somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীন ব্যাংক দুর্নীতি : আমার ব্যাখ্যা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনার শুরু: গত ৩০ নভেম্বর ২০১০ সরকারি মালিকানাধীন নরওয়ে সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের (এনআরকে) টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ’ প্রামাণ্য চিত্রে অভিযোগ করা হয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি করেছেন।

কি আছে প্রামাণ্য চিত্রে:
১। মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য দূর করতে দাতাদের দেওয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার (বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) গ্রামীণ কল্যাণ নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিয়েছেন।
২। বেশ কিছু এক্সপার্ট ওপিনিয়ন বা মন্তব্য নেয় হয়, যারা প্রায় সকলেই গ্রামীন ব্যাংকে তুলা ধুনা করেছে,মুলত এই ভাবে যে, গ্রামীন ব্যাংকের সুদের হার বেশি এবং তারা অমানবিক ভাবে ঋন আদায় করে।
৩। বেশ কিছু বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যারা বলেন যে গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋন নেবার ফলেই তারা আরো দরিদ্র হয়ে গেছেন,এমনকি ঋনের কিস্তি শোধ দিতে গিয়ে কেউ কেউ ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন,কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন. এছারাও বলা হয় যে গ্রামীন ব্যাংকের উন্নয়ন ইতিহাস পাওয়া গেলেও দারিদ্র কমার ইতিহাস পাওয়া যায় নি।

লাফালাফি এবং ফালাফালি:মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সধারন জনগন থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সমালোচনার ঝড় উঠে। বুঝে বা না বুঝে এত আলোচনা হয়েছে যে কিছু কিছু সময় মুল বিষয়টি আড়াল হয়ে গেছে।

অভিযোগ নাকি এতে আছে শুভংকরের ফাকি:
প্রামাণ্য চিত্রে অভিযোগ এর জবাবে মুহাম্মদ ইউনূস থেকে বলা হয়, ট্যাক্স নিয়ে ঝামেলা এড়াতে ঐ টাকা ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে গ্রামীণ কল্যান নামক প্রতিস্ঠানে সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। পরে ১৯৯৭ সালে নরওয়ে দুতাবাস সহ নানা জায়গা থেকে আপত্তি উঠলে ১৯৯৮ সালে আবার গ্রামীণ কল্যান থেকে সেই টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে ফেরত দেয়া হয়। বিস্তারিত এখানে
Click This Link এবং
Click This Link

অভিযোগ নাকি প্রচার: মিটে যাওয়া একটি বিষয় খুচিয়ে আবার জাগিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বে তুলে ধরা পরে আবার নির্দোষ প্রমান করা, এর পিছনে যে সব কারন থাকতে পারে:
১। ইংরেজিতে একটা কথা আছে `রির্ভাস গেম` খেলা। এখানে হতে পারে সমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের আরো বিখ্যাত করার খেলা চলতে পারে।
২। বারবার ঋণের দুষ্টচক্র এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

গুজব নাকি সত্যি: কিছু কিছু গুজবের ডালপালা এত বেশি যে, মুল ঘটনা বুঝা যায় না। যেমন:
১। মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে নরওয়ের টেলিনরের সম্পর্ক এত ভালো ছিলো যে, গ্রামীন ফোনের অনেকাংশের মালিক আজোও টেলিনর!
২। পরে সম্পর্ক খারাপ হলো, মুহাম্মদ ইউনূস বহু চেস্টা করেও টেলিনরকে গ্রামীন ফোন থেকে আলাদা করতে পারেন নি।
৩। অভিযোগ আছে মুহাম্মদ ইউনূস নরওয়ে ভিত্তিক নানা সংগঠনের মাধ্যমে নোবেল কমিটিকে প্রভাবিত করেছেন।

'এখন যা আলোচনায় আশা উচিত:
ভালোকে ভালো মন্দকে মন্দ বলা, সমস্যা থাকবেই সমাধানও আমাদেরি করতে হবে!গ্রামিন ব্যাংক একটি সেবা মুলক প্রাতিস্ঠান,শুধু গ্রামিন ব্যাংক নয় বরং আশা, প্রশিকা ব্রাক সব রসুনের কিন্তু এক পাছা।তাই তাদের মুল বিষয় আলোচনা করতে হলে এই বিষয়গুলি জানা দরকার
ক্ষুদ্রঋন ভালো নাকি খারাপ।
অবশ্যই ভালো, ক্ষুদ্রঋন নিয়ে যে কেউ সাবলম্বী হতে পারেন
তবে তা কিছু নিয়মের মধ্যে হলেই তবে ভালো না হলে বিষ, ব্যাখ্যা করতেছি মুলত দুইভাবে ক্ষুদ্রঋন খারাপ
ক) ধারাবাহিক ক্ষুদ্রঋন ঋনচক্রের তৈরি করে
খ) সুদের হার বা ঋন আদায় পক্রিয়ার অসচ্ছতা

