জাহাজী রূপকথা
বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি, বউ আমার মাথার লম্বা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, “তোমার চুলে কেমন নোনা নোনা ঘ্রান!”
আমি চোখ না খুলেই বললাম, "সাগরের বাতাসে নুন উড়ে, সে নুন চুলে এসে জমে। যখন সুর্যের আলো চুলে পড়ে সে চুল চিক চিক করে!”
সে এবার আমার চুল টেনে দিয়ে বললো, “ সময় শেষ! এবার উঠো! এবার আমার পালা!”
আমি বিছানায় উঠে বসলাম, বউ এবার শুয়ে তার মাথাটা আমার কোলে ফেলে চোখ বুঝলো! নারীদের সম অধিকারের যুগ চলছে! এক ঘন্টা তার কোলে মাথা রাখলে পরের এক ঘন্টা আমার কোলে সে মাথা রেখে গল্প করবে!
তার সাড়া শব্দ না পেয়ে যখনই ভাবছি বউটা ঘুমিয়ে পড়েছে তখনই বউ আহ্লাদী গলায় বলে উঠলো, “এই একটা গল্প শোনাও না! সাগরের গল্প!”
আমার হাত তখন বউয়ের ঢেউ খেলানো চুলে, যেন সাগরের ঢেউ তার মাথার চুলে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, “একবার সাগরে ঝড় উঠেছে, তোমার চুলের ঢেউয়ের মতো বিশাল বিশাল ঢেউ”।
বউ বললো, “সাগরে ঝড় উঠেছে কেন?”
বললাম, “সমুদ্র সম্রাট তখন তার সম্রাজ্ঞীর সাথে ভালোবাসায় লিপ্ত! সেই ভালোবাসার কম্পনে গভীর সাগরে ঝড় উঠেছে। সমুদ্রের মাঝে সমুদ্র সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর ভালোবাসা, সে তো আর সহজ ব্যাপার নয়! গভীর রাত, গভীর সমুদ্র, সে কি বিশাল ঢেউ, যেন একটা ঢেউ আরেকটা ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিচ্ছে কে কার চেয়ে বেশি উপরে উঠতে পারে! বাতাসের সে কি বেগ, যেন সমুদ্র সম্রাটের গরম নিঃশ্বাস ছুটে যাচ্ছে এপাড় থেকে ওপাড়!”
বউ জিজ্ঞেস করলো, “তারপর?”
“সেই গভীর সমুদ্র দিয়ে যাচ্ছিলো এক পাল তোলা জাহাজ, সাগরের ঢেউয়ে আর বাতাসের তোড়ে জাহাজীরা সব নাস্তানাবুদ। বাতাসের ধাক্কায় জাহাজের এক যুবক নাবিক পড়ে গেলো সাগরের পানিতে, আর পড়া মাত্রই তাকে জাহাজ থেকে দূর বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে গেলো সাগরের ঢেউ। স্রোতের পাকে পড়ে ডুবে গেলো সে, আর গিয়ে পড়লো সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মধ্যখানে, আরেকটু সুক্ষভাবে বলতে গেলে সম্রাজ্ঞীর কোলে, যেমন মায়ের কোলে শুয়ে থাকে সদ্য প্রসূত সন্তান!”
“যাহ! এটা কিরকম হলো!!”
“হু তারপর কি হলো শোনই না, মিলনে ব্যাঘাত ঘটায় সম্রাট সেই নাবিককে অভিশাপ দিলো। সমুদ্র সম্রাটের অভিশাপে সে নাবিক হয়ে গেলো এক কাঠের নৌকা! সম্রাট বলে দিলো, “যতদিন তুই মাটির কোলে না ভিড়তে পারবি ততদিন তুই এরকম থাকবি! এ বলে এক ফুঁ দিলেন সম্রাট! ডিঙ্গি নৌকাটা উড়ে গিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে আরো গভীরে পড়লো! সে নৌকায় বৈঠা নাই, মাঝি নাই। সাগরের স্রোত তাকে একবার এদিকে নেয় তো, সাগরের বাতাস তাকে নেয় ঐ দিকে! নাবিক কাঁদে, এই অকূল পাথার আর পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। সারাজীবনের জন্য বন্দী হয়ে গেলো সে!"
