আজকে চমতকার একটা নাস্তিক সম্মেলনে থাকার সৌভাগ্য হইলো। জ্ঞানীগুণীদের এই সভায় মুখে কুলুপ আইটা বইসা থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় আছিলনা। তারা বহুত কিছু বলছেন। অবাক হইয়া গিলছি। পুরা সময়টায় আমার মাথার মধ্যে যেই চিন্তাগুলা আসছিলো তা মুখে বলা হয় নাই। মনে মনে কত কথাইত আসে। আপনাগো সঙ্গেই শেয়ার করলাম।
রামকৃষ্ণর একটা গল্প দিয়া শুরু করি। এক সাধু রামকৃষ্ণর কাছে আইসা বললেন- আমি পানির উপর দিয়ে হাটতে পারি। ২০ বছরের কঠোর তপস্যায় এই বিদ্যা আমি অর্জন করেছি। রামকৃষ্ণ তারে বললেন, এক আনা খরচ করলেই তো মাঝি পানি পার করে দেয়। এজন্য ২০টা বছর নষ্ট করলে! গল্পটা বললাম কারণ আছে। এই যে লোকজন এত কঠিন কঠিন ইংরেজী বই পইড়া নাস্তিক হওয়ার সাধনা করে, এইগুলার আসলেই কি প্রয়োজন আছে কোন? এই যে আমি মুসলমান একটা নাম নিয়া ঘুরি, কিন্তু নামাজ রোজা কিছুই করি না। আমিও তো এক ধরণের নাস্তিকই। কারণ আল্লাহর কিছু বিধান আছে আমার জন্য। সেগুলো না মানা তার কর্তৃত্বরে অস্বীকার করা। ঈমানদার বান্দা থাইকা খারিজ হওয়ার জন্য যেসব সতর্কবাণী শোনানো হইছে তা তো অস্বীকার করা হয় এই নামাজ, রোজা না করলে। তাইলে তার অস্তিত্ব নিয়া সংশয়গ্রস্থ যারা তাদের সঙ্গে আমার তো বেসিক কোনো প্রভেদ নাই। আমি তো অনায়াসে নাস্তিক। এরা এতো কষ্ট করতাছে কেনো?
স্টিভেন হকিং বলছেন সৃষ্টিকর্তা নাই। এইটা সবাই জানে, অনেকবার বলা হইছে। কিন্তু হকিং যখন বলছে তখন এর মজবাই আলাদা। মোজেস (মুসা), জেসাস (যীশু), মোহাম্মদ সবার ঈশ্বরের সঙ্গে মোলাকাতের অবস্থা আসলে মিড়কি ব্যারাম। সব নবী আসলে মৃগীরুগী। যারা সমাধি পায় বইলা দাবি করে তাদের আসলে নাকি এপিলেপটিক সিজার আছে। মুসা থেকে পরমহংস সবাই মৃগী রুগী। কোনো ডাক্তারের প্রেসকিপশনে এমন লেখা নাই, তাদের কেউ সচক্ষে মৃগীতে ভুগতে দেখে নাই, তারা মৃগীতেও মরেন নাই। লক্ষণগুলা শুইনা তাদের মনে হইছে এইটা মৃগী ছাড়া কিছু না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে শ্রুতি চিকিৎসা বইলা কিছু নাই। শোনার উপর ভর কইরা কোনো ডায়াগনসিস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তারপরও নাস্তিকরা এইগুলা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর চালাইয়া দেয়। অথচ পুরাপুরি পক্ষঘাতগ্রস্থ একজন হকিংয়ের বয়ান তাদের কাছে অমূল্য বাণী। ল্যাংড়া-লুলা-বোবা যন্ত্র দিয়া কথা কইতেছে, সূত্র লিখতেছে- কি চমৎকার! সব ল্যাংড়া লুইলাই পারবো না। তারপরও এইখানে কোনো অস্বাভাবিকতা নাই।
অস্বাভাবিক তো আসলে স্বয়ং ঈশ্বর। আরে অদৃশ্য কিছুরে কেনো আমি মানবো! আমি ভাবি, আমারে তাইলে আমি কেমনে মানি! এইযে লাশ আর জীবিতর মধ্যে পার্থক্য কি? একটা জীবন কিভাবে সচল থাকে, কি তুইলা নিলে তা অচল হইয়া যায়? এইটার সমাধান তো বিজ্ঞান দিতে পারে নাই। আমরা এইটারে আত্মা বলি। এই নফসরে আসলে প্রতিটা সৃষ্টির ইউনিট ধরা হইছে। তার শারীরিক আকারটা জরুরী না। কার কাছে? ওই অদৃশ্য শক্তির কাছে। তাহলে আত্মা কিভাবে আমারে পরিচালিত করতেছে? এইটা তো দৃশ্যমান কিছু না। পালস রেট, হার্টরেট কি আত্মা? শুধু ব্রেন কি আত্মা? নেভার। অপ্রকৃতস্থ হইয়াও মানুষ বাইচা থাকে। এই অদৃশ্যরে মাইনা নিলে আমি কেনো আর সব অদৃশ্য সম্ভাবনারে অস্বীকার করি। যারা আস্তিকতার চর্চা করেন, তারা কিন্তু বলদ না। স্রেফ কোরানের সুরা মুখস্ত কইরা তারা আস্তিক হয় নাই। তারা এইটা ফিল করে। ঈশ্বরের অবস্থান সর্বব্যাপী হইলেও তিনি মানুষরে পবিত্র অবস্থায় ধরা দেন। তার সামনে পবিত্র হইয়া যাইতে হয়। উপাসনালয়ে এবং উপাসনায় মানুষ পবিত্র থাকে। আর তখনই সে ফিল করে সেই পবিত্র অদৃশ্য শক্তির অস্তিত্ব। ইন্টার অ্যাকশনে সে হালকা বোধ করে, তার চোখ ভরে আসে পানিতে, সে টের পায় তার মোনাজাত জায়গামতো পৌছাইতেছে। তার অদৃশ্য আত্মা সেই অদৃশ্য সর্বশক্তিমানের সঙ্গে যোগাযোগে সক্ষম হইছে। এই ফিলিংসটা না বুঝলে আপনে কেমনে বুঝবেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব কেমন, কেন আস্তিকরা এত আকুল এই অদৃশ্যর কাছে মাথা নোয়াইতে। ফিলিংসের এই তফাতটার কারণেই আপনি আস্তিকদের অসম্মান করতেছেন, যা আসলে আপনার অযোগ্যতা, আপনার ব্যর্থতা। তর্ক কইরা লাভ নাই, আপনারাও জিতবেন না, তারাও জিতবে না। তালগাছ যার যারটা তার কাছেই থাকবে। কিন্তু দুনিয়ার আর সব ইস্যু বাদ দিয়া এই একটা বিষয়ে আপনে বহুত জ্ঞানী, আপনি বিশেষজ্ঞ এই স্বমেহনে আসলেই কোনো লাভ নাই। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়াল ইয়া দ্বীন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





