলে আরো লিখবো।ততক্ষন চাইলিয়ে যান আপনার ফটোগ্রাফি অভিযান।মনে রাইখেন,more you practice, more you develop. আলসেমী করে এই কাম হবেনা।……….HAPPY PHOTOGRAPHY………….
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