“তারপর?”
“তার আর পর নাই, গল্প এখানেই শেষ!”
বউ রাগ করে বললো“না না না, আরো আছে, আমাকে বলো। নাবিকটা এভাবে সারাজীবন সাগরে সাগরে ভাসতে থাকবে?”
“আচ্ছা শোন, ঐ দিকে হলো কি, নাবিকটা যখন সম্রাজ্ঞীর কোলে এসে পড়লো তখন সম্রাজ্ঞীর মাঝে মাতৃ স্নেহ জেগে উঠলো! সে ভাবতে লাগলো, আহা! আমার কোল জুড়ে যদি একটা সন্তান থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো! কিন্তু সম্রাট যখন নাবিককে অভিশাপ দিলেন তখন তার ভারী মন খারাপ হলো। কিন্তু সমুদ্রের সম্রাট অনেক রাগী, তার সমুদ্র শাসনের ব্যাপারে সম্রাজ্ঞী কখনো হস্তক্ষেপ করেন না। তাই তিনি একটা কৌশল নিলেন!”
বউ আগ্রহী হয়ে উঠলো, সে চোখ খুলে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো, “সেটা কি?”
আমি মুচকি হেসে বললাম, “সম্রাজ্ঞীর সেবার জন্য সমুদ্রে অনেক মৎস্য কন্যা আছে, তিনি তার প্রিয় এবং সব চাইতে সুন্দরী মৎস্য কন্যাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাকে বললেন, “তুমি আমার চুলে খোঁপা বেঁধে দাও। কন্যা যখন সম্রাজ্ঞীর চুল বেঁধে হাঙ্গরের কাঁটা গুঁজে দিচ্ছিলো তখন হটাত সম্রাজ্ঞী ব্যাথায় “উহ” করে উঠলেন। কন্যা ভয়ে টতস্থ হয়ে গেলো, সে বুঝি সম্রাজ্ঞিকে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছে! ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সম্রাজ্ঞী সেই মৎস্য কন্যাকে অভিশাপ দিলেন, “তুই যতদিন মাটির ছোয়া না পাবি ততদিন তুই মনুষ্যরূপ ধারন করে থাকবি।" এ বলার সাথে সাথে সেই মৎস্য কন্যার ন্যাজ খসে গেলো, মানুষের মতো পা বেরিয়ে গেলো তার! ন্যাজ হারিয়ে যাওয়ায় মৎস্য কন্য সাগরে খাবি খেতে লাগলো, কারন সে ন্যাজ ছাড়া সাতার দিতে জানে না!”
“তারপর”?
“তারপর সম্রাজ্ঞী তাকেও সবেগে ধাক্কা দিলেন, সে এসে পড়লো সেই কাঠের নৌকার পাশে, অতি কষ্টে সে নৌকায় উঠে বসলো। মৎস্য কন্যাকে দেখে ডিঙ্গি নৌকারুপি নাবিক আশার আলো ফিরে পেলো, সে তাকে সব খুলে বললো, তারপর বললো, যদি তুমি আমাকে কোন দ্বীপ বা সাগর পাড়ে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারো তাহলে তুমিও বাঁচলে, আমিও বাচবো, আমাদের অভিশাপ খন্ডন হবে!”
তারপর?
“কিন্তু সমস্যা হলো নৌকা বাইবার জন্য বৌঠা কই পায় এই মাঝ সাগরে! নাবিক বললো, তুমি আমার শরীর থেকে এক টুকরো কাঠ খুলে নাও। মৎস্য কন্য বললো, তুমি ব্যাথা পাবে যে! নাবিক বললো, তা পাই, কিন্তু তোমার জীবন বাচবে যে!”