ঋনচক্রের তৈরি হয় এভাবে:
১। একটি নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত ঋন ভালো, যেমন মনে করেন একজন ব্যক্তির কিছুই নেই, তাকে যদি একটি গাভী কিনে দেয়া যায়, সাথে গাভীটি পালন করার মতো কিছু টাকা, তবে আশাকরা যায় যে, কিছু দিনের মাঝেই সেই ব্যক্তি গাভীর দুধ বিক্রি করে ঋন আস্তে আস্তে শোধ করে দিতে পারবে,
এভাবে যদি সে ঋনশোধ করে দেয়,তবে আস্তে আস্তে তার আয় রোজগার বাড়বে,এক সময় সে সাবলম্বী হবে। খেয়াল করুন
মুলত ক্ষুদ্রঋনের উপর ভিত্তি করেই কিন্তু সে সাবলম্বী হলো,একথা গুলিও এভাবেই এনজিও গুলি বলে,কিন্তু বাস্তবতা এরকম:
২। ঋননেয়া ঐ ব্যক্তি যখন শুধু গাভীটি দিয়ে সাবলম্বী হবার পথে এগিয়ে যায়, তখন এনজিও তাকে আরো ঋন নিতে বাধ্য করে কৌশলে, এবার তাকে লোভও দেখানো হয়, মনে করেন গরুরু খামারের, যেখানে বেশ কিছু গরু ছাগল থাকবে,

৩। লোভে পরে বা বাধ্য হয়ে বা কৌশল যে কারনেই হোক ঐ ব্যক্তি আরো ঋন নিয়ে নেয়, মনেকরি এবার সে সফল হলো না,কোন কারনে তার গরুর খামার ব্যবসা মার খেলো..এখন কি হবে?

৪। এনজিও ঋন পরিশোধের জন্য লোকটিকে চাপ দিবে, লোকটি যেহেতু ঋন কিভাবে পেতে হয় তা জানে তাই সে অন্য ঋনদাতা প্রতোস্ঠান থেকে হলেও ঋন হিসেবে টাকা এনে প্রথম এনজিও এর ঋন পরিশোধ করে।

৫। এভাবে সেই ব্যক্তি ঋনের চক্রে পরে যায়, একসময় বিশাল ঋন হতে বাচতে গিয়ে সব বিক্রি বা আত্মহত্যাও করতে হয়।

এবার আসি সুদের হারের কথায়:

এটিই মুলত এনজিও ঋনের সবচেয়ে দুর্বল দিক, কেননা ব্যাপারটা সরাসরি বে-আইনি! সত্য কথা হলো বাংলাদেশের বেশিরভাগ এনজিও ঋনের আদায়করা মোট সুদের হার আশংকাজনক। বেশির ভাগ সময়ই এই সুদের হার ৩০% এর চেয়ে বেশি।
তবে এটা প্রমান করা বেশ কঠিন,কারন যদি কেউ এনজিও ঋনের কাগজ দেখেন তবে চমকে উঠবেন কেননা কোথাও ৩০% সুদের হারের কথা নেই।
তবে তারা এই সুদ আদায় করে বিশেষ কৌশলে, যেমন বলা হয়
১। ঋন নিলে ঋনের বীমা করতে হবে
২। ঋনের উপর আবার সন্চয় করতে হবে,
৩। অফিসিয়াল মেনটেন্স খরচ।
এরকম হাজারটা কৈফিয়ত তাদের কাছে জমা আছে। মুল কথা ১০০ টেকা নিলে তিন বছরে কম করেও ২০০ টেকা ফেরত দিতে হবে। আগের দিনের সুদখোর ব্যবসার অনুরুপ।

ঋনের কিস্তি আদায়:
বিশ্বের সবচেয়ে সফল ঋনের কিস্তি আদায়ের রেট বোধহয় বাংলাদেশের এনজিওগুলির, কিভাবে?
এই ঋন দেয়া হয় গ্রুপভিত্তিক আদায়ের ভিত্তিতে অর্থাৎ মনে করুন ৫ জনের একটি গ্রুপ করে ঋন দেয়া হলো, এই গ্রুপ সম্মিলিতভাবে ঋনের কিস্তি শোধ করবে, গ্রুপের কোন সদস্য যদি ঋনের কিস্তি দিতে অপারগ হয় তখন বাকী চারজন মিলে মোট কিস্তির সব টাকা দিতে হবে। এই ফর্মুলায় গ্রুপের সবাই অন্য সদস্যের কিস্তি আদায়ে তৎপর থাকে ফলে নানাভাবে সবাই সবাইকে চাপ দেয় যত কিছুই হোক ঋনের কিস্তি দিতেই হবে।

সম্ভাব্য সমাধান:
বাংলাদেশের এনজিওগুলির আয় বাড়ার হার যেমন ভালো তেমনি তাদের উন্নয়ন হারও (Growth rate) ভালো। যা হতাশা জনক তা হলো বাংলাদেশের সামগ্রীক উন্নয়ন হার।
২টি নীতি সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে দরকার:
১। ঋনের সুদের হার কঠোরভাবে নিয়ন্তন করা এবং
২। ঋনচক্র বন্ধ করা (ধারাবাহিক ভাবে উত্তরোত্তর ঋনের বোঝা চাপিয়ে দেয়া)।

হাজার হোক বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ সারা জীবন ঋনের বোঝা কাধে নিয়ে বড়লোক হতে চায় না। আর আমরা সকলেই তো একটি সুন্দর ভবি্ষ্যতের দিকেই তাকিয়ে আছি, তাই না?


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×