বউ দুখী গলায় বললো, “আহারে!”
“তারপর, কন্যা নৌকার একটা কাঠা ভাংলো, ভাংগার সময় নাবিক সেই কন্যার সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো, এতো সুন্দর মুখ দেখে পৃথিবীর যে কোন ব্যাথা ভুলে থাকা যায়, তাই নাবিক একটু উহ আহ শব্দও করলো না! তারপর কতোদিন কন্য বৈঠা বেয়ে চললো তার হিসেব নেই। একটা সময় নাবিক বোধ করলো, সে সারাজীবন তার বুকে চেপে বসা দেবীকে নিয়ে সাত সমুদ্র ঘুরে বেড়াতে পারে তার কোন ক্লান্তি লাগবে না, মানুষ রুপে ফিরে যাওয়ার জন্য কোন দিন বিন্দু মাত্র আফসোস লাগবে না!
ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পেরে বউ শিউরে উঠলো, আমি তার শরীরের কম্পন টের পেলাম।
আমি বলেই চলেছি, “একটা সময় হটাত এক দ্বীপ দেখতে পেলো কন্যা! সে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো! সে চিৎকার যেন নাবিকের বুকে শত সমুদ্রের ঢেউ হয়ে আঘাত করলো! এখন কন্যা মাটির ছোঁয়া পেলে আবার মৎস্য কন্যা হয়ে যাবে, এখনি তো সে আবার আগের নাবিক হয়ে যাবে! তারপর যে যার যায়গায় ফিরে যাবে! আর হয়তো কোন জীবনে এই কন্যার দেখা যে পাবে না! তার সুন্দর মায়াভরা মুখখানি দেখতে পাবে না!”
“যখন দ্বীপের কাছাকাছি নৌকাটা আসলো আর কন্যা উৎসাহী হয়ে লাফ দিতে যাবে তখনই দেখলো নৌকাটা কাঁদছে অঝোরে, নাবিক বললো, “কন্যা, আমার বুকে সমুদ্রের নোনা জল ছাড়া আর কিছুকেই কখনো ঠাই দেইনি, সেখানে নোনা জলের পাশাপাশি ভাগ বসালে তুমি। তুমি চলে গেলে এ শুন্য বুক আর কখনো ভরবে না, সারাজীবন খালি থাকবে, সাত সাগরের সব জল সেঁচে সব নুন এক বুকে জমা করলেও এই নাবিকের তৃপ্তি আসবে না। তুমি যেও না!
তারপর সমুদ্রকন্যা একটু ভাবলো, তারপর বৈঠা ঘুরিয়ে আবার ফিরে চললো গভীর সাগরের দিকে। কারনে, সেও যে নাবিককে ভালোবেসে ফেলেছে!
“তারপর কি হলো?”
আমি বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, “তারপর আর সত্যিই জানি না, তবে শুনেছি সম্রাজ্ঞী ভালো করে তার স্বামীকে বলে দিয়েছেন, তারা দুজন যে সাগর ধরে যায় সেখানে যেন ঝড় না উঠে। এখনো চাঁদনী রাতে জাহাজীরা যখন গভীর সমুদ্রে থাকে তারা হটাত দেখতে পায় একটা ছোট নৌকায় চড়ে এক অপরূপা সুন্দরী দেবী স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে, থেকে থেকে সে কন্যার হাসিতে সাগরের উপরে পানিতে মৃদু কম্পন উঠে, জাহাজীরা সে দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষননা সেই নৌকা হারিয়ে যায় গভীর সাগর থেকে আরোও গভীরে!
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে
আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।
প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।
ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাম গাছ (জামুন কা পেড়)
মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান
গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
অনির্বাণ শিখা
রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।
আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=
©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....
মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।
ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন
এশিয়ান র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন